বাংলাদেশে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও আইন লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তুলে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে জাতিসংঘে চিঠি পাঠিয়েছেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, যিনি এক সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) প্রেসিডেন্টকে গত ২৮ অক্টোবর এ চিঠি পাঠান মোমেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তিনি সেখানে তুলে ধরেছেন।
এসব অভিযোগের মধ্যে ‘রাজনৈতিক নিবর্তন, গুম, সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা, অপরাধীদের দায়মুক্তি ও সাংবাদিক নির্যাতনের’ কথাও রয়েছে।
চিঠিতে মোমেন লিখেছেন, ‘আমি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি, গত এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে মানবাধিকার, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানবিক অবস্থার ক্রমে অবনতি ঘটছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে সেখানে দমনপীড়ন, বিচারবহির্ভূত কর্মকা- এবং গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি অবজ্ঞার চিত্র ফুটে উঠেছে। এসব বিষয়ে জাতিসংঘ, বিশেষ করে সংস্থাটির মানবাধিকার কাউন্সিল ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জরুরিভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’
চিঠিতে বেশ কিছু অভিযোগও তুলে ধরেছেন ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মোমেন।
‘রাজনৈতিক নিপীড়ন ও আইনের অপব্যবহারের’ অভিযোগ তুলে তিনি লিখেছেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গত ১১ মে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও বড় রাজনৈতিক দলের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর দুই দিন পর নিবন্ধন স্থগিত করে কার্যত দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।’
সরকার ‘যথাযথ প্রক্রিয়া’ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করেছে বলেও চিঠিতে অভিযোগ করেছেন মোমেন।
তিনি আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, দলের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেয়া এবং রাজনীতিতে ‘বহুত্ববাদ’ পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি বিরোধীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ‘অপব্যবহার’ বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এমন এক সময়ে মোমেন এই চিঠি লিখেছেন, যখন আন্দোলন দমাতে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।
মোমেন লিখেছেন, ‘এই মামলায় সামরিক বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক ২৫ কর্মকর্তার নাম রয়েছে, যাদের অনেকেই জাতিসংঘে শান্তিরক্ষীর মতো মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অভিযোগ ওঠা ১৫ কর্মকর্তাকে সামরিক হেফাজতে নেয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়ে মোমেন লিখেছেন, ‘এসব মামলার জন্য বেসামরিক আদালতের এখতিয়ারের প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ্যে পুনর্ব্যক্ত করুন।’
ন্যায়বিচার নিশ্চিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি ২৫ কর্মকর্তা ‘প্রতিশোধ কিংবা নির্যাতনের শিকার’ হন কিনা, সে বিষয়ে নজরদারি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মোমেন।
‘অপরাধীদের দায়মুক্তি’ দেয়ার অভিযোগ তুলে চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান থাকবে, বাংলাদেশে হত্যা ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের দায়মুক্তি, আইনি সুরক্ষা বা ছাড় দেওয়ার প্রবণতা যেন আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী ঘোষণা করা হয়।’
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানি, নির্বিচারে আটক এবং সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে, যা মুক্ত আলোচনা ও নজরদারিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।’
সংখ্যালঘু ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ তুলে চিঠিতে বলা হয়, ‘২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নাগরিক সমাজের পর্যবেক্ষণে বলছে, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে প্রায় ২ হাজার ৪৪২টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।’
ইইউএএর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জন্য ‘উচ্চমাত্রায় ঝুঁকি’ থাকার কথা বলা হয়েছে মোমেনের চিঠিতে।
সার্বিক বিষয়ে তিনি জাতিসংঘের কাছে চারটি ‘অনুরোধ’ তুলে ধরেছেন। ১. বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি পর্যবেক্ষণ/তথ্যানুসন্ধান (মনিটরিং/ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং) মিশন গঠন, যেখানে ‘গুম, নির্যাতন, রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘন এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা’ বিষয়ে জোর দেয়া হবে। ২. ২৫ সেনা কর্মকর্তার মামলা ও সংশ্লিষ্ট বিচারের ক্ষেত্রে আইসিসিপিআর পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে তা বেসামরিক আদালতে স্থানান্তরের আহ্বান জানাতে হবে। ৩. ‘বিনা বিচারে আটক’ ব্যক্তিদের মুক্তি এবং বিবাদী, আইনজীবী, সাক্ষী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের ‘প্রতিশোধমূলক কর্মকা-’ থেকে সুরক্ষা দিতে হবে। ৪. বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা’ নিশ্চিত করা; বিচারব্যবস্থা যেন কোনোভাবেই চাপ ও নির্যাতনের হাতিয়ার হয়ে না ওঠে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও আইন লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তুলে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে জাতিসংঘে চিঠি পাঠিয়েছেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, যিনি এক সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) প্রেসিডেন্টকে গত ২৮ অক্টোবর এ চিঠি পাঠান মোমেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তিনি সেখানে তুলে ধরেছেন।
