alt

মতামত » চিঠিপত্র

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট: দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তির শেষ কোথায়?

: রোববার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

শিক্ষাজীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি অর্জন করা একজন শিক্ষার্থীর জীবনের অন্যতম আনন্দের মুহূর্ত। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেই আনন্দের মুহূর্তেই শুরু হয় এক নতুন দুঃস্বপ্নের অধ্যায় মূল সার্টিফিকেট পাওয়ার অনন্ত প্রতীক্ষা। ফলাফল প্রকাশিত, সব কোর্স শেষ, তবুও হাতে আসে না সেই কাক্সিক্ষত প্রমাণপত্র। কারণ একটাই কনভোকেশন না হলে মূল সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে না।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কনভোকেশন কি নিয়মিত হয়? বাস্তবতা বলছে, না। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কনভোকেশন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস, অনেক সময় বছরের পর বছর। কারণ, প্রথাগতভাবে রাষ্ট্রপতি বা কোনো উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদ/মন্ত্রীকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যাঁদের সময়সূচি ও নিরাপত্তাজনিত প্রস্তুতি মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়াই হয়ে পড়ে জটিল ও বিলম্বিত।

এখানে এক মৌলিক প্রশ্ন উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি কতটা প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থীর একাডেমিক সাফল্যের স্বীকৃতি দিতে হলে কি রাজনীতির আনুষ্ঠানিকতা অপরিহার্য? এই জটিলতায় পড়ে হাজারো শিক্ষার্থীকে প্রভিশনাল সার্টিফিকেটে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়, যা বিদেশে উচ্চশিক্ষা বা পেশাগত আবেদনগুলোর ক্ষেত্রে সব সময় গ্রহণযোগ্যতা পায় না। ফলে অনেকেরই আন্তর্জাতিক সুযোগ হাতছাড়া হয় শুধুমাত্র প্রশাসনিক বিলম্বের কারণে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শেখার অনেক কিছুই রয়েছে। সেখানে প্রতি সেমিস্টারের শেষে নির্ধারিত সময়েই গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান হয়-যা পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই, কোনো রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই। সেদিনই শিক্ষার্থীরা হাতে পায় তাদের অরিজিনাল সার্টিফিকেট।

আর আমাদের দেশে? একটি সার্টিফিকেট বা ট্রান্সক্রিপ্ট পেতে হলে শিক্ষার্থীকে ঘুরতে হয় একের পর এক দপ্তরে, ব্যাংকে জমা দিতে হয় টাকা, আবার নথিপত্র তুলতে হয় হাতে লিখে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের মাঝেও এই প্রক্রিয়া রয়ে গেছে পুরনো, ক্লান্তিকর ও সময়সাপেক্ষ।

অন্যদিকে, আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণ ডিজিটাল পোর্টালনির্ভর। প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিজস্ব প্রোফাইল থাকেÑযেখানে পরীক্ষার ফলাফল, ক্রেডিট স্ট্যাটাস, ডকুমেন্ট সবই অনলাইনে পাওয়া যায়। এমনকি ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা বিশেষ কিয়স্ক মেশিন থেকেও লগইন করে শিক্ষার্থীরা তাদের মূল সার্টিফিকেট বা ট্রান্সক্রিপ্ট প্রিন্ট করে নিতে পারে কয়েক মিনিটে।

প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশে এমন ডিজিটাল সিস্টেম চালু করা কি খুব কঠিন? উত্তর হলো না। শুধু প্রয়োজন দূরদর্শিতা, পরিকল্পনা ও সদিচ্ছা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত এখনই এই দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটানো। কনভোকেশন অনুষ্ঠানকে মূল সার্টিফিকেট বিতরণের বাধ্যতামূলক ধাপ না রেখে এটি একটি ঐচ্ছিক সম্মাননা অনুষ্ঠান হিসেবে রাখা যেতে পারে।

সরকারেরও উচিত উচ্চশিক্ষায় প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছতা ও গতি আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের ভার কমবে, দুর্নীতি হ্রাস পাবে, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে সময়মতো।

