ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টার একই দিনে নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা নিয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত যেখানে এ ঘোষণার সমালোচনা করে একে সংকটজনক বলছেন, সেখানে ১২ দলীয় জোট এটিকে স্বাগত জানিয়ে একটি ‘সময়োপযোগী’ সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের স্থায়ী কমিটির বা নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে।
জুলাই সনদ লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং উচ্চকক্ষ নিয়ে দ্বিমত বিএনপির
একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণায় সংকট তৈরি হয়েছে: জামায়াতপ্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে স্বাগত জানিয়েছে ১২ দলীয় জোটের নেতারা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ঘোষণা করেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার,(১৩ নভেম্বর ২০২৫) দুপুর আড়াইটায় প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতিও জাতিকে জানান।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, নতুন সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধনের জন্য উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে। তিনি আরও জানান, জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের প্রশ্নে চারটি প্রধান বিষয় থাকবে, যার ওপর ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে তাদের মতামত জানাবেন। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেন।
বিএনপির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া: ‘জুলাই সনদ লঙ্ঘন’ এবং উচ্চকক্ষ নিয়ে দ্বিমত
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজের সই করা জুলাই জাতীয় সনদ লঙ্ঘন করেছেন। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধান উপদেষ্টা নিজে যে সনদে স্বাক্ষর করেছেন, তার ভাষণের মাধ্যমে তিনি সেটা লঙ্ঘন করেছেন। যদিও এই বিএনপি নেতা কিভাবে সনদ লঙ্ঘন হয়েছে, তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
সালাহউদ্দিন আহমদ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে ‘নোট অব ডিসেন্টের’ মাধ্যমে মীমাংসিত হয়েছে এবং এটি নতুন করে আরোপ করার কোনো সুযোগ নেই। ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ নামে কোনো বিষয় জাতীয় সংসদের কোনো পর্যায়ে গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিষয় ছিল না এবং এটি সম্পূর্ণ নতুন ধারণা।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা ডাকা হয়েছে, এবং দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিক্রিয়া: একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট সংকট তৈরি করবে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণ হয়নি। জামায়াত এই ঘোষণাকে জনগণের অভিপ্রায় এবং গণদাবিকে উপেক্ষা করার শামিল বলে মনে করে।
মিয়া গোলাম পরওয়ারের মতে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণায় একটি সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, জামায়াতসহ আটটি সমমনা দল দাবি করে আসছে গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে করতে হবে, তাহলে এর আইনি ভিত্তি দৃঢ় হবে এবং পরবর্তীতে আদালতে আইনি ভিত্তি নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। তিনি মনে করেন, সেই সংকট এখন রয়েই গেল।
জামায়াতের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কারসহ অন্য সংস্কার বিষয়ে যে ৪৮টি প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতিকে জানাতে হবে। একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে, কোনো কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার কারণে জাতীয় নির্বাচনের ভোট বন্ধ হয়ে গেলে গণভোটের কি হবে, তার কোনো জবাব নেই। ভোটারদের গণভোটের বিষয়ে স্টাডি করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে বিস্তারিত ওয়েবসাইটে দিতে হবে। সেই সুযোগ না দিয়ে দুটি ভোট একসঙ্গে দেয়ার ঘোষণায় সংকট তৈরি হলো।
মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, চলমান ও ঘোষিত আট দলীয় কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ পর্যালোচনার জন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ বৈঠক ডেকেছে বলেও জানান তিনি। ১৬ নভেম্বর দলগুলোর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
১২ দলীয় জোটের প্রতিক্রিয়া: সময়োপযোগী ও বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ
১২ দলীয় জোটের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজন করার ঘোষণাটি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ।
তারা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গণভোট এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছিল, তা কেটে গেছে। জোটের নেতারা আরও আশা প্রকাশ করেন যে, দেশের সব রাজনৈতিক দল এই ঘোষণার পর আর কোনো নতুন দাবি উত্থাপন না করে পুরোপুরি নির্বাচনি কর্মকা-ে নিয়োজিত হবে। তারা একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট করার সিদ্ধান্তকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
