ঈদ আসলেই গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ানোর এক অস্বাভাবিক প্রবণতা দেখা যায়। এ যেন এক অঘোষিত নিয়ম! যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা মহানগরীর ৯৮ শতাংশ গণপরিবহন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, মাত্র ১২ দিনে যাত্রীদের পকেট থেকে বেআইনিভাবে ৮৩২ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। এই অবস্থার স্থায়ী সমাধান কী?
বছরের পর বছর ধরে গণপরিবহন মালিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে, অথচ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অপ্রতুল। সরকারিভাবে পরিবহন ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও বাস্তবে তা মানা হয় না। বরং মালিকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছে। পরিবহন খাতে ভাড়া নির্ধারণের মূল ভিত্তি হলো জ্বালানি খরচ, যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, চালক ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা। এসব খরচের হিসাব করেই নির্ধারিত ভাড়া নেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিকরা নিজেদের খেয়ালখুশিকেই অনুসরণ করেন।
এই বেআইনি ভাড়া বাড়ানোর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পরিবহন খাতে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পরিবহন মালিকদের ক্ষমতা, এবং আইন প্রয়োগের দুর্বলতা।
আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে শুধু বাস বা লঞ্চ নয়, সিএনজি, অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, এমনকি প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সড়কপথের পাশাপাশি নৌপথেও বাড়তি ভাড়ার বোঝা যাত্রীদের কাঁধে পড়েছে। সদরঘাটসহ দেশের বিভিন্ন নদীবন্দর থেকে চলাচলকারী নৌযানগুলোতে অতিরিক্ত ৫০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বেআইনিভাবে নেওয়া হচ্ছে।
এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কী করছে? বিআরটিএ, নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীÑ এরা কি শুধুই দর্শকের ভূমিকা পালন করবে? গণপরিবহনের ভাড়া মনিটরিং করার জন্য বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও সেসব টিমে যাত্রী প্রতিনিধি নেই, ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি যেমন এ সমস্যার দিকে আলোকপাত করেছে, তেমনি সরকারেরও উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। অবিলম্বে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে, অভিযোগ নেওয়ার জন্য হটলাইন চালু করতে হবে এবং গণপরিবহন খাতকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
এছাড়া ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের সময় যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। ভাড়ার নির্ধারিত তালিকা প্রতিটি বাস, লঞ্চ, স্টেশন ও টার্মিনালে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে এবং অন্যায় ভাড়া গুনতে বাধ্য হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে হবে।
গণপরিবহন মালিকদের মুনাফার লোভ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যর্থতা এবং সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের এই চক্র ভাঙতে হবে। নইলে প্রতি ঈদেই একই দুর্ভোগের শিকার হতে হবে যাত্রীদের।
শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
ঈদ আসলেই গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ানোর এক অস্বাভাবিক প্রবণতা দেখা যায়। এ যেন এক অঘোষিত নিয়ম! যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা মহানগরীর ৯৮ শতাংশ গণপরিবহন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, মাত্র ১২ দিনে যাত্রীদের পকেট থেকে বেআইনিভাবে ৮৩২ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। এই অবস্থার স্থায়ী সমাধান কী?
বছরের পর বছর ধরে গণপরিবহন মালিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে, অথচ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অপ্রতুল। সরকারিভাবে পরিবহন ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও বাস্তবে তা মানা হয় না। বরং মালিকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছে। পরিবহন খাতে ভাড়া নির্ধারণের মূল ভিত্তি হলো জ্বালানি খরচ, যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, চালক ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা। এসব খরচের হিসাব করেই নির্ধারিত ভাড়া নেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিকরা নিজেদের খেয়ালখুশিকেই অনুসরণ করেন।
এই বেআইনি ভাড়া বাড়ানোর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পরিবহন খাতে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পরিবহন মালিকদের ক্ষমতা, এবং আইন প্রয়োগের দুর্বলতা।
আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে শুধু বাস বা লঞ্চ নয়, সিএনজি, অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, এমনকি প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সড়কপথের পাশাপাশি নৌপথেও বাড়তি ভাড়ার বোঝা যাত্রীদের কাঁধে পড়েছে। সদরঘাটসহ দেশের বিভিন্ন নদীবন্দর থেকে চলাচলকারী নৌযানগুলোতে অতিরিক্ত ৫০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বেআইনিভাবে নেওয়া হচ্ছে।
এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কী করছে? বিআরটিএ, নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীÑ এরা কি শুধুই দর্শকের ভূমিকা পালন করবে? গণপরিবহনের ভাড়া মনিটরিং করার জন্য বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও সেসব টিমে যাত্রী প্রতিনিধি নেই, ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি যেমন এ সমস্যার দিকে আলোকপাত করেছে, তেমনি সরকারেরও উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। অবিলম্বে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে, অভিযোগ নেওয়ার জন্য হটলাইন চালু করতে হবে এবং গণপরিবহন খাতকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
এছাড়া ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের সময় যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। ভাড়ার নির্ধারিত তালিকা প্রতিটি বাস, লঞ্চ, স্টেশন ও টার্মিনালে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে এবং অন্যায় ভাড়া গুনতে বাধ্য হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে হবে।
গণপরিবহন মালিকদের মুনাফার লোভ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যর্থতা এবং সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের এই চক্র ভাঙতে হবে। নইলে প্রতি ঈদেই একই দুর্ভোগের শিকার হতে হবে যাত্রীদের।