কামরুজ্জামান
দেশে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যন্ত। কোনো কিছুতেই এদের থামানো যাচ্ছে না। দিন দিন বেড়েই চলেছে আধিপত্য ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিদিন কিশোর অপরাধ এবং কিশোর গ্যাং সম্পর্কে নানা নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়। যে সব খবরের কিছু কিছু অত্যন্ত লোমহর্ষক এবং ভয়ংকর হয়ে থাকে। এদের অনৈতিক ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকা-ে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটছে খুন ও ধর্ষণসহ নানা ঘটনা।
কিশোর গ্যাং কেন তৈরি হচ্ছেÑ এর কারণ খুঁজে দেখা দরকার। আমাদের সমাজে নীতিবোধ ও মানবিক মূল্যবোধ দিন দিন কমছে। আদব-কায়দা কমছে, কমছে ধর্মীয় মূল্যবোধ। এসব যেমন দায়ী তেমনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণও রয়েছে যেগুলো কিশোর গ্যাং তৈরি হতে প্রভাব বিস্তার করছে।
পাড়া-মহল্লার নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব ধরে রাখার জন্য কিশোর বয়সের ছেলেরা এখন অনেক সংঘবদ্ধ। এদের প্রায় সবাই পরিবারেও বিভিন্ন রকমের অনাচার ও অত্যাচার করে থাকে। এদের আবার নিয়ন্ত্রণ করে একশ্রেণির বড় ভাই।
দেশে একসময় পরিবার প্রথা ছিল। পরিবার প্রথায় নিয়মশৃঙ্খলা ও পারিবারিক শিক্ষা কঠোরভাবে দেখা হতো। এখন পারিবারিক প্রথা ভেঙে গেছে। একান্নভুক্ত পরিবার ভেঙে একক পরিবার গড়ে উঠেছে। একক পরিবারে বাবা-মায়ের পক্ষে এখন সন্তান দেখভাল এবং নিয়ন্ত্রণ করা অনেকাংশেই সম্ভব হচ্ছে না। এটা হচ্ছেÑ সন্তানদের নানা চাহিদা ও দাবি-দাওয়ার কারণে। অনেক বাবা-মায়ের উদাসীনতা এবং অতি আদরও এর জন্য দায়ী।
পরিবারে বাবা-মায়ের সময়মতো সন্তানের সঠিক পরিচর্যা করতে না পারা, খেয়াল না রাখা, দাম্পত্য কলহ, সন্তানের প্রতি অতি আদর ও ভালোবাসা, ছোট ছোট অপরাধ এবং ভুলত্রুটি সংশোধন না করা, সর্বপরি বাবা-মায়ের চরম উদাসীনতা কিশোর অপরাধ গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ। একটা প্রবাদ প্রচলিত আছেÑ ‘কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ পাকলে করে ঠাস ঠাস।’ বাবা-মায়ের উদাসীনতা ও অতিরিক্ত মাত্রায় আদর আহ্লাদ সন্তানের ক্ষতির কারণ।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাটা অনেক। এরা বিভিন্ন কারণেই ঝরে পড়ে। এর মধ্যে দরিদ্রতা অন্যতম। মাদক গ্রহণও একটি কারণ। পড়ালেখা ভালো না লাগার কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ত্যাগ করে। এরা আস্তে আস্তে যুক্ত হয় কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে। দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা যখন বুঝতে শুরু করে তারা দরিদ্র তখন এক ধরনের হতাশা কাজ করে।
আর্থিক দৈন্যতা ও হতাশা কিশোরদের অপরাধী করে তুলে। যখন দেখে বাবা-মা তাদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারছে না তখন নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে। যারা সচেতন এবং বুদ্ধিমান তারা কাজে লেগে যায়, পরিশ্রম করে। কিন্তু যারা অসচেতন এবং অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয় তারাই অপরাধে জড়িয়ে যায়। এরা আবার রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকে।
রাজনৈতিকভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কারণে কিশোর গ্যাং দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখানে দুই ধরনের সমস্যা রয়েছেÑ কিশোরদের বয়স কম হওয়ার কারণে এদের অপরাধ শিশু অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। সাজা হিসেবে সংশোধনে পাঠানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। আরেকটি হচ্ছে একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতার কারণে-অকারণে নিজেদের ফায়দা লুটে নেয়ার জন্য কিশোর গ্যাংয়ের ব্যবহার করে থাকে।
