alt

জাতীয়

জানুয়ারিতে একদিনও ‘ভালো বায়ু’ পায়নি ঢাকাবাসী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক: : বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/January/27Jan22/news/13.jpg

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে বায়ুর মান ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে হতে বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ঢাকার মানুষের একদিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবন করার সৌভাগ্য হয়নি। বায়ুমান বেশির ভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল।

গবেষণায় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা শহরে বিকেল ৪টার পর থেকে বায়ুদূষণের মান খারাপ হতে শুরু করে এবং তা রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এ তথ্য দিয়েছে। এছাড়াও ঢাকায় বায়ুদূষণরোধে বাপা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরেছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘বিপজ্জনক মাত্রায় ঢাকার বায়ুদূষণ: জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ সালে ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও এলাকা। এখানে প্রতি ঘনমিটারে বস্তুকণা ছিল ৭০ মাইক্রোগ্রাম। এর পরের অবস্থানে ছিল শাহবাগ এলাকা। এখানে প্রতি ঘনমিটারে বস্তুকণা ছিল ৬৮ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়া ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের বায়ুমান সূচকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ২ শতাংশ (৩৮ দিন) সময় ভালো বায়ু গ্রহণ করে। ২৬ শতাংশ (৫১০ দিন) চলনসই মানের বায়ু, ২৯ শতাংশ (৫৭৭ দিন) সংবেদনশীল বায়ু, ২২ শতাংশ (৪৪৩ দিন) অস্বাস্থ্যকর, ১৯ শতাংশ (৩৮৫ দিন) খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ২ শতাংশ (৩৭ দিন) সময় দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করে।

ঢাকা শহরের ১০টি স্থানে চালানো গবেষণার তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, প্রতিটি স্থানের গড় বস্তুকণা নির্ধারিত মানমাত্রার (২ দশমিক ৫) কয়েকগুণ বেশি ছিল। গবেষণা অনুযায়ী, আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি-৩২, সংসদ ভবন, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এই এলাকাগুলোতে গড় বস্তুকণা প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৫৭, ৬২, ৬০, ৬৩, ৫৯, ৬১, ৬৬ এবং ৬৫ মাইক্রোগ্রাম ছিল।

https://sangbad.net.bd/images/2022/January/27Jan22/news/15.jpg

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপসার পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি বলেন, গবেষণায় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ঢাকার মানুষের একদিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবন করার সৌভাগ্য হয়নি। বায়ুমান বেশির ভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল। ঢাকা শহরে বিকেল ৪টার পর থেকে বায়ুদূষণের মান খারাপ হতে শুরু করে এবং তা রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়।

গত ছয় বছরে গড় বায়ুর মান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাত ১টার সময় বায়ুমান সূচক ছিল ১৬২, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ। রাত ১০টার পর উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রচুর মালবাহী ট্রাক ঢাকা শহরে প্রবেশ করে, যে কারণে এসব যানবাহন থেকে রাতে প্রচুর বায়ুদূষণ হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো রাতের বেলায় সিটি করপোরেশনের ঝাড়ু দেওয়ার নিয়ম চালু রয়েছে, যার কারণে বাতাসে ধুলাবালি উড়তে থাকে। রাতের বেলায় যেহেতু দিনের চেয়ে তাপমাত্রা কম থাকে, সেহেতু ধুলাবালি বাতাসে বেশি সময় ধরে অবস্থান করে বলে তিনি মনে করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ঢাকা নগরের বায়ুর মান ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে হতে বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে। অথচ নাগরিকদেরকে অবগত করছে না সরকার। এই ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে সরকারকে ঢাকা শহরের বায়ুর সম্পর্কে যথাযথ তথ্য যথাসময়ে সাধারণ মানুষকে অবগত করার দাবি জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, বায়ুদূষণের কারণে ঢাকায় একটি মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে এবং আমরা সেই উন্নয়ন চাই না, যে উন্নয়ন জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

https://sangbad.net.bd/images/2022/January/27Jan22/news/14.jpg

ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলন থেকে বায়ুদূষণের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণের জন্য ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সুপারিশগুলো হল:

১. শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ঢাকা শহরে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

২. নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে।

৩. রাস্তায় ধূলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে।

৫. ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলন করা যেতে পারে।

৬. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সকলকে উৎসাহিত করতে হবে।

৭. ঢাকার আশপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।

৮. আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসাবে স্যান্ড ব্লক-এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে।

১০. সিটি গভর্নেন্সের প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে। সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।

১১. নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ যতদ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।

১২. পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনের (ক্যামস) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়াও বায়ু দূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে।

১৩. সর্বোপরি সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্যনির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

১৪. ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।

১৫. পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস এবং পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাপার নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এস সিদ্দিকী, ইবনুল সাঈদ রানা, ক্যাপসের গবেষণা শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ আল নাঈম এবং যুব বাপার সদস্য সচিব রাওমান স্মিতা।

ছবি

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হলেন এম ইউ কবীর চৌধুরী

বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে : মানবাধিকার কমিশন

ছবি

১৫ বছরে আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি: এলজিআরডি মন্ত্রী

ছবি

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি

ছবি

যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

গ্যাস সংকটে আগামীর ‘ভরসা’ এলএনজি

ছবি

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর : ‘আমার স্বপ্নও ভেঙে গেছে’

ছবি

এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য

ছবি

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ নতুন বিচারক

ছবি

কক্সবাজারে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট

ছবি

ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

ছবি

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

ছবি

সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা জব্দ করা জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছে; ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকের সবাই নিরাপদ

ছবি

পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

পদত্যাগ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব

ছবি

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড , আছে লোড শেডিংও

ছবি

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই

ছবি

ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়লো আরও ৩ দিন, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

ছবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড এর যৌথ অংশগ্রহণে টিএল-২০২৪ উদ্বোধন

ছবি

শিশু অধিকার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ--স্পীকার

ছবি

দু’দিনের সফরে কাতারের আমির ঢাকায়

ছবি

পাঁচ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া

ছবি

আনু মুহাম্মদের পায়ে ‌‘কম্বাইন্ড অপারেশন’ দরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, বাড়লো আরও ৩ দিন

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই কি এত তাপ?

