alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

গ্লাসগো সম্মেলন থেকে কী মিলল?

শঙ্কর প্রসাদ দে

: সোমবার, ২২ নভেম্বর ২০২১

১২ নভেম্বর ২০২১, শেষ হলো দুই সপ্তাহব্যাপী জলবায়ু সম্মেলন। এটি ‘কপ২৬’ নামে খ্যাত হয়েছে একটি ব্যর্থ সম্মেলন হিসেবে। সমাজ জীবনে রড় লোক যেমন গরিবকে মানুষ গণ্য করে না তেমনি বিশ্বের ধনী দেশগুলো এবার গরিব ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে রীতিমতো অপমান করেছে। বাঙালি সমাজে ভিক্ষুককে ভিক্ষা না দিয়ে বলে থাকি ‘মাফ করো’। ২০১৫ সালে প্যারিস কনসোটিয়ামে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন করে দেবে ২০২০ সাল পর্যন্ত। গ্লাসগোতে যখন সবাই কেন ওই টাকা দেয়নি জিজ্ঞেস করল, তখন ক্ষতিকারক দেশগুলো বলল মাফ চাই এই টাকা দেয়া সম্ভব নয়। অথচ বাংলাদেশের মতো ৪৬টি দেশ চরম ঝুঁকিতে। এই দেশগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক মিটার উচ্ছতায় অবস্থিত। ইতোমধ্যে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে তাপমাত্রা প্রায় দু’ডিগ্রির কাছাকাছি বেড়ে গেছে। ফলে বিগত শতাব্দীতে পানির নিচে চলে গেছে বহুদ্বীপ এবং নদী তীরের জনপদ। সন্দ্বীপ তার প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ।

এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ১) একবিংশ শতাব্দীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ শতাংশের মধ্যে আটকাতে হবে। ২) কয়লা, তেল, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ, ইট, শিল্পপণ্য উৎপাদন বন্ধ করার রোডম্যাপ প্রণয়ন ৩) দায়ী শিল্পন্নোত দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়।

পরিষ্কার কথা হলো, গত দুই দশকে আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার যে বিষ্ময়কর অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে তার পেছনে ছিল শিল্পবিপ্লবে ব্যাপক হারে তেল, কয়লা ও গ্যাসের ব্যবহার। ফলে এই ধনী দেশগুলো এতবেশি কার্বণ নিসরণ করেছে যে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২ শতাংশ। বেড়েছে বায়ুদুষণ, নদী দুষণ, সমুদ্র দুষণ। গত অর্ধশতকে এই বড় লোকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে চীন, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। এই তিনটি দেশ কয়লা ও তেল পুড়িয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নিয়ে গেছে ১০ শতাংশের উপরে। চীনের কয়লার ধোঁয়ায় গোটা বিশ্ব আক্রান্ত।

কত দরখাস্ত, কত আবেদন, কত মিছিল, কত সম্মেলন। দিল্লি, বেইজিং আর ক্যানবেরা এসব দরখাস্ত সরাসরি খারিজ করে দিয়ে বলেছে, আগে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটুক তারপর বায়ুদুষণ আর তাপমাত্রার বিষয়টি আমলে নেয়া হবে।

নভেম্বর ৭ তারিখে এসে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে একটি দলিল পেশ করে বলা হয় আগামীতে আর কোন কয়লাভিত্তিক প্রকল্প কোন দেশ স্থাপন করবে না। বাংলাদেশসহ ৪৬টি দেশ স্বাক্ষর করার পর অস্ট্র্রেলিয়ার কাছে নেয়া হলে, অস্ট্রেলিয়া স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে। ভারত, চীন, আমেরিকা এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় দলিলটিকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা ছাড়া অবশিষ্ট কিছু ছিল না।

৩১ অক্টোবর থেকে গ্লাসগোতে দুটো অনুষ্ঠান হয়েছে। একটি হলো ধনী দেশগুলোর জমজমাট পিকনিক। কারণ ধনী দেশগুলোর শাসকরা যে পিকনিক ভালোবাসে। অন্য দিকে হাজার হাজার পরিবেশকর্মী ও বাকি রাষ্ট্রপ্রধানদের দরখাস্ত আর কান্নাকাটি। কারণ এরা যে গরিব বা উন্নয়নশীল দেশ।

