alt

মতামত » চিঠিপত্র

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আগাম সতর্কবার্তাই কি যথেষ্ট?

: রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

সত্তরের প্রলয়ঙ্করী সাইক্লোন কিংবা ১৯৯১ সালের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, সেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিডর, আইলা, ফণী, আম্পান বা মোখার মতো প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী ঝড়গুলোতেও আমরা মৃত্যুর সংখ্যাকে বিস্ময়করভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এই বৈপ্লবিক সাফল্যের পেছনে নিঃসন্দেহে রয়েছে আমাদের আধুনিক ও সময়োপযোগী আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে আমরা দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি এবং প্রাণহানি দিন দিন কমিয়ে আনছি।

উপগ্রহ থেকে তথ্য সংগ্রহ, উন্নত আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং একটি শক্তিশালী স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্ক (বিশেষ করে সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম বা সিপিডি) একযোগে কাজ করে। ঝড়ের কয়েকদিন আগে থেকেই বিপদ সংকেত পৌঁছে যায় উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। মাইকিং, রেডিও, টেলিভিশন এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ক্রমাগত প্রচারণার ফলে মানুষ দুর্যোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। এই সক্ষমতা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

কিন্তু, এই অসামান্য সাফল্য কি আমাদেরকে এক ধরনের আত্মতুষ্টির বিভ্রান্তিতে ভোগাচ্ছে? আমরা কি ধরে নিচ্ছি যে, মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার বার্তা দিতে পারাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত সফলতা? সময় এসেছে এই প্রশ্নগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করার। সতর্কবার্তা জীবন বাঁচায়, কিন্তু সেই জীবনকে সচল রাখার জন্য যে জীবিকা প্রয়োজন, তা কি আমরা রক্ষা করতে পারছি?

বাস্তবতা হলো, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ হলো সতর্কবার্তা, শেষ ধাপ নয়। যখন একজন উপকূলীয় বাসিন্দাকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের কথা জানিয়ে ঘর ছাড়তে বলা হয়, তখন আমরা কি ভেবে দেখেছি তার গন্তব্য কোথায়? সংকেত পাওয়ার পর সেই মানুষটির যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত, মানসম্মত ও নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র কি আমরা আদৌ নিশ্চিত করতে পেরেছি?

কাগজে-কলমে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা হয়তো বেড়েছে, কিন্তু সেগুলোর বাস্তব অবস্থা ভয়াবহ। বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রই সারা বছর অবহেলায় পড়ে থাকে। দুর্যোগের সময় সেগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। ন্যূনতম পরিচ্ছন্নতা, সুপেয় পানি বা পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকে না। বিশেষ করে নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এই পরিবেশ অত্যন্ত অনিরাপদ ও অবমাননাকর।

এর চেয়েও বড় উদ্বেগের বিষয় হলো গবাদি পশুর জন্য স্থানের অভাব। উপকূলীয় অঞ্চলের একটি পরিবারের কাছে তার কয়েকটি ছাগল, হাঁস-মুরগি বা একটি গরু কেবল পশু নয়, এটি তার জীবিকার প্রধান অবলম্বন এবং বছরের সঞ্চয়। যখন আশ্রয়কেন্দ্রে এই নিরীহ প্রাণীগুলোর জন্য কোনো ব্যবস্থা থাকে না, তখন অনেক পরিবারই তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝড়ের মধ্যে নিজ বাড়িতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে, আমাদের সতর্কবার্তা ব্যবস্থা সচল থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী অবকাঠামোর কারণে পুরোপুরি কার্যকর হতে পারে না। মানুষকে কেবল যাও বলাই যথেষ্ট নয়, তাদের একটি নিরাপদ ও মানবিক আশ্রয় নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

সতর্কবার্তা মানুষকে সাময়িকভাবে নিরাপদ স্থানে সরাতে পারে, কিন্তু দুর্যোগের মূল আঘাতটি আসে আমাদের ভঙ্গুর অবকাঠামোর ওপর। আর এই অবকাঠামোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। জলোচ্ছ্বাসের প্রথম ধাক্কাতেই যখন এই বাঁধগুলো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে, তখনই প্রকৃত বিপর্যয় শুরু হয়।

সময় এসেছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর। কেবল দুর্যোগের সময় তৎপর হয়ে ওঠা যথেষ্ট নয়। দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে সারা বছর ধরে। আমাদের সাফল্যকে পরিসংখ্যানের ঘরে আটকে না রেখে, তা মানুষের প্রকৃত জীবনমানে প্রতিফলিত করতে হবে।

আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থার যে আধুনিকায়ন আমরা করেছি, তা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের সমস্ত মনোযোগ ও বিনিয়োগ এখন টেকসই অবকাঠামোর দিকে ফেরাতে হবে। বিশেষ করে উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলোকে নেদারল্যান্ডসের ডেল্টা প্ল্যানের মতো দীর্ঘমেয়াদী ও বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনায় পুনর্নির্মাণ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা মাথায় রেখে বাঁধের উচ্চতা ও কাঠামো নতুন করে ডিজাইন করতে হবে।

বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জরুরি মেরামতের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে কেবল দুর্যোগের সময় নয়, সারা বছর ব্যবহারোপযোগী এবং মানবিক সুবিধাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে।

প্রকৃত জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনের পথ একটাই। তা হলো, আগাম সতর্কবার্তার সাথে টেকসই অবকাঠামোর সমন্বয় ঘটানো। জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি মানুষের জীবিকা, সম্পদ এবং স্বপ্নকে রক্ষা করতে পারলেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের সাফল্য প্রকৃত অর্থে সার্থক হবে।

আল শাহারিয়া

রংপুর সদর, রংপুর।

সুলতানপুরে করতোয়া নদীর তাণ্ডব: নদীভাঙনে মানুষের জীবন বিপন্ন

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সম্ভাবনা বিস্তৃত, অনিয়মের ছায়াও গভীর

গেন্ডারিয়ায় সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে অনিয়ম: জনদূর্ভোগ বৃদ্ধি

প্রবীণদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি

পলিভিনাইলের ব্যবহার প্রতিরোধ জরুরি

বৈধ সনদধারীদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি

টেকসই দুর্যোগ প্রস্তুতিতে জরুরি বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন

জলবায়ু পরিবর্তন ও নারী ও কিশোরীদের ঝুঁকি

মেধা হারাচ্ছে দেশ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : অযৌক্তিক ফি, সেশনজট ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলায় বিপর্যস্ত শিক্ষার্থী

সামাজিক মাধ্যমের ভুবনে জনতুষ্টিবাদের নতুন রূপ

ভেজাল খেজুরগুড় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা

প্লাস্টিক বর্জ্যে মাছের মৃত্যু: সমাধান কোথায়

খোলা ম্যানহোল: ঢাকার রাজপথে এক নীরব মরণফাঁদ

গণপরিবহন: প্রতিদিনের যন্ত্রণার শেষ কবে?

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ

সাইবার বুলিং ও ভার্চুয়াল অপরাধ: তরুণদের অদৃশ্য বিপদ

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরজীবনের চরম ভোগান্তি

রাবি মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার চাই

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

কক্সবাজার: উন্নয়নের পথে, বিপন্ন প্রকৃতি

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে নতুন সম্ভাবনার ভোর

প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর না হলে মানোন্নয়ন অসম্ভব

রাবির আবাসন সংকট

সব হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সেবা চালু করা হোক

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা

পানি সংকট: জীবন ও সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি

ই-লার্নিং: সীমান্তহীন শিক্ষার নতুন দিগন্ত

আজিমপুর কলোনির অব্যবস্থাপনা

জনস্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক : তামাকজাত পণ্য

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়: অবস্থান, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতি ও বাংলাদেশের সমুদ্রকৌশল

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট: দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তির শেষ কোথায়?

পুরান ঢাকার রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা

নিরাপদ শিশু খাদ্য: জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন

tab

মতামত » চিঠিপত্র

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আগাম সতর্কবার্তাই কি যথেষ্ট?

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

সত্তরের প্রলয়ঙ্করী সাইক্লোন কিংবা ১৯৯১ সালের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, সেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিডর, আইলা, ফণী, আম্পান বা মোখার মতো প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী ঝড়গুলোতেও আমরা মৃত্যুর সংখ্যাকে বিস্ময়করভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এই বৈপ্লবিক সাফল্যের পেছনে নিঃসন্দেহে রয়েছে আমাদের আধুনিক ও সময়োপযোগী আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে আমরা দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি এবং প্রাণহানি দিন দিন কমিয়ে আনছি।

উপগ্রহ থেকে তথ্য সংগ্রহ, উন্নত আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং একটি শক্তিশালী স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্ক (বিশেষ করে সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম বা সিপিডি) একযোগে কাজ করে। ঝড়ের কয়েকদিন আগে থেকেই বিপদ সংকেত পৌঁছে যায় উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। মাইকিং, রেডিও, টেলিভিশন এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ক্রমাগত প্রচারণার ফলে মানুষ দুর্যোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। এই সক্ষমতা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

কিন্তু, এই অসামান্য সাফল্য কি আমাদেরকে এক ধরনের আত্মতুষ্টির বিভ্রান্তিতে ভোগাচ্ছে? আমরা কি ধরে নিচ্ছি যে, মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার বার্তা দিতে পারাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত সফলতা? সময় এসেছে এই প্রশ্নগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করার। সতর্কবার্তা জীবন বাঁচায়, কিন্তু সেই জীবনকে সচল রাখার জন্য যে জীবিকা প্রয়োজন, তা কি আমরা রক্ষা করতে পারছি?