কিশোর বয়সের ছেলেরা সবাই এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে আসক্ত। কিশোর গ্যাংয়ের অল্প সময়ের মধ্যে একত্রিত হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে স্যোশাল মিডিয়া। যে কোনো মুহূর্তে এরা দ্রুততম সময়ে স্যোশাল মিডিয়ার গ্রুপের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে যায়। এদের ভাষা আচরণে দেখা যায় নিজস্ব স্টাইল। এরা সবাই ধুমপায়ী।
অন্যের চাকচিক্য জীবন, অন্য মানুষকে দ্রুত সময়ে টাকা-পয়সার মালিক হতে দেখা এবং নিজের মাঝে টাকার মালিক হওয়ার প্রবণতা তৈরি হওয়া, সস্তা মোহ অপরিণত ভালোবাসা, আবেগ উচ্ছ্বাস এবং প্রচ- রকমের বহির্মুখী চঞ্চলতা কিশোর অপরাধকে ত্বরান্বিত করে এবং এরা একসময় কিশোর গ্যাং এ রূপ নেয়। মিডিয়াও কিশোর অপরাধ তৈরিতে অনেকাংশে দায়ী। অনেক কিশোর অপরাধী ও কিশোর গ্যাং অপরাধ করার পর যখন ধরা পড়ে তখন দেখা যায় এরা কোনো না কোনো ক্রাইম সিনেমা বা ক্রাইম সিরিজ বা ক্রাইম পেট্রোল বা ক্রাইম কোনো সিরিয়াল দেখে অপরাধটি করেছে বলে স্বীকার করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে কিশোর অপরাধীদের ছাড়িয়ে নেয়া ও ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার লোকের অভাব হয় না। এ কারণে পুলিশ অনেক সময় অসহায় হয়ে যায়। আরও একটি বিষয় কিশোর অপরাধে বেশির ভাগ মামলা পুলিশকে করতে হয়। মামলা চালিয়ে নেয়া, থানা-পুলিশ কোর্ট ইত্যাদি কাজগুলো দায়িত্বরত পুলিশকে করতে হয়। সঠিক তদারকি ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মামলা পরিচালনা করা একটা সময় গিয়ে কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে কিশোর অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায় এবং আবারও জড়িয়ে পড়ে অপরাধে।
কিশোরদের অপরাধের ধরনগুলোও একই রকম নয়। সময় যতই আগাচ্ছে অপরাধের ধরনও বদলাচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে আমাদের আশপাশের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে। অনেক মা-বাবা আছেন, তারা তাদের সন্তান কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে, ইন্টারনেটে কী দেখছে, সে সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন না। মনে করেন টাকা দিলেই সব দায়িত্ব শেষ। এরূপ মানসিকতার কারণেও সন্তানরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
বর্তমান সমাজের প্রতিটা স্তরে নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় হচ্ছে। ফলে সমাজ থেকে শিশুরা যা দেখছে তাই শিখছে। সমাজে সর্বস্তরে অপরাধ বাড়ছে তাই কিশোর অপরাধও বাড়ছে। কিশোর গ্যাং, কিশোর গ্রুপ সর্বোপরি কিশোর অপরাধ সম্পর্কে এককথায় বলা যায় পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা, পারিবারিক অনুশাসনহীনতা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের অংশগ্রহণহীনতা, ইন্টারনেটের অপব্যবহার, বিদেশি সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্টতা ও অনুকরণ এবং অপব্যবহার, সর্বোপরি সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার কারণ।
কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ ও প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি এবং প্রয়োজন অপরাধীদের কাউন্সিলিং করা। মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতিবাচক কাউন্সিলিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। মানসম্মানের ভয় না পেয়ে অসহায় বাবা-মাকে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। পাড়া বা মহল্লায় কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিকের উদ্যোগে কমিটি গঠন করা যেতে পারে। বিভিন্ন চ্যানেলে পরিবেশিত ক্রাইম সিরিয়ালগুলোর পরিবেশন বন্ধ করা উচিত। বাবা-মাকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। তবেই হয়তো কিশোর অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]
কামরুজ্জামান