এই কান্নাকাটি শুরু ২০০৯ সালের কোপেনহেগেন সম্মেলন থেকে। পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন বনকে রক্ষা করতে ব্রাজিলকে অনুরোধ করা হল। ব্রাজিল কর্কশ ভাষায় বলেছিল, আমাজনের গাছ না কাটলে আমাদের অর্থনীতি মুখ ধুবড়ে পড়বে। হ্যাঁ, যদি আমাজনের গাছ না কাটার জন্য বাকি বিশ্ব ক্ষতিপূরণ দেয়- তবে ব্রাজিল অবশ্যই গাছ কাটবে না। টাকা তো কেউ দিল না। এবং ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত ওই প্রসঙ্গ আর সামনে আনলো না। হক কথা বললে, হক দাবি করলে এভাবে বিশ্ব মোড়লরা চুপ মেরে যায়।

উন্নত বিশ্ব নিজেদের প্রকৃতিকে স্বর্গতুল্য গড়ে তোলার পেছনে দুটো অপরাধ কর্মকা-ই ভিত্তি। প্রথমটি হলো ইউরোপ প্রায় ৫০০ বছর পৃথিবী ভাগ করে শাসন ও শোষণ করে পৃথিবীর ধনসম্পদ জমা করেছে। দ্বিতীয়ত গত প্রায় ৪০ বছর ধরে শিল্পবিপ্লব ঘটিয়ে গোটা পৃথিবীকে বাজারে পরিণত করেছে। এখনও অবশিষ্ট বিশ্ব থেকে সব ডলার, পাউন্ড নিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা। ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন। বিনিময়ে দিচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড। ওজন স্তরে ফুটো দেখা দিয়েছে বহু আগে। সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি ভূ-পৃষ্ঠে আঘাত হেনে নিয়ে যাচ্ছে প্রাণের গণ বিলুপ্তির দিকে।

অনিন্দ্য সুন্দর এই পৃথিবী ছাড়া বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে বলে এখনও জানা যায়নি। এই ধরনীতেও পাঁচবার প্রাণের গণবিলুপ্তি ঘটেছে। এর মধ্যে বরফ যুগে গণবিলুপ্তি আর মহাজাগতিক আঘাতে ডাইনোসরসহ প্রায়সব প্রাণীর বিলুপ্তি হয়েছিল। পাঁচটি গণবিলুপ্তিই ছিল প্রাকৃতিক অনিবার্যতা।

কিন্তু পৃথিবী আজ ষষ্ঠবারের মতো গণবিলুপ্তির মুখোমুখি শুধুমাত্র মানুষ তথা তথাকথিত উন্নত বিশ্বের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের কারণে। অতীতের গণবিলুপ্তিগুলোতে তেলাপোকাসহ বেশকিছু প্রাণী রক্ষা পেয়েছিল। বিজ্ঞানীরা বলেছেন এই মুহূর্তে তাপমাত্রা বৃদ্ধি থামানো না গেলে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তিতে কোন প্রাণীই রক্ষা পাবে না। প্রায় চূড়ান্তভাবে মনুষ্য প্রজাতির গণ-বিলুপ্তি ঘটে যেতে পারে। এত হতাশাজনক ফলাফল নিয়ে কেউ বাড়ি ফিরতে চায়নি। মশকরার সীমা রইলো না। লাগেজ গুছোতে গুছোতে ধনী দেশগুলো বলল, আগের টাকা মাপ করে দিও। এবার ক্ষতিপূরণ দেব- তবে ২০২৩ সাল থেকে।

স্টিফেন হকিং আগে বলেছিলেন, মানবজাতির হাতে একশ বছরের বেশি সময় নাই, তথাকথিত উন্নত বিশ্ব কি মানবজাতিকে সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে?

[লেখক : আইনজীবী, হাইকোর্ট]

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বামঘরানার বাটখারা...

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

ছবি

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

প্রকৃতার্থে ফকির কারা

এনসিপি চায় অবিনাশী জুলাই সনদ

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

আলুর প্রাচুর্যে কৃষকের সংকট

তাহলে কী ‘কোটা’ই জয়যুক্ত হবে!

