alt

মতামত » চিঠিপত্র

তরুণদের হীনমন্যতা ও মত প্রকাশে অনীহা

: শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

আমাদের সমাজে অনেক তরুণ-তরুণীকে দেখা যায়, যারা যুক্তিসম্মত হলেও নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে দ্বিধাগ্রস্ত। তারা অন্যের মতকে গ্রহণ করে, যদিও সেটি তাদের চিন্তা ও মূল্যবোধের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই প্রবণতা শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, বরং সমাজের বৃহত্তর কাঠামোতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু কেন এমন হয়? মনস্তত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের আলোকে এই প্রবণতার কারণ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এটি মূলত হীনম্মন্যতা, সামাজিক চাপ ও আত্মবিশ্বাসের অভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত।

মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, হীনম্মন্যতা মূলত একধরনের আত্ম-অবিশ্বাস, যেখানে ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের তুলনায় কম যোগ্য মনে করে। অ্যালফ্রেড অ্যাডলার তার বই মানুষের স্বভাব বোঝার উপায়-এ উল্লেখ করেছেন, হীনম্মন্যতার অনুভূতি জন্ম হয় শৈশব থেকেই, যখন শিশু অন্যদের তুলনায় নিজেকে দুর্বল মনে করে এবং সামাজিক প্রত্যাশার চাপে পড়ে আত্মবিশ্বাস হারায় (অ্যাডলার, ১৯২৭, মানুষের স্বভাব বোঝার উপায়)।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ক্যারল ডুয়েক তার গবেষণা মানসিকতা: সাফল্যের নতুন মনোবিজ্ঞান-এ দেখিয়েছেন, যে তরুণরা "স্থির মানসিকতা" নিয়ে বড় হয়, তারা ব্যর্থতাকে চূড়ান্ত পরিণতি মনে করে এবং আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে, যারা "উন্নয়নশীল মানসিকতা" গ্রহণ করে, তারা নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে (ডুয়েক, ২০০৬, মানসিকতা: সাফল্যের নতুন মনোবিজ্ঞান)।

এছাড়া, হীনম্মন্যতার অন্যতম প্রধান কারণ সামাজিক চাপ। আমাদের সমাজে গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, আদর্শগত একতা এবং সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংস্কৃতি বিদ্যমান। যদিও এটি সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে, তবে ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তার পরিসর সংকুচিত করে ফেলে। মিশেল ফুকো তার বই শৃঙ্খলা ও শাস্তি: কারাগারের জন্ম-এ দেখিয়েছেন, কীভাবে সামাজিক কাঠামো ব্যক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে (ফুকো, ১৯৭৫, শৃঙ্খলা ও শাস্তি: কারাগারের জন্ম)।

সামাজিক মনোবিজ্ঞানী সলোমন অ্যাশ তার বিখ্যাত গবেষণায় দেখিয়েছেন, কীভাবে সামাজিক চাপে পড়ে ব্যক্তি নিজের সঠিক মতামত বদলে ফেলে এবং ভুল হলেও অন্যদের সঙ্গে একমত হয়। তার গবেষণার ফলাফল প্রমাণ করে, অধিকাংশ মানুষ সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে নিজের প্রকৃত মতামত লুকিয়ে রাখে (অ্যাশ, ১৯৫১, গোষ্ঠীচাপ এবং সিদ্ধান্তের বিকৃতি)। তরুণদের ক্ষেত্রে পরিবার, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব ও সামাজিক মিডিয়া বড় ভূমিকা পালন করে।

আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিত্ব গঠনের চেয়ে পরীক্ষাভিত্তিক অর্জনের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করা ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা চর্চার সুযোগ কম থাকে। পাওলো ফ্রেইরে তার বই শোষিতের শিক্ষাব্যবস্থা-এ দেখিয়েছেন, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে শিক্ষার্থীদের নিঃসন্দেহে মেনে নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলে, যা তাদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের ক্ষমতাকে দুর্বল করে (ফ্রেইরে, ১৯৭০, শোষিতের শিক্ষাব্যবস্থা)।

