alt

সাময়িকী

হান কাঙের ৫টি কবিতা

অনুবাদ: বিনয় বর্মন

: বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

আলোর মিশকালো বাড়ি
সেদিন উই-ডঙে তুষারবৃষ্টি হচ্ছিল

আমার শরীর, আত্মার সঙ্গী

প্রতিটি অশ্রুকণা পতনের সঙ্গে কেঁপে উঠছিল।

পথে আসো।

তুমি কি দ্বিধান্বিত?

কী স্বপ্ন দেখছো, ওভাবে ভেসে ভেসে?

দ্বিতল বাড়িগুলো ফুলের মতো আলোকিত,

তার নিচে আমি যন্ত্রণা অনুভব করে

নির্মল আনন্দলোকের দিকে

বোকার মতো বাড়িয়ে দিলাম হাত।

পথে আসো।

কী স্বপ্ন দেখছো? হেঁটে চলো।

আমি হেঁটে চললাম, সড়কবাতিতে জমে ওঠা স্মৃতির দিকে।

ওপরের দিকে তাকালাম,

লাইটশেডের নিচে একটি মিশকালো বাড়ি,

আলোর মিশকালো বাড়ি।

আকাশ আঁধারে ঢাকা,

সেই আঁধারে এক ঝাঁক পাখি উড় গেলো

তাদের শরীরের ভার ঝেড়ে ফেলে দিয়ে।

ওভাবে ওড়ার জন্য আমাকে আর কতবার মরতে হবে?

কেউ ধরবে না আমার হাত।

কোন স্বপ্ন এত সুন্দর?

কোন স্মৃতি এত উজ্জ্বল?

মায়ের আঙুলের ডগার মতো, তুষারবৃষ্টি

আমার চোখের পাতা কাঁপিয়ে

বরফায়িত গালে আছড়ে পড়ছিল বারবার।

তাড়াতাড়ি, পথে আসো।

ঊষাসঙ্গীত
বসন্তবাতাসের ফাঁকে ক্রমবর্ধমান অন্ধকারে এক অর্ধমৃত আত্মার প্রতিচ্ছবি আবছা ফুটে ওঠে। আমার ঠোঁট কুঞ্চিত। নিশ্বাস নিশ্বাসই, আত্মা আত্মাই। আমার ঠোঁট কুঞ্চিত। কতটা প্রসারিত সে? কতটা ভেতরে প্রবাহিত। আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। ফাঁক বুজে গেলে আমাকে আবার ঠোঁট খুলতে হবে। জিহ্বা গলে গেলে আমাকে আবার ঠোঁট খুলতে হবে। কখনো নয়, কখনোই নয়।

হৃদয় নামক বস্তু
আমি একটি মুছে যাওয়া রেখা পরীক্ষা করি।

আবছা রেখার অবশিষ্ট, যেখানে দুটো দাগ বেঁকে গেছে। ফাঁকা জায়গাটুকু আগেই শূন্য ছিল, মোছার আগে থেকেই।

এরকম জায়গায় আমি পথ করে নিতে চাই, কাঁধ ঝাঁকিয়ে, কোমর বাঁকিয়ে, হাঁটু নাড়িয়ে, দু’পায়ে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে।

হৃদয় দুর্বল হলে তা আর অন্য কিছু দুর্বল হতে দেয় না

অস্পষ্ট একটি ছুরি আমার ঠোঁট ফালাফালা করে ফেলে।

আরো অন্ধকার খুঁজি, যখন জিহ্বা আমার গুটিসুটি মেরে থাকে।

মার্ক রথকো এবং আমি-ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যু
অনায়াসেই বলা যায়, মার্ক রথকো এবং আমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।

তার জন্ম হয়েছিল ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৩ সালে এবং মৃত্যু ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০ সালে। আমার জন্ম ১৯৭০-এর ২৭ নভেম্বর এবং এখনো বেঁচে আছি। মাঝে মাঝে কেবল ভাবি, তার মৃত্যু থেকে আমার জন্মের দূরত্ব নয় মাস।

সেদিন সকালে স্টুডিওর লাগোয়া রান্নাঘরে তার দুই হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। আমার পিতামাতা দেহাংশগুলো একত্র করলেন। দেহের ভেতর নিশ্চয় তখনো ছিল প্রাণের স্পন্দন। শীতের শেষে নিউ ইয়র্কের গোরস্থানে তার দেহ হয়তো তখনো পচেনি।

এটা বিস্ময়কর নয়, এটা একাকিত্বের বিষয়। আমি হয়তো ছিলাম বিন্দু আকারে, যখন হৃদস্পন্দন শুরু হয়নি। মায়ের গোলাপি গর্ভে, তখন না জানি ভাষা, না বুঝি আলো কিংবা অশ্রু কী জিনিস।

জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে, ব্যবধান-ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে সহ্য করা, শুধু সহ্য করা, অবশেষে সুস্থ হয়ে ওঠা।