এসব অভিযোগের মধ্যে ‘রাজনৈতিক নিবর্তন, গুম, সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা, অপরাধীদের দায়মুক্তি ও সাংবাদিক নির্যাতনের’ কথাও রয়েছে।
চিঠিতে মোমেন লিখেছেন, ‘আমি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি, গত এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে মানবাধিকার, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানবিক অবস্থার ক্রমে অবনতি ঘটছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে সেখানে দমনপীড়ন, বিচারবহির্ভূত কর্মকা- এবং গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি অবজ্ঞার চিত্র ফুটে উঠেছে। এসব বিষয়ে জাতিসংঘ, বিশেষ করে সংস্থাটির মানবাধিকার কাউন্সিল ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জরুরিভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’
চিঠিতে বেশ কিছু অভিযোগও তুলে ধরেছেন ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মোমেন।
‘রাজনৈতিক নিপীড়ন ও আইনের অপব্যবহারের’ অভিযোগ তুলে তিনি লিখেছেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গত ১১ মে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও বড় রাজনৈতিক দলের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর দুই দিন পর নিবন্ধন স্থগিত করে কার্যত দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।’
সরকার ‘যথাযথ প্রক্রিয়া’ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করেছে বলেও চিঠিতে অভিযোগ করেছেন মোমেন।
তিনি আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, দলের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেয়া এবং রাজনীতিতে ‘বহুত্ববাদ’ পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি বিরোধীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ‘অপব্যবহার’ বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এমন এক সময়ে মোমেন এই চিঠি লিখেছেন, যখন আন্দোলন দমাতে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।
মোমেন লিখেছেন, ‘এই মামলায় সামরিক বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক ২৫ কর্মকর্তার নাম রয়েছে, যাদের অনেকেই জাতিসংঘে শান্তিরক্ষীর মতো মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অভিযোগ ওঠা ১৫ কর্মকর্তাকে সামরিক হেফাজতে নেয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়ে মোমেন লিখেছেন, ‘এসব মামলার জন্য বেসামরিক আদালতের এখতিয়ারের প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ্যে পুনর্ব্যক্ত করুন।’
ন্যায়বিচার নিশ্চিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি ২৫ কর্মকর্তা ‘প্রতিশোধ কিংবা নির্যাতনের শিকার’ হন কিনা, সে বিষয়ে নজরদারি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মোমেন।
‘অপরাধীদের দায়মুক্তি’ দেয়ার অভিযোগ তুলে চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান থাকবে, বাংলাদেশে হত্যা ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের দায়মুক্তি, আইনি সুরক্ষা বা ছাড় দেওয়ার প্রবণতা যেন আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী ঘোষণা করা হয়।’
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানি, নির্বিচারে আটক এবং সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে, যা মুক্ত আলোচনা ও নজরদারিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।’
সংখ্যালঘু ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ তুলে চিঠিতে বলা হয়, ‘২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নাগরিক সমাজের পর্যবেক্ষণে বলছে, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে প্রায় ২ হাজার ৪৪২টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।’
ইইউএএর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জন্য ‘উচ্চমাত্রায় ঝুঁকি’ থাকার কথা বলা হয়েছে মোমেনের চিঠিতে।
সার্বিক বিষয়ে তিনি জাতিসংঘের কাছে চারটি ‘অনুরোধ’ তুলে ধরেছেন। ১. বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি পর্যবেক্ষণ/তথ্যানুসন্ধান (মনিটরিং/ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং) মিশন গঠন, যেখানে ‘গুম, নির্যাতন, রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘন এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা’ বিষয়ে জোর দেয়া হবে। ২. ২৫ সেনা কর্মকর্তার মামলা ও সংশ্লিষ্ট বিচারের ক্ষেত্রে আইসিসিপিআর পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে তা বেসামরিক আদালতে স্থানান্তরের আহ্বান জানাতে হবে। ৩. ‘বিনা বিচারে আটক’ ব্যক্তিদের মুক্তি এবং বিবাদী, আইনজীবী, সাক্ষী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের ‘প্রতিশোধমূলক কর্মকা-’ থেকে সুরক্ষা দিতে হবে। ৪. বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা’ নিশ্চিত করা; বিচারব্যবস্থা যেন কোনোভাবেই চাপ ও নির্যাতনের হাতিয়ার হয়ে না ওঠে।