ছবি

ভারতের উজানে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় তিস্তা মরা খালে পরিনত হয়েছে

ছবি

তাপদাহ : হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

tab

জাতীয়

জানুয়ারিতে একদিনও ‘ভালো বায়ু’ পায়নি ঢাকাবাসী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক:

বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/January/27Jan22/news/13.jpg

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে বায়ুর মান ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে হতে বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ঢাকার মানুষের একদিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবন করার সৌভাগ্য হয়নি। বায়ুমান বেশির ভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল।

গবেষণায় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা শহরে বিকেল ৪টার পর থেকে বায়ুদূষণের মান খারাপ হতে শুরু করে এবং তা রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এ তথ্য দিয়েছে। এছাড়াও ঢাকায় বায়ুদূষণরোধে বাপা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরেছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘বিপজ্জনক মাত্রায় ঢাকার বায়ুদূষণ: জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ সালে ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও এলাকা। এখানে প্রতি ঘনমিটারে বস্তুকণা ছিল ৭০ মাইক্রোগ্রাম। এর পরের অবস্থানে ছিল শাহবাগ এলাকা। এখানে প্রতি ঘনমিটারে বস্তুকণা ছিল ৬৮ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়া ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের বায়ুমান সূচকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ২ শতাংশ (৩৮ দিন) সময় ভালো বায়ু গ্রহণ করে। ২৬ শতাংশ (৫১০ দিন) চলনসই মানের বায়ু, ২৯ শতাংশ (৫৭৭ দিন) সংবেদনশীল বায়ু, ২২ শতাংশ (৪৪৩ দিন) অস্বাস্থ্যকর, ১৯ শতাংশ (৩৮৫ দিন) খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ২ শতাংশ (৩৭ দিন) সময় দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করে।

ঢাকা শহরের ১০টি স্থানে চালানো গবেষণার তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, প্রতিটি স্থানের গড় বস্তুকণা নির্ধারিত মানমাত্রার (২ দশমিক ৫) কয়েকগুণ বেশি ছিল। গবেষণা অনুযায়ী, আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি-৩২, সংসদ ভবন, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এই এলাকাগুলোতে গড় বস্তুকণা প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৫৭, ৬২, ৬০, ৬৩, ৫৯, ৬১, ৬৬ এবং ৬৫ মাইক্রোগ্রাম ছিল।

https://sangbad.net.bd/images/2022/January/27Jan22/news/15.jpg

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপসার পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি বলেন, গবেষণায় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ঢাকার মানুষের একদিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবন করার সৌভাগ্য হয়নি। বায়ুমান বেশির ভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল। ঢাকা শহরে বিকেল ৪টার পর থেকে বায়ুদূষণের মান খারাপ হতে শুরু করে এবং তা রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়।

গত ছয় বছরে গড় বায়ুর মান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাত ১টার সময় বায়ুমান সূচক ছিল ১৬২, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ। রাত ১০টার পর উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রচুর মালবাহী ট্রাক ঢাকা শহরে প্রবেশ করে, যে কারণে এসব যানবাহন থেকে রাতে প্রচুর বায়ুদূষণ হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো রাতের বেলায় সিটি করপোরেশনের ঝাড়ু দেওয়ার নিয়ম চালু রয়েছে, যার কারণে বাতাসে ধুলাবালি উড়তে থাকে। রাতের বেলায় যেহেতু দিনের চেয়ে তাপমাত্রা কম থাকে, সেহেতু ধুলাবালি বাতাসে বেশি সময় ধরে অবস্থান করে বলে তিনি মনে করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ঢাকা নগরের বায়ুর মান ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে হতে বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে। অথচ নাগরিকদেরকে অবগত করছে না সরকার। এই ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে সরকারকে ঢাকা শহরের বায়ুর সম্পর্কে যথাযথ তথ্য যথাসময়ে সাধারণ মানুষকে অবগত করার দাবি জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, বায়ুদূষণের কারণে ঢাকায় একটি মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে এবং আমরা সেই উন্নয়ন চাই না, যে উন্নয়ন জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

https://sangbad.net.bd/images/2022/January/27Jan22/news/14.jpg

ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলন থেকে বায়ুদূষণের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণের জন্য ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সুপারিশগুলো হল:

১. শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ঢাকা শহরে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

২. নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে।

৩. রাস্তায় ধূলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে।

৫. ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলন করা যেতে পারে।

৬. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সকলকে উৎসাহিত করতে হবে।

৭. ঢাকার আশপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।

৮. আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসাবে স্যান্ড ব্লক-এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে।

১০. সিটি গভর্নেন্সের প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে। সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।

১১. নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ যতদ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।

১২. পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনের (ক্যামস) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়াও বায়ু দূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে।

১৩. সর্বোপরি সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্যনির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

১৪. ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।

১৫. পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস এবং পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাপার নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এস সিদ্দিকী, ইবনুল সাঈদ রানা, ক্যাপসের গবেষণা শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ আল নাঈম এবং যুব বাপার সদস্য সচিব রাওমান স্মিতা।

back to top