মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বাংলাদেশে গত এক দশকে ফ্রিল্যান্সিং তরুণদের জন্য একটি আকর্ষণীয় কর্মক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে অনেকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন থেকে শুরু করে ভিডিও সম্পাদনা, ভার্চুয়াল সহায়তা ও লেখালেখিসহ নানা পেশায় যুক্ত হয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। কিন্তু এই সম্ভাবনার আড়ালে রয়েছে ভয়াবহ অনিয়ম, ভুয়া প্রশিক্ষণ, স্ক্যাম, ভুল তথ্য এবং আর্থিক প্রতারণার বিস্তৃত জাল, যা তরুণদের ভবিষ্যৎ ও দেশের ডিজিটাল ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘মাসে এক লাখ টাকা আয়’, ‘তিন মাসে সফল ফ্রিল্যান্সার’-এমন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে সফল হতে প্রয়োজন গভীর দক্ষতা, দীর্ঘ অনুশীলন ও পেশাদার মানসিকতা। ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের নবীনরা বাস্তবতা বুঝতেই সময় নেন। ভুয়া ও নিম্নমানের কোর্স তাদের হতাশার কারণ হয়। অনেককে বলা হয়-ফাইভার বা আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট খুললেই অর্ডার আসবে; পরে দেখা যায়, কোনো কাজই আসে না, বরং অ্যাকাউন্টই সাসপেন্ড হয়ে যায়।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসেও প্রতারণার নানা রূপ রয়েছে। ট্রায়ালের নাম করে বিনা পয়সায় কাজ করিয়ে নেওয়া, কাজ গ্রহণের পর রিফান্ড বা চার্জব্যাক করা, অফ-প্ল্যাটফর্মে প্রলোভন দিয়ে পেমেন্ট না দেওয়া-এসব ঘটনার শিকার হন অসংখ্য ফ্রিল্যান্সার। দেশের ভেতরেও গ্রুপ বায়িং প্রতারণা, ভুয়া রিভিউ, চুরি করা ডিজাইন বিক্রি-এসব অনৈতিক কর্মকা- বাজারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ডলার লেনদেনেও প্রতারণা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ডলার সেল–বাই’ গ্রুপে টাকা পাঠিয়েও অনেকে ডলার না পেয়ে ব্লকড হন। পেপাল বা পেওনিয়ারের ভুয়া লগইন পেজ পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার ঘটনাও বাড়ছে। ঈঊজঞ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ হাজার ফ্রিল্যান্সার সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
ফ্রিল্যান্সিং বাজারকে সুস্থ রাখতে হলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, মিথ্যা আয় দেখিয়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারি গড়ে তোলা এবং ক্লায়েন্ট–ফ্রিল্যান্সার সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি জরুরি। তরুণদেরও বুঝতে হবে-দক্ষতায় সময় দেওয়া ছাড়া এ খাতে সাফল্যের কোনো শর্টকাট নেই। অতিরঞ্জিত স্বপ্নের পেছনে দৌড়ালে শেষ পর্যন্ত ক্ষতির মুখেই পড়তে হয়।
সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না; কিন্তু সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য দরকার স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে একটি টেকসই বাজার। প্রতারণার অন্ধকার সরিয়ে প্রকৃত সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবেন।
আরিফুল ইসলাম রাফি
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশে গত এক দশকে ফ্রিল্যান্সিং তরুণদের জন্য একটি আকর্ষণীয় কর্মক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে অনেকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন থেকে শুরু করে ভিডিও সম্পাদনা, ভার্চুয়াল সহায়তা ও লেখালেখিসহ নানা পেশায় যুক্ত হয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। কিন্তু এই সম্ভাবনার আড়ালে রয়েছে ভয়াবহ অনিয়ম, ভুয়া প্রশিক্ষণ, স্ক্যাম, ভুল তথ্য এবং আর্থিক প্রতারণার বিস্তৃত জাল, যা তরুণদের ভবিষ্যৎ ও দেশের ডিজিটাল ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘মাসে এক লাখ টাকা আয়’, ‘তিন মাসে সফল ফ্রিল্যান্সার’-এমন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে সফল হতে প্রয়োজন গভীর দক্ষতা, দীর্ঘ অনুশীলন ও পেশাদার মানসিকতা। ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের নবীনরা বাস্তবতা বুঝতেই সময় নেন। ভুয়া ও নিম্নমানের কোর্স তাদের হতাশার কারণ হয়। অনেককে বলা হয়-ফাইভার বা আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট খুললেই অর্ডার আসবে; পরে দেখা যায়, কোনো কাজই আসে না, বরং অ্যাকাউন্টই সাসপেন্ড হয়ে যায়।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসেও প্রতারণার নানা রূপ রয়েছে। ট্রায়ালের নাম করে বিনা পয়সায় কাজ করিয়ে নেওয়া, কাজ গ্রহণের পর রিফান্ড বা চার্জব্যাক করা, অফ-প্ল্যাটফর্মে প্রলোভন দিয়ে পেমেন্ট না দেওয়া-এসব ঘটনার শিকার হন অসংখ্য ফ্রিল্যান্সার। দেশের ভেতরেও গ্রুপ বায়িং প্রতারণা, ভুয়া রিভিউ, চুরি করা ডিজাইন বিক্রি-এসব অনৈতিক কর্মকা- বাজারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ডলার লেনদেনেও প্রতারণা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ডলার সেল–বাই’ গ্রুপে টাকা পাঠিয়েও অনেকে ডলার না পেয়ে ব্লকড হন। পেপাল বা পেওনিয়ারের ভুয়া লগইন পেজ পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার ঘটনাও বাড়ছে। ঈঊজঞ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ হাজার ফ্রিল্যান্সার সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
ফ্রিল্যান্সিং বাজারকে সুস্থ রাখতে হলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, মিথ্যা আয় দেখিয়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারি গড়ে তোলা এবং ক্লায়েন্ট–ফ্রিল্যান্সার সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি জরুরি। তরুণদেরও বুঝতে হবে-দক্ষতায় সময় দেওয়া ছাড়া এ খাতে সাফল্যের কোনো শর্টকাট নেই। অতিরঞ্জিত স্বপ্নের পেছনে দৌড়ালে শেষ পর্যন্ত ক্ষতির মুখেই পড়তে হয়।
সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না; কিন্তু সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য দরকার স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে একটি টেকসই বাজার। প্রতারণার অন্ধকার সরিয়ে প্রকৃত সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবেন।
আরিফুল ইসলাম রাফি