alt

জাতীয়

শিশুমৃত্যুহার কমলে ও নারী শিক্ষার হার বাড়লে মাথাপিছু আয় বাড়ে : বিআইডিএস এর গবেষণা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০২২

শিশু মৃত্যুহার হ্রাস পেলে এবং নারীদের মাধ্যমিক শিক্ষার হার ও বিদ্যুতায়নের হার বৃদ্ধি পেলে মাথাপিছু আয় বাড়ে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ঘনত্বও উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বাড়ায় ভূমিকা রেখেছে। এতে প্রযুক্তি সহজে পৌঁছানো গেছে। তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজেকে উন্নত করার একটা আকাঙ্খা তৈরী হয়েছে, আর তাই আয়বৃদ্ধি ও উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, মাথাপিছু আয়ের উপর বিনিয়োগেরও পরিসংখ্যানগত গুরুত্ব এবং ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

গবেষণাটি প্রস্তুত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও বিআইডিএস এর গবেষণা সহযোগী মাহির এ. রহমান। রোববার রাজধানি ঢাকায় একটি হোটেলে গবেষণাটির বিষয়ে এক সেমিনার আয়োজন করা হয়।

‘আকাঙ্ক্ষা সঞ্চারিত গতিপ্রেরণাঃ বাংলাদেশের উন্নয়ন পথরেখার বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এই গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য, শিক্ষা (বিশেষত নারীশিক্ষা), প্রযুক্তির বিকাশ ও বিস্তার এবং সামগ্রিক বিনিয়োগে পরিবর্তনের প্রভাব পরিবার পর্যায়ে অনুভূত হয়। এর মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়। যদি পরিবারের সন্তানদের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে তাহলে সদস্যদের বিশেষ করে নারীদের যদি শিক্ষালাভের সুযোগ হয়, বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে যদি তারা প্রযুক্তির বিকাশের সুফল ভোগ করে এবং একই আর্থ-সামাজিক অবস্থানসম্পন্ন অন্যান্য পরিবারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাফল্যের তথ্য জানতে পারে তবে তাদের মধ্যে একটি আকাঙ্ক্ষার সঞ্চারণ ঘটে।

‘এই আকাঙ্ক্ষা তাদের মধ্যে একটি গতিপ্রেরণা সৃষ্টি করে যা তাদের নিজ পরিবারের আয় বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করতে উৎসাহিত করে। সময়ের সাথে সাথে এই প্রক্রিয়াই বাংলাদেশে মানুষ ও পরিবারের আয় বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, মূল আলোচক ছিলেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ই আর জি) এর চেয়ারম্যান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। মুক্ত আলোচনায় দেশের বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ অংশ নেন।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজেকে উন্নত করার একটা আকাঙ্খা আছে। তারা তাদের প্রতিবেশীদের দেখে ভাবেন, সে উন্নতি করতে পারলে আমি পারবো না কেন? এই আকাঙ্খার কারণে যেভাবেই হোক তারা নিজের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তাদের উন্নয়ন জিডিপিতে যোগ হয়েছে। তবে গবেষণায় শুধু মূলধারার প্রবণতা দেখে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারি না।

‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি বিভিন্ন রকম। তাই উন্নত দেশের গবেষণার ধরন দিয়ে দেশের অর্থনীতি বিবেচনা করা যায় না।’

যে কারণেই হোক না কেন, দেশের প্রান্তিক মানুষের মধ্যে নিজের উন্নতি করার একটা প্রবণতা আছে, এই প্রবণতা উচ্চ বিত্তের মধ্যে নেই কেন, এমন প্রশ্ন তুলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘যারা গরিব আছে, তারা আকাঙ্খা করছে যে তারা বড়লোক হবে। আর যারা বড়লোক আছে তাদের প্রত্যাশা কি? আমাদের দেশের যারা বড়লোক তারা কি চায়? তারা কি ঠিক পথে আছে?’