বর্তমান ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তরুণদের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দ্বৈত ভূমিকা পালন করছে। একদিকে এটি মত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে এটি হীনম্মন্যতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। লিওন ফেস্টিঙ্গার তার সামাজিক তুলনার মনোবিজ্ঞান বইয়ে ব্যাখ্যা করেছেন, মানুষ যখন নিজের জীবনকে অন্যের কৃতিত্বের সঙ্গে তুলনা করে, তখন আত্মবিশ্বাস হারায় এবং নিজের চিন্তাকে গৌণ মনে করে (ফেস্টিঙ্গার, ১৯৫৪, সামাজিক তুলনার মনোবিজ্ঞান)।

বিশেষ করে, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে তরুণরা নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে চায়, কিন্তু নেতিবাচক মন্তব্য বা প্রত্যাখ্যানের ভয়ে তারা পিছিয়ে যায়। ক্যাস সানস্টেইন তার বই #প্রজাতন্ত্র: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভক্ত গণতন্ত্র-এ উল্লেখ করেছেন, সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে তরুণদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করছে এবং গোষ্ঠী চিন্তার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে (সানস্টেইন, ২০১৮, প্রজাতন্ত্র: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভক্ত গণতন্ত্র)।

এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে শিক্ষাব্যবস্থায় সমালোচনামূলক চিন্তার চর্চা বাড়াতে হবে। তরুণদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য বিতর্ক প্রতিযোগিতা, গ্রুপ ডিসকাশন এবং মুক্ত চিন্তার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা জরুরি (ডুয়েক, ২০০৬, মানসিকতা: সাফল্যের নতুন মনোবিজ্ঞান)। পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তরুণরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে (অ্যাডলার, ১৯২৭, মানুষের স্বভাব বোঝার উপায়)। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেতিবাচক তুলনার ফাঁদে না পড়ে নিজের আত্মমূল্যায়ন করাই আত্মবিশ্বাস অর্জনের অন্যতম উপায় (ফেস্টিঙ্গার, ১৯৫৪, সামাজিক তুলনার মনোবিজ্ঞান)।

একটি স্বাধীন ও মুক্তচিন্তার সমাজ গড়তে তরুণদের মত প্রকাশের সুযোগ বাড়াতে হবে। হীনম্মন্যতার শৃঙ্খল ভেঙে আত্মবিশ্বাসী তরুণদের উত্থানই পারে আমাদের ভবিষ্যৎকে আরও শক্তিশালী ও যুক্তিবাদী করে তুলতে।

মাহমিয়া আলম শান্তা

শিক্ষার্থী, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষির অবদান

শহরের পাখিরা যখন মরার প্রহর গুনে

ধর্মের নামে বর্বরতা

টেকসই শহরের একান্ত প্রয়োজন

সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি

সুন্দরবনের বাঘ ও জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : আর্শীবাদ নাকি অভিশাপ

সমুদ্রগবেষণায় পশ্চাৎপদতা মৎস্য খাতের ভবিষ্যৎকেই ঝুঁকিতে ফেলছে

কিশোর গ্যাং–সংস্কৃতি: সমাজের জন্য বাড়তে থাকা অশনি সংকেত

ডিগ্রি হাতে, চাকরি স্বপ্নে: শিক্ষিত বেকারদের মানসিক ক্ষয়

সরকারি কর্মচারীদের কর্মেই মুক্তি নাকি আন্দোলনে?

কর্মজীবী নারীর অদৃশ্য মানসিক বোঝা

নগর সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যের বিলুপ্তি

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আগাম সতর্কবার্তাই কি যথেষ্ট?