অর্ধগলিত শীতল মাটিতে তার হাত হয়তো তখনো পচেনি।

হুইলচেয়ার নৃত্য
কান্না এখন অভ্যাস হয়ে গেছে, কিন্তু তা আমাকে গিলে ফেলেনি।

দুঃস্বপ্নও এখন অভ্যাসে পরিণত। এমনকি সমস্ত রক্তনালী জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খাক করা বিনিদ্র রাতও আমাকে আর গিলে ফেলতে পারে না।

দেখো, আমি নাচছি। জ্বলন্ত হুইলচেয়ারে বসে আমি কাঁধ ঝাঁকাচ্ছি, তীব্রভাবে।

আমি যাদু জানি না, জানা নেই কোনো গোপন তরিকা। কেবল এটুকুই যে কোনো কিছু আমাকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবে না।

কোনো নরক, অভিশাপ বা সমাধি নয়, কিংবা নয় কদর্য হিম শিলাবৃষ্টি, ছুরিবৎ শিলা যা আমাকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলতে পারে।

দেখো, আমি গান গাইছি। আহা, হুইলচেয়ার তীব্রভাবে আগুন ছড়াচ্ছে, হুইলচেয়ার নৃত্য।

ছবি

আহমদ ছফা ও অলাতচক্র

সাময়িকী কবিতা

ছবি

দ্য হোয়াইট বুক

ছবি

আমার রমণীর ফল

ছবি

ছোট ছোট ঘটনাই আমার অনুপ্রেরণা-হান কাং

ছবি

হান কাংয়ের প্রগাঢ় কাব্যিক গদ্য

ছবি

নার্গিস-উদ্যানে নজরুল তর্ক

ছবি

শহীদ কাদরীর কবি হয়ে ওঠা

ছবি

মাথার ওপর ছাতা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

অমিয়ভূষণ : ধ্রুপদীয়া আর স্ববিরোধের সমন্বয়

ছবি

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র স্বাতন্ত্র্য ও শ্রেষ্ঠত্ব

ছবি

মার্কেস ও আমার বিস্ময়

ছবি

অস্থির পৃথিবীর মায়াবী কবি

ছবি

সম্প্রীতির সাধক মরমী বাউল উকিল মুন্সী

ছবি

‘দিবারাত্রির কাব্য’ এবং ‘দ্য আউটসাইডার’ এক নিবিড় সাযুজ্য

ছবি

চুক্তি লিখন

ছবি

লিওপল্ড সেদর সেঙ্ঘর-এর কবিতা

ছবি

হিমু ও হুমায়ূন আহমেদ

শরতের পদাবলি

সাময়িকী কবিতা

মার্কিন চলচ্চিত্র জগতের প্রাণকেন্দ্র লস এঞ্জেলেস

ছবি

যুদ্ধের জানালায় দাঁড়িয়ে

ছবি

শব্দঘর : বিপ্লব, দ্রোহ ও গুচ্ছ কবিতা সংখ্যা

ছবি

সাহিত্যের দর্শনানুসন্ধান

ছবি

সালভাতর কোয়াসিমোদোর কবিতা

ছবি

টুটু

ছবি

অর্ধেক জীবন

ছবি

ক্যান্ডি, শ্রীলঙ্কায় বেড়ানোর আদর্শ জায়গা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

‘দূরের কার্নিশ’

ছবি

কবিতায় উড়ন্ত সারস

ছবি

সাহিত্যের দর্শনানুসন্ধান

ছবি

রবীন্দ্রসংগীত চর্চা, বাংলাদেশে-

শক্তিমান কবির কলমে গল্প

ছবি

শহীদুল হকের জীবন ও আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা

tab

সাময়িকী

হান কাঙের ৫টি কবিতা

অনুবাদ: বিনয় বর্মন

বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

আলোর মিশকালো বাড়ি
সেদিন উই-ডঙে তুষারবৃষ্টি হচ্ছিল

আমার শরীর, আত্মার সঙ্গী

প্রতিটি অশ্রুকণা পতনের সঙ্গে কেঁপে উঠছিল।

পথে আসো।

তুমি কি দ্বিধান্বিত?

কী স্বপ্ন দেখছো, ওভাবে ভেসে ভেসে?

দ্বিতল বাড়িগুলো ফুলের মতো আলোকিত,

তার নিচে আমি যন্ত্রণা অনুভব করে

নির্মল আনন্দলোকের দিকে

বোকার মতো বাড়িয়ে দিলাম হাত।

পথে আসো।

কী স্বপ্ন দেখছো? হেঁটে চলো।

আমি হেঁটে চললাম, সড়কবাতিতে জমে ওঠা স্মৃতির দিকে।

ওপরের দিকে তাকালাম,

লাইটশেডের নিচে একটি মিশকালো বাড়ি,

আলোর মিশকালো বাড়ি।

আকাশ আঁধারে ঢাকা,

সেই আঁধারে এক ঝাঁক পাখি উড় গেলো

তাদের শরীরের ভার ঝেড়ে ফেলে দিয়ে।

ওভাবে ওড়ার জন্য আমাকে আর কতবার মরতে হবে?

