alt

মতামত » চিঠিপত্র

ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতি ও বাংলাদেশের সমুদ্রকৌশল

: বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

জাতিসংঘের ভাষায়, ব্লু ইকোনমি হলো “সমুদ্র ও উপকূলের সম্পদকে এমনভাবে ব্যবহার করা যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং পরিবেশের ভারসাম্য একসাথে বজায় থাকে।” বাংলাদেশের জন্য এই ধারণা ভবিষ্যত সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। ২০১২ ও ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা বিরোধ মীমাংসার পর আমরা পেয়েছি প্রায় ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকা- যা ব্লু ইকোনমির বিশাল সুযোগ তৈরি করেছে। অর্থ্যাৎ, জলের এক নতুন ভূখন্ড- যেখানে নিজস্ব সমুদ্রসীমার বাইরে মহীসোপানের এক বিরাট এলাকার উপর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই এলাকার মৎস্য ও সমুদ্রের তল দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই নীল ভূখন্ডকে আমরা কতটা জানি? কতটা পারি একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে?

বঙ্গোপসাগর একসময় ছিল নিছক বাণিজ্যপথ; কিন্তু ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতির স্রোতে এই সাগর এখন এক কৌশলগত গেটওয়ে। একদিকে চীন সমুদ্রপথে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে। আবার ভারত চাইছে, নিজেদের এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে।

ফলত, এই ত্রিমুখী প্রতিযোগিতার মাঝখানে বাংলাদেশকে পথ খুঁজতে হবে সতর্ক কুটনৈতিক কৌশলের মধ্য দিয়ে।

২০২৩ সালে বাংলাদেশ নিজেদের প্রকাশিত “ইন্দো প্যাসিফিক আউটলুক” নীতিতে স্পষ্ট ভাবে বলেছে,আমাদের লক্ষ্য কোন জোট নয়। বরং উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ইন্দো প্যাসিফিক গঠন। এটিকে বাস্তববাদী অবস্থানই বলা যায়; কারণ সমুদ্র যেমন অর্থনীতির উৎস, তেমনি সংঘাতের ক্ষেত্রও। সমুদ্র জয় করার পর ব্লু ইকোনমি সেল গঠন করা হয়েছে।

গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্য জাহাজ কেনার নীতিমালা সহজ করা হয়েছে এবং নতুন জাহাজ কেনা হচ্ছে।ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’-এও সমুদ্র অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তাছাড়া, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ কর্তৃক প্রস্তাবিত বাজেটে ব্লু ইকোনমি ও গবেষণার জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে নীল অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও দুর্বল সামুদ্রিক অবকাঠামো, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং নীতিগত সমন্বয়ের অভাবে ব্লু ইকোনমি যৌক্তিক বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বেগ পেতে হচ্ছে।

মূলত, ব্লু ইকোনমির মূল দর্শনই হলো টেকসই উন্নয়ন- অর্থ্যাৎ সমুদ্রকে ব্যবহার করতে হবে, কিন্তু শোষণ নয় পাশাপাশি উন্নয়নের বিনিময়ে ধ্বংস নয়। সেক্ষেত্রে এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন একটি সমন্বিত সামুদ্রিক নীতি , যেখানে স্পষ্টভাবে নির্ধারিত থাকবে-গবেষণার অগ্রাধিকার, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিবেশ সুরক্ষার কৌশল এবং বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ। একই সঙ্গে মেরিন বিশ্ববিদ্যালয়, কোস্ট গার্ড এবং সমুদ্র গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধুমাত্র প্রশাসনিক সংস্থা হিসেবে নয়, বরং জাতীয় কৌশল নির্ধারণের অংশীদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখা জরুরি। কারণ, সমুদ্র অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শুধু সম্পদ আহরণের ওপর নয়, বরং আমরা কতটা জ্ঞাননির্ভর ও টেকসইভাবে সেই সম্পদ পরিচালনা করতে পারছি তার ওপর।

