alt

অর্থ-বাণিজ্য

জ্বালানির আমদানি নির্ভরতা কমাতে নিজস্ব উৎস ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে মনোনিবেশের আহ্বান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘জ্বালানির সহনীয় মূল্য ও নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ’ শীর্ষক সেমিনার গত ৭ ডিসেম্বর ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বিগত ৫০ বছরে আমাদের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর থেকে শিল্প ও সেবা খাত নির্ভর হয়ে উঠেছে, তাই এখন জ্বালানির নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ ও সহনীয় মূল্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিগত দুই দশকে আমাদের জ্বালানির ব্যবহার প্রায় ৪ গুন বেড়ে ৪৫ মিলিয়ন টন অফ অয়েল ইকুইভ্যালেন্ট (টিওই) এ পৌঁছেছে। শিল্পখাতে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানীর কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে জ্বালানি ব্যবহারে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশীয় মজুদকৃত কয়লা উত্তোলনে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, কয়লা উত্তোলন কার্যক্রম বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সৌরবিদ্যুতের প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ভূমি বরাদ্দ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জমির অপ্রতুলতার কারণে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি, বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেশ পুরোনো এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা উল্লেখজনক হারে হ্রাস পাবে, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পারমানবিক শক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন যেমন বাড়ানো দরকার, তেমনি জ্বালানি আমদানিতে বিদ্যমান সরকারি ক্রয় নীতিমালা সংশোধন করে মূল্য স্থিতিশীল রক্ষার কৌশলও নিতে হবে। এছাড়া এনার্জি স্টোরেজ টেকনোলোজির ব্যবহার বাড়িয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে বলে তিনি অভিমত প্রদান করেন। সার্বিকভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের উপর সরকারকে অধিক হারে মনোনিবেশের আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, গ্রাহকরা প্রতি ইউনিটের বিদ্যুতের গড় মূল্য ৮.৫৫ টাকা প্রদান করলেও সরকার ১২-২৫ টাকায় কিনে। তিনি উল্লেখ করেন, এলএনজি আমদানিতে ৭০ টাকা খরচ পড়লেও, শিল্পখাতে ৩০ টাকা হারে সরবরাহ করা হচ্ছে এবং মূল্যের এ পার্থক্যটা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুৎখাতে প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি এবং গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের এককচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে আমাদেরকে অধিক মূল্যে জ্বালানি ক্রয় করতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, আমাদের ৪ হাজার এমএমসিএফটি গ্যাসের প্রয়োজন, যদিও আমাদের রয়েছে ৩ হাজারের কম এবং ঘাটতি মেটাতে নিজের গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ভোলায় প্রায় ৭০ সিএমএফএফটি গ্যাস মজুদ রয়েছে, যা উত্তোলনে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান জানানো হবে। এখন থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ছাড়া কোন দরপত্র আহ্বান করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তেল আমদানি উন্মুক্ত দরপত্রের কারণে পূর্বের চেয়ে ৩৫% হ্রাসকৃত মূল্য পাওয়া গেছে, এর ফলে সাশ্রয় হবে ৩৭০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে আইপিপি-এর পরিবর্তে মার্চেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবস্থা চালু হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উপদেষ্টা আরো বলেন, পর্যায়ক্রমে ৪০টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে এবং এ ধরনের প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান সরকার থেকে করা হবে। তিনি বলেন, সরকারী কিছু সংস্থা যেমন: বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেল, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক বিভাগের অনেক জমি আছে, যেটা ব্যবহৃত হচ্ছে না, সেখানে এধরনের সৌর বিদুৎ প্রকল্প করা হবে। এছাড়াও নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ১৫ বছরের জন্য কর অব্যাহিতর সুযোগ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এখাতে অর্থায়নের জন্য বন্ধকী ঋণের পরিবর্ততে সম্পদ ভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থা প্রচলনের উপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান তিনি, যার মাধ্যমে ঋণ প্রক্রিয়া আরো নিরাপদ হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে জ্বালানি আমদানি করতে হবে, তবে অদূর ভবিষ্যতে দেশকে জ্বালানি স্বনির্ভর করা ও জ্বালানির মূল্য হ্রাসে নিজেদের গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দেন। তামিম আরও বলেন, নবায়ানযোগ্য জ্বালানি শক্তি উৎপাদনের জন্য আমাদের গৃহস্থালির ছাদ ব্যবহার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ২০২০-২১ অর্থবছরের পর টাকা অবমূল্যায়ন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান জ্বালানি আমদানি এবং আন্তর্জাতিক জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিস্টেমের ক্ষতির কারণে কমপক্ষে ৫% গ্যাস নষ্ট হচ্ছে, যা ১৩০ এমএমসিএফডি-এর সমতুল্য। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে কয়লা বাংলাদেশের ভূপৃষ্ঠ থেকে উত্তোলনের পরামর্শ প্রদান করেন তিনি। এলএনজি আমদানির জন্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির উপর তিনি জোরারোপ করেন, পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য এলএনজি সঞ্চয় ক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম, বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউএ্যাবল এনার্জি এসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ নূরুল আক্তার, আইএফডিএল বাংলাদেশ’র পার্টনার ব্যারিস্টার শাহওয়ার জামাল নিজাম এবং বিএসআরএম-এর হেড অব কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স সৌমিত্র কুমার মুৎসুদ্দি অংশগ্রহণ করেন।

মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, প্রাক্তন উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম, হুমায়ুন রশিদ এবং প্রাক্তন সহ-সভাপতি এম আবু হোরায়রাহ্ অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা চেম্বারের সহ-সভাপতি মোঃ জুনায়েদ ইবনে আলী, পরিচলনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধিবৃন্দ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

এস আলম-আকিজের বিরুদ্ধে নারী ব্যবসায়ীর প্রতারণা মামলা

ছবি

১৫তম বিজমায়েস্ট্রোজ এর চূড়ান্ত পর্ব উদযাপন করেছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ

ছবি

বিদ্যুতে ‘অসম’ চুক্তি বাতিল ‘অতটা সহজ নয়’: পরিবেশ উপদেষ্টা

ছবি

নতুন বছরে প্রথম এলএনজি কেনায় প্রতি ইউনিট ১৫.০২ ডলারে চূড়ান্ত অনুমোদন

ছবি

টিসিবি কার্ড বিতরণে অনিয়ম বন্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

করছাড়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান অর্থ উপদেষ্টার

ছবি

খেলাপি ঋণের ৭০ শতাংশ ১০টি ব্যাংকে, বিপাকে ব্যাংকিং খাত

ছবি

রাজধানীতে বুধবার শুরু হচ্ছে সূতা, বস্ত্র ও আনুষাঙ্গিক পণ্যের প্রদর্শনী

ছবি

মূসক ৯ শতাংশে নামানোর উদ্যোগ, শুল্ক ছাড় কমানোর পরিকল্পনা: এনবিআর চেয়ারম্যান

ছবি

কাল শুরু হচ্ছে অর্থনৈতিক শুমারি, চাওয়া হবে বিদেশিদের তথ্য

প্রযুক্তির ব্যবহার ৫০ শতাংশ বাড়লে চাকরি হারাতে পারেন ১৮ লাখ মানুষ: বিআইডিএস

ছবি

বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট এবং দেশে ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধি করতে সহযোগি হবে ফিকি

ছবি

নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেডের বেশিরভাগ শেয়ার অধিগ্রহণ করবে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস

ছবি

চামচা পুঁজিবাদের বিকাশ থেকে অগণতান্ত্রিক মনোভাব তৈরি হয়েছে : রেহমান সোবহান

ছবি

উবার বাংলাদেশের ৮ বছর পূর্তি উদযাপন

ছবি

করপোরেট গভর্নেন্সে স্বীকৃতি পেল বিএটি বাংলাদেশ

রাণীনগরে ন্যায্যমূল্যের দোকান : স্বল্প আয়ের মানুষের স্বস্তি

ছবি

পুঁজিবাজারে শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ১১৫ কোটি টাকা জরিমানা

