alt

মতামত » চিঠিপত্র

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : অযৌক্তিক ফি, সেশনজট ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলায় বিপর্যস্ত শিক্ষার্থী

: শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

বাংলাদেশের সর্বাধিক শিক্ষার্থীর সর্ববৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহর পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসা করে তাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের স্বপ্ন গড়ে তোলে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থা, সেশনজট, ফলাফল প্রকাশে অস্বাভাবিক বিলম্ব, খাতা মূল্যায়নে অবহেলা এবং অযৌক্তিক আর্থিক চাপ শিক্ষার্থীদের হতাশা ও ক্ষোভের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

প্রথমত, শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রিতা ও ফলাফল প্রকাশে দেরির কারণে। নির্ধারিত সময়ের বহু পর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ফলাফল পেতে তিন মাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। পুনর্মূল্যায়ন এর আবেদন করলে আরও লেগে যায় ৩ মাসের অধিক। তাছাড়া ২০২৫ সালে এসে ২০২৩ সালের প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ২০২৪ সালে যে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলো তা দিতে হবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এই পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সময়সূচিকে পিছিয়ে দেয়, চাকরির সুযোগ নষ্ট করে এবং মানসিক চাপ বাড়ায়। আধুনিক দ্রুতগামী শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

দ্বিতীয়ত, বোর্ড চ্যালেঞ্জ বা পুনর্মূল্যায়ন ফি প্রতি সাবজেক্টে ১২০০ টাকা, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অযৌক্তিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফরম ফিলাপেও অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়। এমনকি মান উন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নিতে গেলেও শিক্ষার্থীদের হাজার টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়। অনলাইনে সবকিছু পরিচালনার যুগে খরচ কমার পরিবর্তে বাড়তে থাকা অত্যন্ত বিস্ময়কর।

তৃতীয়ত, খাতা মূল্যায়নের মান নিয়েও রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। অনেক শিক্ষার্থী সঠিক মূল্যায়ন না পাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সম্প্রতি, ৪র্থ বর্ষের ফলাফলে পাশ করেছে মাত্র ৬৮ শতাংশ। দেখা যায়,একটি কলেজের কোনো ডিপার্টমেন্টের ৫০ শতাংশই ফেইল করেছে শুধু একটি পত্রে। অর্থাৎ সব বিষয়ে পাশ করলেও এক সাবজেক্টে অধিকাংশই ফেইল। যা বিস্ময়কর। অনেকের দাবি, শতভাগ পাস করার আত্নবিশ্বাস তবুও ফেইল দেখাচ্ছে। যা পুনর্যাচাই করতে গুনতে হবে ১২০০ টাকা। তাছাড়া ৩য় বর্ষের পুনর্মূল্যায়ন এর ফলাফল খেয়াল করলে দেখা যায়, ফেইল করা বিষয়ে ১২০০ টাকায় পুনর্মূল্যায়ন এর আবেদন করার পর এ প্লাস গ্রেড এসেছে। অনেকের এ গ্রেড এসেছে। অর্থাৎ ফেইল করা বিষয়ে ফার্স্ট ক্লাস। যা ভুতুড়ে ঘটনা! এরকম অসংখ্য শিক্ষার্থীর প্রমাণ রয়েছে। তাহলে ভূল টা কোথায়, দোষ টাই বা কাদের! যদি কর্তৃপক্ষের ভূল হয় তাহলে এত টাকা দিয়ে আবেদন করাটা শিক্ষার্থীদের উপর অযথা চাপ নয়? অনেকে টাকার অভাবে পুনর্মূল্যায়ন এর আবেদন না করতে পেরে পিছিয়ে পরে একটি বছর। তাই খাতা দেখায় পেশাদারিত্ব, মনোযোগ এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করাও এখন জরুরি।

এসব সমস্যার কারণে সেশনজট, সময় অপচয় ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী। দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব যে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার ওপর, সেই ব্যবস্থাতেই যদি এমন বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে, তা জাতির সামগ্রিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। উন্নত প্রযুক্তির যুগে এমন দুর্বল সিস্টেম কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এই পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সংস্কার এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি। বোর্ড চ্যালেঞ্জ ফি কমানো, ফরম ফিলাপের খরচ পুনর্বিবেচনা, নিয়মিত পরীক্ষা আয়োজন, দ্রুত ফলাফল প্রকাশ এবং খাতা মূল্যায়নে মানদ- শক্ত করা জরুরি।

লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ রক্ষায় দ্রুত, কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।

রাইসুল ইসলাম রিফাত

শিক্ষার্থী,

আনন্দমোহন কলেজ ,

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

সামাজিক মাধ্যমের ভুবনে জনতুষ্টিবাদের নতুন রূপ

ভেজাল খেজুরগুড় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা

প্লাস্টিক বর্জ্যে মাছের মৃত্যু: সমাধান কোথায়

খোলা ম্যানহোল: ঢাকার রাজপথে এক নীরব মরণফাঁদ

গণপরিবহন: প্রতিদিনের যন্ত্রণার শেষ কবে?

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ

সাইবার বুলিং ও ভার্চুয়াল অপরাধ: তরুণদের অদৃশ্য বিপদ

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরজীবনের চরম ভোগান্তি

রাবি মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার চাই

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

কক্সবাজার: উন্নয়নের পথে, বিপন্ন প্রকৃতি

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে নতুন সম্ভাবনার ভোর

প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর না হলে মানোন্নয়ন অসম্ভব

রাবির আবাসন সংকট

সব হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সেবা চালু করা হোক

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা

পানি সংকট: জীবন ও সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি

ই-লার্নিং: সীমান্তহীন শিক্ষার নতুন দিগন্ত

আজিমপুর কলোনির অব্যবস্থাপনা

জনস্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক : তামাকজাত পণ্য

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়: অবস্থান, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতি ও বাংলাদেশের সমুদ্রকৌশল

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট: দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তির শেষ কোথায়?

