মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
নদী, খাল, বিল, হ্রদ ও সমুদ্র-বাংলাদেশের জলজ সম্পদ একসময় ছিল প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যরে আশ্রয়স্থল। কিন্তু এখন সেই জলাশয়গুলো ক্রমেই হারাচ্ছে প্রাণ। একদিকে শিল্পবর্জ্য, অন্যদিকে প্লাস্টিক ও পলিথিনের আগ্রাসন-সব মিলিয়ে পানির নিচের জীবন যেন নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। প্লাস্টিক বর্জ্য এখন এক নীরব ঘাতকের মতো জলজ প্রাণীর জীবন শেষ করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হচ্ছে মাছ। নীরবে, অদৃশ্যভাবে প্লাস্টিকের বিষ ছড়িয়ে পড়ছে পানির নিচে, মৃত্যুর ফাঁদে পড়ছে জলজ প্রাণ।
আজকাল শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-সব জায়গাতেই প্লাস্টিকের ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, পলিথিন ব্যাগ, চিপসের মোড়ক, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের গ্লাস ও চামচ-সব কিছুই শেষ পর্যন্ত নদী বা ড্রেনে গিয়ে জমা হচ্ছে। বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে এই বর্জ্য ভেসে চলে যাচ্ছে নদী ও সমুদ্রে। ধীরে ধীরে সেগুলো ভেঙে তৈরি হচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক, যা খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে জলজ জীবনে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাছ এই ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণাগুলোকে খাবার ভেবে খেয়ে ফেলছে। ফলে তাদের পরিপাকতন্ত্রে ক্ষত তৈরি হচ্ছে, খাদ্য গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, এবং ধীরে ধীরে তারা মারা যাচ্ছে। অনেক মাছের শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক জমে যাচ্ছে।
এই দূষণ শুধু মাছ নয়, পুরো জলজ বাস্তুতন্ত্রকে বিপন্ন করছে। মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়া, এমনকি জলজ পাখিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর তলদেশে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, যার ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের দেশ যেমন নদীমাতৃক, তেমনি নদীর প্রাণই এখন মরে যাচ্ছে মানুষের অবহেলায়।
আর এই চক্র এখানেই শেষ নয়। দূষিত মাছ শেষ পর্যন্ত মানুষের খাদ্যতালিকায় ফিরে আসছে। অর্থাৎ আমরা নিজেরাই নিজের ক্ষতি ডেকে আনছি। একদিকে নদী মরছে, অন্যদিকে সেই নদীর মৃত্যু আমাদের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলছে।
এখনই সময় সমাধানের পথে হাঁটার। সমস্যার সমাধানে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ। প্রথমত, সরকারকে কঠোরভাবে প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরিবেশবান্ধব বিকল্প যেমন কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের প্যাকেট বা বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য ব্যবহারে উৎসাহ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, শহর ও গ্রাম উভয় এলাকায় প্লাস্টিক সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার (recycling) ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তৃতীয়ত, গণমাধ্যম, স্কুল-কলেজ ও সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে-কারণ সচেতন মানুষই পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি।
আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে গেলে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার, প্লাস্টিক বোতলের পরিবর্তে কাঁচ বা স্টিলের পাত্র ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক পণ্য এড়িয়ে চলা-এসব ছোট পদক্ষেপই বড় প্রভাব ফেলতে পারে।আমরা যদি এখনই ব্যবস্থা না নিই, তাহলে একদিন হয়তো নদী থাকবে, কিন্তু তাতে কোনো প্রাণ থাকবে না।
তাই,প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে মানুষ কখনো জয়ী হতে পারে না। তাই এখনই আমাদের বুঝে নিতে হবে-প্রকৃতি বাঁচলে তবেই আমরা বাঁচব। নদী ও মাছের প্রাণ বাঁচাতে হলে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের লড়াই শুরু করতে হবে আজ থেকেই, প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ববোধ থেকেই।
জান্নাতুল ফেরদাউস অহনা