‘অপ্রয়োজনীয় এবং সংবিধানের বাইরের বিষয়’: বাম দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন, তা ‘অপ্রয়োজনীয় এবং সংবিধানের বাইরের বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলো।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ মত প্রকাশ করেছে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর না করা কয়েকটি দল।
প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন।
উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের স্বাক্ষরের পর বৃহস্পতিবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করা হয়। সেখানে গণভোট ও সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং ঐকমত্য কমিশনের প্রধান একই ব্যক্তি। সেটা একটা কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট। এই গণভোট, পিআর, উচ্চকক্ষ এগুলোতে আমরা ওখানে (ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়) বিরোধিতা করেছি। বাংলাদেশে উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয়। গরিবের দেশে এটা দরকার নাই। গরিবের ঘোড়া রোগের মতো ব্যাপার হয়।
এ বিষয়ে সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘এখন আমরা বলব যে সামনে যে নির্বাচন আছে, সাধারণ নির্বাচন, সে নির্বাচনটা দ্রুত সমাপ্ত করেন। গণভোট সম্পর্কে তো আমরা আগেই বলছি, এটা সংবিধানে নাই। এর কোনো দরকার নাই। এটা নিয়ে আলোচনা করার কিছু নেই।
রাষ্ট্রপতি কীভাবে এই আদেশ জারি করলেন- এমন প্রশ্ন তুলে বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, রাষ্ট্রপতি যে স্বাক্ষর করলো, আদেশটা জারি করলো, এটা কোন ক্ষমতা বলে? এই অধিকার তো তার নাই। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তো এই ধরনের কোনো আদেশ জারি করতে পারে না। অধ্যাদেশ জারি করতে পারে না। এটাও তো বিদ্যমান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলো।
মাসুদ রানা আরও বলেন, জনগণ যদি তার মতামত দিতে চায়, আমি যদি ধরি জনগণই সর্বোচ্চ মত প্রকাশ করতে পারে এবং সেটাই নির্ধারিত হবে। কিন্তু যদি একটা ব্যাপারে দ্বিমত থাকে, তখন দেখা যাবে যে সে চাইলেও সেখানে হাত দিতে পারবে না। তাকে ‘না’ দিতে হবে। আর ভিন্নমত রাখলে সংস্কার কার্যক্রম সেটাই পুরোটা ব্যাহত হবে। এটা একটা অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হয় না।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রধান উপদেষ্টার একই দিনে নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা নিয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত যেখানে এ ঘোষণার সমালোচনা করে একে সংকটজনক বলছেন, সেখানে ১২ দলীয় জোট এটিকে স্বাগত জানিয়ে একটি ‘সময়োপযোগী’ সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের স্থায়ী কমিটির বা নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে।
জুলাই সনদ লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং উচ্চকক্ষ নিয়ে দ্বিমত বিএনপির
একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণায় সংকট তৈরি হয়েছে: জামায়াতপ্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে স্বাগত জানিয়েছে ১২ দলীয় জোটের নেতারা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ঘোষণা করেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার,(১৩ নভেম্বর ২০২৫) দুপুর আড়াইটায় প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতিও জাতিকে জানান।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, নতুন সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধনের জন্য উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে। তিনি আরও জানান, জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের প্রশ্নে চারটি প্রধান বিষয় থাকবে, যার ওপর ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে তাদের মতামত জানাবেন। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেন।
বিএনপির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া: ‘জুলাই সনদ লঙ্ঘন’ এবং উচ্চকক্ষ নিয়ে দ্বিমত
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজের সই করা জুলাই জাতীয় সনদ লঙ্ঘন করেছেন। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধান উপদেষ্টা নিজে যে সনদে স্বাক্ষর করেছেন, তার ভাষণের মাধ্যমে তিনি সেটা লঙ্ঘন করেছেন। যদিও এই বিএনপি নেতা কিভাবে সনদ লঙ্ঘন হয়েছে, তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
