alt

নদীর মাঝখানে ইসি, নড়লেই নৌকা ডুববে: সংলাপে ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা, নারী কোটা কমানোর দাবি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

নির্বাচন কমিশন নিজেকে নদীর মাঝখানে থাকা নৌকা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলছে, নড়লেই ডুবে যাওয়ার অবস্থা। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আচরণবিধি প্রতিপালনে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চেয়েছে সংস্থাটি। ইসির পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, তারা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি চান না; বরং সহায়তা প্রত্যাশা করছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। প্রথম দিনের প্রথম পর্বে ছয়টি দলের প্রতিনিধি অংশ নিয়ে ভোটের প্রাক পরিবেশ, শঙ্কা, ইসির আন্তরিকতা, আইন সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

নিরাপত্তা অভিযান চালানোর পরামর্শ এলডিপির

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, "এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট নির্বাচনী নিরাপত্তা সঙ্কট বিরাজ করছে। গত দুই-তিন দিনের ঘটনা অবশ্যই বিবেচনায় নেব।"

সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচন করার কথা তুলে ধরে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, "কোনো কোনো দল কর্তৃত্ব প্রমাণে ডাকাত থেকে শুরু করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে হয়ত তালিকা রয়েছে।

"আমার মনে হয় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ঠ পরিমাণে যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল সেটা শুরু হয়নি। আমরা সঠিক সময় নির্বাচন চাই।…তফসিল ঘোষণার পূর্বে অবশ্যই সিকিউরিটি অপারেশন করা উচিত, যাতে জনগণের আস্থা ফিরে আসে। নির্বিঘ্নে ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।"

জোটে ভোট করলে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান করায় এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

"আগে যেমন ছিল তেমন থাকলে সবচেয়ে ভালো হয়। প্রতীক জোটের উপর, দলের উপর ছেড়ে দিতে হবে আগের মত।"

আরপিও সংশোধন করা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি রেখেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিয়ামুল বশীর ও আওরঙ্গজেব বেলাল।

খেলাফত আন্দোলনের মত

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কালো টাকা রোধ, প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, "ইসির প্রতি আস্থাহীনতা রয়েছে। আস্থা তৈরি করবে বর্তমান ইসি। ভোটের পরিবেশ সৃষ্টির আগে নির্বাচন হওয়া উচিত নয়। আগে ইসিকে যাচাই করতে হবে ভোটের পরিবেশ সৃষ্ট হয়েছে কিনা, আমি নির্বাচন পেছাতে চাই না।"

প্রয়োজনে একাধিক দিনে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে মত দেন তিনি।

"দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী রাখার বাধ্যবাধকতা ইসলামী দলগুলোর জন্য কঠিন হয়ে যায়। বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন", বলেন মহিউদ্দিন।

মুসলিম লীগের প্রস্তাব

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, "সঠিক সময়ে নির্বাচন চাই। নির্বাচনি পরিবেশের যেন উন্নতি হয় সে ব্যবস্থা নিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর মহিলা প্রতিনিধি কমিয়ে দিলে ভালো হয়, পুরুষ বাড়িয়ে দিলে আমাদের জন্য সুবিধান হয়। এত মহিলা প্রতিনিধির প্রয়োজন নেই বলে মনে হয়।"

সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের দাবি জানান দলটির আকবর হোসেন পাঠান।

তিনি বলেন, "এমপি প্রার্থী হতে ন্যূনতম মাস্টার্স এবং উপজেলা নির্বাচনে স্নাতক, ইউপি চেয়ারম্যানে এইচএসসি, মেম্বারে এসএসসি নির্ধারণ করার আবেদন থাকবে।"

সংলাপে এ দুজনের বক্তব্যের পর প্রেসিডেন্ট জুবেদা কাদের চৌধুরী ভিন্ন বক্তব্য দিলেন।

প্রত্যেক দল নারীদের কেন সংলাপে আনেনি সে প্রশ্ন রাখেন তিনি বলেন, "আজ আমাদের এখানে ওয়ান থার্ড মহিলা আস নি। মহিলারা ভালো শিক্ষিত। প্রত্যেক পার্টি কেন আনলেন না, তাদের সচেতন হতে হবে। রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছি, ছোটবেলা থেকে শিখেছি।"

আচরণবিধির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "এটা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। ভালো আচরণবিধি হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকেও অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।"

