নির্বাচন কমিশন নিজেকে নদীর মাঝখানে থাকা নৌকা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলছে, নড়লেই ডুবে যাওয়ার অবস্থা। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আচরণবিধি প্রতিপালনে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চেয়েছে সংস্থাটি। ইসির পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, তারা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি চান না; বরং সহায়তা প্রত্যাশা করছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। প্রথম দিনের প্রথম পর্বে ছয়টি দলের প্রতিনিধি অংশ নিয়ে ভোটের প্রাক পরিবেশ, শঙ্কা, ইসির আন্তরিকতা, আইন সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
নিরাপত্তা অভিযান চালানোর পরামর্শ এলডিপির
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, "এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট নির্বাচনী নিরাপত্তা সঙ্কট বিরাজ করছে। গত দুই-তিন দিনের ঘটনা অবশ্যই বিবেচনায় নেব।"
সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচন করার কথা তুলে ধরে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, "কোনো কোনো দল কর্তৃত্ব প্রমাণে ডাকাত থেকে শুরু করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে হয়ত তালিকা রয়েছে।
"আমার মনে হয় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ঠ পরিমাণে যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল সেটা শুরু হয়নি। আমরা সঠিক সময় নির্বাচন চাই।…তফসিল ঘোষণার পূর্বে অবশ্যই সিকিউরিটি অপারেশন করা উচিত, যাতে জনগণের আস্থা ফিরে আসে। নির্বিঘ্নে ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।"
জোটে ভোট করলে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান করায় এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
"আগে যেমন ছিল তেমন থাকলে সবচেয়ে ভালো হয়। প্রতীক জোটের উপর, দলের উপর ছেড়ে দিতে হবে আগের মত।"
আরপিও সংশোধন করা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি রেখেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিয়ামুল বশীর ও আওরঙ্গজেব বেলাল।
খেলাফত আন্দোলনের মত
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কালো টাকা রোধ, প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, "ইসির প্রতি আস্থাহীনতা রয়েছে। আস্থা তৈরি করবে বর্তমান ইসি। ভোটের পরিবেশ সৃষ্টির আগে নির্বাচন হওয়া উচিত নয়। আগে ইসিকে যাচাই করতে হবে ভোটের পরিবেশ সৃষ্ট হয়েছে কিনা, আমি নির্বাচন পেছাতে চাই না।"
প্রয়োজনে একাধিক দিনে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে মত দেন তিনি।
"দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী রাখার বাধ্যবাধকতা ইসলামী দলগুলোর জন্য কঠিন হয়ে যায়। বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন", বলেন মহিউদ্দিন।
মুসলিম লীগের প্রস্তাব
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, "সঠিক সময়ে নির্বাচন চাই। নির্বাচনি পরিবেশের যেন উন্নতি হয় সে ব্যবস্থা নিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর মহিলা প্রতিনিধি কমিয়ে দিলে ভালো হয়, পুরুষ বাড়িয়ে দিলে আমাদের জন্য সুবিধান হয়। এত মহিলা প্রতিনিধির প্রয়োজন নেই বলে মনে হয়।"
সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের দাবি জানান দলটির আকবর হোসেন পাঠান।
তিনি বলেন, "এমপি প্রার্থী হতে ন্যূনতম মাস্টার্স এবং উপজেলা নির্বাচনে স্নাতক, ইউপি চেয়ারম্যানে এইচএসসি, মেম্বারে এসএসসি নির্ধারণ করার আবেদন থাকবে।"
সংলাপে এ দুজনের বক্তব্যের পর প্রেসিডেন্ট জুবেদা কাদের চৌধুরী ভিন্ন বক্তব্য দিলেন।
প্রত্যেক দল নারীদের কেন সংলাপে আনেনি সে প্রশ্ন রাখেন তিনি বলেন, "আজ আমাদের এখানে ওয়ান থার্ড মহিলা আস নি। মহিলারা ভালো শিক্ষিত। প্রত্যেক পার্টি কেন আনলেন না, তাদের সচেতন হতে হবে। রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছি, ছোটবেলা থেকে শিখেছি।"
আচরণবিধির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "এটা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। ভালো আচরণবিধি হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকেও অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।"
নিবন্ধনে কাগজপত্র যাচাই ও ইসির আন্তরিকতা
