সুনামগঞ্জ-১ আসন
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সুনামগঞ্জ-১ আসনে (তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও জামালগঞ্জ) আওয়ামী লীগের ডোনার খ্যাত আনিসুল হক বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন বিএনপির ওই আসনের আদর্শিক নেতাকর্মীরা। দুই নেত্রী মাইনাস রাজনীতির রূপকার সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের ভাইয়ের সঙ্গে ওয়ান ইলেভেনে ব্যবসায়িক পার্টনার হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নিয়ে তিনি খ্যাতি পেয়েছিলেন ‘ওয়ান ইলেভেন চেয়ারম্যান’। ওয়ান ইলেভেনের পর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
জানা গেছে, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আপোস করে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন দাপটের সঙ্গে। গত ১৫ বছর নির্বিঘ্নে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের সঙ্গে আঁতাত করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসনে নৌকার প্রার্থীদের মোটা অংকের টাকা ডোনেশন দিতেন এবং নিয়মিত কার্যালয়ে গিয়ে নির্বাচনী পরামর্শও দিতেন আনিসুল। এবার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার ভাই এনামুল হক ও আনোয়ারুল হককে দিয়ে ইজারাদারদের ভাগিদার বানিয়ে যাদুকাটা নদী ও এলাকার কয়লা ও চুনাপাথর ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করছেন বলেও অভিযোগ আছে আনিসুলের বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মোটা অংকের নির্বাচনী ডোনেশন দিয়ে আলোচনায় ছিলেন আনিসুল হক। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকেও নির্বাচনে খরচের জন্য মোটা অংকের অর্থ দেন তিনি। এর আগের নির্বাচনে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের কার্যালয়ে গিয়ে তিনি অনুদানসহ নিয়মিত নির্বাচনী পরামর্শও দিয়েছেন।
আরও জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নির্বাচনী এলাকার বালু পাথর মহাল ও কয়লাঘাট তার ভাই এনামুল হক ও আনোয়ারল হককে প্রধান ভাগিদার করে ইজারা নিয়ে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করছেন। যাদুকাটা নদীর খতিয়ানে একাই দুই খতিয়ানের মালিক আনিসুল হক; যা তার দুই ভাইকে দিয়ে ইজারাদারদের ভাগিদার করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। প্রতিদিন যাদুকাটা নদীতে পাড় কেটে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। এ ঘটনায় তিনটি মামলা হলেও আনিসুলের প্রভাবে আসামি হননি তার দুই ভাই।
জানা গেছে, তার ভাই আনোয়ারুল হক ‘ডিবি হারুনের’ ঘনিষ্ঠজন যাদুকাটা নদীর ইজারাদার শাহ রুবেলের সঙ্গে ইজারা নিয়ে নদীর তীর কেটে বালু লুট করছে প্রকাশ্যে। ৫ আগস্টের পর আরেক ভাই এনামুল জনৈক ফারুকের নামে টোল-ট্যাক্স নিয়ে নৌকাতে চাঁদাবাজি করছেন প্রকাশ্যে।
বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, দলের দুঃসময়ে রাজপথ কাঁপানো নেতা কামরুজ্জামান কামরুলকে মনোনয়ন না দিয়ে সুবিধাবাদী আনিসুলকে মনোনয়ন দেয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে তৃণমূলে। আবার গতকাল বৃহস্পতিবার এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানের সমর্থকরা বিশাল সমাবেশ করেছেন। তারা আনিসুলকে বাদ দিয়ে মাহবুবকে প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছেন। এদিকে, কামরুজ্জামান কামরুলের পক্ষেও চারটি উপজেলার নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলে তাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
আনিসুল হক বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ার পর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তৎকালীন এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠকের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে।
জানা গেছে, অতীতে দলের বিরুদ্ধাচারণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া তার নারীগঠিত স্ক্যান্ডালও রয়েছে। এ কারণে ওই নারীকে তালাক দিয়েছেন তার স্বামী। এই স্ক্যান্ডালের বিচারও করে দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট।
মধ্যনগর ১নং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, যারা অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসা করেছে, নির্বাচনে ডোনেশন দিয়েছেন তাদের বাদ দিয়ে দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করলে ভালো হতো। কিন্তু সুনামগঞ্জ-১ আসনে আমরা হতাশ হয়েছি। আশা করি, চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় তৃণমূলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকে মূল্যায়ন করা হবে।
ধর্মপাশা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ওবায়দুল মজুমদার বলেন, দলের ত্যাগী, কর্মীবান্ধব ও নির্যাতিত নেতা কামরুজ্জামান কামরুল। তিনি মনোনয়ন পেলে দলের ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ ও আদর্শিক নেতাকর্মীরা উদ্বুদ্ধ হতেন। তৃণমূল উচ্ছ্বসিত হতো। কিন্তু তার বদলে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাবশালীদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।
এ বিষয়ে আনিসুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে বিস্তারিত জানতে চেয়ে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সুনামগঞ্জ-১ আসন
