মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো কোম্পানী আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত। ব্যাংকিং লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্ব থাকলেও, একবার ব্যাংক গঠিত হলে নিয়োগ ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক কর্তৃত্ব থাকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস ও ম্যানেজিং ডিরেক্টরএর উপর। এই কারণেই প্রতিটি ব্যাংক তাদের নিজস্ব সার্ভিস রুলস বা এইচ আর পলিসি প্রণয়ন করে, যা বোর্ডে অনুমোদিত হলে ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক নিয়োগনীতি হিসেবে কার্যকর হয়।
সার্ভিস রুল (বিশেষত ধারা ৬.০০-৬.০৭) স্পষ্টভাবে বর্ণিত-নিয়োগ হতে পারে ডিরেক্ট রিক্রুমেন্ট,প্রমোশন, লেটারাল এন্ট্রি, চুক্তি বা আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এবং সাধারণত সরাসরি নিয়োগ সীমাবদ্ধ থাকে নির্দিষ্ট এন্ট্রি গ্রেডে-যেমন প্রবেশনারি অফিসার, ট্রেইনি জুনিয়র অফিসার, ট্রেইনি অ্যাসিস্টেন্ট অফিসার ও ট্রেইনি অ্যাসিস্টেন্ট অফিসার (ক্যাশ)। এখানে কোথাও “লিখিত পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা” বা “কেন্দ্রীয় সিলেবাস” বাধ্যতামূলক করার কথা উল্লেখ নেই। অর্থাৎ, ব্যাংক চাইলে ইন্টারভিউ, রেফারেন্স, অভিজ্ঞতা যাচাই বা নিজস্ব স্ক্রিনিং মেকানিজমের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দিতে পারে-এটি সার্ভিস রুল অনুযায়ী বৈধ।
এই প্রসঙ্গে দুটি প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ-প্রথমত, কেন ২০১৭ সালের পরবর্তী কিছু নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা চলছে, অথচ দেশের অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকেই বহু বছর ধরে সরাসরি রেফারেন্সভিত্তিক নিয়োগ প্রচলিত; দ্বিতীয়ত, যদি প্রকৃত অর্থে দক্ষ জনশক্তি বাছাই করাই লক্ষ্য থাকে, তাহলে কেন পলিসিতে একাডেমিক সার্টিফিকেট ও পেশাগত সার্টিফিকেটের জন্য নম্বর বরাদ্দ রাখা হয়নি?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট-নিয়োগজনিত অনিয়ম কখনো একক সময়ে বা একক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়; বাংলাদেশে বহু ব্যাংকে রেফারেন্সভিত্তিক নিয়োগের অভ্যাস দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়কাল বা নির্দিষ্ট জেলা (যেমন চট্টগ্রাম/এস আলম সম্পর্কিত অভিযুক্ত সময়) কে টার্গেট করে একপাক্ষিক দোষারোপ আরোপ করা হলে তা বৈষম্যমূলক এবং নীতিগতভাবে অসঙ্গত। যদি ইনসাফ প্রতিষ্ঠাই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে ফরেনসিক পরিসরে সকল প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও মানবসম্পদ রেকর্ড সমানভাবে মূল্যায়ন করা উচিত, শুধু নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠী বা সময়কে সামনে এনে মিডিয়া-ট্রায়ালের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।
দ্বিতীয় প্রশ্নে-পেশাগত মানদণ্ড হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইনস্টিটিউ অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (আইবিবি) কর্তৃক পরিচালিত জেএআইবিবি ও এআইবিবি পরীক্ষাকে স্বীকৃত বলা হয়। ১২টি বিষয়ের উপরে মোট ১২০০ নম্বরের এই পরীক্ষা কঠিন ও ব্যাপক; যেখানে পাশের মান সাধারণত ৫০% (কিছু ক্ষেত্রে ৪৫%)। যারা এই পরীক্ষায় সফল হয়েছেন, তাদেরকে ব্যাংকিং পেশায় বিশেষ মর্যাদা ও পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তাহলে তারা যা অর্জন করেছে-কেন সেটি পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে অবমূল্যায়ন করা হবে? যদি একটি কর্মকর্তা জেএআইবিবি/ এআইবিবি-এ উত্তীর্ণ ও বহু বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হন, তবুও তাকে অপ্রাসঙ্গিক একাডেমিক পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে বাধ্য করা হলে এটি পেশাগত মর্যাদার ক্ষতি।