কেউ ধরবে না আমার হাত।

কোন স্বপ্ন এত সুন্দর?

কোন স্মৃতি এত উজ্জ্বল?

মায়ের আঙুলের ডগার মতো, তুষারবৃষ্টি

আমার চোখের পাতা কাঁপিয়ে

বরফায়িত গালে আছড়ে পড়ছিল বারবার।

তাড়াতাড়ি, পথে আসো।

ঊষাসঙ্গীত
বসন্তবাতাসের ফাঁকে ক্রমবর্ধমান অন্ধকারে এক অর্ধমৃত আত্মার প্রতিচ্ছবি আবছা ফুটে ওঠে। আমার ঠোঁট কুঞ্চিত। নিশ্বাস নিশ্বাসই, আত্মা আত্মাই। আমার ঠোঁট কুঞ্চিত। কতটা প্রসারিত সে? কতটা ভেতরে প্রবাহিত। আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। ফাঁক বুজে গেলে আমাকে আবার ঠোঁট খুলতে হবে। জিহ্বা গলে গেলে আমাকে আবার ঠোঁট খুলতে হবে। কখনো নয়, কখনোই নয়।

হৃদয় নামক বস্তু
আমি একটি মুছে যাওয়া রেখা পরীক্ষা করি।

আবছা রেখার অবশিষ্ট, যেখানে দুটো দাগ বেঁকে গেছে। ফাঁকা জায়গাটুকু আগেই শূন্য ছিল, মোছার আগে থেকেই।

এরকম জায়গায় আমি পথ করে নিতে চাই, কাঁধ ঝাঁকিয়ে, কোমর বাঁকিয়ে, হাঁটু নাড়িয়ে, দু’পায়ে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে।

হৃদয় দুর্বল হলে তা আর অন্য কিছু দুর্বল হতে দেয় না

অস্পষ্ট একটি ছুরি আমার ঠোঁট ফালাফালা করে ফেলে।

আরো অন্ধকার খুঁজি, যখন জিহ্বা আমার গুটিসুটি মেরে থাকে।

মার্ক রথকো এবং আমি-ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যু
অনায়াসেই বলা যায়, মার্ক রথকো এবং আমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।

তার জন্ম হয়েছিল ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৩ সালে এবং মৃত্যু ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০ সালে। আমার জন্ম ১৯৭০-এর ২৭ নভেম্বর এবং এখনো বেঁচে আছি। মাঝে মাঝে কেবল ভাবি, তার মৃত্যু থেকে আমার জন্মের দূরত্ব নয় মাস।

সেদিন সকালে স্টুডিওর লাগোয়া রান্নাঘরে তার দুই হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। আমার পিতামাতা দেহাংশগুলো একত্র করলেন। দেহের ভেতর নিশ্চয় তখনো ছিল প্রাণের স্পন্দন। শীতের শেষে নিউ ইয়র্কের গোরস্থানে তার দেহ হয়তো তখনো পচেনি।

এটা বিস্ময়কর নয়, এটা একাকিত্বের বিষয়। আমি হয়তো ছিলাম বিন্দু আকারে, যখন হৃদস্পন্দন শুরু হয়নি। মায়ের গোলাপি গর্ভে, তখন না জানি ভাষা, না বুঝি আলো কিংবা অশ্রু কী জিনিস।

জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে, ব্যবধান-ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে সহ্য করা, শুধু সহ্য করা, অবশেষে সুস্থ হয়ে ওঠা।

অর্ধগলিত শীতল মাটিতে তার হাত হয়তো তখনো পচেনি।

হুইলচেয়ার নৃত্য
কান্না এখন অভ্যাস হয়ে গেছে, কিন্তু তা আমাকে গিলে ফেলেনি।

দুঃস্বপ্নও এখন অভ্যাসে পরিণত। এমনকি সমস্ত রক্তনালী জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খাক করা বিনিদ্র রাতও আমাকে আর গিলে ফেলতে পারে না।

দেখো, আমি নাচছি। জ্বলন্ত হুইলচেয়ারে বসে আমি কাঁধ ঝাঁকাচ্ছি, তীব্রভাবে।

আমি যাদু জানি না, জানা নেই কোনো গোপন তরিকা। কেবল এটুকুই যে কোনো কিছু আমাকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবে না।

কোনো নরক, অভিশাপ বা সমাধি নয়, কিংবা নয় কদর্য হিম শিলাবৃষ্টি, ছুরিবৎ শিলা যা আমাকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলতে পারে।

দেখো, আমি গান গাইছি। আহা, হুইলচেয়ার তীব্রভাবে আগুন ছড়াচ্ছে, হুইলচেয়ার নৃত্য।

back to top