ডিজিটালাইজেশন এখন আর কোনো বিলাসিতা নয়, এটি সময়ের দাবি। আধুনিক, দ্রুত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করাই হবে প্রকৃত “স্মার্ট বাংলাদেশ” এর পথে বড় পদক্ষেপ।

একজন শিক্ষার্থী যখন তার পড়াশোনা শেষ করে, তখন তার প্রাপ্য স্বীকৃতির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করা অন্যায়।আমরা চাই এই ভোগান্তির শেষ হোক, এবং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বমানের দক্ষতা, প্রযুক্তি ও স্বচ্ছতার উদাহরণ হয়ে উঠুক।

সাদিয়া সুলতানা রিমি

শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পুরান ঢাকার রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা

নিরাপদ শিশু খাদ্য: জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়: প্রতিদিনের দুঃস্বপ্ন

পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা

হেমন্ত আসে হিম কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে

জীবনের অভিধানে প্রবীণদের স্থান কোথায়?

নীরবতা নয়, বলতে শেখ

সুন্দরবনে টেকসই পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ও করণীয়

প্রথার নামে প্রথাগত শোষণ: উচ্চ কাবিনের ফাঁদ

শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা

মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক জায়ান্টদের মাস্টার প্ল্যান

গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যু কেন কেবলই সংখ্যা?

বাল্যবিয়ে: সমাজের এক নীরব অভিশাপ

মনোস্বাস্থ্যের সংকটে তরুণরা: নীরবতার আড়ালে এক ভয়াবহ বাস্তবতা

ধূমপানের প্রভাব

ইসলামী ব্যাংকগুলোতে সার্ভিস রুল অনুযায়ী নিয়োগ

শিশুর হাতে মোবাইল নয়, চাই জীবনের মাঠে ফেরার ডাক

মতিঝিল-গুলিস্তান রুটে চক্রাকার বাস সার্ভিস : শৃঙ্খল ও স্বস্তির সম্ভাবনা

ভাঙ্গা-খুলনা সড়ক দ্রুত চার লেনে উন্নীত করুন

ডিজিটাল উপনিবেশ : অদৃশ্য শৃঙ্খলের শাসন

বাউফল থেকে লোহালিয়া ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা

পরিবেশ বিপর্যয়ের অজানা মুখ

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের শেষ কোথায়?

টেকসই উন্নয়ন ও আদিবাসীদের অধিকার

শব্দদূষণ বন্ধ হবে কবে?

চট্টগ্রাম দোহাজারী অংশে রেল চালু হোক

দেশের প্রথম শহীদ মিনারের উপেক্ষিত ইতিহাস

তরুণদের হীনমন্যতা ও মত প্রকাশে অনীহা

বন সংরক্ষণ ও উন্নয়ন

শুধু ফেব্রুয়ারিতে ভাষার দরদ?

ভাষা ও সাহিত্যের মিলনমেলা

জমি দখলের ক্ষতিপূরণ চাই

পুরান ঢাকায় মশার উৎপাত

গুইমারায় স্বাস্থ্যসেবা সংকট : অবিলম্বে সমাধান প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু : একটি জাতীয় সংকট

tab

মতামত » চিঠিপত্র

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট: দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তির শেষ কোথায়?

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

রোববার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

শিক্ষাজীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি অর্জন করা একজন শিক্ষার্থীর জীবনের অন্যতম আনন্দের মুহূর্ত। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেই আনন্দের মুহূর্তেই শুরু হয় এক নতুন দুঃস্বপ্নের অধ্যায় মূল সার্টিফিকেট পাওয়ার অনন্ত প্রতীক্ষা। ফলাফল প্রকাশিত, সব কোর্স শেষ, তবুও হাতে আসে না সেই কাক্সিক্ষত প্রমাণপত্র। কারণ একটাই কনভোকেশন না হলে মূল সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে না।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কনভোকেশন কি নিয়মিত হয়? বাস্তবতা বলছে, না। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কনভোকেশন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস, অনেক সময় বছরের পর বছর। কারণ, প্রথাগতভাবে রাষ্ট্রপতি বা কোনো উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদ/মন্ত্রীকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যাঁদের সময়সূচি ও নিরাপত্তাজনিত প্রস্তুতি মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়াই হয়ে পড়ে জটিল ও বিলম্বিত।

