মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারত্ব আজ এক ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে প্রায় ১০-১২ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বের হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ কোনো কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪ সালের তথ্যমতে, দেশে মোট বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ ২৪ হাজার, যার মধ্যে প্রায় ৯ লাখ উচ্চশিক্ষিত। শিক্ষিত বেকারের এই সংখ্যা কেবল অর্থনৈতিক ক্ষয় নয়, এটি মানসিক ও সামাজিক ক্ষয়েরও সূচনা।
গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ১৩.৫ শতাংশ, যা দেশের অন্যান্য শিক্ষাগত স্তরের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি বছর নতুন করে লাখ লাখ তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে, কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। শুধুমাত্র সরকারি খাতে নয়, বেসরকারি খাতেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। তথ্য অনুযায়ী, শিল্পখাত ও সেবা খাতে ২০১৯-২০২৩ সালের মধ্যে গড়ে মাত্র ৫-৬ লাখ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা শিক্ষিত তরুণদের চাহিদার তুলনায় খুবই কম।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশ প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে ভয়াবহ মাত্রায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী অংশ নিয়েছিল, কিন্তু প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হলো মাত্র ১২ হাজার ৭৮৯ জন। অর্থাৎ প্রতি ৩০ জনে মাত্র একজনের ভাগ্যে সুযোগ আসে। কেউ কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউ আবার বারবার ব্যর্থ হয়ে আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে। এই প্রতিযোগিতা শুধু অর্থনৈতিক চাপই তৈরি করছে না, তরুণদের হৃদয় ও মনকে কষ্ট দিচ্ছে, স্বপ্নের পথে ভয় ও অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলছে।
যে তরুণ বা তরুণী বহু বছর পড়াশোনা করেছে, ভালো ফলাফল অর্জন করেছে, অথচ চাকরি পায় না, সে নিজেকে ব্যর্থ মনে করতে শুরু করে। পরিবার ও সমাজের প্রত্যাশা, বন্ধুদের অগ্রগতি, নিজের স্বপ্নের বাস্তবায়নের ব্যর্থতা সব মিলিয়ে তরুণদের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ এবং একাকীত্ব তৈরি হচ্ছে। ধীরে ধীরে তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে, জীবনকে তারা অর্থহীন ও ফাঁকা মনে করছে। অনেকে দিন কাটাচ্ছে ঘরে বসে, কেউ ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে, আবার কেউ একরকম উদাসীনতায় ভুগছে।
শিক্ষিত বেকারত্ব আজ কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি একটি জাতীয় সংকট। দেশের তরুণরা জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাদের হতাশা মানে দেশের অগ্রগতি থেমে যাওয়ার আশঙ্কা। তাই এখনই প্রয়োজন সচেতনতা, পরিকল্পনা ও বাস্তব পদক্ষেপ। শিক্ষা তখনই অর্থবহ হবে, যখন তা জীবনের সার্থকতায়, আত্মবিশ্বাসে ও কর্মের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে। আমাদের তরুণরা কোনো বোঝা নয়; তারা দেশের আশা, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক। যদি তারা হতাশ না হয়, সঠিক সুযোগ পায়, তাহলে আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল, শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময়।
তহমিনা ইয়াসমিন
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারত্ব আজ এক ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে প্রায় ১০-১২ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বের হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ কোনো কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪ সালের তথ্যমতে, দেশে মোট বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ ২৪ হাজার, যার মধ্যে প্রায় ৯ লাখ উচ্চশিক্ষিত। শিক্ষিত বেকারের এই সংখ্যা কেবল অর্থনৈতিক ক্ষয় নয়, এটি মানসিক ও সামাজিক ক্ষয়েরও সূচনা।
গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ১৩.৫ শতাংশ, যা দেশের অন্যান্য শিক্ষাগত স্তরের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি বছর নতুন করে লাখ লাখ তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে, কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। শুধুমাত্র সরকারি খাতে নয়, বেসরকারি খাতেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। তথ্য অনুযায়ী, শিল্পখাত ও সেবা খাতে ২০১৯-২০২৩ সালের মধ্যে গড়ে মাত্র ৫-৬ লাখ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা শিক্ষিত তরুণদের চাহিদার তুলনায় খুবই কম।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশ প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে ভয়াবহ মাত্রায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী অংশ নিয়েছিল, কিন্তু প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হলো মাত্র ১২ হাজার ৭৮৯ জন। অর্থাৎ প্রতি ৩০ জনে মাত্র একজনের ভাগ্যে সুযোগ আসে। কেউ কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউ আবার বারবার ব্যর্থ হয়ে আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে। এই প্রতিযোগিতা শুধু অর্থনৈতিক চাপই তৈরি করছে না, তরুণদের হৃদয় ও মনকে কষ্ট দিচ্ছে, স্বপ্নের পথে ভয় ও অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলছে।
যে তরুণ বা তরুণী বহু বছর পড়াশোনা করেছে, ভালো ফলাফল অর্জন করেছে, অথচ চাকরি পায় না, সে নিজেকে ব্যর্থ মনে করতে শুরু করে। পরিবার ও সমাজের প্রত্যাশা, বন্ধুদের অগ্রগতি, নিজের স্বপ্নের বাস্তবায়নের ব্যর্থতা সব মিলিয়ে তরুণদের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ এবং একাকীত্ব তৈরি হচ্ছে। ধীরে ধীরে তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে, জীবনকে তারা অর্থহীন ও ফাঁকা মনে করছে। অনেকে দিন কাটাচ্ছে ঘরে বসে, কেউ ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে, আবার কেউ একরকম উদাসীনতায় ভুগছে।
শিক্ষিত বেকারত্ব আজ কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি একটি জাতীয় সংকট। দেশের তরুণরা জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাদের হতাশা মানে দেশের অগ্রগতি থেমে যাওয়ার আশঙ্কা। তাই এখনই প্রয়োজন সচেতনতা, পরিকল্পনা ও বাস্তব পদক্ষেপ। শিক্ষা তখনই অর্থবহ হবে, যখন তা জীবনের সার্থকতায়, আত্মবিশ্বাসে ও কর্মের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে। আমাদের তরুণরা কোনো বোঝা নয়; তারা দেশের আশা, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক। যদি তারা হতাশ না হয়, সঠিক সুযোগ পায়, তাহলে আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল, শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময়।
তহমিনা ইয়াসমিন