ছবি

মূল্যস্ফীতির চাপে নিত্যপণ্যের বাজার, খাদ্যদ্রব্যে ১৩.৮০% মূল্যবৃদ্ধি

আইএমএফ-এর অধিকাংশ শর্ত পূরণ, চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় ফেব্রুয়ারিতে

এইচআর ম্যানেজমেন্টে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে ‘ট্যালেন্ট লেন্স হাব’

ছবি

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার প্রসারে টিকটকের কর্মশালা

ছবি

৫-৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে রুয়েট সাইবার ফেস্ট ২০২৪

থ্রি মিলিয়ন ক্লাবে প্রবেশ করেছে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং

ছবি

চার ধরনের নতুন নোট আসছে, নকশায় যুক্ত হবে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি

ছবি

সূচকের ওঠানামায় পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

দুই বছরের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার সুপারিশ

ছবি

২৮ উপায়ে ‘দুর্নীতি’, ২৩৪ বিলিয়ন ডলার ‘পাচার’

ছবি

বিপিও শিল্পের উন্নয়নে বাক্কো ও বিটিআরসি যৌথ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ছবি

দক্ষতা উন্নয়নে বেসিস ও সিসিপ এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

বেসিস ও এনআরবি ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত

ছবি

মুক্তাগাছায় ২০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে এডিবির অর্থায়ন

শ্বেতপত্র কমিটি: দেড় দশকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতি, দেশ থেকে পাচার ২৮ লাখ কোটি টাকা

ছবি

ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার বাড়ছে, জানুয়ারি থেকে কার্যকর

ছবি

ব্যাংক খাতের সংকট: দুর্নীতি ও খেলাপি ঋণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ১০ ব্যাংক

ছবি

ছয় মাসে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কায় খেলাপি ঋণ: গভর্নর

