alt

মতামত » সম্পাদকীয়

প্রকাশ্যে ধূমপান, মবের সংস্কৃতি এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বয়ান

: বুধবার, ০৫ মার্চ ২০২৫

ঢাকার লালমাটিয়ায় গত শনিবার সন্ধ্যায় একটি চায়ের দোকানে দুই তরুণীর প্রকাশ্যে ধূমপানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা ও পরবর্তী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে, তা সমাজের এক গভীর সংকটের দিকে আঙুল তুলেছে। এ ঘটনায় জনতার হাতে তরুণীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার একটি বিতর্কিত বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তিনি বলেছেন, ‘ওপেন জায়গায় সিগারেট খাওয়া নারী-পুরুষ সবার জন্য নিষেধ,’ এবং এটিকে একটি ‘অফেন্স’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই বক্তব্য নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ঘটনাটি শুধু ধূমপানের আইনি সীমারেখা নিয়ে প্রশ্নই তুলছে না, বরং মব সংস্কৃতির উত্থান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বশীল ব্যক্তির ভূমিকা নিয়েও গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

দেশে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ অনুযায়ী, পাবলিক স্পেসে ধূমপান নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনে পাবলিক স্পেস বলতে সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন, হাসপাতাল, শপিংমল ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানকে বোঝানো হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে লালমাটিয়ার ঘটনাস্থল একটি মাঠের কোণে অবস্থিত অস্থায়ী চায়ের দোকান বা ‘টং দোকান’ কি আইনের সংজ্ঞায় পাবলিক স্পেসের আওতায় পড়ে। যদি সেটা পাবলিক স্পেস হিসেবে গণ্য না হয় তাহলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য আইনের ভুল ব্যাখ্যা এবং ঘটনার প্রকৃতি সম্পর্কে অস্পষ্টতার প্রতিফলন বলে মনে হয়। এটি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

এই ঘটনায় মব সংস্কৃতির যে ন্যক্কারজনক চিত্র উঠে এসেছে। যা আমাদের সমাজের সহনশীলতা ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবকে প্রকাশ করে। একজন ব্যক্তির ধূমপানে আর কারও আপত্তি থাকতে পারে কিনা সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে মানুষ জড়ো করে কাউকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তরুণীদের অভিযোগ, তাদের গালাগাল করা হয়েছিল, যার জবাবে তারা চা ছুড়েছিলেন। এরপর জনতা তাদের ঘিরে ফেলে, আটকে রেখে মারধর ও পোশাক টানাটানির মতো ঘটনা ঘটায়। এটি স্পষ্টতই একটি ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, পুলিশ জানিয়েছে, উভয়পক্ষের ‘আপস-মীমাংসা’র কারণে কোনো মামলা হয়নি। এই আপস কি সত্যিই স্বেচ্ছায় হয়েছিল, নাকি সমাজের চাপে ভুক্তভোগীদের বাধ্য করা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং অপরাধীদের শাস্তি না দেয়া মব সংস্কৃতিকে আরও উৎসাহিত করবে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য, যিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার পরিবর্তে ভুক্তভোগীদের দায়ী করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার বক্তব্যে ‘ভিকটিম ব্লেমিং’য়ের শামিল বলে কেউ কেউ মনে করছেন। তিনি অপরাধীদের শাস্তির কথা না বলে ধূমপানের ওপর জোর দিয়ে যেন পরোক্ষভাবে মবের অপসংস্কৃতিক সমর্থন দিয়েছেন। এটি শুধু আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞাই নয়, বরং নারীদের প্রতি সামাজিক বৈষম্য ও সহিংসতার প্রতি উদাসীনতারও প্রমাণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা, বিক্ষোভে কুশপুত্তলিকা দাহ এবং তার পদত্যাগের দাবি এই বক্তব্যের প্রতি জনগণের ক্ষোভেরই প্রতিফলন।

আমরা মনে করি, যিনি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে আছেন, তিনি কীভাবে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিতে পারেন? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উচিত ছিল অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মব সংস্কৃতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেয়া।

প্রকাশ্যে ধূমপান নিয়ে ব্যক্তিগত মতামত থাকতে পারে, কিন্তু তা আইন হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কাউকে দেয় না। লালমাটিয়ার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে।

কটিয়াদীতে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অভিযোগ আমলে নিন

ধানখেতে পোকার আক্রমণ: কৃষকের পাশে দাঁড়ান

কৃষিজমির পাশে ইউক্যালিপটাস: লাভ সাময়িক, ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদী

খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল চালু হতে আর কত অপেক্ষা

সদরপুর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে ব্যবস্থা নিন

সরকারি জমি দখল: ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে

রংপুর সিটি করপোরেশনে অটোরিকশার লাইসেন্স প্রসঙ্গে

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড প্রশ্ন অনেক, উত্তর মিলবে কি

দেবীদ্বার কলেজ মাঠ: অবহেলায় হারাতে বসেছে ঐতিহ্য

সিইপিজেডের আগুন: অবহেলা আর দায়িত্বহীনতার নজির

বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা : ফল বিপর্যয় নাকি বাস্তবতা

কুমারভোগের বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিন

বেহাল রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী: ব্যবস্থা নিন

শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি: যৌক্তিক পদক্ষেপ নিন

গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড: প্রশ্নবিদ্ধ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

ভিডব্লিউবি কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করুন

টিআরএম প্রকল্পের ক্ষতিপূরণ পেতে আর কত অপেক্ষা

জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার প্রকোপ

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করা যাচ্ছে না কেন

টাইফয়েড টিকা: ভালো উদ্যোগ

হামাস-ইসরায়েল চুক্তি: শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সফল হোক

বকুলতলায় স্থগিত শরৎ উৎসব!

সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্স টিকাদান কার্যক্রমে জনবল সংকট দূর করুন

বনভূমি দখল: ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন

নন্দীগ্রামে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকট

জরাজীর্ণ বিদ্যালয়গুলো সংস্কার করুন

কমছেই আলুর দাম, লোকসান বাড়ছে কৃষকের

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি কি পূরণ হলো?

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে

কন্যাশিশু নিপীড়নের উদ্বেগজনক চিত্র

ট্রাম্পের পরিকল্পনা একটি সম্ভাবনাময় সূচনা, কিন্তু পথ এখনও দীর্ঘ

বিজয়া দশমী: সম্প্রীতি রক্ষার অঙ্গীকার

প্লাস্টিক দূষণের শিকার সুন্দরবন: চাই জনসচেতনতা

খাগড়াছড়িতে সহিংসতা কি এড়ানো যেত না

এক প্রবীণের আর্তনাদ: সমাজ কি শুনবে?

tab

মতামত » সম্পাদকীয়

প্রকাশ্যে ধূমপান, মবের সংস্কৃতি এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বয়ান

বুধবার, ০৫ মার্চ ২০২৫

ঢাকার লালমাটিয়ায় গত শনিবার সন্ধ্যায় একটি চায়ের দোকানে দুই তরুণীর প্রকাশ্যে ধূমপানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা ও পরবর্তী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে, তা সমাজের এক গভীর সংকটের দিকে আঙুল তুলেছে। এ ঘটনায় জনতার হাতে তরুণীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার একটি বিতর্কিত বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তিনি বলেছেন, ‘ওপেন জায়গায় সিগারেট খাওয়া নারী-পুরুষ সবার জন্য নিষেধ,’ এবং এটিকে একটি ‘অফেন্স’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই বক্তব্য নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ঘটনাটি শুধু ধূমপানের আইনি সীমারেখা নিয়ে প্রশ্নই তুলছে না, বরং মব সংস্কৃতির উত্থান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বশীল ব্যক্তির ভূমিকা নিয়েও গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

দেশে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ অনুযায়ী, পাবলিক স্পেসে ধূমপান নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনে পাবলিক স্পেস বলতে সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন, হাসপাতাল, শপিংমল ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানকে বোঝানো হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে লালমাটিয়ার ঘটনাস্থল একটি মাঠের কোণে অবস্থিত অস্থায়ী চায়ের দোকান বা ‘টং দোকান’ কি আইনের সংজ্ঞায় পাবলিক স্পেসের আওতায় পড়ে। যদি সেটা পাবলিক স্পেস হিসেবে গণ্য না হয় তাহলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য আইনের ভুল ব্যাখ্যা এবং ঘটনার প্রকৃতি সম্পর্কে অস্পষ্টতার প্রতিফলন বলে মনে হয়। এটি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

এই ঘটনায় মব সংস্কৃতির যে ন্যক্কারজনক চিত্র উঠে এসেছে। যা আমাদের সমাজের সহনশীলতা ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবকে প্রকাশ করে। একজন ব্যক্তির ধূমপানে আর কারও আপত্তি থাকতে পারে কিনা সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে মানুষ জড়ো করে কাউকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তরুণীদের অভিযোগ, তাদের গালাগাল করা হয়েছিল, যার জবাবে তারা চা ছুড়েছিলেন। এরপর জনতা তাদের ঘিরে ফেলে, আটকে রেখে মারধর ও পোশাক টানাটানির মতো ঘটনা ঘটায়। এটি স্পষ্টতই একটি ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, পুলিশ জানিয়েছে, উভয়পক্ষের ‘আপস-মীমাংসা’র কারণে কোনো মামলা হয়নি। এই আপস কি সত্যিই স্বেচ্ছায় হয়েছিল, নাকি সমাজের চাপে ভুক্তভোগীদের বাধ্য করা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং অপরাধীদের শাস্তি না দেয়া মব সংস্কৃতিকে আরও উৎসাহিত করবে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য, যিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার পরিবর্তে ভুক্তভোগীদের দায়ী করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার বক্তব্যে ‘ভিকটিম ব্লেমিং’য়ের শামিল বলে কেউ কেউ মনে করছেন। তিনি অপরাধীদের শাস্তির কথা না বলে ধূমপানের ওপর জোর দিয়ে যেন পরোক্ষভাবে মবের অপসংস্কৃতিক সমর্থন দিয়েছেন। এটি শুধু আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞাই নয়, বরং নারীদের প্রতি সামাজিক বৈষম্য ও সহিংসতার প্রতি উদাসীনতারও প্রমাণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা, বিক্ষোভে কুশপুত্তলিকা দাহ এবং তার পদত্যাগের দাবি এই বক্তব্যের প্রতি জনগণের ক্ষোভেরই প্রতিফলন।

আমরা মনে করি, যিনি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে আছেন, তিনি কীভাবে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিতে পারেন? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উচিত ছিল অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মব সংস্কৃতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেয়া।

প্রকাশ্যে ধূমপান নিয়ে ব্যক্তিগত মতামত থাকতে পারে, কিন্তু তা আইন হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কাউকে দেয় না। লালমাটিয়ার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে।

back to top