মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শব্দদূষণ পরিবেশ দূষণেরও আরেকটি অন্যতম কারণ। বর্তমানে ঢাকা শহরের শব্দদূষণ যে পর্যায়ে অবস্থান করছে তা খুবই আশঙ্কাজনক। শব্দ দূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক। আর বিশেষ করে ঢাকা শহরে শব্দ দূষণের বহু উৎস রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্পকারখানা কোন ক্ষেত্রেই শব্দ দূষণ বিষয়ে যেসব নিয়ম রয়েছে তা মানা হচ্ছে না।
মানুষ সাধারণত ১৫ থেকে ২০ কিলোহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ শুনতে পায়। শব্দের তীব্রতা ডেসিবেল ইউনিটে পরিমাপ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণত ৬০ ডেসিবেল শব্দ একজন মানুষকে সাময়িকভাবে বধির করতে পারে এবং ১০০ ডেসিবেল শব্দ সম্পূর্ণ বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় রাত নটা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে; কিন্তু আদৌ কি আমরা তা অনুসরণ করছি।
রাস্তায় বিকট শব্দ তোলা বাইক চলছে অতিমাত্রায়। পথচলতি মানুষেরা আতঙ্কিত হচ্ছে। বাইকের মালিক শোরুম থেকে বাইক কিনে আনার পর আসল সাইলেন্সার খুলে বিকট শব্দ হবে এমন সাইলেন্সার লাগিয়ে নিচ্ছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সেই আওয়াজের নেশায় অনেকেই সাইলেন্সার কেটে ভিতর থেকে শব্দ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রটি বের করে নিচ্ছে। ফলে বাইক স্টার্ট করা মাত্র বিকট আওয়াজ হচ্ছে। এভাবেই শহরের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাইকগুলো। অন্যদিকে ট্রাকের হর্নেও নাকাল নগরবাসী। হাইড্রোলিক শব্দ (হর্ন) বুকে কাঁপুনি দিয়ে উঠে প্রায়শ মানুষের।
শব্দ দূষণের আইন থাকলেও এর যথাসাধ্য ব্যবহার কম। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারা ছুটছে। আইনের প্রতি কোন তোয়াক্কা নেই।
গবেষণার তথ্য জানাচ্ছে, শব্দ দূষণের কারণে শহর থেকে উপশহরে মানুষ বধিরতা, হার্ট অ্যাটাকসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। এতে মানুষের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তিন বছরের কম বয়সি কোনো শিশু যদি কাছাকাছি যদি ১০০ ডেসিবেল শব্দের হর্ন বাজে, তবে শিশুটি শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও হাসপাতালের কাছে হর্ন দেয়া বেআইনি হলেও হাসপাতালের চারপাশে উচ্চ শব্দের হর্ন বাজে । উচ্চ শব্দের শারীরিক অন্যান্য প্রভাবের মধ্যে রয়েছে- পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, রক্তনালীর সংকোচন, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি।
শব্দ দূষণ ঘুম নষ্ট করে। সঠিকভাবে এবং পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় এবং গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। একটু সচেতনতা অবলম্বন করলেই এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমরা যদি নিজেদের সম্পর্কে একটু সচেতন হই, তাহলে আমরা ভুক্তভোগী হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। এক্ষেত্রে অপ্রয়োজনে অস্বাভাবিকভাবে গাড়ি চালানোর সময় হর্ন বাজানো বন্ধ রাখতে হবে, হোন্ডার সাইলেন্সার কিংবা যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো বন্ধ রাখতে হবে, ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।
ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি জোরদার করলে, প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগ করলে শব্দদূষণ অনেকাংশে কমে আসবে। তাই পরিবেশ বিষয়ক সংস্থাগুলোকে এ ব্যাপারে প্রচুর প্রচারণা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
আরফাতুর রহমান
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩
শব্দদূষণ পরিবেশ দূষণেরও আরেকটি অন্যতম কারণ। বর্তমানে ঢাকা শহরের শব্দদূষণ যে পর্যায়ে অবস্থান করছে তা খুবই আশঙ্কাজনক। শব্দ দূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক। আর বিশেষ করে ঢাকা শহরে শব্দ দূষণের বহু উৎস রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্পকারখানা কোন ক্ষেত্রেই শব্দ দূষণ বিষয়ে যেসব নিয়ম রয়েছে তা মানা হচ্ছে না।
মানুষ সাধারণত ১৫ থেকে ২০ কিলোহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ শুনতে পায়। শব্দের তীব্রতা ডেসিবেল ইউনিটে পরিমাপ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণত ৬০ ডেসিবেল শব্দ একজন মানুষকে সাময়িকভাবে বধির করতে পারে এবং ১০০ ডেসিবেল শব্দ সম্পূর্ণ বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় রাত নটা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে; কিন্তু আদৌ কি আমরা তা অনুসরণ করছি।
রাস্তায় বিকট শব্দ তোলা বাইক চলছে অতিমাত্রায়। পথচলতি মানুষেরা আতঙ্কিত হচ্ছে। বাইকের মালিক শোরুম থেকে বাইক কিনে আনার পর আসল সাইলেন্সার খুলে বিকট শব্দ হবে এমন সাইলেন্সার লাগিয়ে নিচ্ছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সেই আওয়াজের নেশায় অনেকেই সাইলেন্সার কেটে ভিতর থেকে শব্দ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রটি বের করে নিচ্ছে। ফলে বাইক স্টার্ট করা মাত্র বিকট আওয়াজ হচ্ছে। এভাবেই শহরের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাইকগুলো। অন্যদিকে ট্রাকের হর্নেও নাকাল নগরবাসী। হাইড্রোলিক শব্দ (হর্ন) বুকে কাঁপুনি দিয়ে উঠে প্রায়শ মানুষের।
শব্দ দূষণের আইন থাকলেও এর যথাসাধ্য ব্যবহার কম। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারা ছুটছে। আইনের প্রতি কোন তোয়াক্কা নেই।
গবেষণার তথ্য জানাচ্ছে, শব্দ দূষণের কারণে শহর থেকে উপশহরে মানুষ বধিরতা, হার্ট অ্যাটাকসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। এতে মানুষের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তিন বছরের কম বয়সি কোনো শিশু যদি কাছাকাছি যদি ১০০ ডেসিবেল শব্দের হর্ন বাজে, তবে শিশুটি শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও হাসপাতালের কাছে হর্ন দেয়া বেআইনি হলেও হাসপাতালের চারপাশে উচ্চ শব্দের হর্ন বাজে । উচ্চ শব্দের শারীরিক অন্যান্য প্রভাবের মধ্যে রয়েছে- পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, রক্তনালীর সংকোচন, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি।
শব্দ দূষণ ঘুম নষ্ট করে। সঠিকভাবে এবং পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় এবং গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। একটু সচেতনতা অবলম্বন করলেই এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমরা যদি নিজেদের সম্পর্কে একটু সচেতন হই, তাহলে আমরা ভুক্তভোগী হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। এক্ষেত্রে অপ্রয়োজনে অস্বাভাবিকভাবে গাড়ি চালানোর সময় হর্ন বাজানো বন্ধ রাখতে হবে, হোন্ডার সাইলেন্সার কিংবা যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো বন্ধ রাখতে হবে, ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।
ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি জোরদার করলে, প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগ করলে শব্দদূষণ অনেকাংশে কমে আসবে। তাই পরিবেশ বিষয়ক সংস্থাগুলোকে এ ব্যাপারে প্রচুর প্রচারণা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
আরফাতুর রহমান