বর্তমান “কম্পিটেন্সি টেস্ট”-এর প্রকৃতি ও সিলেবাসও প্রশ্নবিদ্ধ। পরীক্ষার প্রশ্ন যদি ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা ও নির্ধারিত সিলেবাসের বাইরে-যেমন উচ্চস্তরের গণিত বা ইংরেজি গ্রামার-থেকে আসে, তবে তা কার্যকলাপ-ভিত্তিক কর্মকর্তাদের কার্যদক্ষতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে না। এমন পরীক্ষা কার্যত দক্ষ কর্মকর্তাদের বাদ দিতে পারে; এটি যদি কেবল নির্দিষ্ট জনবর্গকে টার্গেট করে করা হয়, তবে তা ন্যায্যতার মূলনীতির পরিপন্থী।
অতএব, সৎ ও কার্যকর পন্থা হচ্ছে-পেশাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে মর্যাদা দিয়ে, নিয়োগ-মানদণ্ডে একাডেমিক স্কোর ও পেশাগত সার্টিফিকেট ও কাজের অভিজ্ঞতা-এই তিনটি উপাদানকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা। যদি সামগ্রিক মানবসম্পদের ফরেনসিক অডিট করা হয়, তা অবশ্যই সার্বজনীনভাবে ও সকল প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করতে হবে; নির্দিষ্ট জেলা বা নির্দিষ্ট সময়কেই কেন্দ্রে রেখে করা আভ্যন্তরীণ শুদ্ধিকরণ ন্যায্য হবে না।
সার্ভিস রুল অনুযায়ী পরিচালিত নিয়োগগুলো স্বত্ত্বত্যা বৈধ। যদি কোন অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রমাণ থাকে, সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আলাদা তদন্ত চালানো উচিত-না সার্বিকভাবে কিছু মানুষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে তাদের পেশাগত মর্যাদা হরণ করা। “ইনসাফ” চাইলে ইনসাফই চাই; কিন্তু ইনসাফের নামে বৈষম্য ও নির্বাচনী আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়।
রাফিকুল ইসলাম
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো কোম্পানী আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত। ব্যাংকিং লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্ব থাকলেও, একবার ব্যাংক গঠিত হলে নিয়োগ ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক কর্তৃত্ব থাকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস ও ম্যানেজিং ডিরেক্টরএর উপর। এই কারণেই প্রতিটি ব্যাংক তাদের নিজস্ব সার্ভিস রুলস বা এইচ আর পলিসি প্রণয়ন করে, যা বোর্ডে অনুমোদিত হলে ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক নিয়োগনীতি হিসেবে কার্যকর হয়।
সার্ভিস রুল (বিশেষত ধারা ৬.০০-৬.০৭) স্পষ্টভাবে বর্ণিত-নিয়োগ হতে পারে ডিরেক্ট রিক্রুমেন্ট,প্রমোশন, লেটারাল এন্ট্রি, চুক্তি বা আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এবং সাধারণত সরাসরি নিয়োগ সীমাবদ্ধ থাকে নির্দিষ্ট এন্ট্রি গ্রেডে-যেমন প্রবেশনারি অফিসার, ট্রেইনি জুনিয়র অফিসার, ট্রেইনি অ্যাসিস্টেন্ট অফিসার ও ট্রেইনি অ্যাসিস্টেন্ট অফিসার (ক্যাশ)। এখানে কোথাও “লিখিত পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা” বা “কেন্দ্রীয় সিলেবাস” বাধ্যতামূলক করার কথা উল্লেখ নেই। অর্থাৎ, ব্যাংক চাইলে ইন্টারভিউ, রেফারেন্স, অভিজ্ঞতা যাচাই বা নিজস্ব স্ক্রিনিং মেকানিজমের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দিতে পারে-এটি সার্ভিস রুল অনুযায়ী বৈধ।