সর্বোপরি, সমুদ্র এখন শুধু নৌবাহিনীর বিষয় নয়- এটি অর্থনীতি, নিরাপত্তা, জলবায়ু ও কূটনীতির সংযোগস্থল। যে দেশ নীলের অর্থ বোঝে, ঢেউয়ের নীচের মানচিত্র বুঝে, সেই দেশই ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে থাকে। বাংলাদেশও যদি বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর মতো জ্ঞান, কৌশল ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ব্লু ইকোনমির সুযোগ নিতে পারে, তবে এই সাগর শুধু সম্পদের নয়, প্রতীক হয়ে উঠবে আত্মবিশ্বাসেরও।

মারিয়া হক শৈলী

শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট: দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তির শেষ কোথায়?

পুরান ঢাকার রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা

নিরাপদ শিশু খাদ্য: জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়: প্রতিদিনের দুঃস্বপ্ন

পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা

হেমন্ত আসে হিম কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে

জীবনের অভিধানে প্রবীণদের স্থান কোথায়?

নীরবতা নয়, বলতে শেখ

সুন্দরবনে টেকসই পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ও করণীয়

প্রথার নামে প্রথাগত শোষণ: উচ্চ কাবিনের ফাঁদ

শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা

মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক জায়ান্টদের মাস্টার প্ল্যান

গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যু কেন কেবলই সংখ্যা?

বাল্যবিয়ে: সমাজের এক নীরব অভিশাপ

মনোস্বাস্থ্যের সংকটে তরুণরা: নীরবতার আড়ালে এক ভয়াবহ বাস্তবতা

ধূমপানের প্রভাব

ইসলামী ব্যাংকগুলোতে সার্ভিস রুল অনুযায়ী নিয়োগ

শিশুর হাতে মোবাইল নয়, চাই জীবনের মাঠে ফেরার ডাক

মতিঝিল-গুলিস্তান রুটে চক্রাকার বাস সার্ভিস : শৃঙ্খল ও স্বস্তির সম্ভাবনা

ভাঙ্গা-খুলনা সড়ক দ্রুত চার লেনে উন্নীত করুন

ডিজিটাল উপনিবেশ : অদৃশ্য শৃঙ্খলের শাসন

বাউফল থেকে লোহালিয়া ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা

পরিবেশ বিপর্যয়ের অজানা মুখ

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের শেষ কোথায়?

টেকসই উন্নয়ন ও আদিবাসীদের অধিকার

শব্দদূষণ বন্ধ হবে কবে?

চট্টগ্রাম দোহাজারী অংশে রেল চালু হোক

দেশের প্রথম শহীদ মিনারের উপেক্ষিত ইতিহাস

তরুণদের হীনমন্যতা ও মত প্রকাশে অনীহা

বন সংরক্ষণ ও উন্নয়ন

শুধু ফেব্রুয়ারিতে ভাষার দরদ?

ভাষা ও সাহিত্যের মিলনমেলা

জমি দখলের ক্ষতিপূরণ চাই

পুরান ঢাকায় মশার উৎপাত

গুইমারায় স্বাস্থ্যসেবা সংকট : অবিলম্বে সমাধান প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

tab

মতামত » চিঠিপত্র

ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতি ও বাংলাদেশের সমুদ্রকৌশল

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘের ভাষায়, ব্লু ইকোনমি হলো “সমুদ্র ও উপকূলের সম্পদকে এমনভাবে ব্যবহার করা যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং পরিবেশের ভারসাম্য একসাথে বজায় থাকে।” বাংলাদেশের জন্য এই ধারণা ভবিষ্যত সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। ২০১২ ও ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা বিরোধ মীমাংসার পর আমরা পেয়েছি প্রায় ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকা- যা ব্লু ইকোনমির বিশাল সুযোগ তৈরি করেছে। অর্থ্যাৎ, জলের এক নতুন ভূখন্ড- যেখানে নিজস্ব সমুদ্রসীমার বাইরে মহীসোপানের এক বিরাট এলাকার উপর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই এলাকার মৎস্য ও সমুদ্রের তল দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই নীল ভূখন্ডকে আমরা কতটা জানি? কতটা পারি একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে?