এখানে এক মৌলিক প্রশ্ন উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি কতটা প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থীর একাডেমিক সাফল্যের স্বীকৃতি দিতে হলে কি রাজনীতির আনুষ্ঠানিকতা অপরিহার্য? এই জটিলতায় পড়ে হাজারো শিক্ষার্থীকে প্রভিশনাল সার্টিফিকেটে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়, যা বিদেশে উচ্চশিক্ষা বা পেশাগত আবেদনগুলোর ক্ষেত্রে সব সময় গ্রহণযোগ্যতা পায় না। ফলে অনেকেরই আন্তর্জাতিক সুযোগ হাতছাড়া হয় শুধুমাত্র প্রশাসনিক বিলম্বের কারণে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শেখার অনেক কিছুই রয়েছে। সেখানে প্রতি সেমিস্টারের শেষে নির্ধারিত সময়েই গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান হয়-যা পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই, কোনো রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই। সেদিনই শিক্ষার্থীরা হাতে পায় তাদের অরিজিনাল সার্টিফিকেট।

আর আমাদের দেশে? একটি সার্টিফিকেট বা ট্রান্সক্রিপ্ট পেতে হলে শিক্ষার্থীকে ঘুরতে হয় একের পর এক দপ্তরে, ব্যাংকে জমা দিতে হয় টাকা, আবার নথিপত্র তুলতে হয় হাতে লিখে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের মাঝেও এই প্রক্রিয়া রয়ে গেছে পুরনো, ক্লান্তিকর ও সময়সাপেক্ষ।

অন্যদিকে, আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণ ডিজিটাল পোর্টালনির্ভর। প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিজস্ব প্রোফাইল থাকেÑযেখানে পরীক্ষার ফলাফল, ক্রেডিট স্ট্যাটাস, ডকুমেন্ট সবই অনলাইনে পাওয়া যায়। এমনকি ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা বিশেষ কিয়স্ক মেশিন থেকেও লগইন করে শিক্ষার্থীরা তাদের মূল সার্টিফিকেট বা ট্রান্সক্রিপ্ট প্রিন্ট করে নিতে পারে কয়েক মিনিটে।

প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশে এমন ডিজিটাল সিস্টেম চালু করা কি খুব কঠিন? উত্তর হলো না। শুধু প্রয়োজন দূরদর্শিতা, পরিকল্পনা ও সদিচ্ছা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত এখনই এই দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটানো। কনভোকেশন অনুষ্ঠানকে মূল সার্টিফিকেট বিতরণের বাধ্যতামূলক ধাপ না রেখে এটি একটি ঐচ্ছিক সম্মাননা অনুষ্ঠান হিসেবে রাখা যেতে পারে।

সরকারেরও উচিত উচ্চশিক্ষায় প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছতা ও গতি আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের ভার কমবে, দুর্নীতি হ্রাস পাবে, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে সময়মতো।

ডিজিটালাইজেশন এখন আর কোনো বিলাসিতা নয়, এটি সময়ের দাবি। আধুনিক, দ্রুত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করাই হবে প্রকৃত “স্মার্ট বাংলাদেশ” এর পথে বড় পদক্ষেপ।

একজন শিক্ষার্থী যখন তার পড়াশোনা শেষ করে, তখন তার প্রাপ্য স্বীকৃতির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করা অন্যায়।আমরা চাই এই ভোগান্তির শেষ হোক, এবং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বমানের দক্ষতা, প্রযুক্তি ও স্বচ্ছতার উদাহরণ হয়ে উঠুক।

সাদিয়া সুলতানা রিমি

শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

back to top