বেসরকারি কলেজের আয়া পদে চাকরিজীবী ফেরদৌসী বেগমের সব মিলিয়ে মাসে আয় ১২ হাজার ৪২০ টাকা। অথচ মাসে ওষুধের পেছনেই পাঁচ হাজারের ওপরে খরচ পড়ে যায় তার। বছর চারেক আগে তার শরীরে ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম্নবিত্ত পরিবারের এই চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরিজীবী এই নারীকে ইনসুলিন নিতে হয় নিয়মিত।
একই সঙ্গে শরীরের নানাবিধ রোগব্যধি দেখা দেওয়ায় এজন্য প্রতিদিন সাত ধরনের ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট খেতে হয়। এই নারীর নিজস্ব কোনো জমিজিরাত নেই। পৌর শহরের পশ্চিম কাঁটাবাড়ী গ্রামের পিতার বসতভিটার এক কোনে ঘর তুলে থাকেন। সংসারে দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে গেছে, তার সঙ্গে থাকে তার ছোট মেয়ে। ফেরদৌসী বেগমের ভাষ্য, অল্প বয়সেই এমন রোগ শরীরে ধরা পড়বে ভাবতেও পারেননি। স্বামী বেকার হওয়ায় তার (ফেরদৌসী বেগমের) আয় দিয়েই সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। এর ওপর ওষুধের খরচ। ৭ প্রকার ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলসহ ইনসুলিনের টাকা রাখার পর বাকি টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতে হয়। ওষুধ কিনতে হয় না, ফুলবাড়ীতে এখন এমন পরিবার খুঁজে পাওয়াই কঠিন। বছরের সবসময় ওষুধ খেতে হয় এমন পরিবারের সংখ্যাও কম নয়। এদের বেশিরভাগই ভুগছেন গ্যাস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে। বহু মানুষ আছেন, যারা টাকার অভাবে নিয়মিত ওষুধ কিনতে পারেন না। ওষুধ কিনতে গিয়ে সংসার চালানোও কঠিন হয়ে যায় ফেরদৌসীর মতো এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। উপজেলা পরিষদ সড়ক এলাকার বিদ্যুৎ মিস্ত্রি রকি প্রসাদের পায়ে ফোলা রোগ আছে। বছরের ৯ মাস ওষুধ খেতে হয় তাকে। রকি প্রসাদের ভাষ্য, মাসে গড়ে প্রায় দুই হাজার টাকার ওষুধ লাগে তার। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু কাজ করতে হলে তো দাঁড়িয়েই করতে হয়। কিছু করার নেই। সংসার চালাতে হলে কাজ তো করতেই হবে।
ফুলবাড়ী উপজেলার জনসংখ্যা ২ লাখ। যাদের বেশিরভাগই দরিদ্র। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। উপজেলার ৫০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে মাত্র একটি। এর বাইরে ২টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। জনবল কম থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। এদিকে জেলায় ডায়াবেটিস ও রক্তচাপসহ বিভিন্ন জটিল রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এদের মধ্যে রক্তচাপসহ বেশকিছু রোগের চিকিৎসা উপজেলা হাসপাতালে দেওয়া হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসা নিতে যেতে হয় দিনাজপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালে। এজন্য অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন সুষ্ঠু চিকিৎসা করাতে না পেরে অকালেই মৃত্যুবরণ করছেন। উপজেলা হাসপাতালে ডায়াবেটিস চিকিৎসা জন্য একটি ইউনিট খোলা গেলে গরিব লোকজন চিকিৎসা সুবিধা পেতেন। ফুলবাড়ী শহরের ননী গোপাল মোড় এলাকার নিমাই ফার্মেসির মালিক নিমাই চন্দ্র জানান, তার দোকান থেকে ওষুধ কিনতে আসা বেশিরভাগ মানুষই গরিব। নুন আনতে পানতা ফুরোয় অবস্থা। একটু সুস্থতার জন্য তারা জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। অনেকেই টাকার অভাবে ওষুধ না কিনেই ফিরে যান।
ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমানের মতে, গ্যাস, রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগ পুরোপুরি নিরাময় হওয়া খুবই কঠিন। এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। বেশিরভাগ মানুষ খাদ্য ঠিকভাবে চিবিয়ে খান না। এজন্য গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। ধীরে-সুস্থে খেলে বা ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চললে এর থেকে মুক্তি মিলতে পারে। বংশগত কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে এসবের ওষুধ লম্বা সময় ধরে সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধে ক্ষতি হতেই পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ দেন তিনি।
বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫
বেসরকারি কলেজের আয়া পদে চাকরিজীবী ফেরদৌসী বেগমের সব মিলিয়ে মাসে আয় ১২ হাজার ৪২০ টাকা। অথচ মাসে ওষুধের পেছনেই পাঁচ হাজারের ওপরে খরচ পড়ে যায় তার। বছর চারেক আগে তার শরীরে ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম্নবিত্ত পরিবারের এই চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরিজীবী এই নারীকে ইনসুলিন নিতে হয় নিয়মিত।
একই সঙ্গে শরীরের নানাবিধ রোগব্যধি দেখা দেওয়ায় এজন্য প্রতিদিন সাত ধরনের ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট খেতে হয়। এই নারীর নিজস্ব কোনো জমিজিরাত নেই। পৌর শহরের পশ্চিম কাঁটাবাড়ী গ্রামের পিতার বসতভিটার এক কোনে ঘর তুলে থাকেন। সংসারে দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে গেছে, তার সঙ্গে থাকে তার ছোট মেয়ে। ফেরদৌসী বেগমের ভাষ্য, অল্প বয়সেই এমন রোগ শরীরে ধরা পড়বে ভাবতেও পারেননি। স্বামী বেকার হওয়ায় তার (ফেরদৌসী বেগমের) আয় দিয়েই সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। এর ওপর ওষুধের খরচ। ৭ প্রকার ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলসহ ইনসুলিনের টাকা রাখার পর বাকি টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতে হয়। ওষুধ কিনতে হয় না, ফুলবাড়ীতে এখন এমন পরিবার খুঁজে পাওয়াই কঠিন। বছরের সবসময় ওষুধ খেতে হয় এমন পরিবারের সংখ্যাও কম নয়। এদের বেশিরভাগই ভুগছেন গ্যাস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে। বহু মানুষ আছেন, যারা টাকার অভাবে নিয়মিত ওষুধ কিনতে পারেন না। ওষুধ কিনতে গিয়ে সংসার চালানোও কঠিন হয়ে যায় ফেরদৌসীর মতো এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। উপজেলা পরিষদ সড়ক এলাকার বিদ্যুৎ মিস্ত্রি রকি প্রসাদের পায়ে ফোলা রোগ আছে। বছরের ৯ মাস ওষুধ খেতে হয় তাকে। রকি প্রসাদের ভাষ্য, মাসে গড়ে প্রায় দুই হাজার টাকার ওষুধ লাগে তার। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু কাজ করতে হলে তো দাঁড়িয়েই করতে হয়। কিছু করার নেই। সংসার চালাতে হলে কাজ তো করতেই হবে।
ফুলবাড়ী উপজেলার জনসংখ্যা ২ লাখ। যাদের বেশিরভাগই দরিদ্র। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। উপজেলার ৫০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে মাত্র একটি। এর বাইরে ২টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। জনবল কম থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। এদিকে জেলায় ডায়াবেটিস ও রক্তচাপসহ বিভিন্ন জটিল রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এদের মধ্যে রক্তচাপসহ বেশকিছু রোগের চিকিৎসা উপজেলা হাসপাতালে দেওয়া হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসা নিতে যেতে হয় দিনাজপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালে। এজন্য অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন সুষ্ঠু চিকিৎসা করাতে না পেরে অকালেই মৃত্যুবরণ করছেন। উপজেলা হাসপাতালে ডায়াবেটিস চিকিৎসা জন্য একটি ইউনিট খোলা গেলে গরিব লোকজন চিকিৎসা সুবিধা পেতেন। ফুলবাড়ী শহরের ননী গোপাল মোড় এলাকার নিমাই ফার্মেসির মালিক নিমাই চন্দ্র জানান, তার দোকান থেকে ওষুধ কিনতে আসা বেশিরভাগ মানুষই গরিব। নুন আনতে পানতা ফুরোয় অবস্থা। একটু সুস্থতার জন্য তারা জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। অনেকেই টাকার অভাবে ওষুধ না কিনেই ফিরে যান।
ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমানের মতে, গ্যাস, রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগ পুরোপুরি নিরাময় হওয়া খুবই কঠিন। এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। বেশিরভাগ মানুষ খাদ্য ঠিকভাবে চিবিয়ে খান না। এজন্য গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। ধীরে-সুস্থে খেলে বা ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চললে এর থেকে মুক্তি মিলতে পারে। বংশগত কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে এসবের ওষুধ লম্বা সময় ধরে সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধে ক্ষতি হতেই পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ দেন তিনি।