বঙ্গোপসাগর একসময় ছিল নিছক বাণিজ্যপথ; কিন্তু ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতির স্রোতে এই সাগর এখন এক কৌশলগত গেটওয়ে। একদিকে চীন সমুদ্রপথে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে। আবার ভারত চাইছে, নিজেদের এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে।

ফলত, এই ত্রিমুখী প্রতিযোগিতার মাঝখানে বাংলাদেশকে পথ খুঁজতে হবে সতর্ক কুটনৈতিক কৌশলের মধ্য দিয়ে।

২০২৩ সালে বাংলাদেশ নিজেদের প্রকাশিত “ইন্দো প্যাসিফিক আউটলুক” নীতিতে স্পষ্ট ভাবে বলেছে,আমাদের লক্ষ্য কোন জোট নয়। বরং উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ইন্দো প্যাসিফিক গঠন। এটিকে বাস্তববাদী অবস্থানই বলা যায়; কারণ সমুদ্র যেমন অর্থনীতির উৎস, তেমনি সংঘাতের ক্ষেত্রও। সমুদ্র জয় করার পর ব্লু ইকোনমি সেল গঠন করা হয়েছে।

গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্য জাহাজ কেনার নীতিমালা সহজ করা হয়েছে এবং নতুন জাহাজ কেনা হচ্ছে।ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’-এও সমুদ্র অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তাছাড়া, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ কর্তৃক প্রস্তাবিত বাজেটে ব্লু ইকোনমি ও গবেষণার জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে নীল অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও দুর্বল সামুদ্রিক অবকাঠামো, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং নীতিগত সমন্বয়ের অভাবে ব্লু ইকোনমি যৌক্তিক বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বেগ পেতে হচ্ছে।

মূলত, ব্লু ইকোনমির মূল দর্শনই হলো টেকসই উন্নয়ন- অর্থ্যাৎ সমুদ্রকে ব্যবহার করতে হবে, কিন্তু শোষণ নয় পাশাপাশি উন্নয়নের বিনিময়ে ধ্বংস নয়। সেক্ষেত্রে এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন একটি সমন্বিত সামুদ্রিক নীতি , যেখানে স্পষ্টভাবে নির্ধারিত থাকবে-গবেষণার অগ্রাধিকার, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিবেশ সুরক্ষার কৌশল এবং বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ। একই সঙ্গে মেরিন বিশ্ববিদ্যালয়, কোস্ট গার্ড এবং সমুদ্র গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধুমাত্র প্রশাসনিক সংস্থা হিসেবে নয়, বরং জাতীয় কৌশল নির্ধারণের অংশীদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখা জরুরি। কারণ, সমুদ্র অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শুধু সম্পদ আহরণের ওপর নয়, বরং আমরা কতটা জ্ঞাননির্ভর ও টেকসইভাবে সেই সম্পদ পরিচালনা করতে পারছি তার ওপর।

সর্বোপরি, সমুদ্র এখন শুধু নৌবাহিনীর বিষয় নয়- এটি অর্থনীতি, নিরাপত্তা, জলবায়ু ও কূটনীতির সংযোগস্থল। যে দেশ নীলের অর্থ বোঝে, ঢেউয়ের নীচের মানচিত্র বুঝে, সেই দেশই ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে থাকে। বাংলাদেশও যদি বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর মতো জ্ঞান, কৌশল ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ব্লু ইকোনমির সুযোগ নিতে পারে, তবে এই সাগর শুধু সম্পদের নয়, প্রতীক হয়ে উঠবে আত্মবিশ্বাসেরও।

মারিয়া হক শৈলী

শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা।

back to top