ব্যাংকিং খাতে বিষফোঁড়া: বাংলাদেশের অর্থনীতির ধমনী বিষাক্ত হয়ে উঠছে

ছবি

ঢাকার নদী ও খালের দখল-দূষণ: পুনরুদ্ধার কোন পথে

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

সে এক রূপকথারই দেশ

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

গ্লাসগো সম্মেলন থেকে কী মিলল?

শঙ্কর প্রসাদ দে

সোমবার, ২২ নভেম্বর ২০২১

১২ নভেম্বর ২০২১, শেষ হলো দুই সপ্তাহব্যাপী জলবায়ু সম্মেলন। এটি ‘কপ২৬’ নামে খ্যাত হয়েছে একটি ব্যর্থ সম্মেলন হিসেবে। সমাজ জীবনে রড় লোক যেমন গরিবকে মানুষ গণ্য করে না তেমনি বিশ্বের ধনী দেশগুলো এবার গরিব ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে রীতিমতো অপমান করেছে। বাঙালি সমাজে ভিক্ষুককে ভিক্ষা না দিয়ে বলে থাকি ‘মাফ করো’। ২০১৫ সালে প্যারিস কনসোটিয়ামে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন করে দেবে ২০২০ সাল পর্যন্ত। গ্লাসগোতে যখন সবাই কেন ওই টাকা দেয়নি জিজ্ঞেস করল, তখন ক্ষতিকারক দেশগুলো বলল মাফ চাই এই টাকা দেয়া সম্ভব নয়। অথচ বাংলাদেশের মতো ৪৬টি দেশ চরম ঝুঁকিতে। এই দেশগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক মিটার উচ্ছতায় অবস্থিত। ইতোমধ্যে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে তাপমাত্রা প্রায় দু’ডিগ্রির কাছাকাছি বেড়ে গেছে। ফলে বিগত শতাব্দীতে পানির নিচে চলে গেছে বহুদ্বীপ এবং নদী তীরের জনপদ। সন্দ্বীপ তার প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ।

এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ১) একবিংশ শতাব্দীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ শতাংশের মধ্যে আটকাতে হবে। ২) কয়লা, তেল, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ, ইট, শিল্পপণ্য উৎপাদন বন্ধ করার রোডম্যাপ প্রণয়ন ৩) দায়ী শিল্পন্নোত দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়।

পরিষ্কার কথা হলো, গত দুই দশকে আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার যে বিষ্ময়কর অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে তার পেছনে ছিল শিল্পবিপ্লবে ব্যাপক হারে তেল, কয়লা ও গ্যাসের ব্যবহার। ফলে এই ধনী দেশগুলো এতবেশি কার্বণ নিসরণ করেছে যে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২ শতাংশ। বেড়েছে বায়ুদুষণ, নদী দুষণ, সমুদ্র দুষণ। গত অর্ধশতকে এই বড় লোকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে চীন, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। এই তিনটি দেশ কয়লা ও তেল পুড়িয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নিয়ে গেছে ১০ শতাংশের উপরে। চীনের কয়লার ধোঁয়ায় গোটা বিশ্ব আক্রান্ত।

কত দরখাস্ত, কত আবেদন, কত মিছিল, কত সম্মেলন। দিল্লি, বেইজিং আর ক্যানবেরা এসব দরখাস্ত সরাসরি খারিজ করে দিয়ে বলেছে, আগে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটুক তারপর বায়ুদুষণ আর তাপমাত্রার বিষয়টি আমলে নেয়া হবে।

নভেম্বর ৭ তারিখে এসে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে একটি দলিল পেশ করে বলা হয় আগামীতে আর কোন কয়লাভিত্তিক প্রকল্প কোন দেশ স্থাপন করবে না। বাংলাদেশসহ ৪৬টি দেশ স্বাক্ষর করার পর অস্ট্র্রেলিয়ার কাছে নেয়া হলে, অস্ট্রেলিয়া স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে। ভারত, চীন, আমেরিকা এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় দলিলটিকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা ছাড়া অবশিষ্ট কিছু ছিল না।

