alt

মতামত » চিঠিপত্র

শহরের পাখিরা যখন মরার প্রহর গুনে

: শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

শহরের আকাশে যখন ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে নতুন বছরের ঘোষণা আসে, তখনই যেন প্রকৃতির বুকে নেমে আসে এক অদৃশ্য শোক। আতশবাজির বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে গাছের ডাল, ভীত সন্ত্রস্ত পাখিরা দিশেহারা হয়ে ছুটে বেড়ায়, অনেকেই প্রাণ হারায়। যাদের কণ্ঠে ভোরের গান, যাদের ডানায় ছিল আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন-তারা তখন মরার প্রহর গুনে। অথচ এই উৎসবের আনন্দ মানুষ ছাড়া আর কারও জন্য নয়।

গ্রামবাংলায় এমন চিত্র খুব একটা দেখা যায় না। গ্রামে আতশবাজি, মদ্যপান কিংবা পার্টি-কেন্দ্রিক ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ উদযাপন বিরল। কারণ গ্রামীণ সমাজ এখনও প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের গুরুত্ব বোঝে। নতুন বছর সেখানে আসে নীরবে-সূর্যোদয়ের আলোয়, মাঠের সবুজে, নদীর জলে। কিন্তু শহুরে জীবনে পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণে এই উৎসব আজ এক ধরনের প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে-কে বেশি শব্দ করবে, কে বেশি আলো জ্বালাবে, কে বেশি উন্মাদনায় মেতে উঠবে।

এই উচ্ছ্বাসের প্রতিদান স্বরূপ আত্মদান করছে প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ। শুধু পাখিই নয়-পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, বায়ু ও শব্দদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ। অথচ আমরা এই ক্ষতির হিসাব কষি না, কারণ আমাদের আনন্দের মুহূর্তে প্রকৃতির কান্না আমাদের শোনা হয় না।

অন্যদিকে তাকালেই দেখা যায় বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির অনন্য উৎসব-পহেলা বৈশাখ। নতুন বছরের আগমন তখন হয় আনন্দ, সৌহার্দ্য আর মানবিকতায় ভর করে। মানুষ নতুন পোশাক পরে, ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে, বৈশাখী মেলায় মেতে ওঠে। হালখাতা, নৌকাবাইচ, গ্রামীণ খেলাধুলা, পান্তা-ইলিশ, লোকসংগীত-সব মিলিয়ে দেশটা যেন সেজে ওঠে নতুন রঙে। এখানে আনন্দ আছে, কিন্তু অকারণ শব্দ নেই; উৎসব আছে, কিন্তু প্রকৃতির ওপর আঘাত নেই।

তাহলে প্রশ্ন জাগে-পহেলা বৈশাখে যে মানুষ এত শান্ত, এত প্রাণবন্ত, এত মানবিক-পহেলা জানুয়ারিতে তাদের কী এমন অসুখ হয় যে তারা আতশবাজির আগুনে আকাশ পুড়িয়ে দিতে চায়? কেন আনন্দের নামে ধ্বংসকে বেছে নিতে হবে?

আমরা ব্রিটিশ শাসন থেকে ইস্তফা নিয়েছি বহু আগেই, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাদের অনেক সংস্কৃতি আজও আমাদের চিন্তা ও আচরণে গেঁথে আছে। নিজেদের ঐতিহ্যকে অবহেলা করে বিদেশি অনুকরণে মেতে ওঠা যেন আধুনিকতার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ প্রকৃত আধুনিকতা মানে দায়িত্বশীল হওয়া, প্রকৃতি ও সংস্কৃতিকে সম্মান করা।

পরিশেষে বলা যায়, পহেলা জানুয়ারি পালন হোক বাঙালির সংস্কৃতিতে-শব্দহীন, সহনশীল, মানবিক ও পরিবেশবান্ধব রূপে। আনন্দ হোক মানুষের জন্য, কিন্তু তা যেন অন্য প্রাণের কান্নার কারণ না হয়। নতুন বছর আসুক নতুন চেতনায়-প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের অঙ্গীকারে।

রাহুল দেবনাথ

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষির অবদান

ধর্মের নামে বর্বরতা

টেকসই শহরের একান্ত প্রয়োজন

সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি

সুন্দরবনের বাঘ ও জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : আর্শীবাদ নাকি অভিশাপ

সমুদ্রগবেষণায় পশ্চাৎপদতা মৎস্য খাতের ভবিষ্যৎকেই ঝুঁকিতে ফেলছে

কিশোর গ্যাং–সংস্কৃতি: সমাজের জন্য বাড়তে থাকা অশনি সংকেত

ডিগ্রি হাতে, চাকরি স্বপ্নে: শিক্ষিত বেকারদের মানসিক ক্ষয়

সরকারি কর্মচারীদের কর্মেই মুক্তি নাকি আন্দোলনে?

কর্মজীবী নারীর অদৃশ্য মানসিক বোঝা

নগর সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যের বিলুপ্তি

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আগাম সতর্কবার্তাই কি যথেষ্ট?