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
নদী, খাল, বিল, হ্রদ ও সমুদ্র-বাংলাদেশের জলজ সম্পদ একসময় ছিল প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যরে আশ্রয়স্থল। কিন্তু এখন সেই জলাশয়গুলো ক্রমেই হারাচ্ছে প্রাণ। একদিকে শিল্পবর্জ্য, অন্যদিকে প্লাস্টিক ও পলিথিনের আগ্রাসন-সব মিলিয়ে পানির নিচের জীবন যেন নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। প্লাস্টিক বর্জ্য এখন এক নীরব ঘাতকের মতো জলজ প্রাণীর জীবন শেষ করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হচ্ছে মাছ। নীরবে, অদৃশ্যভাবে প্লাস্টিকের বিষ ছড়িয়ে পড়ছে পানির নিচে, মৃত্যুর ফাঁদে পড়ছে জলজ প্রাণ।
আজকাল শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-সব জায়গাতেই প্লাস্টিকের ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, পলিথিন ব্যাগ, চিপসের মোড়ক, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের গ্লাস ও চামচ-সব কিছুই শেষ পর্যন্ত নদী বা ড্রেনে গিয়ে জমা হচ্ছে। বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে এই বর্জ্য ভেসে চলে যাচ্ছে নদী ও সমুদ্রে। ধীরে ধীরে সেগুলো ভেঙে তৈরি হচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক, যা খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে জলজ জীবনে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাছ এই ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণাগুলোকে খাবার ভেবে খেয়ে ফেলছে। ফলে তাদের পরিপাকতন্ত্রে ক্ষত তৈরি হচ্ছে, খাদ্য গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, এবং ধীরে ধীরে তারা মারা যাচ্ছে। অনেক মাছের শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক জমে যাচ্ছে।
এই দূষণ শুধু মাছ নয়, পুরো জলজ বাস্তুতন্ত্রকে বিপন্ন করছে। মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়া, এমনকি জলজ পাখিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর তলদেশে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, যার ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের দেশ যেমন নদীমাতৃক, তেমনি নদীর প্রাণই এখন মরে যাচ্ছে মানুষের অবহেলায়।
আর এই চক্র এখানেই শেষ নয়। দূষিত মাছ শেষ পর্যন্ত মানুষের খাদ্যতালিকায় ফিরে আসছে। অর্থাৎ আমরা নিজেরাই নিজের ক্ষতি ডেকে আনছি। একদিকে নদী মরছে, অন্যদিকে সেই নদীর মৃত্যু আমাদের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলছে।
এখনই সময় সমাধানের পথে হাঁটার। সমস্যার সমাধানে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ। প্রথমত, সরকারকে কঠোরভাবে প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরিবেশবান্ধব বিকল্প যেমন কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের প্যাকেট বা বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য ব্যবহারে উৎসাহ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, শহর ও গ্রাম উভয় এলাকায় প্লাস্টিক সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার (recycling) ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তৃতীয়ত, গণমাধ্যম, স্কুল-কলেজ ও সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে-কারণ সচেতন মানুষই পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি।
আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে গেলে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার, প্লাস্টিক বোতলের পরিবর্তে কাঁচ বা স্টিলের পাত্র ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক পণ্য এড়িয়ে চলা-এসব ছোট পদক্ষেপই বড় প্রভাব ফেলতে পারে।আমরা যদি এখনই ব্যবস্থা না নিই, তাহলে একদিন হয়তো নদী থাকবে, কিন্তু তাতে কোনো প্রাণ থাকবে না।
তাই,প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে মানুষ কখনো জয়ী হতে পারে না। তাই এখনই আমাদের বুঝে নিতে হবে-প্রকৃতি বাঁচলে তবেই আমরা বাঁচব। নদী ও মাছের প্রাণ বাঁচাতে হলে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের লড়াই শুরু করতে হবে আজ থেকেই, প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ববোধ থেকেই।
জান্নাতুল ফেরদাউস অহনা
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।