বাস্তবতা হলো, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ হলো সতর্কবার্তা, শেষ ধাপ নয়। যখন একজন উপকূলীয় বাসিন্দাকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের কথা জানিয়ে ঘর ছাড়তে বলা হয়, তখন আমরা কি ভেবে দেখেছি তার গন্তব্য কোথায়? সংকেত পাওয়ার পর সেই মানুষটির যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত, মানসম্মত ও নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র কি আমরা আদৌ নিশ্চিত করতে পেরেছি?

কাগজে-কলমে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা হয়তো বেড়েছে, কিন্তু সেগুলোর বাস্তব অবস্থা ভয়াবহ। বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রই সারা বছর অবহেলায় পড়ে থাকে। দুর্যোগের সময় সেগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। ন্যূনতম পরিচ্ছন্নতা, সুপেয় পানি বা পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকে না। বিশেষ করে নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এই পরিবেশ অত্যন্ত অনিরাপদ ও অবমাননাকর।

এর চেয়েও বড় উদ্বেগের বিষয় হলো গবাদি পশুর জন্য স্থানের অভাব। উপকূলীয় অঞ্চলের একটি পরিবারের কাছে তার কয়েকটি ছাগল, হাঁস-মুরগি বা একটি গরু কেবল পশু নয়, এটি তার জীবিকার প্রধান অবলম্বন এবং বছরের সঞ্চয়। যখন আশ্রয়কেন্দ্রে এই নিরীহ প্রাণীগুলোর জন্য কোনো ব্যবস্থা থাকে না, তখন অনেক পরিবারই তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝড়ের মধ্যে নিজ বাড়িতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে, আমাদের সতর্কবার্তা ব্যবস্থা সচল থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী অবকাঠামোর কারণে পুরোপুরি কার্যকর হতে পারে না। মানুষকে কেবল যাও বলাই যথেষ্ট নয়, তাদের একটি নিরাপদ ও মানবিক আশ্রয় নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

সতর্কবার্তা মানুষকে সাময়িকভাবে নিরাপদ স্থানে সরাতে পারে, কিন্তু দুর্যোগের মূল আঘাতটি আসে আমাদের ভঙ্গুর অবকাঠামোর ওপর। আর এই অবকাঠামোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। জলোচ্ছ্বাসের প্রথম ধাক্কাতেই যখন এই বাঁধগুলো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে, তখনই প্রকৃত বিপর্যয় শুরু হয়।

সময় এসেছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর। কেবল দুর্যোগের সময় তৎপর হয়ে ওঠা যথেষ্ট নয়। দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে সারা বছর ধরে। আমাদের সাফল্যকে পরিসংখ্যানের ঘরে আটকে না রেখে, তা মানুষের প্রকৃত জীবনমানে প্রতিফলিত করতে হবে।

আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থার যে আধুনিকায়ন আমরা করেছি, তা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের সমস্ত মনোযোগ ও বিনিয়োগ এখন টেকসই অবকাঠামোর দিকে ফেরাতে হবে। বিশেষ করে উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলোকে নেদারল্যান্ডসের ডেল্টা প্ল্যানের মতো দীর্ঘমেয়াদী ও বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনায় পুনর্নির্মাণ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা মাথায় রেখে বাঁধের উচ্চতা ও কাঠামো নতুন করে ডিজাইন করতে হবে।

বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জরুরি মেরামতের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে কেবল দুর্যোগের সময় নয়, সারা বছর ব্যবহারোপযোগী এবং মানবিক সুবিধাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে।

প্রকৃত জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনের পথ একটাই। তা হলো, আগাম সতর্কবার্তার সাথে টেকসই অবকাঠামোর সমন্বয় ঘটানো। জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি মানুষের জীবিকা, সম্পদ এবং স্বপ্নকে রক্ষা করতে পারলেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের সাফল্য প্রকৃত অর্থে সার্থক হবে।

আল শাহারিয়া

রংপুর সদর, রংপুর।

back to top