alt

মতামত » চিঠিপত্র

নগর সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যের বিলুপ্তি

: সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

কখনো কখনো মনে হয় শহরটা আর মানুষ নয় বরং এক বিশাল যন্ত্র,যে ক্রমাগত শব্দ করছে,ধোঁয়া ছাড়ছে আর ভেতর থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে নিজের হৃদ স্পন্দন।

একসময় এই শহরে সকালের হাওয়া মানে ছিল পাখির ডাক,রোদে শুকানো কাপড়ের গন্ধ,টং দোকানের চায়ের ভাপ।এখন সকাল মানে হর্ন,ধুলো আর ফোনের নোটিফিকেশন।এই শহর একদিন ছিল কাব্যের মতো।রিক্সার ঘন্টির শব্দে জেগে উঠতো অলিগলি,ছাদের দড়িতে উড়তো ঘুড়ি,পুরান ঢাকার রান্নাঘরে ফুটতো শাহী বিরিয়ানির ঘ্রাণ।আজ সেই শহর কাচের দেয়ালের পেছনে বন্দি।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ঢাকার প্রায় ৭০% তরুণ এখন বিদেশি উৎসব যেমন ভ্যালেন্টাইনস ডে,হ্যালোইন, নিউ ইয়ার পার্টিতে বেশি আগ্রহী,যেখানে স্থানীয় ঐতিহ্য যেমন নববর্ষ, পিঠা উৎসব বা নবান্নের প্রতি আগ্রহ ক্রমেই কমে যাচ্ছে।কারো কারো কাছে পহেলা বৈশাখ মানে এখন শুধু ছবি তোলা আর ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দেওয়া।তবে,একসময়ের খেলার মাঠ ছিল হাডুডু,কাবাডি,দাড়িয়াবান্ধা আর ঘুড়ি ওড়ানোর সরগরম। এখন সেই মাঠগুলো দখল হয়ে গেছে গাড়ি পার্কিংয়ে।শিশুরা জানেনা গ্রামের মেলা কেমন হয়,তাদের আননদের জগৎ এখন বন্দি হয়ে গেছে মোবাইল গেমে।পুরান ঢাকাএ ঐতিহ্যবাহী খাবার বোরহানী,নেহারী,মোরগ পোলাও এখন ব্রান্ডেড রেস্টুরেন্টে ডিশ হয়ে বিকোচ্ছে।ঐতিহ্য এখন বাণিজ্যের অংশ,সংস্কৃতির নয়।শুধু খাবার নয়,সেই সাথে সংগীত,পোশাক,কথা বলার ধরণ, এমনকি উৎসব উদযাপনের ভাবও বদলে গেছে।আধুনিকতা এসেছে কিন্তু তার সাথে এসেছে এক রকম ফাঁকা অনুভূতিও।

ঐতিহ্যের বিলুপ্তির পেছনে অনেক বাস্তব ও মানসিক কারণ রয়েছে।শহর বাড়ছে,মানুষ বাড়ছে কিন্তু জায়গা কমছে।নতুন ফ্লাট,নতুন সড়ক,নতুন ব্যবসা এসবের মাঝে আর জায়গা পাচ্ছে না পুরোনো ঐতিহ্য। ঐতিহাসিক ভবন ভেঙে তৈরি হচ্ছে শপিং মল।আজ সব কিছু বিক্রির পণ্য।উৎসব মানে স্পনসরশিপ,মেলা মানে মার্কেটিং। ঐতিহ্যবাহী আনন্দ আর নিখাদ অনুভূতি ঢেকে গেছে বিজ্ঞাপনের রঙে।আগে পরিবারের শিশুরা শিখতো নিজেদের গান,ইতিহাস,পোশাকের গল্প।এখন সেই সময় নেই।বাবা-মা ব্যস্ত সে সাথে সন্তানও ব্যস্ত যার ফলে ঐতিহ্য শেখার সময়ই পাচ্ছেনা কেউ।এছাড়া,ফেসবুক, টিকটক আমাদের নতুন সংস্কৃতি। ঐতিহ্য এখন কন্টেন্ট হয়ে গেছে যার মূল্য এখন লাইক,শেয়ার আর কমেন্টে মাপা হয়।আবার,ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি নীতি দুর্বল। অনেক ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।স্থাপত্য রক্ষায় আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে।বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি নিজেদের স্বাদ,পোশাক, সংগীত, ভাষা।ফিউশন কালচারের নামে হারিয়ে ফেলছি আসল রঙ।

নগরায়ন থামানো যাবে না কিন্তু ঐতিহ্যের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। শহর যখন বড় হয় তখন তার আত্মা যেন ছোট না হয় এটাই মূল কথা।আমরা হয়তো সময়ের সাথে বদলে যাবো কিন্তু নিজেদের শিকড় ভুলে গেলে আমাদের আধুনিকতা অর্থহীন হয়ে যাবে।নগরের আলো যতই ঝলমলে হোক না কে, যদি সেই আলো আমাদের ইতিহাসের ছায়া ঢেকে দেয় তাহলে তা উন্নতি নয় বরং এক ধরনের নিঃসঙ্গতা।আর,একটা শহরের সৌন্দর্য কেবল তার বিল্ডিংয়ে নয়,তার স্মৃতিতেও।ঐতিহ্যই শহরের আত্মা, আর সেই আত্মা বাঁচাতে হলে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

