alt

জাতীয়

কালরাত : বিশ্বের অন্যতম গণহত্যা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ২৪ মার্চ ২০২৪

বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা গুঁড়িয়ে দিতে একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে পরিকল্পিত গণহত্যা শুরু করে। একাত্তরের ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালিরা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য চরম আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলন দমন করা পাকিস্তানি শাসকদের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় তারা গণহত্যা করে বাঙালি জাতিকে স্তব্ধ করতে ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণিত গণহত্যা শুরু করেছিল।

গণহত্যার সময় পাকিস্তানের যেসব সেনা কর্মকর্তা বাংলাদেশে গণহত্যায় অংশ নিয়েছেন তাদের অনেকেই সেনাবাহিনী থেকে অবসরগ্রহণের পর বই লিখেছেন। সেসব বইয়ে তারা একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। পাকিস্তানের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা একাত্তরের গণহত্যা পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন নিয়ে বইয়ে যেসব তথ্য উল্লেখ করেছেন তার কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার এফ বি আলি ১৯৬৯ সাল থেকে একাত্তরের গণহত্যার সময় বাংলাদেশে ছিলেন। ‘প্রিজন জার্নি : এ মেমোয়ার’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি।

তিনি লিখেছেন : “...শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর আমাদের সদরদপ্তরে জেনারেল রহিম ও ভুট্টোর মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হতে দেখেছি। এসব বৈঠকে সামরিক সরকার ও ভুট্টোর মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা হয়। এর ফলস্বরূপ সরকার শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয় ও শেষ পর্যন্ত তা পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অভিযানের পথ সুগম করে। ... ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে সেনাবাহিনী ঢাকায় অভিযান শুরু করে এবং নির্বিচারে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করে।”

এফ বি আলি জানান, তখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে যাওয়া চিঠিপত্র সেন্সর করা হতো। চট্টগ্রামের একজন নৌ অফিসারের করাচিতে তার পরিবারের উদ্দেশে লেখা একটি চিঠি তার ডেস্কে এসে পড়ে। ১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল তারিখে লেখা সেই চিঠির একটা দীর্ঘ অংশ তুলে ধরেছেন তিনি : “আমি এখনও বেঁচে আছি ও ভালো আছি। (মৃত) শহরের অবস্থা খুবই খারাপ। (‘মৃত’ লিখলাম কারণ, শহরটির আর কোনো অস্তিত্ব নেই)। নৌ সেনারা দীর্ঘ ও কষ্টকর অপেক্ষার পর নিকৃষ্ট বিঙ্গোদের গুঁড়িয়ে দেয়ার সুযোগ পায়। বন্দরে আমরা যখন টিকতে পারছিলাম না তখন স্থলবাহিনীর সাহায্য চাই। ওহ, তারা এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে যে এই বিঙ্গোরা তা জীবনেও ভুলবে না। বিমানবাহিনীও শত্রুদের ওপর হাজার-পাউন্ডের বোমা ফেলতে কার্পণ্য করেনি। পি এন এস জাহাঙ্গীর থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়। ...আমি পিএনএস ঢাকার একটি প্লাটুনের কমান্ডার। বাড়িয়ে বলছি না, আমরা এখানে এত মানুষ মেরেছি যে সবাই আমাদের টি-এইচ-বি-এস (ট্রিগার হ্যাপি বাস্টার্ডস স্কোয়াড) বলে ডাকে। আমি এ পর্যন্ত ডজনখানেক গাদ্দার বিঙ্গোকে হত্যা করেছি। ... স্থল সেনারা ভয়ঙ্কর মেজাজে আছে। নৌ সেনারা শত শত জনকে ধরে জেলে পুরছে। কিন্তু, স্থল সেনারা জেলে ঢোকানোয় বিশ্বাসী নয়, তারা ধরছে আর সঙ্গে সঙ্গে খতম করে দিচ্ছে। পুরো চট্টগ্রাম শহরে কেবল লাশ আর লাশ। এসব লাশের বেশির ভাগই পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কর্ণফুলী নদীতে শুধুই লাশ ভাসছে। মুখে রুমাল না বেঁধে হাঁটাচলা করা যায় না।...আমার ধারণা, পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র একই অবস্থা। রেডিও পাকিস্তানের কথা একদম বিশ্বাস করবে না।”

