alt

মতামত » চিঠিপত্র

প্রবীণদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি

: বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

শারীরিক সামর্থ্য কমে যাওয়া, বয়সের ভারে দেহে স্পষ্ট পরিবর্তন দেখা দেওয়া-এসবই মানুষের স্বাভাবিক জীবনচক্রের অংশ। বার্ধক্যজনিত সীমাবদ্ধতায় অনেক প্রবীণ মানুষের চলাফেরা ও কর্মক্ষমতা সংকুচিত হয়। অথচ তাঁরাই একসময় পরিবারকে আগলে রেখেছেন, সমাজ–রাষ্ট্রের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। যাঁরা অতীতে শিশুদের মানুষ করেছেন, শিক্ষার পথ দেখিয়েছেন, চিকিৎসা–ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন, আজ তাঁরা অনেকটাই আমাদের অগোচরে। প্রবীণদের প্রাত্যহিক জীবন, তাঁদের ভাবনা, আকাক্সক্ষা-এসব বিষয়ে জানতে বা ভাবতে আমাদের অনাগ্রহই বেশি দেখা যায়। ফলে তাঁদের চিকিৎসা, সেবা শুশ্রূষা

ও মানসিক চাহিদা প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়।

বিশ্বব্যাপী পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি দশজন মানুষের একজন প্রবীণ-অর্থাৎ ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালে প্রতি পাঁচজনের একজন এবং ২১৫০ সালে প্রতি তিনজনের একজন প্রবীণ হবেন। এই সংখ্যা কেবল জনমিতিক পরিবর্তনই দেখায় না, বরং ভবিষ্যতের একটি বাস্তব সংকটের ইঙ্গিতও বহন করে-অগণিত প্রবীণ মানুষকে সেবা দেওয়ার মতো সক্ষম কর্মক্ষম জনসংখ্যা কি তখন পর্যাপ্ত থাকবে? আগামী প্রজন্মের প্রবীণ–বান্ধব মনোভাব ও বার্ধক্যকে মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করার মানসিকতাই এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। সে কারণেই এখনকার তরুণদের নিজেদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় হোক কিংবা নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে হোক, প্রবীণদের প্রতি মনোযোগী হওয়া জরুরি।

১৯২৫ সালে উপমহাদেশে সরকারী কর্মচারীদের জন্য পেনশন সুবিধা শুরু হলেও সমাজের অধিকাংশ প্রবীণ আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থেকে যান। অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন, কেউ অবহেলা ও কটাক্ষের শিকার হয়ে জীবন কাটান, কেউ প্রতারণায় নিঃস্ব হন। বহু বছর পর ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে বয়স্কভাতা চালু হলেও বিশাল প্রবীণ জনগোষ্ঠীর অনেকেই এ সুবিধার বাইরে রয়ে গেছেন। অন্যদিকে, আত্মমর্যাদাবোধের কারণে অনেক প্রবীণ সরকারি অনুদান গ্রহণ করতেও চান না। তাছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে সব প্রবীণকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। তাই পরিবারের সামর্থ্যবান সদস্যদের দায়িত্ববোধই প্রবীণদের প্রধান ভরসা-তাঁদের চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় সুবিধা ও আর্থিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পরিবারের সদস্যদেরই নিতে হবে। আর পরিবারে সামর্থ্য না থাকলে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক সংহতি ও স্থানীয় সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা জোরদার করা প্রয়োজন। অতি দরিদ্র প্রবীণদের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা, উপযোগী প্রশিক্ষণ, প্রবীণ–বান্ধব সামাজিক কেন্দ্র, নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা ও ফিজিওথেরাপি–সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। প্রবীণদের প্রতি দায়িত্ববোধ উৎসাহিত করতে প্রবীণদের সেবা–শুশ্রূষাকারী সন্তানদের ‘শ্রেষ্ঠ সন্তান সম্মাননা’ এবং সমাজ–রাষ্ট্রে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যোগ্য প্রবীণদের ‘শ্রেষ্ঠ প্রবীণ সম্মাননা’ দেওয়া যেতে পারে। অসচ্ছল প্রবীণদের জন্য পরিপোষক–ভাতা, আর অপেক্ষাকৃত সচ্ছলদের জন্য বিশেষ সঞ্চয় ও পেনশন–স্কিম চালুর বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।