ঐতিহ্য এমন এক সোনার নকশা,যা মুছে গেলে শহর শুধু কংক্রিট আর ধোঁয়ায় ভরে যাবে।আমাদের শহর যেন আবার পাখির ডাক শুনে জাগে,যেন নববর্ষের সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার রঙে ভরে ওঠে,যেন পুরান ঢাকার ছাদে আবারও ঘুড়ি ওড়ে এই স্বপ্নটুকু ধরে রাখার দায় আমাদেরই।আমরা যদি এখন না ভাবি তাহলে একদিন আমাদের সন্তানরা হয়তো বলবে, ঢাকা শহর?ওটা একসময় সুন্দর ছিল।কিন্তু শহর যেন কোনোদিন অতীত হয়ে না যায় সেই দায়িত্ব আমাদের সবার।

আরমীন আমীন ঐশী

কর্মজীবী নারীর অদৃশ্য মানসিক বোঝা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আগাম সতর্কবার্তাই কি যথেষ্ট?

সুলতানপুরে করতোয়া নদীর তাণ্ডব: নদীভাঙনে মানুষের জীবন বিপন্ন

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সম্ভাবনা বিস্তৃত, অনিয়মের ছায়াও গভীর

গেন্ডারিয়ায় সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে অনিয়ম: জনদূর্ভোগ বৃদ্ধি

প্রবীণদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি

পলিভিনাইলের ব্যবহার প্রতিরোধ জরুরি

বৈধ সনদধারীদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি

টেকসই দুর্যোগ প্রস্তুতিতে জরুরি বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন

জলবায়ু পরিবর্তন ও নারী ও কিশোরীদের ঝুঁকি

মেধা হারাচ্ছে দেশ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : অযৌক্তিক ফি, সেশনজট ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলায় বিপর্যস্ত শিক্ষার্থী

সামাজিক মাধ্যমের ভুবনে জনতুষ্টিবাদের নতুন রূপ

ভেজাল খেজুরগুড় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা

প্লাস্টিক বর্জ্যে মাছের মৃত্যু: সমাধান কোথায়

খোলা ম্যানহোল: ঢাকার রাজপথে এক নীরব মরণফাঁদ

গণপরিবহন: প্রতিদিনের যন্ত্রণার শেষ কবে?

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ

সাইবার বুলিং ও ভার্চুয়াল অপরাধ: তরুণদের অদৃশ্য বিপদ

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরজীবনের চরম ভোগান্তি

রাবি মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার চাই

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

কক্সবাজার: উন্নয়নের পথে, বিপন্ন প্রকৃতি

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে নতুন সম্ভাবনার ভোর

প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর না হলে মানোন্নয়ন অসম্ভব

রাবির আবাসন সংকট

সব হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সেবা চালু করা হোক

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা

পানি সংকট: জীবন ও সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি

ই-লার্নিং: সীমান্তহীন শিক্ষার নতুন দিগন্ত

আজিমপুর কলোনির অব্যবস্থাপনা

জনস্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক : তামাকজাত পণ্য

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়: অবস্থান, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতি ও বাংলাদেশের সমুদ্রকৌশল

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট: দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তির শেষ কোথায়?

tab

মতামত » চিঠিপত্র

নগর সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যের বিলুপ্তি

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

কখনো কখনো মনে হয় শহরটা আর মানুষ নয় বরং এক বিশাল যন্ত্র,যে ক্রমাগত শব্দ করছে,ধোঁয়া ছাড়ছে আর ভেতর থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে নিজের হৃদ স্পন্দন।