সিদ্দিক সালিক ১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উইটনেস টু সারেন্ডার শিরোনামের একটি বই লিখেছেন সিদ্দিক সালিক। সেই বইয়ে তিনি লিখেছেন, জেনারেল রাও ফরমান আলী হালকা নীল কাগজের অফিশিয়াল প্যাডের ওপর একটি সাধারণ কাঠপেনসিল দিয়ে পরিকল্পনার খসড়া লিখেছিলেন। সেই লেখা সিদ্দিক সালিক নিজের চোখে দেখেছিলেন।

মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা একাত্তরে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর ১৪তম ডিভিশনের জিওসি ছিলেন। তিনি ‘আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান ১৯৬৯-১৯৭১’ শিরোনামে স্মৃতিচারণামূলক বই লিখেছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তারা অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা।

বইয়ে খাদিম হুসাইন রাজা লিখেছেন, ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান তাকে এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে কমান্ড হাউসে ডেকে পাঠান। তারা দুজন সেখানে যাওয়ার পর টিক্কা খান তাদের বলেন, শেখ মুজিবের সঙ্গে ইয়াহিয়া খানের আলোচনায় প্রত্যাশিত অগ্রগতি হচ্ছে না। সে কারণে ইয়াহিয়া খান ‘মিলিটারি অ্যাকশন’-এর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।

ইয়াহিয়া খানের বরাত দিয়ে টিক্কা খান সেনা কর্মকর্তাদের একটি পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেন।

মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা তার বইয়ে আরও লিখেছেন, সেই নির্দেশ অনুযায়ী পরদিন ১৮ মার্চ ক্যান্টনমেন্টে তার বাসায় রাও ফরমান আলী আসেন। তারা দুজন মিলে অপারেশন সার্চলাইটের খসড়া তৈরি করেন। তারা দুজন আলাদা দুটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। সে অনুযায়ী রাও ফরমান আলী ঢাকা অঞ্চলে সামরিক অভিযানের দায়িত্ব নেন এবং খাদিম হুসাইন রাজা দায়িত্ব নেন ঢাকার বাইরে।

সেই খসড়া নিয়ে তারা সন্ধ্যায় যান কমান্ড হাউসে। সেখানে অল্প সময়ের মধ্যেই তা অনুমোদন করা হয়। এরপর বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন ১৯ মার্চ থেকে। সে অনুযায়ী ঢাকায় সশস্ত্র আক্রমণ চালানো হয় ২৫ মার্চ মধ্যরাতে।

ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন জন ড্রিং ১৯৭১-এর মার্চে ঢাকায় ছিলেন। তিনিই প্রথম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতার কথা বিশ্ববাসীকে জানান। তার লেখা থেকে এখানে কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।

২৫ মার্চ বিকেলে আমি শদুয়েক বিদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে হোটেলে (তখনকার দিনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল) আটকা পড়েছিলাম।

রাত ১১টা বাজার খানিক আগে দেখলাম পাকিস্তানি কিছু ট্যাংক আর ট্রাক ভরে সৈন্য শহরের ভেতরের দিকে যাচ্ছে। যেতে যেতে হোটেলের সামনের রাস্তার বানানো বাধাগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে গেল। মধ্যরাতের সামান্য পরেই আমি সেনাবহরের বাতি জ্বলা-নেভা দেখতে পেলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে বন্দুক আর মেশিনগানের গগনবিদারী আওয়াজ আসতে লাগল। ভোরের সামান্য আগে আকাশ আগুনের হলকায় জ্বলে উঠল, যে আগুন তখন পুরো শহরটাকে পুড়িয়ে ফেলছিল।

তারপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে, ছাত্রাবাসের বাইরে আর চত্বরে যত্রতত্র গুলি খাওয়া ছাত্রের লাশ পড়ে থাকতে দেখলাম। রাস্তায় দেখলাম গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়া রিকশাওয়ালার রক্তে ভেসে যাওয়া নির্জীব শরীর। কিছু পরিবারকে দেখলাম নিজ বাড়িতে পুড়ে কয়লা হয়ে পড়ে আছে। বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের সমাপ্তি আনতে ২৫ ও ২৬ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে সুচিন্তিত হত্যাযজ্ঞ চালায়, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় তার যতটুকু কথায় প্রকাশ করা যায়, তার চেয়ে আমি অনেক বেশি প্রত্যক্ষ করেছি।

বাঙালিদের মধ্যে যাদের সঙ্গে তখন দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছিল, তাদের ক্রোধ আর উৎকণ্ঠা আমার পরিষ্কার মনে আছে। আমি জানতাম, যে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবী আমাকে উথালপাতাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিটি বুঝতে ও তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে সহায়তা করছিলেন, তারাই তখন শত্রুর লক্ষ্যে পরিণত হয়েছেন। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে প্রেরণাদায়ক ও ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তার পরিস্থিতি তখন একই। ২৫ মার্চে রাত একটার ঠিক আগে আগে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি যদি আত্মগোপন করি, তারা আমাকে খুঁজতে গিয়ে পুরো ঢাকা শহরে আগুন লাগিয়ে দেবে।’

মনে আছে, কতটা বিরক্তি আর রাগ হয়েছিল যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা, মেজর সিদ্দিক সালিক হোটেলে এসে প্রত্যেক বিদেশি সাংবাদিককে ওই রাতেই দেশ ছাড়তে উপদেশ দিয়ে গেলেন। বুঝতে বাকি ছিল না যে কারফিউ উঠিয়ে দেয়ার পরে শহরের অবস্থা আমরা যেন দেখতে বা সে বিষয়ে প্রতিবেদন করতে না পারি, সেই চেষ্টাতেই এ আদেশ। অবশ্য তিনি বলেছিলেন ওটা আদেশ নয়, বরং আমাদের নিরাপত্তার খাতিরে নেয়া সিদ্ধান্ত। আমি যখন তার সিদ্ধান্তের বিপরীতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললাম যে আমি ঢাকা শহরে থেকে যেতে চাই, মুখে একটা ক্রূর হাসি টেনে এনে তিনি জানালেন, ‘নিশ্চয়ই, আপনি চাইলে অবশ্যই থাকবেন। তবে সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য এক বিশাল সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে।’

বুঝেশুনে নিয়ে আমি থেকে গেলাম। তখন এই শহরে কী তা-ব চলছিল তা আমাকে প্রকাশ করতেই হবে। ২৭ মার্চ সকালে বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে ট্রাক বিমানবন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া পর্যন্ত হোটেলের ছাদে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের প্রধান যন্ত্রটার পেছনে আমি লুকিয়ে থাকলাম। পরে জানতে পারলাম তরুণ ফ্রেঞ্চ চিত্রগ্রাহক মিশেল লরেন্ট হোটেলের আলমারির মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন।

তবে পরের তিনদিন সেনাসদস্যদের অগোচরে লুকিয়ে থাকাটা সম্ভব হয়েছিল কেবল হোটেলের সাহসী কিছু কর্মচারীর কারণে। তারা কোনোরকম দ্বিধা ছাড়াই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। পরের তিনদিন যতবার সেনাসদস্যরা হোটেলে এসে পই পই করে আমাদের খুঁজেছে, কর্মচারীরা আমাদের লুকিয়ে রেখেছিলেন। এমনকি একটা পুরোনো গাড়িতে করে আমাদের শহর ঘুরিয়ে এনেছিলেন, যেন হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য আমরা ধারণ করতে পারি।