পুরান ঢাকার রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা

নিরাপদ শিশু খাদ্য: জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়: প্রতিদিনের দুঃস্বপ্ন

পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা

হেমন্ত আসে হিম কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে

জীবনের অভিধানে প্রবীণদের স্থান কোথায়?

নীরবতা নয়, বলতে শেখ

সুন্দরবনে টেকসই পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ও করণীয়

প্রথার নামে প্রথাগত শোষণ: উচ্চ কাবিনের ফাঁদ

শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা

মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক জায়ান্টদের মাস্টার প্ল্যান

গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যু কেন কেবলই সংখ্যা?

tab

মতামত » চিঠিপত্র

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : অযৌক্তিক ফি, সেশনজট ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলায় বিপর্যস্ত শিক্ষার্থী

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের সর্বাধিক শিক্ষার্থীর সর্ববৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহর পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসা করে তাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের স্বপ্ন গড়ে তোলে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থা, সেশনজট, ফলাফল প্রকাশে অস্বাভাবিক বিলম্ব, খাতা মূল্যায়নে অবহেলা এবং অযৌক্তিক আর্থিক চাপ শিক্ষার্থীদের হতাশা ও ক্ষোভের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

প্রথমত, শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রিতা ও ফলাফল প্রকাশে দেরির কারণে। নির্ধারিত সময়ের বহু পর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ফলাফল পেতে তিন মাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। পুনর্মূল্যায়ন এর আবেদন করলে আরও লেগে যায় ৩ মাসের অধিক। তাছাড়া ২০২৫ সালে এসে ২০২৩ সালের প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ২০২৪ সালে যে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলো তা দিতে হবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এই পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সময়সূচিকে পিছিয়ে দেয়, চাকরির সুযোগ নষ্ট করে এবং মানসিক চাপ বাড়ায়। আধুনিক দ্রুতগামী শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

দ্বিতীয়ত, বোর্ড চ্যালেঞ্জ বা পুনর্মূল্যায়ন ফি প্রতি সাবজেক্টে ১২০০ টাকা, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অযৌক্তিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফরম ফিলাপেও অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়। এমনকি মান উন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নিতে গেলেও শিক্ষার্থীদের হাজার টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়। অনলাইনে সবকিছু পরিচালনার যুগে খরচ কমার পরিবর্তে বাড়তে থাকা অত্যন্ত বিস্ময়কর।

তৃতীয়ত, খাতা মূল্যায়নের মান নিয়েও রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। অনেক শিক্ষার্থী সঠিক মূল্যায়ন না পাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সম্প্রতি, ৪র্থ বর্ষের ফলাফলে পাশ করেছে মাত্র ৬৮ শতাংশ। দেখা যায়,একটি কলেজের কোনো ডিপার্টমেন্টের ৫০ শতাংশই ফেইল করেছে শুধু একটি পত্রে। অর্থাৎ সব বিষয়ে পাশ করলেও এক সাবজেক্টে অধিকাংশই ফেইল। যা বিস্ময়কর। অনেকের দাবি, শতভাগ পাস করার আত্নবিশ্বাস তবুও ফেইল দেখাচ্ছে। যা পুনর্যাচাই করতে গুনতে হবে ১২০০ টাকা। তাছাড়া ৩য় বর্ষের পুনর্মূল্যায়ন এর ফলাফল খেয়াল করলে দেখা যায়, ফেইল করা বিষয়ে ১২০০ টাকায় পুনর্মূল্যায়ন এর আবেদন করার পর এ প্লাস গ্রেড এসেছে। অনেকের এ গ্রেড এসেছে। অর্থাৎ ফেইল করা বিষয়ে ফার্স্ট ক্লাস। যা ভুতুড়ে ঘটনা! এরকম অসংখ্য শিক্ষার্থীর প্রমাণ রয়েছে। তাহলে ভূল টা কোথায়, দোষ টাই বা কাদের! যদি কর্তৃপক্ষের ভূল হয় তাহলে এত টাকা দিয়ে আবেদন করাটা শিক্ষার্থীদের উপর অযথা চাপ নয়? অনেকে টাকার অভাবে পুনর্মূল্যায়ন এর আবেদন না করতে পেরে পিছিয়ে পরে একটি বছর। তাই খাতা দেখায় পেশাদারিত্ব, মনোযোগ এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করাও এখন জরুরি।

এসব সমস্যার কারণে সেশনজট, সময় অপচয় ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী। দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব যে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার ওপর, সেই ব্যবস্থাতেই যদি এমন বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে, তা জাতির সামগ্রিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। উন্নত প্রযুক্তির যুগে এমন দুর্বল সিস্টেম কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এই পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সংস্কার এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি। বোর্ড চ্যালেঞ্জ ফি কমানো, ফরম ফিলাপের খরচ পুনর্বিবেচনা, নিয়মিত পরীক্ষা আয়োজন, দ্রুত ফলাফল প্রকাশ এবং খাতা মূল্যায়নে মানদ- শক্ত করা জরুরি।

লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ রক্ষায় দ্রুত, কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।

রাইসুল ইসলাম রিফাত

শিক্ষার্থী,

আনন্দমোহন কলেজ ,

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

back to top