যতদিন শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার আপিল নিষ্পত্তি না হবে, ততদিন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিদেশে যেত আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) শ্রম ও কলকারখানা অধিদপ্তরের এক ‘ফৌজদারি রিভিশন’ আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দেয়।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ৬ মাসের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ইউনূসসহ চার আসামির আপিল গ্রহণ করে সাজা স্থগিত করে দিয়েছিল শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। সেই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আসেন শ্রম ও কলকারখানা অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আসামিদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নেয়ার আদেশ চাওয়া হয় সেখানে।
সোমবার ওই ‘ফৌজদারি রিভিশন’ আবেদনের শুনানি করে সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিদেশ যেতে হলে ইউনূসকে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে জানিয়ে যাওয়ারও আদেশ দেয়া হয়।
আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো মামলা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করলে তার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত থাকে। সেজন্য আলাদা আদেশের প্রয়োজন নেই। ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল মামুন। শ্রম ও কলকারখানা অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ডগত ১ জানুয়ারি এ মামলায় ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদ- দেয় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক মেরিনা সুলতানা। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।
সাজাপ্রাপ্ত অন্য তিনজন হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে ইউনূসসহ চারজনকেই অন্তর্বতীকালীন জামিন দেন বিচারক। ফলে তাদের আর কারাগারে যেতে হয়নি।
ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন। ট্রাইব্যুনাল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত তাদের জামিন দেয়। সেদিন পর্যন্ত শ্রম আদালতের দেয়া সাজা স্থগিত করেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক।
ওই আদেশের অংশ বিশেষ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ফৌজদারি রিভিশন করে শ্রম ও কলকারখানা অধিদপ্তর। আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানিতে বলেন, ‘শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল বিচারিক আদালতের পুরো জাজমেন্ট স্থগিত করেছেন। তিনি সেটা পারেন না। এটা ফৌজদারি কার্যবিধির লঙ্ঘন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ট্রাইব্যুনালের পুরো অর্ডার চ্যালেঞ্জ করিনি। ছোট্ট একটি অংশ চ্যালেঞ্জ করেছি। বেইল, ফাইন, আপিল অ্যাডমিশন নিয়ে আমাদের কোনো অবজেকশন নেই। কিন্তু কনভিকশন কখনও স্টে হতে পারে না- নেভার।’
এ আইনজীবী বলেন, ‘জাজমেন্টের দুটি অংশ থাকে সেনটেন্স এবং কনভিকশন। আপিল অ্যাডমিট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেনটেন্স স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু কনভিকশন চলমান থাকবে।’
তিনি এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের কয়েকটি নজির হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করেন।
শুনানির শেষ পর্যায়ে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান আদালতের কাছে আবেদন করেন, মুহম্মদ ইউনূস যেন বিদেশ যেতে চাইলে আদালতের অনুমতি নিয়ে যান।
এরপর শুনানি করেন মুহম্মদ ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আসার কোনো প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না।
তিনি বলেন, ‘ওই আদালত (শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল) আদেশ দিয়েছেন। জাজমেন্টের বিষয়ে কোনো সংশোধনী থাকলে তার কাছে যেতে পারতেন। এ জন্য হাই কোর্ট, আপিল বিভাগে আসার কোনো দরকার নেই। এটা করা মানে আদালতকে হাত-পা বেঁধে দেয়া।’
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগে বিষয়টি হাইকোর্টে আনাকে ‘আনবর্ন চাইল্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘যে শিশুটি এখনও জন্মগ্রহণ করেনি, তাকে নিয়ে তিন তলায় উঠে গেলেন তারা।’
বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে অনুমতির বিষয়টির বিরোধিতা করে এ আইনজীবী বলেন, ‘তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি আদালতে ২০৫ ধারায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। তারপরও তিনি যতবার বাইরে যান, ততবার আদালতকে অবহিত করেন। এ বিষয়ে হাইকোর্ট, আপিল বিভাগের আদেশের প্রার্থনার কোনো প্রয়োজন নেই।’
শুনানি শেষে জ্যেষ্ঠ বিচারক মুহম্মদ ইউনূসকে বিদেশে যাওয়ার সময় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে অবহিত (ইন্টিমেট) করতে বলেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