আমার প্রতিবেদন ও মিশেলের তোলা ছবি, দুইয়ে মিলে সেই প্রথম মার্চের কালরাতে কী হয়েছিল, সে সত্য প্রকাশ করল।

কিন্তু আমি বড় এক ভুল করে বসলাম। প্রতিবেদনে লিখে ফেললাম যে কেবল ঢাকাতেই অন্তত সাত হাজার মানুষের মৃত্যুর ভয়াবহতার কারণে বাংলাদেশে স্বাধীনতার সংগ্রাম হয়তো মাঝপথেই শেষ হয়ে যাবে। আমার ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছিল। সত্যিকার অর্থে হোটেলের যে লোকগুলো আমাকে লুকিয়ে রেখে আশাতীত সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, তাদের মানসিক শক্তির কথা আমি ভাবতে পারতাম। আমার বোঝা উচিত ছিল যে সংগ্রামের পথে সাধারণ বাঙালির যে মনোবল ও ক্ষমতা তা তখনো অটুট ছিল। প্রকৃতপক্ষে ওটাই ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামে জয়ী হওয়ার প্রধান কারণ।

ছবি

শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

ছবি

থাইল্যান্ডের সঙ্গে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি স্বাক্ষর

ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ

ছবি

বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চায় প্রধানমন্ত্রী

গাজীপুরে মরে যাচ্ছে মুরগি, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে খামার

ছবি

আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

একটানা এতদিন এত তাপ দেখেনি বাংলাদেশ

রোববার খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ‘ভিত্তিহীন’ তথ্য রয়েছে

ছবি

গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখতে উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে বদ্ধপরিকর ইসি

ছবি

থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

মৃত্যুর দু’বছর পর ব্রুনাই থেকে ফিরছে দুই বাংলাদেশির লাশ

ছবি

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হলেন এম ইউ কবীর চৌধুরী

বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে : মানবাধিকার কমিশন

ছবি

১৫ বছরে আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি: এলজিআরডি মন্ত্রী

ছবি

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি

ছবি

যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

গ্যাস সংকটে আগামীর ‘ভরসা’ এলএনজি

ছবি

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর : ‘আমার স্বপ্নও ভেঙে গেছে’

ছবি

এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য

ছবি

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ নতুন বিচারক

ছবি

কক্সবাজারে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট

ছবি

ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

ছবি

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

ছবি

সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা জব্দ করা জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছে; ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকের সবাই নিরাপদ

ছবি

পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

পদত্যাগ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব

ছবি

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড , আছে লোড শেডিংও

ছবি

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই

ছবি

ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

tab

জাতীয়

কালরাত : বিশ্বের অন্যতম গণহত্যা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ২৪ মার্চ ২০২৪

বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা গুঁড়িয়ে দিতে একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে পরিকল্পিত গণহত্যা শুরু করে। একাত্তরের ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালিরা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য চরম আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলন দমন করা পাকিস্তানি শাসকদের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় তারা গণহত্যা করে বাঙালি জাতিকে স্তব্ধ করতে ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণিত গণহত্যা শুরু করেছিল।

গণহত্যার সময় পাকিস্তানের যেসব সেনা কর্মকর্তা বাংলাদেশে গণহত্যায় অংশ নিয়েছেন তাদের অনেকেই সেনাবাহিনী থেকে অবসরগ্রহণের পর বই লিখেছেন। সেসব বইয়ে তারা একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। পাকিস্তানের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা একাত্তরের গণহত্যা পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন নিয়ে বইয়ে যেসব তথ্য উল্লেখ করেছেন তার কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার এফ বি আলি ১৯৬৯ সাল থেকে একাত্তরের গণহত্যার সময় বাংলাদেশে ছিলেন। ‘প্রিজন জার্নি : এ মেমোয়ার’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি।