নিবন্ধনে কাগজপত্র যাচাই ও ইসির আন্তরিকতা

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, "জামানতের টাকার পরিমাণ কমাতে হবে।…নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ইসি নিবন্ধন না দিলেও আদালত থেকে নিবন্ধন নিয়ে আসছে। তাহলে ইসি কাগজপত্র ঠিকমত দেখছে না? এ বিষয়টি কমিশনের ভালোভাবে দেখতে হবে।"

ইসি কর্মকর্তারা যাচাই বাছাই করলে, ভালোভাবে দেখলে নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভোটের পরিবেশ অনুকূল হয়েছে কি না, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুন্দর দেওয়া কঠিন বলে মন্তব্য করেন এ দলের একজন নেতা।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধি বলেন, "সবাই এসে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার কথা বলে। কিন্তু সব নির্বাচনই নিরপেক্ষতা হারোনো হয়, এটা প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। এটা খুব কঠিন ব্যাপার। ইসি আন্তরিক থাকলে কিছুটা হলেও পারবেন আশা করি। জীবন সায়াহ্নে এসে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানাই।"

এখন দলের প্রচারণা চললেও তফসিল ঘোষণার পর ইসি কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জামানাতের টাকা ২০ হাজার টাকা পুননির্ধারণ, নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

দলের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে কমিশন দেখবে বলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন।

তফসিলের আগেও সুযোগ

নির্বাচন কমিশনার মো. আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যারা ১৮ বছর বয়সী তাদের অর্ন্তভুক্তের সময়সীমা রাখা হয়েছে। এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসে যারা অন্তর্ভূক্ত হচ্ছেন তাদের বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, ভোটার হালনাগাদ কার্যত্রম উন্মুক্ত রয়েছে। দেশের ভেতরে বাদ পড়া ভোটারদের তফসিল ঘোষণার আগেও তাদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

নদীর মাঝখানে ইসি, নড়লেই নৌকা ডুববে

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালনে সবার সহযোগিতা দরকার। সবাই মানলে নির্বাচনি পরিবেশ ভালো হতে বাধ্য।

"এবার কিন্তু একটা সুযোগ। এবারের নির্বাচন ভালো করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা নদীর মাঝখানে। নৌকাটা এমন নড়াচড়া করলেই ডুবে যাবে সোজা কথা। দেশটাতো চালাবেন আপনারা, রাজনীতিবিদরা। সঠিকভাবে নির্বাচনটা না হলে কি অবস্থা দাঁড়াতে পারে ভেবে দেখেন। যার অবস্থান থেকে সহায়তা করুন।"

নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেছেন, ইসি ভোটে রেফারির ভূমিকায় থাকবে।

"দলগুলো মাঠে থাকলে, সবার সহযোগিতা পেলে রেফারিগিরি সম্ভব।"

সংঘর্ষ চাই না, সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান

সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন জানান, আচরণবিধি প্রতিপালনে সহায়তা করতে হবে। পাশাপাশি সবার কাছে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। আচরণবিধি মানতে ও মানাতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

আচরণবিধি প্রচারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে দলগুলোর প্রতি সিইসি বলেন, "আপনারা কেউ গোঁ ধরে বসে থাকে আরণবিধি মানবোই না, তাহলে তো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমরা সাংঘর্ষ চাই না। কাউকে মোকাবেলা করতে চাই না; সবাইকে সাথে নিয়ে আচরণবিধি প্রতিপালনে এগিয়ে নিতে চাই।"

দুই ঘণ্টা ধরে প্রথম পর্বের আলোচনা চলে। বিকালের পর্বে আরও ছয় দলের সঙ্গে সংলাপ চলছে ইসির। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএমের সঙ্গে সংলাপে বসেছে ইসি।

নির্বাচন প্রস্তুতির মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে অংশীজনদের সঙ্গে ইসির মত বিনিময় শুরু হয়। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গণভোট, জোট করলেও ভোটের প্রতীক, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটিং পদ্ধতি, আইন-বিধি সংস্কার ও প্রতিপালন, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিসহ নানা বিষয় উঠে আসে আলোচনায়।

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে ইসি। রাজনৈতিক দলগুলোও এখন সেদিকে তাকিয়ে আছে।

বর্তমানে বিএনপি, জামায়াতসহ ৫৩টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। এবার এনসিপিসহ নতুন তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে নির্বাচন কমিশন।