একই সঙ্গে প্রবীণদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশেষ গণসচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। ‘সকল বয়সের জন্য ডিজিটাল সমতা’ নিশ্চিত করা এখন আধুনিক সমাজের মূল শর্ত। প্রবীণদের দারিদ্রমুক্ত, মর্যাদাপূর্ণ, কর্মময় ও নিরাপদ পারিবারিক–সামাজিক জীবন নিশ্চিত না হলে একটি সমাজ কখনোই প্রকৃত অর্থে আধুনিক হতে পারে না।

যে সমাজ প্রবীণদের সম্মান করে, আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে-সেই সমাজই সত্যিকারের নবীন, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ সমাজ।

শাহ নেওয়াজ

বন্দর, চট্টগ্রাম

পলিভিনাইলের ব্যবহার প্রতিরোধ জরুরি

বৈধ সনদধারীদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি

টেকসই দুর্যোগ প্রস্তুতিতে জরুরি বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন

জলবায়ু পরিবর্তন ও নারী ও কিশোরীদের ঝুঁকি

মেধা হারাচ্ছে দেশ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : অযৌক্তিক ফি, সেশনজট ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলায় বিপর্যস্ত শিক্ষার্থী

সামাজিক মাধ্যমের ভুবনে জনতুষ্টিবাদের নতুন রূপ

ভেজাল খেজুরগুড় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা

প্লাস্টিক বর্জ্যে মাছের মৃত্যু: সমাধান কোথায়

খোলা ম্যানহোল: ঢাকার রাজপথে এক নীরব মরণফাঁদ

গণপরিবহন: প্রতিদিনের যন্ত্রণার শেষ কবে?

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ

সাইবার বুলিং ও ভার্চুয়াল অপরাধ: তরুণদের অদৃশ্য বিপদ

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরজীবনের চরম ভোগান্তি

রাবি মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার চাই

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

কক্সবাজার: উন্নয়নের পথে, বিপন্ন প্রকৃতি

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে নতুন সম্ভাবনার ভোর

প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর না হলে মানোন্নয়ন অসম্ভব

রাবির আবাসন সংকট

সব হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সেবা চালু করা হোক

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা

পানি সংকট: জীবন ও সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি

ই-লার্নিং: সীমান্তহীন শিক্ষার নতুন দিগন্ত

আজিমপুর কলোনির অব্যবস্থাপনা

জনস্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক : তামাকজাত পণ্য

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়: অবস্থান, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতি ও বাংলাদেশের সমুদ্রকৌশল

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট: দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তির শেষ কোথায়?

পুরান ঢাকার রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা

নিরাপদ শিশু খাদ্য: জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়: প্রতিদিনের দুঃস্বপ্ন

পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা

হেমন্ত আসে হিম কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে

জীবনের অভিধানে প্রবীণদের স্থান কোথায়?

tab

মতামত » চিঠিপত্র

প্রবীণদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

শারীরিক সামর্থ্য কমে যাওয়া, বয়সের ভারে দেহে স্পষ্ট পরিবর্তন দেখা দেওয়া-এসবই মানুষের স্বাভাবিক জীবনচক্রের অংশ। বার্ধক্যজনিত সীমাবদ্ধতায় অনেক প্রবীণ মানুষের চলাফেরা ও কর্মক্ষমতা সংকুচিত হয়। অথচ তাঁরাই একসময় পরিবারকে আগলে রেখেছেন, সমাজ–রাষ্ট্রের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। যাঁরা অতীতে শিশুদের মানুষ করেছেন, শিক্ষার পথ দেখিয়েছেন, চিকিৎসা–ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন, আজ তাঁরা অনেকটাই আমাদের অগোচরে। প্রবীণদের প্রাত্যহিক জীবন, তাঁদের ভাবনা, আকাক্সক্ষা-এসব বিষয়ে জানতে বা ভাবতে আমাদের অনাগ্রহই বেশি দেখা যায়। ফলে তাঁদের চিকিৎসা, সেবা শুশ্রূষা