তিনি লিখেছেন : “...শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর আমাদের সদরদপ্তরে জেনারেল রহিম ও ভুট্টোর মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হতে দেখেছি। এসব বৈঠকে সামরিক সরকার ও ভুট্টোর মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা হয়। এর ফলস্বরূপ সরকার শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয় ও শেষ পর্যন্ত তা পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অভিযানের পথ সুগম করে। ... ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে সেনাবাহিনী ঢাকায় অভিযান শুরু করে এবং নির্বিচারে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করে।”

এফ বি আলি জানান, তখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে যাওয়া চিঠিপত্র সেন্সর করা হতো। চট্টগ্রামের একজন নৌ অফিসারের করাচিতে তার পরিবারের উদ্দেশে লেখা একটি চিঠি তার ডেস্কে এসে পড়ে। ১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল তারিখে লেখা সেই চিঠির একটা দীর্ঘ অংশ তুলে ধরেছেন তিনি : “আমি এখনও বেঁচে আছি ও ভালো আছি। (মৃত) শহরের অবস্থা খুবই খারাপ। (‘মৃত’ লিখলাম কারণ, শহরটির আর কোনো অস্তিত্ব নেই)। নৌ সেনারা দীর্ঘ ও কষ্টকর অপেক্ষার পর নিকৃষ্ট বিঙ্গোদের গুঁড়িয়ে দেয়ার সুযোগ পায়। বন্দরে আমরা যখন টিকতে পারছিলাম না তখন স্থলবাহিনীর সাহায্য চাই। ওহ, তারা এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে যে এই বিঙ্গোরা তা জীবনেও ভুলবে না। বিমানবাহিনীও শত্রুদের ওপর হাজার-পাউন্ডের বোমা ফেলতে কার্পণ্য করেনি। পি এন এস জাহাঙ্গীর থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়। ...আমি পিএনএস ঢাকার একটি প্লাটুনের কমান্ডার। বাড়িয়ে বলছি না, আমরা এখানে এত মানুষ মেরেছি যে সবাই আমাদের টি-এইচ-বি-এস (ট্রিগার হ্যাপি বাস্টার্ডস স্কোয়াড) বলে ডাকে। আমি এ পর্যন্ত ডজনখানেক গাদ্দার বিঙ্গোকে হত্যা করেছি। ... স্থল সেনারা ভয়ঙ্কর মেজাজে আছে। নৌ সেনারা শত শত জনকে ধরে জেলে পুরছে। কিন্তু, স্থল সেনারা জেলে ঢোকানোয় বিশ্বাসী নয়, তারা ধরছে আর সঙ্গে সঙ্গে খতম করে দিচ্ছে। পুরো চট্টগ্রাম শহরে কেবল লাশ আর লাশ। এসব লাশের বেশির ভাগই পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কর্ণফুলী নদীতে শুধুই লাশ ভাসছে। মুখে রুমাল না বেঁধে হাঁটাচলা করা যায় না।...আমার ধারণা, পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র একই অবস্থা। রেডিও পাকিস্তানের কথা একদম বিশ্বাস করবে না।”

সিদ্দিক সালিক ১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উইটনেস টু সারেন্ডার শিরোনামের একটি বই লিখেছেন সিদ্দিক সালিক। সেই বইয়ে তিনি লিখেছেন, জেনারেল রাও ফরমান আলী হালকা নীল কাগজের অফিশিয়াল প্যাডের ওপর একটি সাধারণ কাঠপেনসিল দিয়ে পরিকল্পনার খসড়া লিখেছিলেন। সেই লেখা সিদ্দিক সালিক নিজের চোখে দেখেছিলেন।

মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা একাত্তরে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর ১৪তম ডিভিশনের জিওসি ছিলেন। তিনি ‘আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান ১৯৬৯-১৯৭১’ শিরোনামে স্মৃতিচারণামূলক বই লিখেছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তারা অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা।

