alt

উপ-সম্পাদকীয়

মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল

বাবুল রবিদাস

: শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
image

দলিত-বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত ব্রাত্যজন, অনগ্রসর ও অন্ত্যজ মানবজাতির দুঃখ-দুর্দশা এবং লাঞ্ছনা-গঞ্জনার বিরুদ্ধে যে কয়েকজন মহামানব জীবনভর সংগ্রাম করেছেন, তাদের মধ্যে মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল ছিলেন পথিকৃৎ।

২৯ জানুয়ারি ১৯০৪ সালে বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার অন্তর্গত মৈস্তারকান্দি গ্রামের এক নমঃশূদ্র কৃষকের ঘরে মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রামদয়াল ম-ল এবং মাতার নাম সন্ধ্যা দেবী।

মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল বাল্যকালে গ্রামের পাঠশালায় লেখাপড়া শেষ করে দূরের একটি স্কুল ‘বার্থী তারা ইনস্টিটিউশন’ এ ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯২৪ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে আই.এ. ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯২৬ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে আই.এ. পাশ করেন।

১৯২৬ সালেই গৌরনদী থানার খাগবাডড় গ্রামের প্রহ্লাদ চন্দ্র বাড়ৈর কন্যা কমলা দেবীর সঙ্গে উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে তার বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পরও তিনি লেখাপড়ার প্রতি বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। তাই মনোযোগ সহকারে বি.এ. ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯২৯ সালে ব্রজমোহন কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন। এরপর আইন বিষয়ে পড়াশোনার জন্য কলকাতা বার কাউন্সিল থেকে সনদপ্রাপ্ত হয়ে প্রথমে কলকাতায় শিক্ষানবিশ শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালে বরিশালের সদর কোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। এ সময় তিনি দলিত-বঞ্চিত, অন্ত্যজ জাতি, দরিদ্র কৃষক এবং ব্রাত্যজনদের বিনা খরচে মামলা পরিচালনা করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে তিনি দ্রুত খ্যাতি অর্জন করেন।

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন। আইনসভার সদস্য হিসেবে তিনি তফসিলি ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তি ও ছাত্রাবাসের আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন।

১৯৪০ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুরোধে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৪২ সালে ড. বি.আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে ‘সারা ভারত তফসিলি ফেডারেশন’ গঠিত হয় এবং ১৯৪৩ সালে এর বঙ্গীয় শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৪৬ সালে নির্বাচনের পর তিনি বাংলায় মুসলিম লীগের মন্ত্রিসভায় বিচারপূর্ত ও গৃহনির্মাণ দপ্তরের মন্ত্রী হন। তিনি ড. আম্বেদকরকে গণপরিষদে নির্বাচিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৪৭ সালের ৩ জুন ব্রিটিশ সরকার বাংলার এসেম্বলিতে ভোটাভুটির মাধ্যমে বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০ জুন ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম লীগ বাংলাভাগের বিপক্ষে ভোট দিলেও হিন্দুদের অধিকাংশ বাংলাভাগের পক্ষে ভোট দেয়। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বাংলাভাগের বিপক্ষে ছিল, তবুও উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ষড়যন্ত্রের ফলে বাংলা ভাগ করা হয়।

এ কারণে মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-লকে বাংলা ভাগের জন্য দায়ী করা যায় না। বাংলাভাগের জন্য যারা তাকে দায়ী করেন, তাদের প্রকৃত ইতিহাস জেনে নিতে হবে।

১৯৬৮ সালের ৫ অক্টোবর বনগাঁয় আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মাত্র ৬৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ

ধর্মভিত্তিক জোট কোন পথে

ছবি

বিদায় অগ্নিকন্যা

রিমান্ড সংস্কৃতি : আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে একটি মানবাধিকার পরিপ্রেক্ষিত

ছবি

ডেঙ্গুজ্বর : সচেতনতার বিকল্প নেই

ছবি

উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কেন জরুরি

নদীর প্রাণ শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক

ভবন নির্মাণ ও বিল্ডিং কোড

রম্যগদ্য : গণতন্ত্রের গলিতে গলিতে হিটলার

রাষ্ট্র সংস্কার ও আদিবাসী

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান ও অতীত-ইতিহাস

শিক্ষাকে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করার উপায়

দিবস যায় দিবস আসে, নিরাপদ হয় না সড়ক

‘ক্ষুদ্রতার মন্দিরেতে বসায়ে আপনারে আপন পায়ে না দিই যেন অর্ঘ্য ভারে ভারে’

একাকিত্ব : নিজেকে আবিষ্কার ও সৃজনশীলতা বিকাশের পথ

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য

বাঁশের বংশবৃদ্ধিতে অন্তরায় বাঁশকরুল সংগ্রহ

একতার অভাবে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে করণীয়

শিক্ষা খাতে দলীয় রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

কোন পথে জামায়াতের রাজনীতি?