৩১ অক্টোবর থেকে গ্লাসগোতে দুটো অনুষ্ঠান হয়েছে। একটি হলো ধনী দেশগুলোর জমজমাট পিকনিক। কারণ ধনী দেশগুলোর শাসকরা যে পিকনিক ভালোবাসে। অন্য দিকে হাজার হাজার পরিবেশকর্মী ও বাকি রাষ্ট্রপ্রধানদের দরখাস্ত আর কান্নাকাটি। কারণ এরা যে গরিব বা উন্নয়নশীল দেশ।

এই কান্নাকাটি শুরু ২০০৯ সালের কোপেনহেগেন সম্মেলন থেকে। পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন বনকে রক্ষা করতে ব্রাজিলকে অনুরোধ করা হল। ব্রাজিল কর্কশ ভাষায় বলেছিল, আমাজনের গাছ না কাটলে আমাদের অর্থনীতি মুখ ধুবড়ে পড়বে। হ্যাঁ, যদি আমাজনের গাছ না কাটার জন্য বাকি বিশ্ব ক্ষতিপূরণ দেয়- তবে ব্রাজিল অবশ্যই গাছ কাটবে না। টাকা তো কেউ দিল না। এবং ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত ওই প্রসঙ্গ আর সামনে আনলো না। হক কথা বললে, হক দাবি করলে এভাবে বিশ্ব মোড়লরা চুপ মেরে যায়।

উন্নত বিশ্ব নিজেদের প্রকৃতিকে স্বর্গতুল্য গড়ে তোলার পেছনে দুটো অপরাধ কর্মকা-ই ভিত্তি। প্রথমটি হলো ইউরোপ প্রায় ৫০০ বছর পৃথিবী ভাগ করে শাসন ও শোষণ করে পৃথিবীর ধনসম্পদ জমা করেছে। দ্বিতীয়ত গত প্রায় ৪০ বছর ধরে শিল্পবিপ্লব ঘটিয়ে গোটা পৃথিবীকে বাজারে পরিণত করেছে। এখনও অবশিষ্ট বিশ্ব থেকে সব ডলার, পাউন্ড নিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা। ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন। বিনিময়ে দিচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড। ওজন স্তরে ফুটো দেখা দিয়েছে বহু আগে। সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি ভূ-পৃষ্ঠে আঘাত হেনে নিয়ে যাচ্ছে প্রাণের গণ বিলুপ্তির দিকে।

অনিন্দ্য সুন্দর এই পৃথিবী ছাড়া বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে বলে এখনও জানা যায়নি। এই ধরনীতেও পাঁচবার প্রাণের গণবিলুপ্তি ঘটেছে। এর মধ্যে বরফ যুগে গণবিলুপ্তি আর মহাজাগতিক আঘাতে ডাইনোসরসহ প্রায়সব প্রাণীর বিলুপ্তি হয়েছিল। পাঁচটি গণবিলুপ্তিই ছিল প্রাকৃতিক অনিবার্যতা।

কিন্তু পৃথিবী আজ ষষ্ঠবারের মতো গণবিলুপ্তির মুখোমুখি শুধুমাত্র মানুষ তথা তথাকথিত উন্নত বিশ্বের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের কারণে। অতীতের গণবিলুপ্তিগুলোতে তেলাপোকাসহ বেশকিছু প্রাণী রক্ষা পেয়েছিল। বিজ্ঞানীরা বলেছেন এই মুহূর্তে তাপমাত্রা বৃদ্ধি থামানো না গেলে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তিতে কোন প্রাণীই রক্ষা পাবে না। প্রায় চূড়ান্তভাবে মনুষ্য প্রজাতির গণ-বিলুপ্তি ঘটে যেতে পারে। এত হতাশাজনক ফলাফল নিয়ে কেউ বাড়ি ফিরতে চায়নি। মশকরার সীমা রইলো না। লাগেজ গুছোতে গুছোতে ধনী দেশগুলো বলল, আগের টাকা মাপ করে দিও। এবার ক্ষতিপূরণ দেব- তবে ২০২৩ সাল থেকে।

স্টিফেন হকিং আগে বলেছিলেন, মানবজাতির হাতে একশ বছরের বেশি সময় নাই, তথাকথিত উন্নত বিশ্ব কি মানবজাতিকে সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে?

[লেখক : আইনজীবী, হাইকোর্ট]

back to top