বইয়ে খাদিম হুসাইন রাজা লিখেছেন, ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান তাকে এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে কমান্ড হাউসে ডেকে পাঠান। তারা দুজন সেখানে যাওয়ার পর টিক্কা খান তাদের বলেন, শেখ মুজিবের সঙ্গে ইয়াহিয়া খানের আলোচনায় প্রত্যাশিত অগ্রগতি হচ্ছে না। সে কারণে ইয়াহিয়া খান ‘মিলিটারি অ্যাকশন’-এর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।

ইয়াহিয়া খানের বরাত দিয়ে টিক্কা খান সেনা কর্মকর্তাদের একটি পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেন।

মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা তার বইয়ে আরও লিখেছেন, সেই নির্দেশ অনুযায়ী পরদিন ১৮ মার্চ ক্যান্টনমেন্টে তার বাসায় রাও ফরমান আলী আসেন। তারা দুজন মিলে অপারেশন সার্চলাইটের খসড়া তৈরি করেন। তারা দুজন আলাদা দুটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। সে অনুযায়ী রাও ফরমান আলী ঢাকা অঞ্চলে সামরিক অভিযানের দায়িত্ব নেন এবং খাদিম হুসাইন রাজা দায়িত্ব নেন ঢাকার বাইরে।

সেই খসড়া নিয়ে তারা সন্ধ্যায় যান কমান্ড হাউসে। সেখানে অল্প সময়ের মধ্যেই তা অনুমোদন করা হয়। এরপর বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন ১৯ মার্চ থেকে। সে অনুযায়ী ঢাকায় সশস্ত্র আক্রমণ চালানো হয় ২৫ মার্চ মধ্যরাতে।

ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন জন ড্রিং ১৯৭১-এর মার্চে ঢাকায় ছিলেন। তিনিই প্রথম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতার কথা বিশ্ববাসীকে জানান। তার লেখা থেকে এখানে কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।

২৫ মার্চ বিকেলে আমি শদুয়েক বিদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে হোটেলে (তখনকার দিনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল) আটকা পড়েছিলাম।

রাত ১১টা বাজার খানিক আগে দেখলাম পাকিস্তানি কিছু ট্যাংক আর ট্রাক ভরে সৈন্য শহরের ভেতরের দিকে যাচ্ছে। যেতে যেতে হোটেলের সামনের রাস্তার বানানো বাধাগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে গেল। মধ্যরাতের সামান্য পরেই আমি সেনাবহরের বাতি জ্বলা-নেভা দেখতে পেলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে বন্দুক আর মেশিনগানের গগনবিদারী আওয়াজ আসতে লাগল। ভোরের সামান্য আগে আকাশ আগুনের হলকায় জ্বলে উঠল, যে আগুন তখন পুরো শহরটাকে পুড়িয়ে ফেলছিল।

তারপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে, ছাত্রাবাসের বাইরে আর চত্বরে যত্রতত্র গুলি খাওয়া ছাত্রের লাশ পড়ে থাকতে দেখলাম। রাস্তায় দেখলাম গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়া রিকশাওয়ালার রক্তে ভেসে যাওয়া নির্জীব শরীর। কিছু পরিবারকে দেখলাম নিজ বাড়িতে পুড়ে কয়লা হয়ে পড়ে আছে। বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের সমাপ্তি আনতে ২৫ ও ২৬ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে সুচিন্তিত হত্যাযজ্ঞ চালায়, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় তার যতটুকু কথায় প্রকাশ করা যায়, তার চেয়ে আমি অনেক বেশি প্রত্যক্ষ করেছি।

