alt

মতামত » চিঠিপত্র

সামাজিক মাধ্যমের ভুবনে জনতুষ্টিবাদের নতুন রূপ

: বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি আমাদের জীবনযাত্রাকে আমূল বদলে দিয়েছে। সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন সামাজিক মাধ্যম। একসময় সংবাদপত্র, রেডিও বা টেলিভিশন বিভিন্ন বয়সী মানুষের জন্য তথ্য সরবরাহ করত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভূমিকা ক্রমে সামাজিক মাধ্যমের হাতে চলে এসেছে। এখন এটি শুধু তথ্যের উৎস নয়-এটি একইসঙ্গে বার্তা তৈরির, প্রচারের এবং ভোগের সমানাধিকারের একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম।

সামাজিক মাধ্যম আমাদের সামনে এমন একটি কৃত্রিম ডিজিটাল জগৎ খুলে দিয়েছে যেখানে প্রত্যেকে নিজেদের আলাদা পরিচয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি করে ‘কাল্ট সত্তা’ হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তব জীবনের সঙ্গে ব্যক্তির আচরণের সাদৃশ্য নষ্ট করছে। নিজের সত্যিকারের পরিচয়ের চেয়ে ভার্চুয়াল পরিচয়কে গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।

এই পরিস্থিতি আমাদেরকে ধীরে ধীরে একধরনের জনতুষ্টিবাদী চরিত্রে পরিণত করছে। জনতুষ্টিবাদ একসময় শুধু রাজনৈতিক কৌশল ছিল, কিন্তু এখন ব্যক্তিজীবনেও এর প্রভাব বাড়ছে সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে। যেভাবে জনতুষ্টিবাদীরা নিজেদের ‘সঠিক ও মহান’ গোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরতে চান, তেমনি অনেক ব্যবহারকারীও ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব কিংবা এক্স–এর মতো প্ল্যাটফর্মে নিজেদের নিখুঁত ইমেজ দেখানোর দিকে ঝুঁকছেন। কেউ কেউ আবার প্রভাবশালী হতে নানা ধরনের কনটেন্ট বানিয়ে ভাইরাল হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

কিন্তু এই দৌড় আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিকে দুর্বল করছে। ভাইরাল হওয়ার নেশায় আমরা অনেক সময় মানবিক বিবেচনাবোধ হারিয়ে ফেলছি। যে বিষয় ট্রেন্ডিং থাকে, সেটির সঙ্গেই যুক্ত হয়ে পড়ছি; অথচ বেকারত্ব, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, জীবনমানের অবনতি এ ধরনের জরুরি জাতীয় ইস্যুগুলো আলোচনার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে সমাজের সামগ্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

এ ছাড়া ভাইরালমুখী জনতুষ্টিবাদী আচরণ অনেককে নৈতিক স্খলনে ঠেলে দিচ্ছে। অসাধু, অশোভন ও মানসিক বিকৃতি সৃষ্টিকারী কনটেন্ট তরুণদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। একইভাবে অপতথ্য ও কুতথ্যের বিস্তার বিশ্বজুড়ে সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে।

যেখানে ফ্রেন্ডস্টার বা ফেসবুকের মতো প্রথমদিকের সামাজিক মাধ্যমগুলো মানুষের মধ্যে যোগাযোগের সেতুবন্ধন গড়ার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছিল, সেখানে এখন কনটেন্ট তৈরির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতা মানুষকে নৈতিকভাবে দুর্বল করছে। ভিউ বাড়ানোর দৌড়ে ব্যবহারকারীরা ক্রমে আরও অপ্রতিরোধ্য জনতুষ্টিবাদী চরিত্রে পরিণত হচ্ছেন।

মিডিয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থার সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, বিশ্বের ৬২ শতাংশের বেশি মানুষ সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়। নানা নতুন সুবিধা ও ফিচারের কারণে এই সংখ্যা আরও বাড়ছে। এমন বাস্তবতায় প্রয়োজন আত্মনিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্বশীলতা। আমাদের মনে রাখতে হবে সামাজিক মাধ্যম কোনো জনতুষ্টিবাদী প্রচারমাধ্যম নয়। তাই প্রতিটি তথ্য শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করা জরুরি। কনটেন্ট তৈরির সময় সামাজিক রীতি, শিষ্টাচার ও মানবিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিতে হবে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে হবে।

এভাবেই সামাজিক মাধ্যমকে মানবতার পক্ষে এক কল্যাণকর ডিজিটাল ভুবনে রূপ দেওয়া সম্ভব এটাই আমার বিশ্বাস।

রুশাইদ আহমেদ

শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

ভেজাল খেজুরগুড় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা

প্লাস্টিক বর্জ্যে মাছের মৃত্যু: সমাধান কোথায়

খোলা ম্যানহোল: ঢাকার রাজপথে এক নীরব মরণফাঁদ

গণপরিবহন: প্রতিদিনের যন্ত্রণার শেষ কবে?

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ

সাইবার বুলিং ও ভার্চুয়াল অপরাধ: তরুণদের অদৃশ্য বিপদ

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরজীবনের চরম ভোগান্তি

রাবি মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার চাই

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

কক্সবাজার: উন্নয়নের পথে, বিপন্ন প্রকৃতি

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে নতুন সম্ভাবনার ভোর

প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর না হলে মানোন্নয়ন অসম্ভব

রাবির আবাসন সংকট

সব হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সেবা চালু করা হোক

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা

পানি সংকট: জীবন ও সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি

ই-লার্নিং: সীমান্তহীন শিক্ষার নতুন দিগন্ত

আজিমপুর কলোনির অব্যবস্থাপনা

জনস্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক : তামাকজাত পণ্য

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়: অবস্থান, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতি ও বাংলাদেশের সমুদ্রকৌশল

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট: দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তির শেষ কোথায়?