ও মানসিক চাহিদা প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়।

বিশ্বব্যাপী পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি দশজন মানুষের একজন প্রবীণ-অর্থাৎ ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালে প্রতি পাঁচজনের একজন এবং ২১৫০ সালে প্রতি তিনজনের একজন প্রবীণ হবেন। এই সংখ্যা কেবল জনমিতিক পরিবর্তনই দেখায় না, বরং ভবিষ্যতের একটি বাস্তব সংকটের ইঙ্গিতও বহন করে-অগণিত প্রবীণ মানুষকে সেবা দেওয়ার মতো সক্ষম কর্মক্ষম জনসংখ্যা কি তখন পর্যাপ্ত থাকবে? আগামী প্রজন্মের প্রবীণ–বান্ধব মনোভাব ও বার্ধক্যকে মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করার মানসিকতাই এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। সে কারণেই এখনকার তরুণদের নিজেদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় হোক কিংবা নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে হোক, প্রবীণদের প্রতি মনোযোগী হওয়া জরুরি।

১৯২৫ সালে উপমহাদেশে সরকারী কর্মচারীদের জন্য পেনশন সুবিধা শুরু হলেও সমাজের অধিকাংশ প্রবীণ আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থেকে যান। অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন, কেউ অবহেলা ও কটাক্ষের শিকার হয়ে জীবন কাটান, কেউ প্রতারণায় নিঃস্ব হন। বহু বছর পর ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে বয়স্কভাতা চালু হলেও বিশাল প্রবীণ জনগোষ্ঠীর অনেকেই এ সুবিধার বাইরে রয়ে গেছেন। অন্যদিকে, আত্মমর্যাদাবোধের কারণে অনেক প্রবীণ সরকারি অনুদান গ্রহণ করতেও চান না। তাছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে সব প্রবীণকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। তাই পরিবারের সামর্থ্যবান সদস্যদের দায়িত্ববোধই প্রবীণদের প্রধান ভরসা-তাঁদের চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় সুবিধা ও আর্থিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পরিবারের সদস্যদেরই নিতে হবে। আর পরিবারে সামর্থ্য না থাকলে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক সংহতি ও স্থানীয় সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা জোরদার করা প্রয়োজন। অতি দরিদ্র প্রবীণদের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা, উপযোগী প্রশিক্ষণ, প্রবীণ–বান্ধব সামাজিক কেন্দ্র, নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা ও ফিজিওথেরাপি–সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। প্রবীণদের প্রতি দায়িত্ববোধ উৎসাহিত করতে প্রবীণদের সেবা–শুশ্রূষাকারী সন্তানদের ‘শ্রেষ্ঠ সন্তান সম্মাননা’ এবং সমাজ–রাষ্ট্রে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যোগ্য প্রবীণদের ‘শ্রেষ্ঠ প্রবীণ সম্মাননা’ দেওয়া যেতে পারে। অসচ্ছল প্রবীণদের জন্য পরিপোষক–ভাতা, আর অপেক্ষাকৃত সচ্ছলদের জন্য বিশেষ সঞ্চয় ও পেনশন–স্কিম চালুর বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।

একই সঙ্গে প্রবীণদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশেষ গণসচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। ‘সকল বয়সের জন্য ডিজিটাল সমতা’ নিশ্চিত করা এখন আধুনিক সমাজের মূল শর্ত। প্রবীণদের দারিদ্রমুক্ত, মর্যাদাপূর্ণ, কর্মময় ও নিরাপদ পারিবারিক–সামাজিক জীবন নিশ্চিত না হলে একটি সমাজ কখনোই প্রকৃত অর্থে আধুনিক হতে পারে না।

যে সমাজ প্রবীণদের সম্মান করে, আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে-সেই সমাজই সত্যিকারের নবীন, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ সমাজ।

শাহ নেওয়াজ

বন্দর, চট্টগ্রাম

back to top