একসময় এই শহরে সকালের হাওয়া মানে ছিল পাখির ডাক,রোদে শুকানো কাপড়ের গন্ধ,টং দোকানের চায়ের ভাপ।এখন সকাল মানে হর্ন,ধুলো আর ফোনের নোটিফিকেশন।এই শহর একদিন ছিল কাব্যের মতো।রিক্সার ঘন্টির শব্দে জেগে উঠতো অলিগলি,ছাদের দড়িতে উড়তো ঘুড়ি,পুরান ঢাকার রান্নাঘরে ফুটতো শাহী বিরিয়ানির ঘ্রাণ।আজ সেই শহর কাচের দেয়ালের পেছনে বন্দি।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ঢাকার প্রায় ৭০% তরুণ এখন বিদেশি উৎসব যেমন ভ্যালেন্টাইনস ডে,হ্যালোইন, নিউ ইয়ার পার্টিতে বেশি আগ্রহী,যেখানে স্থানীয় ঐতিহ্য যেমন নববর্ষ, পিঠা উৎসব বা নবান্নের প্রতি আগ্রহ ক্রমেই কমে যাচ্ছে।কারো কারো কাছে পহেলা বৈশাখ মানে এখন শুধু ছবি তোলা আর ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দেওয়া।তবে,একসময়ের খেলার মাঠ ছিল হাডুডু,কাবাডি,দাড়িয়াবান্ধা আর ঘুড়ি ওড়ানোর সরগরম। এখন সেই মাঠগুলো দখল হয়ে গেছে গাড়ি পার্কিংয়ে।শিশুরা জানেনা গ্রামের মেলা কেমন হয়,তাদের আননদের জগৎ এখন বন্দি হয়ে গেছে মোবাইল গেমে।পুরান ঢাকাএ ঐতিহ্যবাহী খাবার বোরহানী,নেহারী,মোরগ পোলাও এখন ব্রান্ডেড রেস্টুরেন্টে ডিশ হয়ে বিকোচ্ছে।ঐতিহ্য এখন বাণিজ্যের অংশ,সংস্কৃতির নয়।শুধু খাবার নয়,সেই সাথে সংগীত,পোশাক,কথা বলার ধরণ, এমনকি উৎসব উদযাপনের ভাবও বদলে গেছে।আধুনিকতা এসেছে কিন্তু তার সাথে এসেছে এক রকম ফাঁকা অনুভূতিও।

ঐতিহ্যের বিলুপ্তির পেছনে অনেক বাস্তব ও মানসিক কারণ রয়েছে।শহর বাড়ছে,মানুষ বাড়ছে কিন্তু জায়গা কমছে।নতুন ফ্লাট,নতুন সড়ক,নতুন ব্যবসা এসবের মাঝে আর জায়গা পাচ্ছে না পুরোনো ঐতিহ্য। ঐতিহাসিক ভবন ভেঙে তৈরি হচ্ছে শপিং মল।আজ সব কিছু বিক্রির পণ্য।উৎসব মানে স্পনসরশিপ,মেলা মানে মার্কেটিং। ঐতিহ্যবাহী আনন্দ আর নিখাদ অনুভূতি ঢেকে গেছে বিজ্ঞাপনের রঙে।আগে পরিবারের শিশুরা শিখতো নিজেদের গান,ইতিহাস,পোশাকের গল্প।এখন সেই সময় নেই।বাবা-মা ব্যস্ত সে সাথে সন্তানও ব্যস্ত যার ফলে ঐতিহ্য শেখার সময়ই পাচ্ছেনা কেউ।এছাড়া,ফেসবুক, টিকটক আমাদের নতুন সংস্কৃতি। ঐতিহ্য এখন কন্টেন্ট হয়ে গেছে যার মূল্য এখন লাইক,শেয়ার আর কমেন্টে মাপা হয়।আবার,ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি নীতি দুর্বল। অনেক ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।স্থাপত্য রক্ষায় আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে।বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি নিজেদের স্বাদ,পোশাক, সংগীত, ভাষা।ফিউশন কালচারের নামে হারিয়ে ফেলছি আসল রঙ।

নগরায়ন থামানো যাবে না কিন্তু ঐতিহ্যের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। শহর যখন বড় হয় তখন তার আত্মা যেন ছোট না হয় এটাই মূল কথা।আমরা হয়তো সময়ের সাথে বদলে যাবো কিন্তু নিজেদের শিকড় ভুলে গেলে আমাদের আধুনিকতা অর্থহীন হয়ে যাবে।নগরের আলো যতই ঝলমলে হোক না কে, যদি সেই আলো আমাদের ইতিহাসের ছায়া ঢেকে দেয় তাহলে তা উন্নতি নয় বরং এক ধরনের নিঃসঙ্গতা।আর,একটা শহরের সৌন্দর্য কেবল তার বিল্ডিংয়ে নয়,তার স্মৃতিতেও।ঐতিহ্যই শহরের আত্মা, আর সেই আত্মা বাঁচাতে হলে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

ঐতিহ্য এমন এক সোনার নকশা,যা মুছে গেলে শহর শুধু কংক্রিট আর ধোঁয়ায় ভরে যাবে।আমাদের শহর যেন আবার পাখির ডাক শুনে জাগে,যেন নববর্ষের সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার রঙে ভরে ওঠে,যেন পুরান ঢাকার ছাদে আবারও ঘুড়ি ওড়ে এই স্বপ্নটুকু ধরে রাখার দায় আমাদেরই।আমরা যদি এখন না ভাবি তাহলে একদিন আমাদের সন্তানরা হয়তো বলবে, ঢাকা শহর?ওটা একসময় সুন্দর ছিল।কিন্তু শহর যেন কোনোদিন অতীত হয়ে না যায় সেই দায়িত্ব আমাদের সবার।

আরমীন আমীন ঐশী

back to top