এ ৫৬টির বাইরে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে ও পুরনো তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল রয়েছে।

ছবি

নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে: আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলে মত দেবে ইসি

ছবি

জামায়াতের প্রতিক্রিয়া: একই দিনে গণভোট ও নির্বাচনে ‘জনআকাঙ্খা পূরণ হয়নি’

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জুলাই সনদ ‘লঙ্ঘিত’ হয়েছে: সালাহউদ্দিন

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর নিজের সই করা সনদ ভঙ্গ করেছেন:সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি

একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’: ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন ও অবরোধ

ছবি

সিলেট-৪: ‘স্বঘোষিত’ প্রার্থী আরিফুলকে নিয়ে বিএনপিতে ‘বহিরাগত’ বিতর্ক, বিক্ষোভ

ছবি

গণভোট নয়, জনগণের সমস্যা সমাধানে নজর দিন: তারেক রহমান

ছবি

আওয়ামী লীগের কেউ যেন স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে না পারে: সিইসিকে গণঅধিকার পরিষদ

ছবি

বিএনপি নেতা আমীর খসরু: বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা যে কেউ করতে পারে

ছবি

চোরা রাস্তা দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে আসার স্বপ্ন দেখছে: রিজভী

সুনামগঞ্জ-১ আসন: ‘প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী’ বলায় মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন বিএনপির প্রার্থী আনিসুল

ছবি

জুলাই সনদের বাইরে যে কোনো সিদ্ধান্তের দায় সরকারের ওপরই বর্তাবে: বিএনপি

এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল নিক্ষেপ, দুইজন কারাগারে

ছবি

গণভোটের আগে কোনো নির্বাচন নয়, জামায়াত ও সঙ্গী-সাথীদের হুঁশিয়ারি

ছবি

অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে: হাসনাত

ছবি

ভোটকে এতো ভয় কেন... কারন অস্তিত্বই থাকবে না : মির্জা ফখরুল

ছবি

জামায়াত আমিরের হুঁশিয়ারি: জুলাই সনদ ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না

ছবি

‘সিটের বিনিময়ে স্বপ্ন বিক্রি’: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ফেইসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে আলোচনা

ছবি

এনসিপি কার্যালয়ের   ককটেল হামলার দুই আসামি কারাগারে

নির্বাচন নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে: হাওলাদার

ছবি

একাত্তরের ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চায় একটি চক্র: মির্জা ফখরুল

ছবি

সংবিধানে গণভোট নেই বললে ২০২৬ সালেও নির্বাচন নেই : জামায়াতের নেতা হামিদুর রহমান

ছবি

"পোস্টাল ভোট বিডি" অ্যাপ উদ্বোধন ১৮ নভেম্বর :  নির্বাচন কমিশন

ছবি

বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা, সাবেক দুই এমপিসহ আসামি ৮ শতাধিক

অর্থনীতি ও সংস্কার নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

ছবি

খালেদা জিয়ার আসনে এনসিপির চূড়ান্ত মনোনয়ন চান জোবায়ের

ছবি

বহিষ্কৃত ৪০ নেতার পদ ফিরিয়ে দিলো বিএনপি

নির্বাচনের অপেক্ষায় স্থবির দেশ, বিনিয়োগ ও পারিবারিক সিদ্ধান্তও থমকে গেছে: আমীর খসরু

ছবি

অর্থনীতি ও সংস্কার নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

ছবি

নির্বাচনের অপেক্ষায় স্থবির দেশ: আমীর খসরু

ছবি

ঢাকা থেকে নির্বাচনের ঘোষণা আসিফ মাহমুদের, বললেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তে পদত্যাগ’

‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে থাকবে গণতন্ত্র মানবাধিকার ও ভোটাধিকার’

ছবি

‘আমেরিকা থেকে আসা শিক্ষিত লোকজন আমাদের ঘাড়ে গণভোট চাপাচ্ছে’ : মির্জা ফখরুল

ছবি

নিবন্ধন প্রশ্নে আমজনতার দলকে আইনসম্মত পথে আসার আহ্বান ইসি সচিবের

বিএনপির হাত ধরে বারবার গণতন্ত্র এসেছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

tab

নদীর মাঝখানে ইসি, নড়লেই নৌকা ডুববে: সংলাপে ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা, নারী কোটা কমানোর দাবি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