সুলতানপুরে করতোয়া নদীর তাণ্ডব: নদীভাঙনে মানুষের জীবন বিপন্ন

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সম্ভাবনা বিস্তৃত, অনিয়মের ছায়াও গভীর

গেন্ডারিয়ায় সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে অনিয়ম: জনদূর্ভোগ বৃদ্ধি

প্রবীণদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি

পলিভিনাইলের ব্যবহার প্রতিরোধ জরুরি

বৈধ সনদধারীদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি

টেকসই দুর্যোগ প্রস্তুতিতে জরুরি বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন

জলবায়ু পরিবর্তন ও নারী ও কিশোরীদের ঝুঁকি

মেধা হারাচ্ছে দেশ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : অযৌক্তিক ফি, সেশনজট ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলায় বিপর্যস্ত শিক্ষার্থী

সামাজিক মাধ্যমের ভুবনে জনতুষ্টিবাদের নতুন রূপ

ভেজাল খেজুরগুড় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা

প্লাস্টিক বর্জ্যে মাছের মৃত্যু: সমাধান কোথায়

খোলা ম্যানহোল: ঢাকার রাজপথে এক নীরব মরণফাঁদ

গণপরিবহন: প্রতিদিনের যন্ত্রণার শেষ কবে?

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ

সাইবার বুলিং ও ভার্চুয়াল অপরাধ: তরুণদের অদৃশ্য বিপদ

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরজীবনের চরম ভোগান্তি

রাবি মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার চাই

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

কক্সবাজার: উন্নয়নের পথে, বিপন্ন প্রকৃতি

tab

মতামত » চিঠিপত্র

তরুণদের হীনমন্যতা ও মত প্রকাশে অনীহা

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আমাদের সমাজে অনেক তরুণ-তরুণীকে দেখা যায়, যারা যুক্তিসম্মত হলেও নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে দ্বিধাগ্রস্ত। তারা অন্যের মতকে গ্রহণ করে, যদিও সেটি তাদের চিন্তা ও মূল্যবোধের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই প্রবণতা শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, বরং সমাজের বৃহত্তর কাঠামোতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু কেন এমন হয়? মনস্তত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের আলোকে এই প্রবণতার কারণ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এটি মূলত হীনম্মন্যতা, সামাজিক চাপ ও আত্মবিশ্বাসের অভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত।

মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, হীনম্মন্যতা মূলত একধরনের আত্ম-অবিশ্বাস, যেখানে ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের তুলনায় কম যোগ্য মনে করে। অ্যালফ্রেড অ্যাডলার তার বই মানুষের স্বভাব বোঝার উপায়-এ উল্লেখ করেছেন, হীনম্মন্যতার অনুভূতি জন্ম হয় শৈশব থেকেই, যখন শিশু অন্যদের তুলনায় নিজেকে দুর্বল মনে করে এবং সামাজিক প্রত্যাশার চাপে পড়ে আত্মবিশ্বাস হারায় (অ্যাডলার, ১৯২৭, মানুষের স্বভাব বোঝার উপায়)।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ক্যারল ডুয়েক তার গবেষণা মানসিকতা: সাফল্যের নতুন মনোবিজ্ঞান-এ দেখিয়েছেন, যে তরুণরা "স্থির মানসিকতা" নিয়ে বড় হয়, তারা ব্যর্থতাকে চূড়ান্ত পরিণতি মনে করে এবং আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে, যারা "উন্নয়নশীল মানসিকতা" গ্রহণ করে, তারা নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে (ডুয়েক, ২০০৬, মানসিকতা: সাফল্যের নতুন মনোবিজ্ঞান)।

এছাড়া, হীনম্মন্যতার অন্যতম প্রধান কারণ সামাজিক চাপ। আমাদের সমাজে গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, আদর্শগত একতা এবং সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংস্কৃতি বিদ্যমান। যদিও এটি সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে, তবে ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তার পরিসর সংকুচিত করে ফেলে। মিশেল ফুকো তার বই শৃঙ্খলা ও শাস্তি: কারাগারের জন্ম-এ দেখিয়েছেন, কীভাবে সামাজিক কাঠামো ব্যক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে (ফুকো, ১৯৭৫, শৃঙ্খলা ও শাস্তি: কারাগারের জন্ম)।