সুলতানপুরে করতোয়া নদীর তাণ্ডব: নদীভাঙনে মানুষের জীবন বিপন্ন

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সম্ভাবনা বিস্তৃত, অনিয়মের ছায়াও গভীর

গেন্ডারিয়ায় সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে অনিয়ম: জনদূর্ভোগ বৃদ্ধি

প্রবীণদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি

পলিভিনাইলের ব্যবহার প্রতিরোধ জরুরি

বৈধ সনদধারীদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি

টেকসই দুর্যোগ প্রস্তুতিতে জরুরি বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন

জলবায়ু পরিবর্তন ও নারী ও কিশোরীদের ঝুঁকি

মেধা হারাচ্ছে দেশ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : অযৌক্তিক ফি, সেশনজট ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলায় বিপর্যস্ত শিক্ষার্থী

সামাজিক মাধ্যমের ভুবনে জনতুষ্টিবাদের নতুন রূপ

ভেজাল খেজুরগুড় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা

প্লাস্টিক বর্জ্যে মাছের মৃত্যু: সমাধান কোথায়

খোলা ম্যানহোল: ঢাকার রাজপথে এক নীরব মরণফাঁদ

গণপরিবহন: প্রতিদিনের যন্ত্রণার শেষ কবে?

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ

সাইবার বুলিং ও ভার্চুয়াল অপরাধ: তরুণদের অদৃশ্য বিপদ

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরজীবনের চরম ভোগান্তি

রাবি মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার চাই

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

কক্সবাজার: উন্নয়নের পথে, বিপন্ন প্রকৃতি

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে নতুন সম্ভাবনার ভোর

tab

মতামত » চিঠিপত্র

শহরের পাখিরা যখন মরার প্রহর গুনে

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

শহরের আকাশে যখন ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে নতুন বছরের ঘোষণা আসে, তখনই যেন প্রকৃতির বুকে নেমে আসে এক অদৃশ্য শোক। আতশবাজির বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে গাছের ডাল, ভীত সন্ত্রস্ত পাখিরা দিশেহারা হয়ে ছুটে বেড়ায়, অনেকেই প্রাণ হারায়। যাদের কণ্ঠে ভোরের গান, যাদের ডানায় ছিল আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন-তারা তখন মরার প্রহর গুনে। অথচ এই উৎসবের আনন্দ মানুষ ছাড়া আর কারও জন্য নয়।

গ্রামবাংলায় এমন চিত্র খুব একটা দেখা যায় না। গ্রামে আতশবাজি, মদ্যপান কিংবা পার্টি-কেন্দ্রিক ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ উদযাপন বিরল। কারণ গ্রামীণ সমাজ এখনও প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের গুরুত্ব বোঝে। নতুন বছর সেখানে আসে নীরবে-সূর্যোদয়ের আলোয়, মাঠের সবুজে, নদীর জলে। কিন্তু শহুরে জীবনে পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণে এই উৎসব আজ এক ধরনের প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে-কে বেশি শব্দ করবে, কে বেশি আলো জ্বালাবে, কে বেশি উন্মাদনায় মেতে উঠবে।

এই উচ্ছ্বাসের প্রতিদান স্বরূপ আত্মদান করছে প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ। শুধু পাখিই নয়-পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, বায়ু ও শব্দদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ। অথচ আমরা এই ক্ষতির হিসাব কষি না, কারণ আমাদের আনন্দের মুহূর্তে প্রকৃতির কান্না আমাদের শোনা হয় না।

অন্যদিকে তাকালেই দেখা যায় বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির অনন্য উৎসব-পহেলা বৈশাখ। নতুন বছরের আগমন তখন হয় আনন্দ, সৌহার্দ্য আর মানবিকতায় ভর করে। মানুষ নতুন পোশাক পরে, ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে, বৈশাখী মেলায় মেতে ওঠে। হালখাতা, নৌকাবাইচ, গ্রামীণ খেলাধুলা, পান্তা-ইলিশ, লোকসংগীত-সব মিলিয়ে দেশটা যেন সেজে ওঠে নতুন রঙে। এখানে আনন্দ আছে, কিন্তু অকারণ শব্দ নেই; উৎসব আছে, কিন্তু প্রকৃতির ওপর আঘাত নেই।

তাহলে প্রশ্ন জাগে-পহেলা বৈশাখে যে মানুষ এত শান্ত, এত প্রাণবন্ত, এত মানবিক-পহেলা জানুয়ারিতে তাদের কী এমন অসুখ হয় যে তারা আতশবাজির আগুনে আকাশ পুড়িয়ে দিতে চায়? কেন আনন্দের নামে ধ্বংসকে বেছে নিতে হবে?

আমরা ব্রিটিশ শাসন থেকে ইস্তফা নিয়েছি বহু আগেই, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাদের অনেক সংস্কৃতি আজও আমাদের চিন্তা ও আচরণে গেঁথে আছে। নিজেদের ঐতিহ্যকে অবহেলা করে বিদেশি অনুকরণে মেতে ওঠা যেন আধুনিকতার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ প্রকৃত আধুনিকতা মানে দায়িত্বশীল হওয়া, প্রকৃতি ও সংস্কৃতিকে সম্মান করা।

পরিশেষে বলা যায়, পহেলা জানুয়ারি পালন হোক বাঙালির সংস্কৃতিতে-শব্দহীন, সহনশীল, মানবিক ও পরিবেশবান্ধব রূপে। আনন্দ হোক মানুষের জন্য, কিন্তু তা যেন অন্য প্রাণের কান্নার কারণ না হয়। নতুন বছর আসুক নতুন চেতনায়-প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের অঙ্গীকারে।

রাহুল দেবনাথ

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

back to top