নির্বাচন কমিশন নিজেকে নদীর মাঝখানে থাকা নৌকা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলছে, নড়লেই ডুবে যাওয়ার অবস্থা। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আচরণবিধি প্রতিপালনে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চেয়েছে সংস্থাটি। ইসির পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, তারা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি চান না; বরং সহায়তা প্রত্যাশা করছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। প্রথম দিনের প্রথম পর্বে ছয়টি দলের প্রতিনিধি অংশ নিয়ে ভোটের প্রাক পরিবেশ, শঙ্কা, ইসির আন্তরিকতা, আইন সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

নিরাপত্তা অভিযান চালানোর পরামর্শ এলডিপির

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, "এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট নির্বাচনী নিরাপত্তা সঙ্কট বিরাজ করছে। গত দুই-তিন দিনের ঘটনা অবশ্যই বিবেচনায় নেব।"

সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচন করার কথা তুলে ধরে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, "কোনো কোনো দল কর্তৃত্ব প্রমাণে ডাকাত থেকে শুরু করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে হয়ত তালিকা রয়েছে।

"আমার মনে হয় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ঠ পরিমাণে যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল সেটা শুরু হয়নি। আমরা সঠিক সময় নির্বাচন চাই।…তফসিল ঘোষণার পূর্বে অবশ্যই সিকিউরিটি অপারেশন করা উচিত, যাতে জনগণের আস্থা ফিরে আসে। নির্বিঘ্নে ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।"

জোটে ভোট করলে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান করায় এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

"আগে যেমন ছিল তেমন থাকলে সবচেয়ে ভালো হয়। প্রতীক জোটের উপর, দলের উপর ছেড়ে দিতে হবে আগের মত।"

আরপিও সংশোধন করা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি রেখেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিয়ামুল বশীর ও আওরঙ্গজেব বেলাল।

খেলাফত আন্দোলনের মত

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কালো টাকা রোধ, প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, "ইসির প্রতি আস্থাহীনতা রয়েছে। আস্থা তৈরি করবে বর্তমান ইসি। ভোটের পরিবেশ সৃষ্টির আগে নির্বাচন হওয়া উচিত নয়। আগে ইসিকে যাচাই করতে হবে ভোটের পরিবেশ সৃষ্ট হয়েছে কিনা, আমি নির্বাচন পেছাতে চাই না।"

প্রয়োজনে একাধিক দিনে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে মত দেন তিনি।

"দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী রাখার বাধ্যবাধকতা ইসলামী দলগুলোর জন্য কঠিন হয়ে যায়। বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন", বলেন মহিউদ্দিন।

মুসলিম লীগের প্রস্তাব

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, "সঠিক সময়ে নির্বাচন চাই। নির্বাচনি পরিবেশের যেন উন্নতি হয় সে ব্যবস্থা নিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর মহিলা প্রতিনিধি কমিয়ে দিলে ভালো হয়, পুরুষ বাড়িয়ে দিলে আমাদের জন্য সুবিধান হয়। এত মহিলা প্রতিনিধির প্রয়োজন নেই বলে মনে হয়।"

সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের দাবি জানান দলটির আকবর হোসেন পাঠান।

তিনি বলেন, "এমপি প্রার্থী হতে ন্যূনতম মাস্টার্স এবং উপজেলা নির্বাচনে স্নাতক, ইউপি চেয়ারম্যানে এইচএসসি, মেম্বারে এসএসসি নির্ধারণ করার আবেদন থাকবে।"

সংলাপে এ দুজনের বক্তব্যের পর প্রেসিডেন্ট জুবেদা কাদের চৌধুরী ভিন্ন বক্তব্য দিলেন।

প্রত্যেক দল নারীদের কেন সংলাপে আনেনি সে প্রশ্ন রাখেন তিনি বলেন, "আজ আমাদের এখানে ওয়ান থার্ড মহিলা আস নি। মহিলারা ভালো শিক্ষিত। প্রত্যেক পার্টি কেন আনলেন না, তাদের সচেতন হতে হবে। রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছি, ছোটবেলা থেকে শিখেছি।"

আচরণবিধির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "এটা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। ভালো আচরণবিধি হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকেও অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।"

