দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্ব গতির অস্থির সময়ে যখন মানুষের নাভিশ্বাস, হঠাৎ এক লাফে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে সিলেট নগরীর হোল্ডিং ট্যাক্স। কারো ট্যাক্স বেড়েছে আরো বেশি। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের এই ‘অস্বাভাবিক’হারে বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে নগর জুড়ে চলছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও চরম অসন্তোষ। নগরবাসি বলছেন, এ যেন এক ‘মগেরমুল্লুক’৷
প্রতি দিন হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবিতে বিবৃতির পাশাপাশি রাজপথে পালিত হচ্ছে প্রতিবাদ কর্মসূচী। এমন পরিস্থিতিতে গত রোববার জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি হোল্ডিংট্যাক্স নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নগরের হোল্ডিং ট্যক্স সহনীয় পর্যায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন। সাবেক মেয়র আরিফুলহক চৌধুরীর সাথে ‘বৈঠকও’করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর শামীমাবাদ এলাকার এক বাসিন্দা আগে বছরে ৬০০ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দিতেন। কিন্তু পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের পর তার বার্ষিক গৃহকর হোল্ডিং ট্যাক্স ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সিটি করপোরেশন, যা আগের চেয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬১ গুণ।
সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকায় বাসা রাসেল আহমদের। আগে তাকেব ছরে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হতো ৮০০ টাকা। পুনর্মূল্যায়নের পর তার হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারিত হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। তার হোল্ডিং ট্যাক্স বেড়েছে দুই শ গুণেরও বেশি। ক্ষোভ প্রকাশ করে রাসেল আহমদ বলেন, ‘গত ৮/১০ বছরে আমার বাসার কোনো পরিবর্তন হয়নি। একই রকমই আছে। তবু ট্যাক্স দুই শ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা একেবারেই অযৌক্তিক।’
নগরীর প্রায় পৌনে এক লাখ ভবনমালিকের গৃহকর কয়েকশ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। একাধিক ভবনমালিক জানান, গত ৩০ এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশন নতুননির্ধারিত হোল্ডিংট্যাক্স অনুযায়ী ভবন মালিকদের ট্যাক্স পরিশোধের নোটিশ দেওয়া শুরু করে। একলাফে‘অসহনীয়ভাবে’ হোল্ডিংট্যাক্স বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন ভবনমালিকেরা। এ নিয়ে তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। নগরবাসী দ্রুত এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে।
সিসিকের রাজস্ব শাখা জানিয়েছে, নতুন হোল্ডিংট্যাক্সে আবাসিক ভবনের প্রতি বর্গফুট পাঁচটাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের জন্য আটটাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে সুর্নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালার আলোকে এই ট্যাক্স আদায় করা হয়নি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, আগে আবাসিক ভবনের প্রতি বর্গফুট তিন টাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের প্রতিবর্গফুটের জন্য পাঁচটাকা নির্ধারিত ছিল; যদিও মেয়রের কাছে আবেদন করে অনেকে এর চেয়ে অনেক কম হোল্ডিংট্যাক্স দিতেন।
ভবনমালিকদের অভিযোগ, পুনর্মূল্যায়নের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নআছে। অনেক আবাসিক কাঁচাকিংবা আধাপাকা ভবনের ক্ষেত্রেও ১০ থেকে ৫০ গুণ পর্যন্তগৃহকর ‘অযৌক্তিকভাবে’ বাড়ানো হয়েছে।
সিসিকেররাজস্ব শাখার তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান শেষে হোল্ডিংসংখ্যা পুননির্ধারিত হয়। এতে পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে হোল্ডিং নির্ধারিত হয় ৭৫ হাজার ৪৩০টি। এসবের হোল্ডিংট্যাক্স আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করাহয় ১১৩ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪০০ টাকা। নতুন ট্যাক্স ধার্যের সময় ধরা হয় ২০২১-২২ সাল। সেই করারোপের তালিকাই ৩০ এপ্রিল প্রকাশকরা হয়েছে। তবে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ড এ তালিকায় আসেনি।
সিটি করপোরেশনের প্রধানরাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমানখান বলেন, নতুন হোল্ডিংট্যাক্স নিয়ে আপত্তি থাকলে ১৪ মে পর্যন্ত ভুক্তভোগীরা আপত্তিজানাতে পারবেন। পরে রিভিউ বোর্ডে শুনানির মাধ্যমে তানিষ্পত্তি করাহবে। এরপরও কারও আপত্তি থাকলে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আপিল করারসুযোগআছে।
করপোরেশনের একটি সূত্রের দাবি, সাবেক মেয়র আরিফুলহক চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিগত পরিষদের গৃহকরবিষয়ক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নই বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পরিষদ করছে।
যোগাযোগকরলেআরিফুলহক চৌধুরী দাবিকরেন, তারপরিষদ প্রতিবর্গফুটে দুইটাকাবাড়িয়েছে। কিন্তু এখনকয়েক শ গুণ হোল্ডিংট্যাক্স বাড়ারবিষয়টি যেমন শোনাযাচ্ছে, তারা সেটাকরেননি।
নতুন হোল্ডিংট্যাক্সের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্নরাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠন প্রতিবাদী কর্মসূচিপালন শুরু করেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনা করছেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ১৩ মে ২০২৪