যতদিন শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার আপিল নিষ্পত্তি না হবে, ততদিন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিদেশে যেত আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) শ্রম ও কলকারখানা অধিদপ্তরের এক ‘ফৌজদারি রিভিশন’ আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দেয়।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ৬ মাসের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ইউনূসসহ চার আসামির আপিল গ্রহণ করে সাজা স্থগিত করে দিয়েছিল শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। সেই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আসেন শ্রম ও কলকারখানা অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আসামিদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নেয়ার আদেশ চাওয়া হয় সেখানে।
সোমবার ওই ‘ফৌজদারি রিভিশন’ আবেদনের শুনানি করে সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিদেশ যেতে হলে ইউনূসকে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে জানিয়ে যাওয়ারও আদেশ দেয়া হয়।
আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো মামলা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করলে তার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত থাকে। সেজন্য আলাদা আদেশের প্রয়োজন নেই। ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল মামুন। শ্রম ও কলকারখানা অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ডগত ১ জানুয়ারি এ মামলায় ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদ- দেয় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক মেরিনা সুলতানা। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।
সাজাপ্রাপ্ত অন্য তিনজন হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে ইউনূসসহ চারজনকেই অন্তর্বতীকালীন জামিন দেন বিচারক। ফলে তাদের আর কারাগারে যেতে হয়নি।
ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন। ট্রাইব্যুনাল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত তাদের জামিন দেয়। সেদিন পর্যন্ত শ্রম আদালতের দেয়া সাজা স্থগিত করেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক।
ওই আদেশের অংশ বিশেষ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ফৌজদারি রিভিশন করে শ্রম ও কলকারখানা অধিদপ্তর। আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানিতে বলেন, ‘শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল বিচারিক আদালতের পুরো জাজমেন্ট স্থগিত করেছেন। তিনি সেটা পারেন না। এটা ফৌজদারি কার্যবিধির লঙ্ঘন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ট্রাইব্যুনালের পুরো অর্ডার চ্যালেঞ্জ করিনি। ছোট্ট একটি অংশ চ্যালেঞ্জ করেছি। বেইল, ফাইন, আপিল অ্যাডমিশন নিয়ে আমাদের কোনো অবজেকশন নেই। কিন্তু কনভিকশন কখনও স্টে হতে পারে না- নেভার।’
এ আইনজীবী বলেন, ‘জাজমেন্টের দুটি অংশ থাকে সেনটেন্স এবং কনভিকশন। আপিল অ্যাডমিট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেনটেন্স স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু কনভিকশন চলমান থাকবে।’
তিনি এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের কয়েকটি নজির হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করেন।
শুনানির শেষ পর্যায়ে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান আদালতের কাছে আবেদন করেন, মুহম্মদ ইউনূস যেন বিদেশ যেতে চাইলে আদালতের অনুমতি নিয়ে যান।
এরপর শুনানি করেন মুহম্মদ ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আসার কোনো প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না।
তিনি বলেন, ‘ওই আদালত (শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল) আদেশ দিয়েছেন। জাজমেন্টের বিষয়ে কোনো সংশোধনী থাকলে তার কাছে যেতে পারতেন। এ জন্য হাই কোর্ট, আপিল বিভাগে আসার কোনো দরকার নেই। এটা করা মানে আদালতকে হাত-পা বেঁধে দেয়া।’
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগে বিষয়টি হাইকোর্টে আনাকে ‘আনবর্ন চাইল্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘যে শিশুটি এখনও জন্মগ্রহণ করেনি, তাকে নিয়ে তিন তলায় উঠে গেলেন তারা।’
বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে অনুমতির বিষয়টির বিরোধিতা করে এ আইনজীবী বলেন, ‘তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি আদালতে ২০৫ ধারায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। তারপরও তিনি যতবার বাইরে যান, ততবার আদালতকে অবহিত করেন। এ বিষয়ে হাইকোর্ট, আপিল বিভাগের আদেশের প্রার্থনার কোনো প্রয়োজন নেই।’
শুনানি শেষে জ্যেষ্ঠ বিচারক মুহম্মদ ইউনূসকে বিদেশে যাওয়ার সময় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে অবহিত (ইন্টিমেট) করতে বলেন।