মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
কিশোর গ্যাং এখন দেশের সামাজিক নিরাপত্তার অন্যতম বড় উদ্বেগ। একসময় গল্প–উপন্যাসে কিশোরদের সাহসী দল ন্যায় প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা দিত; কিন্তু বাস্তবে আজ কিশোর গ্যাং হয়ে উঠেছে অপরাধের প্রধান নিয়ামক। ঢাকা মহানগর পুলিশের হিসাবে শুধু রাজধানীতেই সক্রিয় গ্যাংয়ের সংখ্যা ১২৭টি এবং এসব দলে জড়িত কিশোর রয়েছে এক হাজারের বেশি। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও একই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে। আধিপত্য বিস্তার, মারধর, মাদক চোরাচালান, ধর্ষণ, ছিনতাই থেকে শুরু করে খুন পর্যন্ত নানা অপরাধে অপ্রাপ্তবয়স্করা জড়িয়ে পড়ছে উদ্বেগজনক হারে।
গবেষণা বলছে, কিশোর অপরাধের হার গত কয়েক বছরে দ্রুত বেড়েছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ–এর তথ্য অনুযায়ী, ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরদের অপরাধে জড়ানোর হার ছয় বছরে বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। শহুরে বঞ্চনা, বিদ্যালয়ে ব্যর্থতা, পারিবারিক অবহেলা, সহিংস পরিবেশ, মাদক এবং ভুল সঙ্গÑএসব কারণ কিশোরদের গ্যাংয়ে টেনে নিচ্ছে। মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও কম আত্মমর্যাদা, ট্রমা বা বিদ্রোহী মানসিকতা অনেককে অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিভিন্ন দেশে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘গ্যাং রেজিস্ট্যান্স এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং’ কর্মসূচির মতো বিদ্যালয়–ভিত্তিক সচেতনতা ও আচরণ–গঠনমূলক কার্যক্রম চালু আছে। জ্যামাইকা ও কলম্বিয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ কিশোরদের জন্য বিশেষ শিক্ষা, থেরাপি ও কর্মমুখী পুনর্বাসন ব্যবস্থাও কার্যকর হয়েছে। আমাদের দেশে কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার দিনদিন বাড়লেও এখনো তেমন নির্দিষ্ট ও সমন্বিত কর্মসূচি নেই। ফলে আইনশৃঙ্খলার প্রচলিত ব্যবস্থা অপরাধ কমাতে পারলেও গ্যাং–সংস্কৃতি ভাঙতে পারছে না।
বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে পরিবার–বিদ্যালয়–সমাজকে কেন্দ্র করে একযোগে উদ্যোগ নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শিশুদের চিহ্নিত করে সচেতনতা, পরামর্শ, ক্রীড়া–সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, নৈতিক শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা জরুরি। একই সঙ্গে ধর্মীয়–সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা এবং গণমাধ্যমকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। আর যারা ইতিমধ্যে গ্যাংয়ে জড়িয়েছে, তাদের জন্য নিরাপদ পুনর্বাসন ও দক্ষতা–নির্ভর জীবিকায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
কিশোররা দেশের ভবিষ্যৎ। অপরাধ নয়, তাদের সঠিক পথ দেখানোই সময়ের দাবি। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এই প্রজন্মের স্খলন সমাজের ভিত্তিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আফসানা আক্তার আফসানা
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
কিশোর গ্যাং এখন দেশের সামাজিক নিরাপত্তার অন্যতম বড় উদ্বেগ। একসময় গল্প–উপন্যাসে কিশোরদের সাহসী দল ন্যায় প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা দিত; কিন্তু বাস্তবে আজ কিশোর গ্যাং হয়ে উঠেছে অপরাধের প্রধান নিয়ামক। ঢাকা মহানগর পুলিশের হিসাবে শুধু রাজধানীতেই সক্রিয় গ্যাংয়ের সংখ্যা ১২৭টি এবং এসব দলে জড়িত কিশোর রয়েছে এক হাজারের বেশি। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও একই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে। আধিপত্য বিস্তার, মারধর, মাদক চোরাচালান, ধর্ষণ, ছিনতাই থেকে শুরু করে খুন পর্যন্ত নানা অপরাধে অপ্রাপ্তবয়স্করা জড়িয়ে পড়ছে উদ্বেগজনক হারে।
গবেষণা বলছে, কিশোর অপরাধের হার গত কয়েক বছরে দ্রুত বেড়েছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ–এর তথ্য অনুযায়ী, ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরদের অপরাধে জড়ানোর হার ছয় বছরে বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। শহুরে বঞ্চনা, বিদ্যালয়ে ব্যর্থতা, পারিবারিক অবহেলা, সহিংস পরিবেশ, মাদক এবং ভুল সঙ্গÑএসব কারণ কিশোরদের গ্যাংয়ে টেনে নিচ্ছে। মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও কম আত্মমর্যাদা, ট্রমা বা বিদ্রোহী মানসিকতা অনেককে অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিভিন্ন দেশে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘গ্যাং রেজিস্ট্যান্স এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং’ কর্মসূচির মতো বিদ্যালয়–ভিত্তিক সচেতনতা ও আচরণ–গঠনমূলক কার্যক্রম চালু আছে। জ্যামাইকা ও কলম্বিয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ কিশোরদের জন্য বিশেষ শিক্ষা, থেরাপি ও কর্মমুখী পুনর্বাসন ব্যবস্থাও কার্যকর হয়েছে। আমাদের দেশে কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার দিনদিন বাড়লেও এখনো তেমন নির্দিষ্ট ও সমন্বিত কর্মসূচি নেই। ফলে আইনশৃঙ্খলার প্রচলিত ব্যবস্থা অপরাধ কমাতে পারলেও গ্যাং–সংস্কৃতি ভাঙতে পারছে না।
বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে পরিবার–বিদ্যালয়–সমাজকে কেন্দ্র করে একযোগে উদ্যোগ নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শিশুদের চিহ্নিত করে সচেতনতা, পরামর্শ, ক্রীড়া–সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, নৈতিক শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা জরুরি। একই সঙ্গে ধর্মীয়–সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা এবং গণমাধ্যমকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। আর যারা ইতিমধ্যে গ্যাংয়ে জড়িয়েছে, তাদের জন্য নিরাপদ পুনর্বাসন ও দক্ষতা–নির্ভর জীবিকায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
কিশোররা দেশের ভবিষ্যৎ। অপরাধ নয়, তাদের সঠিক পথ দেখানোই সময়ের দাবি। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এই প্রজন্মের স্খলন সমাজের ভিত্তিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আফসানা আক্তার আফসানা