পুরান ঢাকার রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা

নিরাপদ শিশু খাদ্য: জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়: প্রতিদিনের দুঃস্বপ্ন

পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা

হেমন্ত আসে হিম কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে

জীবনের অভিধানে প্রবীণদের স্থান কোথায়?

নীরবতা নয়, বলতে শেখ

সুন্দরবনে টেকসই পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ও করণীয়

প্রথার নামে প্রথাগত শোষণ: উচ্চ কাবিনের ফাঁদ

শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা

মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক জায়ান্টদের মাস্টার প্ল্যান

গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যু কেন কেবলই সংখ্যা?

বাল্যবিয়ে: সমাজের এক নীরব অভিশাপ

tab

মতামত » চিঠিপত্র

সামাজিক মাধ্যমের ভুবনে জনতুষ্টিবাদের নতুন রূপ

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি আমাদের জীবনযাত্রাকে আমূল বদলে দিয়েছে। সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন সামাজিক মাধ্যম। একসময় সংবাদপত্র, রেডিও বা টেলিভিশন বিভিন্ন বয়সী মানুষের জন্য তথ্য সরবরাহ করত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভূমিকা ক্রমে সামাজিক মাধ্যমের হাতে চলে এসেছে। এখন এটি শুধু তথ্যের উৎস নয়-এটি একইসঙ্গে বার্তা তৈরির, প্রচারের এবং ভোগের সমানাধিকারের একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম।

সামাজিক মাধ্যম আমাদের সামনে এমন একটি কৃত্রিম ডিজিটাল জগৎ খুলে দিয়েছে যেখানে প্রত্যেকে নিজেদের আলাদা পরিচয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি করে ‘কাল্ট সত্তা’ হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তব জীবনের সঙ্গে ব্যক্তির আচরণের সাদৃশ্য নষ্ট করছে। নিজের সত্যিকারের পরিচয়ের চেয়ে ভার্চুয়াল পরিচয়কে গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।

এই পরিস্থিতি আমাদেরকে ধীরে ধীরে একধরনের জনতুষ্টিবাদী চরিত্রে পরিণত করছে। জনতুষ্টিবাদ একসময় শুধু রাজনৈতিক কৌশল ছিল, কিন্তু এখন ব্যক্তিজীবনেও এর প্রভাব বাড়ছে সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে। যেভাবে জনতুষ্টিবাদীরা নিজেদের ‘সঠিক ও মহান’ গোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরতে চান, তেমনি অনেক ব্যবহারকারীও ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব কিংবা এক্স–এর মতো প্ল্যাটফর্মে নিজেদের নিখুঁত ইমেজ দেখানোর দিকে ঝুঁকছেন। কেউ কেউ আবার প্রভাবশালী হতে নানা ধরনের কনটেন্ট বানিয়ে ভাইরাল হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

কিন্তু এই দৌড় আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিকে দুর্বল করছে। ভাইরাল হওয়ার নেশায় আমরা অনেক সময় মানবিক বিবেচনাবোধ হারিয়ে ফেলছি। যে বিষয় ট্রেন্ডিং থাকে, সেটির সঙ্গেই যুক্ত হয়ে পড়ছি; অথচ বেকারত্ব, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, জীবনমানের অবনতি এ ধরনের জরুরি জাতীয় ইস্যুগুলো আলোচনার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে সমাজের সামগ্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

এ ছাড়া ভাইরালমুখী জনতুষ্টিবাদী আচরণ অনেককে নৈতিক স্খলনে ঠেলে দিচ্ছে। অসাধু, অশোভন ও মানসিক বিকৃতি সৃষ্টিকারী কনটেন্ট তরুণদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। একইভাবে অপতথ্য ও কুতথ্যের বিস্তার বিশ্বজুড়ে সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে।

যেখানে ফ্রেন্ডস্টার বা ফেসবুকের মতো প্রথমদিকের সামাজিক মাধ্যমগুলো মানুষের মধ্যে যোগাযোগের সেতুবন্ধন গড়ার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছিল, সেখানে এখন কনটেন্ট তৈরির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতা মানুষকে নৈতিকভাবে দুর্বল করছে। ভিউ বাড়ানোর দৌড়ে ব্যবহারকারীরা ক্রমে আরও অপ্রতিরোধ্য জনতুষ্টিবাদী চরিত্রে পরিণত হচ্ছেন।

মিডিয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থার সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, বিশ্বের ৬২ শতাংশের বেশি মানুষ সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়। নানা নতুন সুবিধা ও ফিচারের কারণে এই সংখ্যা আরও বাড়ছে। এমন বাস্তবতায় প্রয়োজন আত্মনিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্বশীলতা। আমাদের মনে রাখতে হবে সামাজিক মাধ্যম কোনো জনতুষ্টিবাদী প্রচারমাধ্যম নয়। তাই প্রতিটি তথ্য শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করা জরুরি। কনটেন্ট তৈরির সময় সামাজিক রীতি, শিষ্টাচার ও মানবিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিতে হবে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে হবে।

এভাবেই সামাজিক মাধ্যমকে মানবতার পক্ষে এক কল্যাণকর ডিজিটাল ভুবনে রূপ দেওয়া সম্ভব এটাই আমার বিশ্বাস।

রুশাইদ আহমেদ

শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

back to top