alt

মতামত » চিঠিপত্র

ডিগ্রি হাতে, চাকরি স্বপ্নে: শিক্ষিত বেকারদের মানসিক ক্ষয়

: শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারত্ব আজ এক ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে প্রায় ১০-১২ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বের হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ কোনো কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪ সালের তথ্যমতে, দেশে মোট বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ ২৪ হাজার, যার মধ্যে প্রায় ৯ লাখ উচ্চশিক্ষিত। শিক্ষিত বেকারের এই সংখ্যা কেবল অর্থনৈতিক ক্ষয় নয়, এটি মানসিক ও সামাজিক ক্ষয়েরও সূচনা।

গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ১৩.৫ শতাংশ, যা দেশের অন্যান্য শিক্ষাগত স্তরের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি বছর নতুন করে লাখ লাখ তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে, কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। শুধুমাত্র সরকারি খাতে নয়, বেসরকারি খাতেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। তথ্য অনুযায়ী, শিল্পখাত ও সেবা খাতে ২০১৯-২০২৩ সালের মধ্যে গড়ে মাত্র ৫-৬ লাখ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা শিক্ষিত তরুণদের চাহিদার তুলনায় খুবই কম।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশ প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে ভয়াবহ মাত্রায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী অংশ নিয়েছিল, কিন্তু প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হলো মাত্র ১২ হাজার ৭৮৯ জন। অর্থাৎ প্রতি ৩০ জনে মাত্র একজনের ভাগ্যে সুযোগ আসে। কেউ কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউ আবার বারবার ব্যর্থ হয়ে আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে। এই প্রতিযোগিতা শুধু অর্থনৈতিক চাপই তৈরি করছে না, তরুণদের হৃদয় ও মনকে কষ্ট দিচ্ছে, স্বপ্নের পথে ভয় ও অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলছে।

যে তরুণ বা তরুণী বহু বছর পড়াশোনা করেছে, ভালো ফলাফল অর্জন করেছে, অথচ চাকরি পায় না, সে নিজেকে ব্যর্থ মনে করতে শুরু করে। পরিবার ও সমাজের প্রত্যাশা, বন্ধুদের অগ্রগতি, নিজের স্বপ্নের বাস্তবায়নের ব্যর্থতা সব মিলিয়ে তরুণদের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ এবং একাকীত্ব তৈরি হচ্ছে। ধীরে ধীরে তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে, জীবনকে তারা অর্থহীন ও ফাঁকা মনে করছে। অনেকে দিন কাটাচ্ছে ঘরে বসে, কেউ ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে, আবার কেউ একরকম উদাসীনতায় ভুগছে।

শিক্ষিত বেকারত্ব আজ কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি একটি জাতীয় সংকট। দেশের তরুণরা জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাদের হতাশা মানে দেশের অগ্রগতি থেমে যাওয়ার আশঙ্কা। তাই এখনই প্রয়োজন সচেতনতা, পরিকল্পনা ও বাস্তব পদক্ষেপ। শিক্ষা তখনই অর্থবহ হবে, যখন তা জীবনের সার্থকতায়, আত্মবিশ্বাসে ও কর্মের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে। আমাদের তরুণরা কোনো বোঝা নয়; তারা দেশের আশা, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক। যদি তারা হতাশ না হয়, সঠিক সুযোগ পায়, তাহলে আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল, শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময়।

তহমিনা ইয়াসমিন

সমুদ্রগবেষণায় পশ্চাৎপদতা মৎস্য খাতের ভবিষ্যৎকেই ঝুঁকিতে ফেলছে

কিশোর গ্যাং–সংস্কৃতি: সমাজের জন্য বাড়তে থাকা অশনি সংকেত

সরকারি কর্মচারীদের কর্মেই মুক্তি নাকি আন্দোলনে?

কর্মজীবী নারীর অদৃশ্য মানসিক বোঝা

নগর সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যের বিলুপ্তি

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আগাম সতর্কবার্তাই কি যথেষ্ট?

সুলতানপুরে করতোয়া নদীর তাণ্ডব: নদীভাঙনে মানুষের জীবন বিপন্ন

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সম্ভাবনা বিস্তৃত, অনিয়মের ছায়াও গভীর

গেন্ডারিয়ায় সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে অনিয়ম: জনদূর্ভোগ বৃদ্ধি

প্রবীণদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি

পলিভিনাইলের ব্যবহার প্রতিরোধ জরুরি

বৈধ সনদধারীদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি

টেকসই দুর্যোগ প্রস্তুতিতে জরুরি বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন

জলবায়ু পরিবর্তন ও নারী ও কিশোরীদের ঝুঁকি

মেধা হারাচ্ছে দেশ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : অযৌক্তিক ফি, সেশনজট ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলায় বিপর্যস্ত শিক্ষার্থী

সামাজিক মাধ্যমের ভুবনে জনতুষ্টিবাদের নতুন রূপ

ভেজাল খেজুরগুড় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা

প্লাস্টিক বর্জ্যে মাছের মৃত্যু: সমাধান কোথায়

খোলা ম্যানহোল: ঢাকার রাজপথে এক নীরব মরণফাঁদ

গণপরিবহন: প্রতিদিনের যন্ত্রণার শেষ কবে?