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
দেশে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যন্ত। কোনো কিছুতেই এদের থামানো যাচ্ছে না। দিন দিন বেড়েই চলেছে আধিপত্য ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিদিন কিশোর অপরাধ এবং কিশোর গ্যাং সম্পর্কে নানা নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়। যে সব খবরের কিছু কিছু অত্যন্ত লোমহর্ষক এবং ভয়ংকর হয়ে থাকে। এদের অনৈতিক ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকা-ে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটছে খুন ও ধর্ষণসহ নানা ঘটনা।
কিশোর গ্যাং কেন তৈরি হচ্ছেÑ এর কারণ খুঁজে দেখা দরকার। আমাদের সমাজে নীতিবোধ ও মানবিক মূল্যবোধ দিন দিন কমছে। আদব-কায়দা কমছে, কমছে ধর্মীয় মূল্যবোধ। এসব যেমন দায়ী তেমনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণও রয়েছে যেগুলো কিশোর গ্যাং তৈরি হতে প্রভাব বিস্তার করছে।
পাড়া-মহল্লার নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব ধরে রাখার জন্য কিশোর বয়সের ছেলেরা এখন অনেক সংঘবদ্ধ। এদের প্রায় সবাই পরিবারেও বিভিন্ন রকমের অনাচার ও অত্যাচার করে থাকে। এদের আবার নিয়ন্ত্রণ করে একশ্রেণির বড় ভাই।
দেশে একসময় পরিবার প্রথা ছিল। পরিবার প্রথায় নিয়মশৃঙ্খলা ও পারিবারিক শিক্ষা কঠোরভাবে দেখা হতো। এখন পারিবারিক প্রথা ভেঙে গেছে। একান্নভুক্ত পরিবার ভেঙে একক পরিবার গড়ে উঠেছে। একক পরিবারে বাবা-মায়ের পক্ষে এখন সন্তান দেখভাল এবং নিয়ন্ত্রণ করা অনেকাংশেই সম্ভব হচ্ছে না। এটা হচ্ছেÑ সন্তানদের নানা চাহিদা ও দাবি-দাওয়ার কারণে। অনেক বাবা-মায়ের উদাসীনতা এবং অতি আদরও এর জন্য দায়ী।
পরিবারে বাবা-মায়ের সময়মতো সন্তানের সঠিক পরিচর্যা করতে না পারা, খেয়াল না রাখা, দাম্পত্য কলহ, সন্তানের প্রতি অতি আদর ও ভালোবাসা, ছোট ছোট অপরাধ এবং ভুলত্রুটি সংশোধন না করা, সর্বপরি বাবা-মায়ের চরম উদাসীনতা কিশোর অপরাধ গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ। একটা প্রবাদ প্রচলিত আছেÑ ‘কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ পাকলে করে ঠাস ঠাস।’ বাবা-মায়ের উদাসীনতা ও অতিরিক্ত মাত্রায় আদর আহ্লাদ সন্তানের ক্ষতির কারণ।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাটা অনেক। এরা বিভিন্ন কারণেই ঝরে পড়ে। এর মধ্যে দরিদ্রতা অন্যতম। মাদক গ্রহণও একটি কারণ। পড়ালেখা ভালো না লাগার কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ত্যাগ করে। এরা আস্তে আস্তে যুক্ত হয় কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে। দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা যখন বুঝতে শুরু করে তারা দরিদ্র তখন এক ধরনের হতাশা কাজ করে।
আর্থিক দৈন্যতা ও হতাশা কিশোরদের অপরাধী করে তুলে। যখন দেখে বাবা-মা তাদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারছে না তখন নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে। যারা সচেতন এবং বুদ্ধিমান তারা কাজে লেগে যায়, পরিশ্রম করে। কিন্তু যারা অসচেতন এবং অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয় তারাই অপরাধে জড়িয়ে যায়। এরা আবার রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকে।
রাজনৈতিকভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কারণে কিশোর গ্যাং দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখানে দুই ধরনের সমস্যা রয়েছেÑ কিশোরদের বয়স কম হওয়ার কারণে এদের অপরাধ শিশু অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। সাজা হিসেবে সংশোধনে পাঠানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। আরেকটি হচ্ছে একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতার কারণে-অকারণে নিজেদের ফায়দা লুটে নেয়ার জন্য কিশোর গ্যাংয়ের ব্যবহার করে থাকে।