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, "জামানতের টাকার পরিমাণ কমাতে হবে।…নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ইসি নিবন্ধন না দিলেও আদালত থেকে নিবন্ধন নিয়ে আসছে। তাহলে ইসি কাগজপত্র ঠিকমত দেখছে না? এ বিষয়টি কমিশনের ভালোভাবে দেখতে হবে।"
ইসি কর্মকর্তারা যাচাই বাছাই করলে, ভালোভাবে দেখলে নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভোটের পরিবেশ অনুকূল হয়েছে কি না, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুন্দর দেওয়া কঠিন বলে মন্তব্য করেন এ দলের একজন নেতা।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধি বলেন, "সবাই এসে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার কথা বলে। কিন্তু সব নির্বাচনই নিরপেক্ষতা হারোনো হয়, এটা প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। এটা খুব কঠিন ব্যাপার। ইসি আন্তরিক থাকলে কিছুটা হলেও পারবেন আশা করি। জীবন সায়াহ্নে এসে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানাই।"
এখন দলের প্রচারণা চললেও তফসিল ঘোষণার পর ইসি কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জামানাতের টাকা ২০ হাজার টাকা পুননির্ধারণ, নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
দলের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে কমিশন দেখবে বলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন।
তফসিলের আগেও সুযোগ
নির্বাচন কমিশনার মো. আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যারা ১৮ বছর বয়সী তাদের অর্ন্তভুক্তের সময়সীমা রাখা হয়েছে। এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসে যারা অন্তর্ভূক্ত হচ্ছেন তাদের বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, ভোটার হালনাগাদ কার্যত্রম উন্মুক্ত রয়েছে। দেশের ভেতরে বাদ পড়া ভোটারদের তফসিল ঘোষণার আগেও তাদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
নদীর মাঝখানে ইসি, নড়লেই নৌকা ডুববে
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালনে সবার সহযোগিতা দরকার। সবাই মানলে নির্বাচনি পরিবেশ ভালো হতে বাধ্য।
"এবার কিন্তু একটা সুযোগ। এবারের নির্বাচন ভালো করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা নদীর মাঝখানে। নৌকাটা এমন নড়াচড়া করলেই ডুবে যাবে সোজা কথা। দেশটাতো চালাবেন আপনারা, রাজনীতিবিদরা। সঠিকভাবে নির্বাচনটা না হলে কি অবস্থা দাঁড়াতে পারে ভেবে দেখেন। যার অবস্থান থেকে সহায়তা করুন।"
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেছেন, ইসি ভোটে রেফারির ভূমিকায় থাকবে।
"দলগুলো মাঠে থাকলে, সবার সহযোগিতা পেলে রেফারিগিরি সম্ভব।"
সংঘর্ষ চাই না, সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান
সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন জানান, আচরণবিধি প্রতিপালনে সহায়তা করতে হবে। পাশাপাশি সবার কাছে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। আচরণবিধি মানতে ও মানাতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
আচরণবিধি প্রচারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে দলগুলোর প্রতি সিইসি বলেন, "আপনারা কেউ গোঁ ধরে বসে থাকে আরণবিধি মানবোই না, তাহলে তো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমরা সাংঘর্ষ চাই না। কাউকে মোকাবেলা করতে চাই না; সবাইকে সাথে নিয়ে আচরণবিধি প্রতিপালনে এগিয়ে নিতে চাই।"
দুই ঘণ্টা ধরে প্রথম পর্বের আলোচনা চলে। বিকালের পর্বে আরও ছয় দলের সঙ্গে সংলাপ চলছে ইসির। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএমের সঙ্গে সংলাপে বসেছে ইসি।
নির্বাচন প্রস্তুতির মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে অংশীজনদের সঙ্গে ইসির মত বিনিময় শুরু হয়। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গণভোট, জোট করলেও ভোটের প্রতীক, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটিং পদ্ধতি, আইন-বিধি সংস্কার ও প্রতিপালন, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিসহ নানা বিষয় উঠে আসে আলোচনায়।
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে ইসি। রাজনৈতিক দলগুলোও এখন সেদিকে তাকিয়ে আছে।
বর্তমানে বিএনপি, জামায়াতসহ ৫৩টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। এবার এনসিপিসহ নতুন তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে নির্বাচন কমিশন।
এ ৫৬টির বাইরে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে ও পুরনো তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল রয়েছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