সামাজিক মনোবিজ্ঞানী সলোমন অ্যাশ তার বিখ্যাত গবেষণায় দেখিয়েছেন, কীভাবে সামাজিক চাপে পড়ে ব্যক্তি নিজের সঠিক মতামত বদলে ফেলে এবং ভুল হলেও অন্যদের সঙ্গে একমত হয়। তার গবেষণার ফলাফল প্রমাণ করে, অধিকাংশ মানুষ সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে নিজের প্রকৃত মতামত লুকিয়ে রাখে (অ্যাশ, ১৯৫১, গোষ্ঠীচাপ এবং সিদ্ধান্তের বিকৃতি)। তরুণদের ক্ষেত্রে পরিবার, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব ও সামাজিক মিডিয়া বড় ভূমিকা পালন করে।

আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিত্ব গঠনের চেয়ে পরীক্ষাভিত্তিক অর্জনের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করা ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা চর্চার সুযোগ কম থাকে। পাওলো ফ্রেইরে তার বই শোষিতের শিক্ষাব্যবস্থা-এ দেখিয়েছেন, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে শিক্ষার্থীদের নিঃসন্দেহে মেনে নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলে, যা তাদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের ক্ষমতাকে দুর্বল করে (ফ্রেইরে, ১৯৭০, শোষিতের শিক্ষাব্যবস্থা)।

বর্তমান ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তরুণদের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দ্বৈত ভূমিকা পালন করছে। একদিকে এটি মত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে এটি হীনম্মন্যতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। লিওন ফেস্টিঙ্গার তার সামাজিক তুলনার মনোবিজ্ঞান বইয়ে ব্যাখ্যা করেছেন, মানুষ যখন নিজের জীবনকে অন্যের কৃতিত্বের সঙ্গে তুলনা করে, তখন আত্মবিশ্বাস হারায় এবং নিজের চিন্তাকে গৌণ মনে করে (ফেস্টিঙ্গার, ১৯৫৪, সামাজিক তুলনার মনোবিজ্ঞান)।

বিশেষ করে, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে তরুণরা নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে চায়, কিন্তু নেতিবাচক মন্তব্য বা প্রত্যাখ্যানের ভয়ে তারা পিছিয়ে যায়। ক্যাস সানস্টেইন তার বই #প্রজাতন্ত্র: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভক্ত গণতন্ত্র-এ উল্লেখ করেছেন, সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে তরুণদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করছে এবং গোষ্ঠী চিন্তার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে (সানস্টেইন, ২০১৮, প্রজাতন্ত্র: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভক্ত গণতন্ত্র)।

এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে শিক্ষাব্যবস্থায় সমালোচনামূলক চিন্তার চর্চা বাড়াতে হবে। তরুণদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য বিতর্ক প্রতিযোগিতা, গ্রুপ ডিসকাশন এবং মুক্ত চিন্তার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা জরুরি (ডুয়েক, ২০০৬, মানসিকতা: সাফল্যের নতুন মনোবিজ্ঞান)। পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তরুণরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে (অ্যাডলার, ১৯২৭, মানুষের স্বভাব বোঝার উপায়)। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেতিবাচক তুলনার ফাঁদে না পড়ে নিজের আত্মমূল্যায়ন করাই আত্মবিশ্বাস অর্জনের অন্যতম উপায় (ফেস্টিঙ্গার, ১৯৫৪, সামাজিক তুলনার মনোবিজ্ঞান)।

একটি স্বাধীন ও মুক্তচিন্তার সমাজ গড়তে তরুণদের মত প্রকাশের সুযোগ বাড়াতে হবে। হীনম্মন্যতার শৃঙ্খল ভেঙে আত্মবিশ্বাসী তরুণদের উত্থানই পারে আমাদের ভবিষ্যৎকে আরও শক্তিশালী ও যুক্তিবাদী করে তুলতে।

মাহমিয়া আলম শান্তা

শিক্ষার্থী, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

back to top