মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বাংলাদেশ সমুদ্রসম্পদে সমৃদ্ধ হলেও সেই সম্পদ চিহ্নিত ও ব্যবহারের ভিত্তিগত বিজ্ঞান এখনো দুর্বল। গবেষণা জাহাজ, আধুনিক জরিপযন্ত্র, সোনার প্রযুক্তি বা স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ-সব ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়ে গেছে। ফলে গভীর সমুদ্রে মাছের মজুদ, স্রোত–তাপমাত্রার পরিবর্তন কিংবা কোন এলাকায় কোন প্রজাতি কতটুকু আছে-এমন মৌলিক তথ্যও নির্ভরযোগ্যভাবে জানা যায় না। গবেষণার এই সীমাবদ্ধতা নীতিনির্ধারণকেও অনুমাননির্ভর করে তুলে; কখন আহরণ বাড়ানো বা কমানো উচিত, কোথায় প্রজননক্ষেত্র রক্ষা করতে হবে-এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবে বিজ্ঞানভিত্তিক নয়।
মানবসম্পদের ঘাটতিও বড়। সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী বা বাস্তুতন্ত্র–বিশেষজ্ঞের সংখ্যা কম, নিয়মিত প্রকল্প আরও কম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মেরিন বিজ্ঞান বিভাগ থাকলেও গবেষণার পরিবেশ সীমিত, তহবিল অপ্রতুল, আর আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা খুব কমই হয়। ফলে সমুদ্রের পরিবর্তন, প্রজাতির আচরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব-এসব বিষয়ে গভীর বিশ্লেষণ গড়ে ওঠে না।
এই গবেষণা–অভাবের সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে মৎস্য খাতে। মাছের মজুদ নির্ণয় না থাকায় কোথাও অতিরিক্ত আহরণ হচ্ছে, কোথাও আবার সম্ভাবনাময় এলাকা ব্যবহারই হচ্ছে না। গভীর সমুদ্রে বাণিজ্যিক আহরণেও সক্ষমতা অর্জিত হয়নি-ভূতাত্ত্বিক তথ্য নেই, প্রজাতিগত তথ্য নেই, নিয়মিত জরিপ নেই। প্রতিবেশী দেশগুলো যখন আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে গভীর সমুদ্র থেকে নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করছে, বাংলাদেশ তখনো অল্প তথ্য আর অনুমানের ওপর নির্ভর করছে। এতে উৎপাদনশীলতা কমছে এবং বহু মূল্যবান প্রজাতি ঝুঁকিতে পড়ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের চাপও বাড়ছে, কিন্তু এসবের প্রভাব মূল্যায়নে নিয়মিত গবেষণা নেই বললেই চলে।
এ অবস্থায় সমুদ্রগবেষণাকে জাতীয় অগ্রাধিকার দিতে হবে। আধুনিক গবেষণা জাহাজ, উন্নত ল্যাব, নিয়মিত স্টক মূল্যায়ন, স্যাটেলাইট ও জিআইএস প্রযুক্তির ব্যবহার, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা-এসব দ্রুত বাড়ানো জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ, যৌথ প্রকল্প এবং গবেষণা–তহবিল বৃদ্ধি ছাড়া টেকসই অগ্রগতি সম্ভব নয়।
মৎস্য খাত বাংলাদেশের প্রোটিন চাহিদা ও অর্থনীতির বড় ভরসা। সমুদ্র সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে এই ভরসা দীর্ঘদিন ধরে রাখা যাবে না। সমুদ্রকে জানাই ভবিষ্যৎকে জানা-আর সেই ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে ওঠে শক্ত সমুদ্রগবেষণার ওপর।
জিনিয়া তাবাসসুম
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশ সমুদ্রসম্পদে সমৃদ্ধ হলেও সেই সম্পদ চিহ্নিত ও ব্যবহারের ভিত্তিগত বিজ্ঞান এখনো দুর্বল। গবেষণা জাহাজ, আধুনিক জরিপযন্ত্র, সোনার প্রযুক্তি বা স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ-সব ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়ে গেছে। ফলে গভীর সমুদ্রে মাছের মজুদ, স্রোত–তাপমাত্রার পরিবর্তন কিংবা কোন এলাকায় কোন প্রজাতি কতটুকু আছে-এমন মৌলিক তথ্যও নির্ভরযোগ্যভাবে জানা যায় না। গবেষণার এই সীমাবদ্ধতা নীতিনির্ধারণকেও অনুমাননির্ভর করে তুলে; কখন আহরণ বাড়ানো বা কমানো উচিত, কোথায় প্রজননক্ষেত্র রক্ষা করতে হবে-এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবে বিজ্ঞানভিত্তিক নয়।
মানবসম্পদের ঘাটতিও বড়। সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী বা বাস্তুতন্ত্র–বিশেষজ্ঞের সংখ্যা কম, নিয়মিত প্রকল্প আরও কম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মেরিন বিজ্ঞান বিভাগ থাকলেও গবেষণার পরিবেশ সীমিত, তহবিল অপ্রতুল, আর আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা খুব কমই হয়। ফলে সমুদ্রের পরিবর্তন, প্রজাতির আচরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব-এসব বিষয়ে গভীর বিশ্লেষণ গড়ে ওঠে না।
এই গবেষণা–অভাবের সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে মৎস্য খাতে। মাছের মজুদ নির্ণয় না থাকায় কোথাও অতিরিক্ত আহরণ হচ্ছে, কোথাও আবার সম্ভাবনাময় এলাকা ব্যবহারই হচ্ছে না। গভীর সমুদ্রে বাণিজ্যিক আহরণেও সক্ষমতা অর্জিত হয়নি-ভূতাত্ত্বিক তথ্য নেই, প্রজাতিগত তথ্য নেই, নিয়মিত জরিপ নেই। প্রতিবেশী দেশগুলো যখন আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে গভীর সমুদ্র থেকে নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করছে, বাংলাদেশ তখনো অল্প তথ্য আর অনুমানের ওপর নির্ভর করছে। এতে উৎপাদনশীলতা কমছে এবং বহু মূল্যবান প্রজাতি ঝুঁকিতে পড়ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের চাপও বাড়ছে, কিন্তু এসবের প্রভাব মূল্যায়নে নিয়মিত গবেষণা নেই বললেই চলে।
এ অবস্থায় সমুদ্রগবেষণাকে জাতীয় অগ্রাধিকার দিতে হবে। আধুনিক গবেষণা জাহাজ, উন্নত ল্যাব, নিয়মিত স্টক মূল্যায়ন, স্যাটেলাইট ও জিআইএস প্রযুক্তির ব্যবহার, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা-এসব দ্রুত বাড়ানো জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ, যৌথ প্রকল্প এবং গবেষণা–তহবিল বৃদ্ধি ছাড়া টেকসই অগ্রগতি সম্ভব নয়।
মৎস্য খাত বাংলাদেশের প্রোটিন চাহিদা ও অর্থনীতির বড় ভরসা। সমুদ্র সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে এই ভরসা দীর্ঘদিন ধরে রাখা যাবে না। সমুদ্রকে জানাই ভবিষ্যৎকে জানা-আর সেই ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে ওঠে শক্ত সমুদ্রগবেষণার ওপর।
জিনিয়া তাবাসসুম