নির্বাচন কমিশন নিজেকে নদীর মাঝখানে থাকা নৌকা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলছে, নড়লেই ডুবে যাওয়ার অবস্থা। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আচরণবিধি প্রতিপালনে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চেয়েছে সংস্থাটি। ইসির পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, তারা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি চান না; বরং সহায়তা প্রত্যাশা করছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। প্রথম দিনের প্রথম পর্বে ছয়টি দলের প্রতিনিধি অংশ নিয়ে ভোটের প্রাক পরিবেশ, শঙ্কা, ইসির আন্তরিকতা, আইন সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
নিরাপত্তা অভিযান চালানোর পরামর্শ এলডিপির
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, "এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট নির্বাচনী নিরাপত্তা সঙ্কট বিরাজ করছে। গত দুই-তিন দিনের ঘটনা অবশ্যই বিবেচনায় নেব।"
সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচন করার কথা তুলে ধরে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, "কোনো কোনো দল কর্তৃত্ব প্রমাণে ডাকাত থেকে শুরু করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে হয়ত তালিকা রয়েছে।
"আমার মনে হয় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ঠ পরিমাণে যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল সেটা শুরু হয়নি। আমরা সঠিক সময় নির্বাচন চাই।…তফসিল ঘোষণার পূর্বে অবশ্যই সিকিউরিটি অপারেশন করা উচিত, যাতে জনগণের আস্থা ফিরে আসে। নির্বিঘ্নে ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।"
জোটে ভোট করলে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান করায় এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
"আগে যেমন ছিল তেমন থাকলে সবচেয়ে ভালো হয়। প্রতীক জোটের উপর, দলের উপর ছেড়ে দিতে হবে আগের মত।"
আরপিও সংশোধন করা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি রেখেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিয়ামুল বশীর ও আওরঙ্গজেব বেলাল।
খেলাফত আন্দোলনের মত
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কালো টাকা রোধ, প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, "ইসির প্রতি আস্থাহীনতা রয়েছে। আস্থা তৈরি করবে বর্তমান ইসি। ভোটের পরিবেশ সৃষ্টির আগে নির্বাচন হওয়া উচিত নয়। আগে ইসিকে যাচাই করতে হবে ভোটের পরিবেশ সৃষ্ট হয়েছে কিনা, আমি নির্বাচন পেছাতে চাই না।"
প্রয়োজনে একাধিক দিনে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে মত দেন তিনি।
"দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী রাখার বাধ্যবাধকতা ইসলামী দলগুলোর জন্য কঠিন হয়ে যায়। বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন", বলেন মহিউদ্দিন।
মুসলিম লীগের প্রস্তাব
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, "সঠিক সময়ে নির্বাচন চাই। নির্বাচনি পরিবেশের যেন উন্নতি হয় সে ব্যবস্থা নিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর মহিলা প্রতিনিধি কমিয়ে দিলে ভালো হয়, পুরুষ বাড়িয়ে দিলে আমাদের জন্য সুবিধান হয়। এত মহিলা প্রতিনিধির প্রয়োজন নেই বলে মনে হয়।"
সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের দাবি জানান দলটির আকবর হোসেন পাঠান।
তিনি বলেন, "এমপি প্রার্থী হতে ন্যূনতম মাস্টার্স এবং উপজেলা নির্বাচনে স্নাতক, ইউপি চেয়ারম্যানে এইচএসসি, মেম্বারে এসএসসি নির্ধারণ করার আবেদন থাকবে।"
সংলাপে এ দুজনের বক্তব্যের পর প্রেসিডেন্ট জুবেদা কাদের চৌধুরী ভিন্ন বক্তব্য দিলেন।
প্রত্যেক দল নারীদের কেন সংলাপে আনেনি সে প্রশ্ন রাখেন তিনি বলেন, "আজ আমাদের এখানে ওয়ান থার্ড মহিলা আস নি। মহিলারা ভালো শিক্ষিত। প্রত্যেক পার্টি কেন আনলেন না, তাদের সচেতন হতে হবে। রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছি, ছোটবেলা থেকে শিখেছি।"
আচরণবিধির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "এটা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। ভালো আচরণবিধি হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকেও অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।"
নিবন্ধনে কাগজপত্র যাচাই ও ইসির আন্তরিকতা