কিশোর বয়সের ছেলেরা সবাই এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে আসক্ত। কিশোর গ্যাংয়ের অল্প সময়ের মধ্যে একত্রিত হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে স্যোশাল মিডিয়া। যে কোনো মুহূর্তে এরা দ্রুততম সময়ে স্যোশাল মিডিয়ার গ্রুপের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে যায়। এদের ভাষা আচরণে দেখা যায় নিজস্ব স্টাইল। এরা সবাই ধুমপায়ী।
অন্যের চাকচিক্য জীবন, অন্য মানুষকে দ্রুত সময়ে টাকা-পয়সার মালিক হতে দেখা এবং নিজের মাঝে টাকার মালিক হওয়ার প্রবণতা তৈরি হওয়া, সস্তা মোহ অপরিণত ভালোবাসা, আবেগ উচ্ছ্বাস এবং প্রচ- রকমের বহির্মুখী চঞ্চলতা কিশোর অপরাধকে ত্বরান্বিত করে এবং এরা একসময় কিশোর গ্যাং এ রূপ নেয়। মিডিয়াও কিশোর অপরাধ তৈরিতে অনেকাংশে দায়ী। অনেক কিশোর অপরাধী ও কিশোর গ্যাং অপরাধ করার পর যখন ধরা পড়ে তখন দেখা যায় এরা কোনো না কোনো ক্রাইম সিনেমা বা ক্রাইম সিরিজ বা ক্রাইম পেট্রোল বা ক্রাইম কোনো সিরিয়াল দেখে অপরাধটি করেছে বলে স্বীকার করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে কিশোর অপরাধীদের ছাড়িয়ে নেয়া ও ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার লোকের অভাব হয় না। এ কারণে পুলিশ অনেক সময় অসহায় হয়ে যায়। আরও একটি বিষয় কিশোর অপরাধে বেশির ভাগ মামলা পুলিশকে করতে হয়। মামলা চালিয়ে নেয়া, থানা-পুলিশ কোর্ট ইত্যাদি কাজগুলো দায়িত্বরত পুলিশকে করতে হয়। সঠিক তদারকি ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মামলা পরিচালনা করা একটা সময় গিয়ে কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে কিশোর অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায় এবং আবারও জড়িয়ে পড়ে অপরাধে।
কিশোরদের অপরাধের ধরনগুলোও একই রকম নয়। সময় যতই আগাচ্ছে অপরাধের ধরনও বদলাচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে আমাদের আশপাশের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে। অনেক মা-বাবা আছেন, তারা তাদের সন্তান কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে, ইন্টারনেটে কী দেখছে, সে সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন না। মনে করেন টাকা দিলেই সব দায়িত্ব শেষ। এরূপ মানসিকতার কারণেও সন্তানরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
বর্তমান সমাজের প্রতিটা স্তরে নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় হচ্ছে। ফলে সমাজ থেকে শিশুরা যা দেখছে তাই শিখছে। সমাজে সর্বস্তরে অপরাধ বাড়ছে তাই কিশোর অপরাধও বাড়ছে। কিশোর গ্যাং, কিশোর গ্রুপ সর্বোপরি কিশোর অপরাধ সম্পর্কে এককথায় বলা যায় পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা, পারিবারিক অনুশাসনহীনতা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের অংশগ্রহণহীনতা, ইন্টারনেটের অপব্যবহার, বিদেশি সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্টতা ও অনুকরণ এবং অপব্যবহার, সর্বোপরি সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার কারণ।
কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ ও প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি এবং প্রয়োজন অপরাধীদের কাউন্সিলিং করা। মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতিবাচক কাউন্সিলিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। মানসম্মানের ভয় না পেয়ে অসহায় বাবা-মাকে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। পাড়া বা মহল্লায় কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিকের উদ্যোগে কমিটি গঠন করা যেতে পারে। বিভিন্ন চ্যানেলে পরিবেশিত ক্রাইম সিরিয়ালগুলোর পরিবেশন বন্ধ করা উচিত। বাবা-মাকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। তবেই হয়তো কিশোর অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]