বাঙালিদের মধ্যে যাদের সঙ্গে তখন দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছিল, তাদের ক্রোধ আর উৎকণ্ঠা আমার পরিষ্কার মনে আছে। আমি জানতাম, যে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবী আমাকে উথালপাতাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিটি বুঝতে ও তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে সহায়তা করছিলেন, তারাই তখন শত্রুর লক্ষ্যে পরিণত হয়েছেন। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে প্রেরণাদায়ক ও ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তার পরিস্থিতি তখন একই। ২৫ মার্চে রাত একটার ঠিক আগে আগে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি যদি আত্মগোপন করি, তারা আমাকে খুঁজতে গিয়ে পুরো ঢাকা শহরে আগুন লাগিয়ে দেবে।’

মনে আছে, কতটা বিরক্তি আর রাগ হয়েছিল যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা, মেজর সিদ্দিক সালিক হোটেলে এসে প্রত্যেক বিদেশি সাংবাদিককে ওই রাতেই দেশ ছাড়তে উপদেশ দিয়ে গেলেন। বুঝতে বাকি ছিল না যে কারফিউ উঠিয়ে দেয়ার পরে শহরের অবস্থা আমরা যেন দেখতে বা সে বিষয়ে প্রতিবেদন করতে না পারি, সেই চেষ্টাতেই এ আদেশ। অবশ্য তিনি বলেছিলেন ওটা আদেশ নয়, বরং আমাদের নিরাপত্তার খাতিরে নেয়া সিদ্ধান্ত। আমি যখন তার সিদ্ধান্তের বিপরীতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললাম যে আমি ঢাকা শহরে থেকে যেতে চাই, মুখে একটা ক্রূর হাসি টেনে এনে তিনি জানালেন, ‘নিশ্চয়ই, আপনি চাইলে অবশ্যই থাকবেন। তবে সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য এক বিশাল সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে।’

বুঝেশুনে নিয়ে আমি থেকে গেলাম। তখন এই শহরে কী তা-ব চলছিল তা আমাকে প্রকাশ করতেই হবে। ২৭ মার্চ সকালে বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে ট্রাক বিমানবন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া পর্যন্ত হোটেলের ছাদে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের প্রধান যন্ত্রটার পেছনে আমি লুকিয়ে থাকলাম। পরে জানতে পারলাম তরুণ ফ্রেঞ্চ চিত্রগ্রাহক মিশেল লরেন্ট হোটেলের আলমারির মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন।

তবে পরের তিনদিন সেনাসদস্যদের অগোচরে লুকিয়ে থাকাটা সম্ভব হয়েছিল কেবল হোটেলের সাহসী কিছু কর্মচারীর কারণে। তারা কোনোরকম দ্বিধা ছাড়াই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। পরের তিনদিন যতবার সেনাসদস্যরা হোটেলে এসে পই পই করে আমাদের খুঁজেছে, কর্মচারীরা আমাদের লুকিয়ে রেখেছিলেন। এমনকি একটা পুরোনো গাড়িতে করে আমাদের শহর ঘুরিয়ে এনেছিলেন, যেন হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য আমরা ধারণ করতে পারি।

আমার প্রতিবেদন ও মিশেলের তোলা ছবি, দুইয়ে মিলে সেই প্রথম মার্চের কালরাতে কী হয়েছিল, সে সত্য প্রকাশ করল।

কিন্তু আমি বড় এক ভুল করে বসলাম। প্রতিবেদনে লিখে ফেললাম যে কেবল ঢাকাতেই অন্তত সাত হাজার মানুষের মৃত্যুর ভয়াবহতার কারণে বাংলাদেশে স্বাধীনতার সংগ্রাম হয়তো মাঝপথেই শেষ হয়ে যাবে। আমার ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছিল। সত্যিকার অর্থে হোটেলের যে লোকগুলো আমাকে লুকিয়ে রেখে আশাতীত সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, তাদের মানসিক শক্তির কথা আমি ভাবতে পারতাম। আমার বোঝা উচিত ছিল যে সংগ্রামের পথে সাধারণ বাঙালির যে মনোবল ও ক্ষমতা তা তখনো অটুট ছিল। প্রকৃতপক্ষে ওটাই ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামে জয়ী হওয়ার প্রধান কারণ।

back to top