নিবন্ধনে কাগজপত্র যাচাই ও ইসির আন্তরিকতা

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, "জামানতের টাকার পরিমাণ কমাতে হবে।…নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ইসি নিবন্ধন না দিলেও আদালত থেকে নিবন্ধন নিয়ে আসছে। তাহলে ইসি কাগজপত্র ঠিকমত দেখছে না? এ বিষয়টি কমিশনের ভালোভাবে দেখতে হবে।"

ইসি কর্মকর্তারা যাচাই বাছাই করলে, ভালোভাবে দেখলে নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভোটের পরিবেশ অনুকূল হয়েছে কি না, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুন্দর দেওয়া কঠিন বলে মন্তব্য করেন এ দলের একজন নেতা।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধি বলেন, "সবাই এসে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার কথা বলে। কিন্তু সব নির্বাচনই নিরপেক্ষতা হারোনো হয়, এটা প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। এটা খুব কঠিন ব্যাপার। ইসি আন্তরিক থাকলে কিছুটা হলেও পারবেন আশা করি। জীবন সায়াহ্নে এসে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানাই।"

এখন দলের প্রচারণা চললেও তফসিল ঘোষণার পর ইসি কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জামানাতের টাকা ২০ হাজার টাকা পুননির্ধারণ, নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

দলের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে কমিশন দেখবে বলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন।

তফসিলের আগেও সুযোগ

নির্বাচন কমিশনার মো. আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যারা ১৮ বছর বয়সী তাদের অর্ন্তভুক্তের সময়সীমা রাখা হয়েছে। এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসে যারা অন্তর্ভূক্ত হচ্ছেন তাদের বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, ভোটার হালনাগাদ কার্যত্রম উন্মুক্ত রয়েছে। দেশের ভেতরে বাদ পড়া ভোটারদের তফসিল ঘোষণার আগেও তাদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

নদীর মাঝখানে ইসি, নড়লেই নৌকা ডুববে

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালনে সবার সহযোগিতা দরকার। সবাই মানলে নির্বাচনি পরিবেশ ভালো হতে বাধ্য।

"এবার কিন্তু একটা সুযোগ। এবারের নির্বাচন ভালো করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা নদীর মাঝখানে। নৌকাটা এমন নড়াচড়া করলেই ডুবে যাবে সোজা কথা। দেশটাতো চালাবেন আপনারা, রাজনীতিবিদরা। সঠিকভাবে নির্বাচনটা না হলে কি অবস্থা দাঁড়াতে পারে ভেবে দেখেন। যার অবস্থান থেকে সহায়তা করুন।"

নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেছেন, ইসি ভোটে রেফারির ভূমিকায় থাকবে।

"দলগুলো মাঠে থাকলে, সবার সহযোগিতা পেলে রেফারিগিরি সম্ভব।"

সংঘর্ষ চাই না, সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান

সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন জানান, আচরণবিধি প্রতিপালনে সহায়তা করতে হবে। পাশাপাশি সবার কাছে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। আচরণবিধি মানতে ও মানাতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

আচরণবিধি প্রচারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে দলগুলোর প্রতি সিইসি বলেন, "আপনারা কেউ গোঁ ধরে বসে থাকে আরণবিধি মানবোই না, তাহলে তো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমরা সাংঘর্ষ চাই না। কাউকে মোকাবেলা করতে চাই না; সবাইকে সাথে নিয়ে আচরণবিধি প্রতিপালনে এগিয়ে নিতে চাই।"

দুই ঘণ্টা ধরে প্রথম পর্বের আলোচনা চলে। বিকালের পর্বে আরও ছয় দলের সঙ্গে সংলাপ চলছে ইসির। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএমের সঙ্গে সংলাপে বসেছে ইসি।

নির্বাচন প্রস্তুতির মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে অংশীজনদের সঙ্গে ইসির মত বিনিময় শুরু হয়। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গণভোট, জোট করলেও ভোটের প্রতীক, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটিং পদ্ধতি, আইন-বিধি সংস্কার ও প্রতিপালন, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিসহ নানা বিষয় উঠে আসে আলোচনায়।

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে ইসি। রাজনৈতিক দলগুলোও এখন সেদিকে তাকিয়ে আছে।

বর্তমানে বিএনপি, জামায়াতসহ ৫৩টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। এবার এনসিপিসহ নতুন তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে নির্বাচন কমিশন।

এ ৫৬টির বাইরে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে ও পুরনো তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল রয়েছে।

back to top