সালাহউদ্দিন আহমদ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে ‘নোট অব ডিসেন্টের’ মাধ্যমে মীমাংসিত হয়েছে এবং এটি নতুন করে আরোপ করার কোনো সুযোগ নেই। ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ নামে কোনো বিষয় জাতীয় সংসদের কোনো পর্যায়ে গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিষয় ছিল না এবং এটি সম্পূর্ণ নতুন ধারণা।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা ডাকা হয়েছে, এবং দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিক্রিয়া: একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট সংকট তৈরি করবে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণ হয়নি। জামায়াত এই ঘোষণাকে জনগণের অভিপ্রায় এবং গণদাবিকে উপেক্ষা করার শামিল বলে মনে করে।
মিয়া গোলাম পরওয়ারের মতে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণায় একটি সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, জামায়াতসহ আটটি সমমনা দল দাবি করে আসছে গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে করতে হবে, তাহলে এর আইনি ভিত্তি দৃঢ় হবে এবং পরবর্তীতে আদালতে আইনি ভিত্তি নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। তিনি মনে করেন, সেই সংকট এখন রয়েই গেল।
জামায়াতের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কারসহ অন্য সংস্কার বিষয়ে যে ৪৮টি প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতিকে জানাতে হবে। একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে, কোনো কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার কারণে জাতীয় নির্বাচনের ভোট বন্ধ হয়ে গেলে গণভোটের কি হবে, তার কোনো জবাব নেই। ভোটারদের গণভোটের বিষয়ে স্টাডি করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে বিস্তারিত ওয়েবসাইটে দিতে হবে। সেই সুযোগ না দিয়ে দুটি ভোট একসঙ্গে দেয়ার ঘোষণায় সংকট তৈরি হলো।
মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, চলমান ও ঘোষিত আট দলীয় কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ পর্যালোচনার জন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ বৈঠক ডেকেছে বলেও জানান তিনি। ১৬ নভেম্বর দলগুলোর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
১২ দলীয় জোটের প্রতিক্রিয়া: সময়োপযোগী ও বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ
১২ দলীয় জোটের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজন করার ঘোষণাটি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ।
তারা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গণভোট এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছিল, তা কেটে গেছে। জোটের নেতারা আরও আশা প্রকাশ করেন যে, দেশের সব রাজনৈতিক দল এই ঘোষণার পর আর কোনো নতুন দাবি উত্থাপন না করে পুরোপুরি নির্বাচনি কর্মকা-ে নিয়োজিত হবে। তারা একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট করার সিদ্ধান্তকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
‘অপ্রয়োজনীয় এবং সংবিধানের বাইরের বিষয়’: বাম দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন, তা ‘অপ্রয়োজনীয় এবং সংবিধানের বাইরের বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলো।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ মত প্রকাশ করেছে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর না করা কয়েকটি দল।
প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন।
উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের স্বাক্ষরের পর বৃহস্পতিবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করা হয়। সেখানে গণভোট ও সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং ঐকমত্য কমিশনের প্রধান একই ব্যক্তি। সেটা একটা কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট। এই গণভোট, পিআর, উচ্চকক্ষ এগুলোতে আমরা ওখানে (ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়) বিরোধিতা করেছি। বাংলাদেশে উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয়। গরিবের দেশে এটা দরকার নাই। গরিবের ঘোড়া রোগের মতো ব্যাপার হয়।
এ বিষয়ে সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘এখন আমরা বলব যে সামনে যে নির্বাচন আছে, সাধারণ নির্বাচন, সে নির্বাচনটা দ্রুত সমাপ্ত করেন। গণভোট সম্পর্কে তো আমরা আগেই বলছি, এটা সংবিধানে নাই। এর কোনো দরকার নাই। এটা নিয়ে আলোচনা করার কিছু নেই।
রাষ্ট্রপতি কীভাবে এই আদেশ জারি করলেন- এমন প্রশ্ন তুলে বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, রাষ্ট্রপতি যে স্বাক্ষর করলো, আদেশটা জারি করলো, এটা কোন ক্ষমতা বলে? এই অধিকার তো তার নাই। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তো এই ধরনের কোনো আদেশ জারি করতে পারে না। অধ্যাদেশ জারি করতে পারে না। এটাও তো বিদ্যমান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলো।
মাসুদ রানা আরও বলেন, জনগণ যদি তার মতামত দিতে চায়, আমি যদি ধরি জনগণই সর্বোচ্চ মত প্রকাশ করতে পারে এবং সেটাই নির্ধারিত হবে। কিন্তু যদি একটা ব্যাপারে দ্বিমত থাকে, তখন দেখা যাবে যে সে চাইলেও সেখানে হাত দিতে পারবে না। তাকে ‘না’ দিতে হবে। আর ভিন্নমত রাখলে সংস্কার কার্যক্রম সেটাই পুরোটা ব্যাহত হবে। এটা একটা অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হয় না।