বিশ্বের অন্যতম ধনী ওয়ারেন বাফেটের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ওয়ারেন বাফেটের আত্মজীবনীতে বলা হয়েছে, তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনি তো অনেক ধনী, কিন্তু এতো সস্তা বাড়িতে সাধারণভাবে জীবনযাপন করেন কেন? তিনি উত্তর দিয়েছেন, অর্থ ভোগ করার জন্য আমি ধনী হইনি। কিভাবে আমার অর্থ বাড়তে থাকে সেটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই আমি ধনী হয়েছি।’

বাংলাদেশের ধনীদের দেশের ও জনগণের সেবা করার ‘অনীহা’ আছে এবং সততারও ‘অভাব’ আছে এমনটা ইঙ্গিত দেন তিনি।

মসিউর রহমান বলেন, ‘প্রত্যেক সমাজে একটা স্টান্ডার্ড সেট হয়। সেই স্টান্ডার্ড অনুযায়ী মানুষ সেখানে যেতে চায়। তারা মনে করে, আমি যদি পরিশ্রম করি, তাহলে তার মতো হতে পারবো সেটা সামাজিক দিক থেকেও হতে পারে আবার আর্থিক দিক থেকেও হতে পারে।

‘বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও এমন প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, আমি যদি পরিশ্রম করি তাহলে সেটা অর্জন করতে পারবো। অর্থাৎ অ্যাচিভমেন্টের প্রতি তাদের একটা ইতিবাচক ধারনা তৈরি হয়েছে। সে ধনী বা গরীব যে ঘরেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, সে মনে করছে পরিশ্রম করলে সে বড় হতে পারবে। এটাও আমাদের অনেক বড় অর্জন,’ বলেন তিনি। তবে এই গবেষণায় অনেক তথ্য উপাত্তের ঘাটতি আছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘মূলত একাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আকাঙ্খা বেড়েছে। নিজে কিছু একটা করে দেখানোর প্রবণতা বেড়েছে। এই সময়ে প্রচুর পাবলিক বিনিয়োগ বেড়েছে। উন্নয়নের পেছনে সেটিও কাজ করেছে। গবেষণাটি খুব স্বল্প আকারে করা হয়েছে। এটাও আরও বিস্তারিত হাউজহোল্ড লেভেলে করা উচিত। এতে আরও অনেক তথ্য উঠে আসবে।’

গবেষণাটি দুটি প্রশ্নকে সামনে রেখে করা হয়েছে। প্রশ্নগুলো হলো, কোন ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বাংলাদেশের ব্যতিক্রমধর্মী উন্নয়ন পথরেখা ব্যাখ্যা করতে পারে এবং কেন এই পথরেখা প্রচলিত বিশ্লেষণী কাঠামোর সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় নি? কী কারণে বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের পথযাত্রার নেপথ্যে আলাদা বৈশিষ্ট্য কাজ করে এবং কীভাবে বাংলাদেশ তার সমকক্ষ দেশগুলোর তুলনায় গতিপ্রেরণা পেল?

গবেষণাটি করতে মোট ২৬টি দেশের (বিশ্বব্যাংক এর শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী মধ্যম ও নিশু আয়সম্পন্ন) ২৫ বছরের (১৯৯৬-২০২০) তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সময়ের সাথে মোট ছয়টি সূচকের গতিধারায় কোন আকস্মিক কাঠামোগত পরিবর্তন এসেছে কিনা সেটিও বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

ছবি

আলতাদিঘি যেন ছোট্ট মরুভূমি

ছবি

আচরণ পাল্টে ভয়ঙ্কর হচ্ছে এডিস, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার শঙ্কা: গবেষণা

ছবি

এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে চায় যুক্তরাজ্য: বিমানমন্ত্রী

ছবি

উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করুন : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

‘গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণে কমিটি কেন নয়?’, জানতে চেয়েছে উচ্চ আদালত

ছবি

ডেঙ্গু মোকাবেলার প্রস্তুতি: স্যালাইনের দাম না বাড়াতে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

কৃষককে হয়রানি করলেই কঠোর ব্যবস্থা: খাদ্যমন্ত্রী

ছবি

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আইওএম’কে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

আমরা কোনো ধরনের বেকায়দায় নেই : সিইসি

ছবি

উপজেলা নির্বাচন : ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

লোডশেডিংয়ের সমস্যা শিগগির সমাধান হবে: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

ছবি

দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে

ছবি

৭ দিন বৃষ্টি চলতে পারে: আবহাওয়া অফিস

ছবি

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি: জনপ্রশাসনমন্ত্রী

ছবি

সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, প্রধানমন্ত্রীর সন্তোষ

ছবি

রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় সহযোগিতার জন্য ওআইসি সদস্যদের প্রতি আহবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ছবি

লাইসেন্সবিহীন টিভি-চ্যানেল বন্ধে কার্যক্রম শুরু, ১০ সিদ্ধান্ত

ছবি

সিরিয়াল অনুযায়ী মামলার শুনানি হবে: প্রধান বিচারপতি

ছবি

সম্পদ অর্জনে এমপিদের পেছনে ফেলেছেন চেয়ারম্যানরা

ছবি

সারা দেশে কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতা

ছবি

অভিবাসন সংক্রান্ত অপতথ্য রোধে বাংলাদেশ-ইতালি একসঙ্গে কাজ করবে : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী

ছবি

নবায়ণযোগ্য জ্বালানি: নসরুল হামিদের সঙ্গে সুইডেনের রাষ্ট্রদূতের আলোচনা

ছবি

ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ও সেনাপ্রাঙ্গণ ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তন : দেখা যায়নি পর্যাপ্ত মুকুল, পড়ে যাচ্ছে গুটি; দুশ্চিন্তায় আম চাষিরা

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তন : দেখা যায়নি পর্যাপ্ত মুকুল, পড়ে যাচ্ছে গুটি; দুশ্চিন্তায় আম চাষিরা

ছবি

বাংলাদেশের সাথে গাম্বিয়ার বাণিজ্য ও কৃষিতে সহযোগিতা বৃদ্ধির আশাবাদ

ছবি

মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকে ডিবিতে ডাকা হয়েছে : হারুন

ছবি

সরকার পরিচালনাকারী সবাই ফেরেশতা নয় : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

শিক্ষকদের মর্যাদা-বেতনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি : শিক্ষামন্ত্রী

ছবি

১০ টাকার টিকিট কেটে জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

শনিবার ২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ

দেশের গণমাধ্যমে কতটা গুরুত্ব পায় পরিবেশ, জলবায়ু : কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ছবি

বিচার বিভাগের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের : প্রধান বিচারপতি

ছবি

চাল ছাঁটাই ও পলিশ বন্ধে আইন করা হয়েছে:খাদ্যমন্ত্রী

ছবি

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি : ঢাকায় পৌঁছেছে ৮ বাংলাদেশীর লাশ

ছবি

ঝিনাইদহ-১ আসনের এমপি আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে সংসদে শোক

tab

জাতীয়

শিশুমৃত্যুহার কমলে ও নারী শিক্ষার হার বাড়লে মাথাপিছু আয় বাড়ে : বিআইডিএস এর গবেষণা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০২২

শিশু মৃত্যুহার হ্রাস পেলে এবং নারীদের মাধ্যমিক শিক্ষার হার ও বিদ্যুতায়নের হার বৃদ্ধি পেলে মাথাপিছু আয় বাড়ে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ঘনত্বও উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বাড়ায় ভূমিকা রেখেছে। এতে প্রযুক্তি সহজে পৌঁছানো গেছে। তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজেকে উন্নত করার একটা আকাঙ্খা তৈরী হয়েছে, আর তাই আয়বৃদ্ধি ও উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, মাথাপিছু আয়ের উপর বিনিয়োগেরও পরিসংখ্যানগত গুরুত্ব এবং ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

গবেষণাটি প্রস্তুত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও বিআইডিএস এর গবেষণা সহযোগী মাহির এ. রহমান। রোববার রাজধানি ঢাকায় একটি হোটেলে গবেষণাটির বিষয়ে এক সেমিনার আয়োজন করা হয়।

‘আকাঙ্ক্ষা সঞ্চারিত গতিপ্রেরণাঃ বাংলাদেশের উন্নয়ন পথরেখার বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এই গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য, শিক্ষা (বিশেষত নারীশিক্ষা), প্রযুক্তির বিকাশ ও বিস্তার এবং সামগ্রিক বিনিয়োগে পরিবর্তনের প্রভাব পরিবার পর্যায়ে অনুভূত হয়। এর মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়। যদি পরিবারের সন্তানদের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে তাহলে সদস্যদের বিশেষ করে নারীদের যদি শিক্ষালাভের সুযোগ হয়, বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে যদি তারা প্রযুক্তির বিকাশের সুফল ভোগ করে এবং একই আর্থ-সামাজিক অবস্থানসম্পন্ন অন্যান্য পরিবারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাফল্যের তথ্য জানতে পারে তবে তাদের মধ্যে একটি আকাঙ্ক্ষার সঞ্চারণ ঘটে।

‘এই আকাঙ্ক্ষা তাদের মধ্যে একটি গতিপ্রেরণা সৃষ্টি করে যা তাদের নিজ পরিবারের আয় বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করতে উৎসাহিত করে। সময়ের সাথে সাথে এই প্রক্রিয়াই বাংলাদেশে মানুষ ও পরিবারের আয় বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, মূল আলোচক ছিলেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ই আর জি) এর চেয়ারম্যান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। মুক্ত আলোচনায় দেশের বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ অংশ নেন।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজেকে উন্নত করার একটা আকাঙ্খা আছে। তারা তাদের প্রতিবেশীদের দেখে ভাবেন, সে উন্নতি করতে পারলে আমি পারবো না কেন? এই আকাঙ্খার কারণে যেভাবেই হোক তারা নিজের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তাদের উন্নয়ন জিডিপিতে যোগ হয়েছে। তবে গবেষণায় শুধু মূলধারার প্রবণতা দেখে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারি না।

‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি বিভিন্ন রকম। তাই উন্নত দেশের গবেষণার ধরন দিয়ে দেশের অর্থনীতি বিবেচনা করা যায় না।’

যে কারণেই হোক না কেন, দেশের প্রান্তিক মানুষের মধ্যে নিজের উন্নতি করার একটা প্রবণতা আছে, এই প্রবণতা উচ্চ বিত্তের মধ্যে নেই কেন, এমন প্রশ্ন তুলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘যারা গরিব আছে, তারা আকাঙ্খা করছে যে তারা বড়লোক হবে। আর যারা বড়লোক আছে তাদের প্রত্যাশা কি? আমাদের দেশের যারা বড়লোক তারা কি চায়? তারা কি ঠিক পথে আছে?’

বিশ্বের অন্যতম ধনী ওয়ারেন বাফেটের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ওয়ারেন বাফেটের আত্মজীবনীতে বলা হয়েছে, তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনি তো অনেক ধনী, কিন্তু এতো সস্তা বাড়িতে সাধারণভাবে জীবনযাপন করেন কেন? তিনি উত্তর দিয়েছেন, অর্থ ভোগ করার জন্য আমি ধনী হইনি। কিভাবে আমার অর্থ বাড়তে থাকে সেটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই আমি ধনী হয়েছি।’

বাংলাদেশের ধনীদের দেশের ও জনগণের সেবা করার ‘অনীহা’ আছে এবং সততারও ‘অভাব’ আছে এমনটা ইঙ্গিত দেন তিনি।

মসিউর রহমান বলেন, ‘প্রত্যেক সমাজে একটা স্টান্ডার্ড সেট হয়। সেই স্টান্ডার্ড অনুযায়ী মানুষ সেখানে যেতে চায়। তারা মনে করে, আমি যদি পরিশ্রম করি, তাহলে তার মতো হতে পারবো সেটা সামাজিক দিক থেকেও হতে পারে আবার আর্থিক দিক থেকেও হতে পারে।

‘বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও এমন প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, আমি যদি পরিশ্রম করি তাহলে সেটা অর্জন করতে পারবো। অর্থাৎ অ্যাচিভমেন্টের প্রতি তাদের একটা ইতিবাচক ধারনা তৈরি হয়েছে। সে ধনী বা গরীব যে ঘরেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, সে মনে করছে পরিশ্রম করলে সে বড় হতে পারবে। এটাও আমাদের অনেক বড় অর্জন,’ বলেন তিনি। তবে এই গবেষণায় অনেক তথ্য উপাত্তের ঘাটতি আছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘মূলত একাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আকাঙ্খা বেড়েছে। নিজে কিছু একটা করে দেখানোর প্রবণতা বেড়েছে। এই সময়ে প্রচুর পাবলিক বিনিয়োগ বেড়েছে। উন্নয়নের পেছনে সেটিও কাজ করেছে। গবেষণাটি খুব স্বল্প আকারে করা হয়েছে। এটাও আরও বিস্তারিত হাউজহোল্ড লেভেলে করা উচিত। এতে আরও অনেক তথ্য উঠে আসবে।’

গবেষণাটি দুটি প্রশ্নকে সামনে রেখে করা হয়েছে। প্রশ্নগুলো হলো, কোন ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বাংলাদেশের ব্যতিক্রমধর্মী উন্নয়ন পথরেখা ব্যাখ্যা করতে পারে এবং কেন এই পথরেখা প্রচলিত বিশ্লেষণী কাঠামোর সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় নি? কী কারণে বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের পথযাত্রার নেপথ্যে আলাদা বৈশিষ্ট্য কাজ করে এবং কীভাবে বাংলাদেশ তার সমকক্ষ দেশগুলোর তুলনায় গতিপ্রেরণা পেল?

গবেষণাটি করতে মোট ২৬টি দেশের (বিশ্বব্যাংক এর শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী মধ্যম ও নিশু আয়সম্পন্ন) ২৫ বছরের (১৯৯৬-২০২০) তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সময়ের সাথে মোট ছয়টি সূচকের গতিধারায় কোন আকস্মিক কাঠামোগত পরিবর্তন এসেছে কিনা সেটিও বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

back to top