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্ব গতির অস্থির সময়ে যখন মানুষের নাভিশ্বাস, হঠাৎ এক লাফে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে সিলেট নগরীর হোল্ডিং ট্যাক্স। কারো ট্যাক্স বেড়েছে আরো বেশি। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের এই ‘অস্বাভাবিক’হারে বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে নগর জুড়ে চলছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও চরম অসন্তোষ। নগরবাসি বলছেন, এ যেন এক ‘মগেরমুল্লুক’৷
প্রতি দিন হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবিতে বিবৃতির পাশাপাশি রাজপথে পালিত হচ্ছে প্রতিবাদ কর্মসূচী। এমন পরিস্থিতিতে গত রোববার জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি হোল্ডিংট্যাক্স নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নগরের হোল্ডিং ট্যক্স সহনীয় পর্যায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন। সাবেক মেয়র আরিফুলহক চৌধুরীর সাথে ‘বৈঠকও’করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর শামীমাবাদ এলাকার এক বাসিন্দা আগে বছরে ৬০০ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দিতেন। কিন্তু পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের পর তার বার্ষিক গৃহকর হোল্ডিং ট্যাক্স ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সিটি করপোরেশন, যা আগের চেয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬১ গুণ।
সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকায় বাসা রাসেল আহমদের। আগে তাকেব ছরে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হতো ৮০০ টাকা। পুনর্মূল্যায়নের পর তার হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারিত হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। তার হোল্ডিং ট্যাক্স বেড়েছে দুই শ গুণেরও বেশি। ক্ষোভ প্রকাশ করে রাসেল আহমদ বলেন, ‘গত ৮/১০ বছরে আমার বাসার কোনো পরিবর্তন হয়নি। একই রকমই আছে। তবু ট্যাক্স দুই শ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা একেবারেই অযৌক্তিক।’
নগরীর প্রায় পৌনে এক লাখ ভবনমালিকের গৃহকর কয়েকশ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। একাধিক ভবনমালিক জানান, গত ৩০ এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশন নতুননির্ধারিত হোল্ডিংট্যাক্স অনুযায়ী ভবন মালিকদের ট্যাক্স পরিশোধের নোটিশ দেওয়া শুরু করে। একলাফে‘অসহনীয়ভাবে’ হোল্ডিংট্যাক্স বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন ভবনমালিকেরা। এ নিয়ে তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। নগরবাসী দ্রুত এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে।
সিসিকের রাজস্ব শাখা জানিয়েছে, নতুন হোল্ডিংট্যাক্সে আবাসিক ভবনের প্রতি বর্গফুট পাঁচটাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের জন্য আটটাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে সুর্নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালার আলোকে এই ট্যাক্স আদায় করা হয়নি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, আগে আবাসিক ভবনের প্রতি বর্গফুট তিন টাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের প্রতিবর্গফুটের জন্য পাঁচটাকা নির্ধারিত ছিল; যদিও মেয়রের কাছে আবেদন করে অনেকে এর চেয়ে অনেক কম হোল্ডিংট্যাক্স দিতেন।
ভবনমালিকদের অভিযোগ, পুনর্মূল্যায়নের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নআছে। অনেক আবাসিক কাঁচাকিংবা আধাপাকা ভবনের ক্ষেত্রেও ১০ থেকে ৫০ গুণ পর্যন্তগৃহকর ‘অযৌক্তিকভাবে’ বাড়ানো হয়েছে।
সিসিকেররাজস্ব শাখার তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান শেষে হোল্ডিংসংখ্যা পুননির্ধারিত হয়। এতে পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে হোল্ডিং নির্ধারিত হয় ৭৫ হাজার ৪৩০টি। এসবের হোল্ডিংট্যাক্স আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করাহয় ১১৩ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪০০ টাকা। নতুন ট্যাক্স ধার্যের সময় ধরা হয় ২০২১-২২ সাল। সেই করারোপের তালিকাই ৩০ এপ্রিল প্রকাশকরা হয়েছে। তবে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ড এ তালিকায় আসেনি।
সিটি করপোরেশনের প্রধানরাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমানখান বলেন, নতুন হোল্ডিংট্যাক্স নিয়ে আপত্তি থাকলে ১৪ মে পর্যন্ত ভুক্তভোগীরা আপত্তিজানাতে পারবেন। পরে রিভিউ বোর্ডে শুনানির মাধ্যমে তানিষ্পত্তি করাহবে। এরপরও কারও আপত্তি থাকলে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আপিল করারসুযোগআছে।
করপোরেশনের একটি সূত্রের দাবি, সাবেক মেয়র আরিফুলহক চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিগত পরিষদের গৃহকরবিষয়ক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নই বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পরিষদ করছে।
যোগাযোগকরলেআরিফুলহক চৌধুরী দাবিকরেন, তারপরিষদ প্রতিবর্গফুটে দুইটাকাবাড়িয়েছে। কিন্তু এখনকয়েক শ গুণ হোল্ডিংট্যাক্স বাড়ারবিষয়টি যেমন শোনাযাচ্ছে, তারা সেটাকরেননি।
নতুন হোল্ডিংট্যাক্সের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্নরাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠন প্রতিবাদী কর্মসূচিপালন শুরু করেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনা করছেন।