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ

সাইবার বুলিং ও ভার্চুয়াল অপরাধ: তরুণদের অদৃশ্য বিপদ

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরজীবনের চরম ভোগান্তি

রাবি মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার চাই

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

কক্সবাজার: উন্নয়নের পথে, বিপন্ন প্রকৃতি

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে নতুন সম্ভাবনার ভোর

প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর না হলে মানোন্নয়ন অসম্ভব

রাবির আবাসন সংকট

সব হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সেবা চালু করা হোক

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা

পানি সংকট: জীবন ও সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি

ই-লার্নিং: সীমান্তহীন শিক্ষার নতুন দিগন্ত

আজিমপুর কলোনির অব্যবস্থাপনা

tab

মতামত » চিঠিপত্র

ডিগ্রি হাতে, চাকরি স্বপ্নে: শিক্ষিত বেকারদের মানসিক ক্ষয়

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারত্ব আজ এক ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে প্রায় ১০-১২ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বের হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ কোনো কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪ সালের তথ্যমতে, দেশে মোট বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ ২৪ হাজার, যার মধ্যে প্রায় ৯ লাখ উচ্চশিক্ষিত। শিক্ষিত বেকারের এই সংখ্যা কেবল অর্থনৈতিক ক্ষয় নয়, এটি মানসিক ও সামাজিক ক্ষয়েরও সূচনা।

গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ১৩.৫ শতাংশ, যা দেশের অন্যান্য শিক্ষাগত স্তরের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি বছর নতুন করে লাখ লাখ তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে, কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। শুধুমাত্র সরকারি খাতে নয়, বেসরকারি খাতেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। তথ্য অনুযায়ী, শিল্পখাত ও সেবা খাতে ২০১৯-২০২৩ সালের মধ্যে গড়ে মাত্র ৫-৬ লাখ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা শিক্ষিত তরুণদের চাহিদার তুলনায় খুবই কম।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশ প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে ভয়াবহ মাত্রায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী অংশ নিয়েছিল, কিন্তু প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হলো মাত্র ১২ হাজার ৭৮৯ জন। অর্থাৎ প্রতি ৩০ জনে মাত্র একজনের ভাগ্যে সুযোগ আসে। কেউ কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউ আবার বারবার ব্যর্থ হয়ে আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে। এই প্রতিযোগিতা শুধু অর্থনৈতিক চাপই তৈরি করছে না, তরুণদের হৃদয় ও মনকে কষ্ট দিচ্ছে, স্বপ্নের পথে ভয় ও অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলছে।

যে তরুণ বা তরুণী বহু বছর পড়াশোনা করেছে, ভালো ফলাফল অর্জন করেছে, অথচ চাকরি পায় না, সে নিজেকে ব্যর্থ মনে করতে শুরু করে। পরিবার ও সমাজের প্রত্যাশা, বন্ধুদের অগ্রগতি, নিজের স্বপ্নের বাস্তবায়নের ব্যর্থতা সব মিলিয়ে তরুণদের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ এবং একাকীত্ব তৈরি হচ্ছে। ধীরে ধীরে তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে, জীবনকে তারা অর্থহীন ও ফাঁকা মনে করছে। অনেকে দিন কাটাচ্ছে ঘরে বসে, কেউ ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে, আবার কেউ একরকম উদাসীনতায় ভুগছে।

শিক্ষিত বেকারত্ব আজ কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি একটি জাতীয় সংকট। দেশের তরুণরা জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাদের হতাশা মানে দেশের অগ্রগতি থেমে যাওয়ার আশঙ্কা। তাই এখনই প্রয়োজন সচেতনতা, পরিকল্পনা ও বাস্তব পদক্ষেপ। শিক্ষা তখনই অর্থবহ হবে, যখন তা জীবনের সার্থকতায়, আত্মবিশ্বাসে ও কর্মের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে। আমাদের তরুণরা কোনো বোঝা নয়; তারা দেশের আশা, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক। যদি তারা হতাশ না হয়, সঠিক সুযোগ পায়, তাহলে আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল, শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময়।

তহমিনা ইয়াসমিন

back to top