শ্রমিকের উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা

ডিমের জারিজুরি

যোগ্য নেতৃত্ব সমাজ-সংগঠনকে এগিয়ে নেয়

ব্যক্তি স্বাধীনতার সংকট

কিল মারার গোঁসাই

ছবি

শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামে

বৈষম্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত প্রকৌশল শিক্ষার আরেক জগৎ

প্রশাসনিক সংস্কারে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কতটা প্রতিষ্ঠা পাবে?

বাংলার মৃৎশিল্প

প্রবারণা পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

খেলাপি ঋণের অপসংস্কৃতি

কথার কথা যত কথা

দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত হোক শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল

বাবুল রবিদাস

image

শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

দলিত-বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত ব্রাত্যজন, অনগ্রসর ও অন্ত্যজ মানবজাতির দুঃখ-দুর্দশা এবং লাঞ্ছনা-গঞ্জনার বিরুদ্ধে যে কয়েকজন মহামানব জীবনভর সংগ্রাম করেছেন, তাদের মধ্যে মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল ছিলেন পথিকৃৎ।

২৯ জানুয়ারি ১৯০৪ সালে বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার অন্তর্গত মৈস্তারকান্দি গ্রামের এক নমঃশূদ্র কৃষকের ঘরে মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রামদয়াল ম-ল এবং মাতার নাম সন্ধ্যা দেবী।

মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল বাল্যকালে গ্রামের পাঠশালায় লেখাপড়া শেষ করে দূরের একটি স্কুল ‘বার্থী তারা ইনস্টিটিউশন’ এ ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯২৪ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে আই.এ. ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯২৬ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে আই.এ. পাশ করেন।

১৯২৬ সালেই গৌরনদী থানার খাগবাডড় গ্রামের প্রহ্লাদ চন্দ্র বাড়ৈর কন্যা কমলা দেবীর সঙ্গে উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে তার বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পরও তিনি লেখাপড়ার প্রতি বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। তাই মনোযোগ সহকারে বি.এ. ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯২৯ সালে ব্রজমোহন কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন। এরপর আইন বিষয়ে পড়াশোনার জন্য কলকাতা বার কাউন্সিল থেকে সনদপ্রাপ্ত হয়ে প্রথমে কলকাতায় শিক্ষানবিশ শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালে বরিশালের সদর কোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। এ সময় তিনি দলিত-বঞ্চিত, অন্ত্যজ জাতি, দরিদ্র কৃষক এবং ব্রাত্যজনদের বিনা খরচে মামলা পরিচালনা করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে তিনি দ্রুত খ্যাতি অর্জন করেন।

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন। আইনসভার সদস্য হিসেবে তিনি তফসিলি ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তি ও ছাত্রাবাসের আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন।

১৯৪০ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুরোধে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৪২ সালে ড. বি.আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে ‘সারা ভারত তফসিলি ফেডারেশন’ গঠিত হয় এবং ১৯৪৩ সালে এর বঙ্গীয় শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৪৬ সালে নির্বাচনের পর তিনি বাংলায় মুসলিম লীগের মন্ত্রিসভায় বিচারপূর্ত ও গৃহনির্মাণ দপ্তরের মন্ত্রী হন। তিনি ড. আম্বেদকরকে গণপরিষদে নির্বাচিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৪৭ সালের ৩ জুন ব্রিটিশ সরকার বাংলার এসেম্বলিতে ভোটাভুটির মাধ্যমে বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০ জুন ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম লীগ বাংলাভাগের বিপক্ষে ভোট দিলেও হিন্দুদের অধিকাংশ বাংলাভাগের পক্ষে ভোট দেয়। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বাংলাভাগের বিপক্ষে ছিল, তবুও উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ষড়যন্ত্রের ফলে বাংলা ভাগ করা হয়।

এ কারণে মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-লকে বাংলা ভাগের জন্য দায়ী করা যায় না। বাংলাভাগের জন্য যারা তাকে দায়ী করেন, তাদের প্রকৃত ইতিহাস জেনে নিতে হবে।

১৯৬৮ সালের ৫ অক্টোবর বনগাঁয় আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মাত্র ৬৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

back to top