alt

মতামত » চিঠিপত্র

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা

: বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত প্রতিনিয়ত বিস্তৃত হচ্ছে, রোগীর চাপ বাড়ছে, বাজেট বৃদ্ধি পাচ্ছে, অবকাঠামো আধুনিক হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনিক কাঠামোয় সেই উন্নয়ন দেখা যায় খুবই কম। দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে এখনো চিকিৎসকদেরই প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। চিকিৎসা এবং প্রশাসন দুটি ভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্র হলেও বাস্তবে একজন চিকিৎসকের কাঁধেই রোগী দেখা থেকে শুরু করে আর্থিক ব্যবস্থাপনা, জনবল নিয়ন্ত্রণ, ক্রয় কার্যক্রম, পরিষেবা তদারকি পর্যন্ত সমস্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফলে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয় এবং হাসপাতালের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এই বাস্তবতায় প্রতিটি হাসপাতালে পৃথক প্রশাসনিক ক্যাডার নিয়োগ এখন সময়ের দাবি।

চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা একই দক্ষতার মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। একজন চিকিৎসকের মূল দায়িত্ব রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা প্রদান এবং জরুরি সেবায় মনোনিবেশ করা। তিনি প্রশাসনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। হাসপাতালের বাজেট প্রণয়ন, টেন্ডার ব্যবস্থাপনা, হিসাবরক্ষণ, মানবসম্পদ পরিচালনা, সরবরাহ এবং আইনগত নথিপত্র পরিচালনার মতো বিষয়গুলো বিশেষ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দাবি করে। কিন্তু এসব দায়িত্ব নিতে গিয়ে চিকিৎসকদের সময় এবং মনোযোগ বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার প্রভাব সরাসরি রোগীর সেবায় পড়ে।

যদি হাসপাতালে নিজস্ব প্রশাসনিক ক্যাডার থাকতো, তারা নিয়মিত তদারকি, আইন প্রয়োগ, অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার মাধ্যমে দালালচক্র নিয়ন্ত্রণে আরও দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারতেন। এতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমে যেতো এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী হতো।

প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ওষুধ সংকট, যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন নষ্ট অবস্থায় পড়ে থাকা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় অব্যবস্থা, স্টাফ অনুপস্থিতি, অপচয় এবং ক্রয় অনিয়মের মতো সমস্যা তৈরি হয়। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা না থাকায় রোগীরা ভোগান্তির শিকার হন। দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা থাকলে এসব সমস্যার সমাধান আরও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে করা সম্ভব।

আন্তর্জাতিকভাবে দেখা যায়, উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থায় হাসপাতাল পরিচালনা করে পেশাদার প্রশাসনিক টিম। চিকিৎসক কেবলমাত্র চিকিৎসা সেবায় মনোনিবেশ করেন। ইংল্যান্ড, জাপান, সিঙ্গাপুরসহ বহু দেশে হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে পৃথক স্বাস্থ্য প্রশাসন ক্যাডার রয়েছে। এতে সেবা কার্যক্রম হয় আরও স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক, পাশাপাশি চিকিৎসকরা তাদের মূল দায়িত্বে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারেন।

বাংলাদেশেও প্রতিটি হাসপাতালে প্রশাসনিক ক্যাডার নিয়োগ করলে সুশৃঙ্খল বাজেট ব্যবস্থাপনা, মানসম্মত ক্রয় ও সরবরাহ, স্টাফ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ এবং সেবার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি দুর্নীতি, অপব্যবহার এবং অদক্ষতার সুযোগ কমে যাবে। রোগী সেবা হবে আরও দ্রুত, সহজ এবং জনবান্ধব।

স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনকে পেশাদার হাতে তুলে দিতে হবে। চিকিৎসকরা চিকিৎসায় এবং প্রশাসনিক ক্যাডাররা ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন করলে হাসপাতালগুলো হবে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ এবং আধুনিক। সময় এসেছে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় কাঠামোগত পরিবর্তন আনার এবং একটি পৃথক প্রশাসনিক ক্যাডার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত ও টেকসই করার।

রাইসুল ইসলাম রিফাত

নকলা, শেরপুর

ভেজাল খেজুরগুড় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্লাস্টিক বর্জ্যে মাছের মৃত্যু: সমাধান কোথায়

খোলা ম্যানহোল: ঢাকার রাজপথে এক নীরব মরণফাঁদ

গণপরিবহন: প্রতিদিনের যন্ত্রণার শেষ কবে?

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ

সাইবার বুলিং ও ভার্চুয়াল অপরাধ: তরুণদের অদৃশ্য বিপদ

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরজীবনের চরম ভোগান্তি

রাবি মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার চাই

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

কক্সবাজার: উন্নয়নের পথে, বিপন্ন প্রকৃতি

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে নতুন সম্ভাবনার ভোর

প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর না হলে মানোন্নয়ন অসম্ভব

রাবির আবাসন সংকট

সব হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সেবা চালু করা হোক

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা

পানি সংকট: জীবন ও সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি

ই-লার্নিং: সীমান্তহীন শিক্ষার নতুন দিগন্ত

আজিমপুর কলোনির অব্যবস্থাপনা

জনস্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক : তামাকজাত পণ্য

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়: অবস্থান, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতি ও বাংলাদেশের সমুদ্রকৌশল

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট: দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তির শেষ কোথায়?