tab

অর্থ-বাণিজ্য

জ্বালানির আমদানি নির্ভরতা কমাতে নিজস্ব উৎস ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে মনোনিবেশের আহ্বান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘জ্বালানির সহনীয় মূল্য ও নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ’ শীর্ষক সেমিনার গত ৭ ডিসেম্বর ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বিগত ৫০ বছরে আমাদের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর থেকে শিল্প ও সেবা খাত নির্ভর হয়ে উঠেছে, তাই এখন জ্বালানির নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ ও সহনীয় মূল্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিগত দুই দশকে আমাদের জ্বালানির ব্যবহার প্রায় ৪ গুন বেড়ে ৪৫ মিলিয়ন টন অফ অয়েল ইকুইভ্যালেন্ট (টিওই) এ পৌঁছেছে। শিল্পখাতে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানীর কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে জ্বালানি ব্যবহারে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশীয় মজুদকৃত কয়লা উত্তোলনে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, কয়লা উত্তোলন কার্যক্রম বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সৌরবিদ্যুতের প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ভূমি বরাদ্দ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জমির অপ্রতুলতার কারণে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি, বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেশ পুরোনো এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা উল্লেখজনক হারে হ্রাস পাবে, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পারমানবিক শক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন যেমন বাড়ানো দরকার, তেমনি জ্বালানি আমদানিতে বিদ্যমান সরকারি ক্রয় নীতিমালা সংশোধন করে মূল্য স্থিতিশীল রক্ষার কৌশলও নিতে হবে। এছাড়া এনার্জি স্টোরেজ টেকনোলোজির ব্যবহার বাড়িয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে বলে তিনি অভিমত প্রদান করেন। সার্বিকভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের উপর সরকারকে অধিক হারে মনোনিবেশের আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, গ্রাহকরা প্রতি ইউনিটের বিদ্যুতের গড় মূল্য ৮.৫৫ টাকা প্রদান করলেও সরকার ১২-২৫ টাকায় কিনে। তিনি উল্লেখ করেন, এলএনজি আমদানিতে ৭০ টাকা খরচ পড়লেও, শিল্পখাতে ৩০ টাকা হারে সরবরাহ করা হচ্ছে এবং মূল্যের এ পার্থক্যটা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুৎখাতে প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি এবং গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের এককচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে আমাদেরকে অধিক মূল্যে জ্বালানি ক্রয় করতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, আমাদের ৪ হাজার এমএমসিএফটি গ্যাসের প্রয়োজন, যদিও আমাদের রয়েছে ৩ হাজারের কম এবং ঘাটতি মেটাতে নিজের গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ভোলায় প্রায় ৭০ সিএমএফএফটি গ্যাস মজুদ রয়েছে, যা উত্তোলনে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান জানানো হবে। এখন থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ছাড়া কোন দরপত্র আহ্বান করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তেল আমদানি উন্মুক্ত দরপত্রের কারণে পূর্বের চেয়ে ৩৫% হ্রাসকৃত মূল্য পাওয়া গেছে, এর ফলে সাশ্রয় হবে ৩৭০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে আইপিপি-এর পরিবর্তে মার্চেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবস্থা চালু হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উপদেষ্টা আরো বলেন, পর্যায়ক্রমে ৪০টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে এবং এ ধরনের প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান সরকার থেকে করা হবে। তিনি বলেন, সরকারী কিছু সংস্থা যেমন: বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেল, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক বিভাগের অনেক জমি আছে, যেটা ব্যবহৃত হচ্ছে না, সেখানে এধরনের সৌর বিদুৎ প্রকল্প করা হবে। এছাড়াও নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ১৫ বছরের জন্য কর অব্যাহিতর সুযোগ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এখাতে অর্থায়নের জন্য বন্ধকী ঋণের পরিবর্ততে সম্পদ ভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থা প্রচলনের উপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান তিনি, যার মাধ্যমে ঋণ প্রক্রিয়া আরো নিরাপদ হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে জ্বালানি আমদানি করতে হবে, তবে অদূর ভবিষ্যতে দেশকে জ্বালানি স্বনির্ভর করা ও জ্বালানির মূল্য হ্রাসে নিজেদের গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দেন। তামিম আরও বলেন, নবায়ানযোগ্য জ্বালানি শক্তি উৎপাদনের জন্য আমাদের গৃহস্থালির ছাদ ব্যবহার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ২০২০-২১ অর্থবছরের পর টাকা অবমূল্যায়ন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান জ্বালানি আমদানি এবং আন্তর্জাতিক জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিস্টেমের ক্ষতির কারণে কমপক্ষে ৫% গ্যাস নষ্ট হচ্ছে, যা ১৩০ এমএমসিএফডি-এর সমতুল্য। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে কয়লা বাংলাদেশের ভূপৃষ্ঠ থেকে উত্তোলনের পরামর্শ প্রদান করেন তিনি। এলএনজি আমদানির জন্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির উপর তিনি জোরারোপ করেন, পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য এলএনজি সঞ্চয় ক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম, বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউএ্যাবল এনার্জি এসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ নূরুল আক্তার, আইএফডিএল বাংলাদেশ’র পার্টনার ব্যারিস্টার শাহওয়ার জামাল নিজাম এবং বিএসআরএম-এর হেড অব কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স সৌমিত্র কুমার মুৎসুদ্দি অংশগ্রহণ করেন।

মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, প্রাক্তন উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম, হুমায়ুন রশিদ এবং প্রাক্তন সহ-সভাপতি এম আবু হোরায়রাহ্ অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা চেম্বারের সহ-সভাপতি মোঃ জুনায়েদ ইবনে আলী, পরিচলনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধিবৃন্দ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

back to top