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, "জামানতের টাকার পরিমাণ কমাতে হবে।…নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ইসি নিবন্ধন না দিলেও আদালত থেকে নিবন্ধন নিয়ে আসছে। তাহলে ইসি কাগজপত্র ঠিকমত দেখছে না? এ বিষয়টি কমিশনের ভালোভাবে দেখতে হবে।"
ইসি কর্মকর্তারা যাচাই বাছাই করলে, ভালোভাবে দেখলে নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভোটের পরিবেশ অনুকূল হয়েছে কি না, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুন্দর দেওয়া কঠিন বলে মন্তব্য করেন এ দলের একজন নেতা।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধি বলেন, "সবাই এসে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার কথা বলে। কিন্তু সব নির্বাচনই নিরপেক্ষতা হারোনো হয়, এটা প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। এটা খুব কঠিন ব্যাপার। ইসি আন্তরিক থাকলে কিছুটা হলেও পারবেন আশা করি। জীবন সায়াহ্নে এসে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানাই।"
এখন দলের প্রচারণা চললেও তফসিল ঘোষণার পর ইসি কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জামানাতের টাকা ২০ হাজার টাকা পুননির্ধারণ, নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
দলের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে কমিশন দেখবে বলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন।
তফসিলের আগেও সুযোগ
নির্বাচন কমিশনার মো. আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যারা ১৮ বছর বয়সী তাদের অর্ন্তভুক্তের সময়সীমা রাখা হয়েছে। এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসে যারা অন্তর্ভূক্ত হচ্ছেন তাদের বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, ভোটার হালনাগাদ কার্যত্রম উন্মুক্ত রয়েছে। দেশের ভেতরে বাদ পড়া ভোটারদের তফসিল ঘোষণার আগেও তাদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
নদীর মাঝখানে ইসি, নড়লেই নৌকা ডুববে
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালনে সবার সহযোগিতা দরকার। সবাই মানলে নির্বাচনি পরিবেশ ভালো হতে বাধ্য।
"এবার কিন্তু একটা সুযোগ। এবারের নির্বাচন ভালো করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা নদীর মাঝখানে। নৌকাটা এমন নড়াচড়া করলেই ডুবে যাবে সোজা কথা। দেশটাতো চালাবেন আপনারা, রাজনীতিবিদরা। সঠিকভাবে নির্বাচনটা না হলে কি অবস্থা দাঁড়াতে পারে ভেবে দেখেন। যার অবস্থান থেকে সহায়তা করুন।"
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেছেন, ইসি ভোটে রেফারির ভূমিকায় থাকবে।
"দলগুলো মাঠে থাকলে, সবার সহযোগিতা পেলে রেফারিগিরি সম্ভব।"
সংঘর্ষ চাই না, সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান
সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন জানান, আচরণবিধি প্রতিপালনে সহায়তা করতে হবে। পাশাপাশি সবার কাছে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। আচরণবিধি মানতে ও মানাতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
আচরণবিধি প্রচারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে দলগুলোর প্রতি সিইসি বলেন, "আপনারা কেউ গোঁ ধরে বসে থাকে আরণবিধি মানবোই না, তাহলে তো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমরা সাংঘর্ষ চাই না। কাউকে মোকাবেলা করতে চাই না; সবাইকে সাথে নিয়ে আচরণবিধি প্রতিপালনে এগিয়ে নিতে চাই।"
দুই ঘণ্টা ধরে প্রথম পর্বের আলোচনা চলে। বিকালের পর্বে আরও ছয় দলের সঙ্গে সংলাপ চলছে ইসির। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএমের সঙ্গে সংলাপে বসেছে ইসি।
নির্বাচন প্রস্তুতির মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে অংশীজনদের সঙ্গে ইসির মত বিনিময় শুরু হয়। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গণভোট, জোট করলেও ভোটের প্রতীক, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটিং পদ্ধতি, আইন-বিধি সংস্কার ও প্রতিপালন, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিসহ নানা বিষয় উঠে আসে আলোচনায়।
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে ইসি। রাজনৈতিক দলগুলোও এখন সেদিকে তাকিয়ে আছে।
বর্তমানে বিএনপি, জামায়াতসহ ৫৩টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। এবার এনসিপিসহ নতুন তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে নির্বাচন কমিশন।
এ ৫৬টির বাইরে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে ও পুরনো তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল রয়েছে।