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
সুনামগঞ্জ-১ আসনে (তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও জামালগঞ্জ) আওয়ামী লীগের ডোনার খ্যাত আনিসুল হক বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন বিএনপির ওই আসনের আদর্শিক নেতাকর্মীরা। দুই নেত্রী মাইনাস রাজনীতির রূপকার সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের ভাইয়ের সঙ্গে ওয়ান ইলেভেনে ব্যবসায়িক পার্টনার হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নিয়ে তিনি খ্যাতি পেয়েছিলেন ‘ওয়ান ইলেভেন চেয়ারম্যান’। ওয়ান ইলেভেনের পর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
জানা গেছে, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আপোস করে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন দাপটের সঙ্গে। গত ১৫ বছর নির্বিঘ্নে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের সঙ্গে আঁতাত করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসনে নৌকার প্রার্থীদের মোটা অংকের টাকা ডোনেশন দিতেন এবং নিয়মিত কার্যালয়ে গিয়ে নির্বাচনী পরামর্শও দিতেন আনিসুল। এবার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার ভাই এনামুল হক ও আনোয়ারুল হককে দিয়ে ইজারাদারদের ভাগিদার বানিয়ে যাদুকাটা নদী ও এলাকার কয়লা ও চুনাপাথর ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করছেন বলেও অভিযোগ আছে আনিসুলের বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মোটা অংকের নির্বাচনী ডোনেশন দিয়ে আলোচনায় ছিলেন আনিসুল হক। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকেও নির্বাচনে খরচের জন্য মোটা অংকের অর্থ দেন তিনি। এর আগের নির্বাচনে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের কার্যালয়ে গিয়ে তিনি অনুদানসহ নিয়মিত নির্বাচনী পরামর্শও দিয়েছেন।
আরও জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নির্বাচনী এলাকার বালু পাথর মহাল ও কয়লাঘাট তার ভাই এনামুল হক ও আনোয়ারল হককে প্রধান ভাগিদার করে ইজারা নিয়ে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করছেন। যাদুকাটা নদীর খতিয়ানে একাই দুই খতিয়ানের মালিক আনিসুল হক; যা তার দুই ভাইকে দিয়ে ইজারাদারদের ভাগিদার করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। প্রতিদিন যাদুকাটা নদীতে পাড় কেটে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। এ ঘটনায় তিনটি মামলা হলেও আনিসুলের প্রভাবে আসামি হননি তার দুই ভাই।
জানা গেছে, তার ভাই আনোয়ারুল হক ‘ডিবি হারুনের’ ঘনিষ্ঠজন যাদুকাটা নদীর ইজারাদার শাহ রুবেলের সঙ্গে ইজারা নিয়ে নদীর তীর কেটে বালু লুট করছে প্রকাশ্যে। ৫ আগস্টের পর আরেক ভাই এনামুল জনৈক ফারুকের নামে টোল-ট্যাক্স নিয়ে নৌকাতে চাঁদাবাজি করছেন প্রকাশ্যে।
বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, দলের দুঃসময়ে রাজপথ কাঁপানো নেতা কামরুজ্জামান কামরুলকে মনোনয়ন না দিয়ে সুবিধাবাদী আনিসুলকে মনোনয়ন দেয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে তৃণমূলে। আবার গতকাল বৃহস্পতিবার এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানের সমর্থকরা বিশাল সমাবেশ করেছেন। তারা আনিসুলকে বাদ দিয়ে মাহবুবকে প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছেন। এদিকে, কামরুজ্জামান কামরুলের পক্ষেও চারটি উপজেলার নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলে তাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
আনিসুল হক বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ার পর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তৎকালীন এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠকের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে।
জানা গেছে, অতীতে দলের বিরুদ্ধাচারণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া তার নারীগঠিত স্ক্যান্ডালও রয়েছে। এ কারণে ওই নারীকে তালাক দিয়েছেন তার স্বামী। এই স্ক্যান্ডালের বিচারও করে দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট।
মধ্যনগর ১নং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, যারা অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসা করেছে, নির্বাচনে ডোনেশন দিয়েছেন তাদের বাদ দিয়ে দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করলে ভালো হতো। কিন্তু সুনামগঞ্জ-১ আসনে আমরা হতাশ হয়েছি। আশা করি, চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় তৃণমূলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকে মূল্যায়ন করা হবে।
ধর্মপাশা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ওবায়দুল মজুমদার বলেন, দলের ত্যাগী, কর্মীবান্ধব ও নির্যাতিত নেতা কামরুজ্জামান কামরুল। তিনি মনোনয়ন পেলে দলের ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ ও আদর্শিক নেতাকর্মীরা উদ্বুদ্ধ হতেন। তৃণমূল উচ্ছ্বসিত হতো। কিন্তু তার বদলে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাবশালীদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।
এ বিষয়ে আনিসুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে বিস্তারিত জানতে চেয়ে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি।