মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
নাগরিক অধিকার প্রতিটি মানুষের প্রাপ্য সেই অধিকার, যা তাকে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন, মতপ্রকাশ এবং উন্নত জীবনের সুযোগ দেয়। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম অংশে উল্লেখ করা হয়েছে যে দেশের প্রতিটি নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। তবে বাস্তবতায় দেখা যায়, অনেক নাগরিক তাদের অধিকার সম্পর্কে জানেন না কিংবা সেগুলো আদায়ে সক্রিয় নন। ফলে তারা নানাভাবে বঞ্চিত হন। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে নাগরিক অধিকার আদায়ে সচেতনতা সৃষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারগুলো মূলত সংবিধানের মাধ্যমে সুরক্ষিত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মৌলিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার। যেমন জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, এবং বিচার পাওয়ার অধিকার হচ্ছে মৌলিক অধিকার। রাজনৈতিক অধিকার হচ্ছে ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সমাবেশ করার অধিকার। সামাজিক অধিকার বলতে স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, বাসস্থান এবং পরিবেশ সংরক্ষণের অধিকার বুঝায়। অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের শ্রমিক অধিকার, ন্যায্য মজুরি এবং সম্পদ ভাগাভাগির অধিকার। এই অধিকারগুলো কার্যকর হলে প্রতিটি নাগরিক সমাজে সম্মানজনক ও সমান অবস্থান লাভ করতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করেন। এখানকার সাধারণ জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কেও সচেতন নয়। যেমন: বিচার প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা, অনেকে জানেন না যে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। পাশাপাশি মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং উত্তরাধিকার বিষয়ে এখনও অনেক গ্রামীণ এলাকায় সচেতনতার অভাব রয়েছে। গার্মেন্টস খাতের শ্রমিক থেকে শুরু করে কৃষি শ্রমিক, অনেকেই ন্যায্য মজুরি এবং কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ পাচ্ছেন না। আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনও নানাভাবে বৈষম্যের শিকার।
অধিকার আদায়ে অসচেতনতাই সবথেকে বড় কারণ। অধিকার জনগণের প্রাপ্য। সরকার ও রাষ্ট্রকে তা অবশ্যই দিতে হবে। তবে অধিকার সম্পর্কে সচেতন না থাকায় অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিভিন্নভাবে। তবে এর পেছনেও রয়েছে বিভিন্ন কারণ। প্রথমত শিক্ষার অভাব। এখনও দেশের একটি বড় অংশ নিরক্ষর। তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। পাশাপাশি অন্যতম বড় কারণ অর্থনৈতিক দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের কারণে মানুষ অধিকারের চেয়ে জীবিকার পেছনে বেশি মনোযোগ দেয়। অনেক সময় সরকারি সেবা বা সুবিধা পেতে হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব প্রশাসনিক জটিলতার ফলে অধিকাত বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ। এছাড়াও দলীয় রাজনীতির কারণে অনেক সময় সঠিক অধিকার আদায় ব্যাহত হয়।
অধিকার আদায়ে সচেতনতার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার প্রয়োজন। স্কুল-কলেজে মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার বিষয়ক পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গণমাধ্যমের ভূমিকা সবথেকে বেশি কার্যকরী হতে পারে সচেতনতা বৃদ্ধিতে। টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে অধিকার বিষয়ে প্রচারণা চালানো। গ্রামের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ পর্যায়ে সচেতনতা কর্মশালা এবং সেমিনার আয়োজন করতে হবে। এছাড়াও প্রয়োজন নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন। নারীদের অধিকার, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সচেতনতা কার্যক্রম চালাতে হবে। নাগরিকদের জন্য সংবিধান এবং আইন সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা এবং স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করলে প্রান্তিক থেকে শহর পর্যন্ত সকলের বোধগম্য হবে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও এনজিওকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তবে সরকারকে নাগরিক অধিকার রক্ষায় আরও আন্তরিক হতে হবে। যেমন- মৌলিক সেবা যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান এবং খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদান, বৈষম্য দূর করার জন্য কার্যকর আইন বাস্তবায়ন, দুর্নীতি দমন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি।
নাগরিক অধিকার আদায় শুধু একটি আইনি বিষয় নয়, এটি একটি নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রতিটি নাগরিককে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এটি শুধু মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করবে না, বরং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে অধিকার আদায়ে রাস্তা অবরোধ, ভাংচুর ইত্যাদি সহিংসতা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। নাগরিক সচেতনতা যত বাড়বে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন তত শক্তিশালী হবে। এক্ষেত্রে সরকার ও জনগণ উভয়কে ভূমিকা রাখতে হবে।
রাকিব হাসান
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
নাগরিক অধিকার প্রতিটি মানুষের প্রাপ্য সেই অধিকার, যা তাকে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন, মতপ্রকাশ এবং উন্নত জীবনের সুযোগ দেয়। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম অংশে উল্লেখ করা হয়েছে যে দেশের প্রতিটি নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। তবে বাস্তবতায় দেখা যায়, অনেক নাগরিক তাদের অধিকার সম্পর্কে জানেন না কিংবা সেগুলো আদায়ে সক্রিয় নন। ফলে তারা নানাভাবে বঞ্চিত হন। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে নাগরিক অধিকার আদায়ে সচেতনতা সৃষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারগুলো মূলত সংবিধানের মাধ্যমে সুরক্ষিত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মৌলিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার। যেমন জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, এবং বিচার পাওয়ার অধিকার হচ্ছে মৌলিক অধিকার। রাজনৈতিক অধিকার হচ্ছে ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সমাবেশ করার অধিকার। সামাজিক অধিকার বলতে স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, বাসস্থান এবং পরিবেশ সংরক্ষণের অধিকার বুঝায়। অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের শ্রমিক অধিকার, ন্যায্য মজুরি এবং সম্পদ ভাগাভাগির অধিকার। এই অধিকারগুলো কার্যকর হলে প্রতিটি নাগরিক সমাজে সম্মানজনক ও সমান অবস্থান লাভ করতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করেন। এখানকার সাধারণ জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কেও সচেতন নয়। যেমন: বিচার প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা, অনেকে জানেন না যে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। পাশাপাশি মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং উত্তরাধিকার বিষয়ে এখনও অনেক গ্রামীণ এলাকায় সচেতনতার অভাব রয়েছে। গার্মেন্টস খাতের শ্রমিক থেকে শুরু করে কৃষি শ্রমিক, অনেকেই ন্যায্য মজুরি এবং কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ পাচ্ছেন না। আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনও নানাভাবে বৈষম্যের শিকার।
অধিকার আদায়ে অসচেতনতাই সবথেকে বড় কারণ। অধিকার জনগণের প্রাপ্য। সরকার ও রাষ্ট্রকে তা অবশ্যই দিতে হবে। তবে অধিকার সম্পর্কে সচেতন না থাকায় অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিভিন্নভাবে। তবে এর পেছনেও রয়েছে বিভিন্ন কারণ। প্রথমত শিক্ষার অভাব। এখনও দেশের একটি বড় অংশ নিরক্ষর। তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। পাশাপাশি অন্যতম বড় কারণ অর্থনৈতিক দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের কারণে মানুষ অধিকারের চেয়ে জীবিকার পেছনে বেশি মনোযোগ দেয়। অনেক সময় সরকারি সেবা বা সুবিধা পেতে হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব প্রশাসনিক জটিলতার ফলে অধিকাত বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ। এছাড়াও দলীয় রাজনীতির কারণে অনেক সময় সঠিক অধিকার আদায় ব্যাহত হয়।
অধিকার আদায়ে সচেতনতার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার প্রয়োজন। স্কুল-কলেজে মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার বিষয়ক পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গণমাধ্যমের ভূমিকা সবথেকে বেশি কার্যকরী হতে পারে সচেতনতা বৃদ্ধিতে। টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে অধিকার বিষয়ে প্রচারণা চালানো। গ্রামের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ পর্যায়ে সচেতনতা কর্মশালা এবং সেমিনার আয়োজন করতে হবে। এছাড়াও প্রয়োজন নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন। নারীদের অধিকার, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সচেতনতা কার্যক্রম চালাতে হবে। নাগরিকদের জন্য সংবিধান এবং আইন সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা এবং স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করলে প্রান্তিক থেকে শহর পর্যন্ত সকলের বোধগম্য হবে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও এনজিওকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তবে সরকারকে নাগরিক অধিকার রক্ষায় আরও আন্তরিক হতে হবে। যেমন- মৌলিক সেবা যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান এবং খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদান, বৈষম্য দূর করার জন্য কার্যকর আইন বাস্তবায়ন, দুর্নীতি দমন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি।
নাগরিক অধিকার আদায় শুধু একটি আইনি বিষয় নয়, এটি একটি নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রতিটি নাগরিককে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এটি শুধু মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করবে না, বরং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে অধিকার আদায়ে রাস্তা অবরোধ, ভাংচুর ইত্যাদি সহিংসতা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। নাগরিক সচেতনতা যত বাড়বে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন তত শক্তিশালী হবে। এক্ষেত্রে সরকার ও জনগণ উভয়কে ভূমিকা রাখতে হবে।
রাকিব হাসান
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