এই প্রসঙ্গে দুটি প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ-প্রথমত, কেন ২০১৭ সালের পরবর্তী কিছু নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা চলছে, অথচ দেশের অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকেই বহু বছর ধরে সরাসরি রেফারেন্সভিত্তিক নিয়োগ প্রচলিত; দ্বিতীয়ত, যদি প্রকৃত অর্থে দক্ষ জনশক্তি বাছাই করাই লক্ষ্য থাকে, তাহলে কেন পলিসিতে একাডেমিক সার্টিফিকেট ও পেশাগত সার্টিফিকেটের জন্য নম্বর বরাদ্দ রাখা হয়নি?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট-নিয়োগজনিত অনিয়ম কখনো একক সময়ে বা একক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়; বাংলাদেশে বহু ব্যাংকে রেফারেন্সভিত্তিক নিয়োগের অভ্যাস দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়কাল বা নির্দিষ্ট জেলা (যেমন চট্টগ্রাম/এস আলম সম্পর্কিত অভিযুক্ত সময়) কে টার্গেট করে একপাক্ষিক দোষারোপ আরোপ করা হলে তা বৈষম্যমূলক এবং নীতিগতভাবে অসঙ্গত। যদি ইনসাফ প্রতিষ্ঠাই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে ফরেনসিক পরিসরে সকল প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও মানবসম্পদ রেকর্ড সমানভাবে মূল্যায়ন করা উচিত, শুধু নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠী বা সময়কে সামনে এনে মিডিয়া-ট্রায়ালের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।
দ্বিতীয় প্রশ্নে-পেশাগত মানদণ্ড হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইনস্টিটিউ অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (আইবিবি) কর্তৃক পরিচালিত জেএআইবিবি ও এআইবিবি পরীক্ষাকে স্বীকৃত বলা হয়। ১২টি বিষয়ের উপরে মোট ১২০০ নম্বরের এই পরীক্ষা কঠিন ও ব্যাপক; যেখানে পাশের মান সাধারণত ৫০% (কিছু ক্ষেত্রে ৪৫%)। যারা এই পরীক্ষায় সফল হয়েছেন, তাদেরকে ব্যাংকিং পেশায় বিশেষ মর্যাদা ও পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তাহলে তারা যা অর্জন করেছে-কেন সেটি পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে অবমূল্যায়ন করা হবে? যদি একটি কর্মকর্তা জেএআইবিবি/ এআইবিবি-এ উত্তীর্ণ ও বহু বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হন, তবুও তাকে অপ্রাসঙ্গিক একাডেমিক পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে বাধ্য করা হলে এটি পেশাগত মর্যাদার ক্ষতি।
বর্তমান “কম্পিটেন্সি টেস্ট”-এর প্রকৃতি ও সিলেবাসও প্রশ্নবিদ্ধ। পরীক্ষার প্রশ্ন যদি ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা ও নির্ধারিত সিলেবাসের বাইরে-যেমন উচ্চস্তরের গণিত বা ইংরেজি গ্রামার-থেকে আসে, তবে তা কার্যকলাপ-ভিত্তিক কর্মকর্তাদের কার্যদক্ষতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে না। এমন পরীক্ষা কার্যত দক্ষ কর্মকর্তাদের বাদ দিতে পারে; এটি যদি কেবল নির্দিষ্ট জনবর্গকে টার্গেট করে করা হয়, তবে তা ন্যায্যতার মূলনীতির পরিপন্থী।
অতএব, সৎ ও কার্যকর পন্থা হচ্ছে-পেশাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে মর্যাদা দিয়ে, নিয়োগ-মানদণ্ডে একাডেমিক স্কোর ও পেশাগত সার্টিফিকেট ও কাজের অভিজ্ঞতা-এই তিনটি উপাদানকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা। যদি সামগ্রিক মানবসম্পদের ফরেনসিক অডিট করা হয়, তা অবশ্যই সার্বজনীনভাবে ও সকল প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করতে হবে; নির্দিষ্ট জেলা বা নির্দিষ্ট সময়কেই কেন্দ্রে রেখে করা আভ্যন্তরীণ শুদ্ধিকরণ ন্যায্য হবে না।
সার্ভিস রুল অনুযায়ী পরিচালিত নিয়োগগুলো স্বত্ত্বত্যা বৈধ। যদি কোন অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রমাণ থাকে, সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আলাদা তদন্ত চালানো উচিত-না সার্বিকভাবে কিছু মানুষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে তাদের পেশাগত মর্যাদা হরণ করা। “ইনসাফ” চাইলে ইনসাফই চাই; কিন্তু ইনসাফের নামে বৈষম্য ও নির্বাচনী আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়।
রাফিকুল ইসলাম