পুরান ঢাকার রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা

নিরাপদ শিশু খাদ্য: জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়: প্রতিদিনের দুঃস্বপ্ন

পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা

হেমন্ত আসে হিম কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে

জীবনের অভিধানে প্রবীণদের স্থান কোথায়?

নীরবতা নয়, বলতে শেখ

সুন্দরবনে টেকসই পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ও করণীয়

প্রথার নামে প্রথাগত শোষণ: উচ্চ কাবিনের ফাঁদ

শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা

মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক জায়ান্টদের মাস্টার প্ল্যান

গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যু কেন কেবলই সংখ্যা?

বাল্যবিয়ে: সমাজের এক নীরব অভিশাপ

মনোস্বাস্থ্যের সংকটে তরুণরা: নীরবতার আড়ালে এক ভয়াবহ বাস্তবতা

tab

মতামত » চিঠিপত্র

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত প্রতিনিয়ত বিস্তৃত হচ্ছে, রোগীর চাপ বাড়ছে, বাজেট বৃদ্ধি পাচ্ছে, অবকাঠামো আধুনিক হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনিক কাঠামোয় সেই উন্নয়ন দেখা যায় খুবই কম। দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে এখনো চিকিৎসকদেরই প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। চিকিৎসা এবং প্রশাসন দুটি ভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্র হলেও বাস্তবে একজন চিকিৎসকের কাঁধেই রোগী দেখা থেকে শুরু করে আর্থিক ব্যবস্থাপনা, জনবল নিয়ন্ত্রণ, ক্রয় কার্যক্রম, পরিষেবা তদারকি পর্যন্ত সমস্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফলে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয় এবং হাসপাতালের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এই বাস্তবতায় প্রতিটি হাসপাতালে পৃথক প্রশাসনিক ক্যাডার নিয়োগ এখন সময়ের দাবি।

চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা একই দক্ষতার মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। একজন চিকিৎসকের মূল দায়িত্ব রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা প্রদান এবং জরুরি সেবায় মনোনিবেশ করা। তিনি প্রশাসনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। হাসপাতালের বাজেট প্রণয়ন, টেন্ডার ব্যবস্থাপনা, হিসাবরক্ষণ, মানবসম্পদ পরিচালনা, সরবরাহ এবং আইনগত নথিপত্র পরিচালনার মতো বিষয়গুলো বিশেষ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দাবি করে। কিন্তু এসব দায়িত্ব নিতে গিয়ে চিকিৎসকদের সময় এবং মনোযোগ বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার প্রভাব সরাসরি রোগীর সেবায় পড়ে।

যদি হাসপাতালে নিজস্ব প্রশাসনিক ক্যাডার থাকতো, তারা নিয়মিত তদারকি, আইন প্রয়োগ, অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার মাধ্যমে দালালচক্র নিয়ন্ত্রণে আরও দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারতেন। এতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমে যেতো এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী হতো।

প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ওষুধ সংকট, যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন নষ্ট অবস্থায় পড়ে থাকা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় অব্যবস্থা, স্টাফ অনুপস্থিতি, অপচয় এবং ক্রয় অনিয়মের মতো সমস্যা তৈরি হয়। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা না থাকায় রোগীরা ভোগান্তির শিকার হন। দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা থাকলে এসব সমস্যার সমাধান আরও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে করা সম্ভব।

আন্তর্জাতিকভাবে দেখা যায়, উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থায় হাসপাতাল পরিচালনা করে পেশাদার প্রশাসনিক টিম। চিকিৎসক কেবলমাত্র চিকিৎসা সেবায় মনোনিবেশ করেন। ইংল্যান্ড, জাপান, সিঙ্গাপুরসহ বহু দেশে হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে পৃথক স্বাস্থ্য প্রশাসন ক্যাডার রয়েছে। এতে সেবা কার্যক্রম হয় আরও স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক, পাশাপাশি চিকিৎসকরা তাদের মূল দায়িত্বে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারেন।

বাংলাদেশেও প্রতিটি হাসপাতালে প্রশাসনিক ক্যাডার নিয়োগ করলে সুশৃঙ্খল বাজেট ব্যবস্থাপনা, মানসম্মত ক্রয় ও সরবরাহ, স্টাফ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ এবং সেবার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি দুর্নীতি, অপব্যবহার এবং অদক্ষতার সুযোগ কমে যাবে। রোগী সেবা হবে আরও দ্রুত, সহজ এবং জনবান্ধব।

স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনকে পেশাদার হাতে তুলে দিতে হবে। চিকিৎসকরা চিকিৎসায় এবং প্রশাসনিক ক্যাডাররা ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন করলে হাসপাতালগুলো হবে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ এবং আধুনিক। সময় এসেছে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় কাঠামোগত পরিবর্তন আনার এবং একটি পৃথক প্রশাসনিক ক্যাডার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত ও টেকসই করার।

রাইসুল ইসলাম রিফাত

নকলা, শেরপুর

back to top