alt

সারাদেশ

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুষ্টিয়া : বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আন্তবিভাগে রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত সোমবার বেলা ১১টায় মেডিসিন ও শিশু বিভাগে রোগী ভর্তির জন্য ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. রিজওয়ানুর রহমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আনোয়ারুল কবির, হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান এবং মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক আক্রামুজ্জামান মিন্টুসহ বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তাররা। তবে আংশিকভাবে ২টি বিভাগের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও, আপাতত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু হচ্ছে না। অন্যান্য বিভাগগুলো কবে চালু হতে পারে এবং রোগ নির্ণয় যন্ত্রগুলোর কার্যক্রম শুরু হবে কবে থেকে, সে ব্যাপারেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেনি। প্রাথমিকভাবে মেডিসিন বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ জন ও শিশু বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ জন রোগী ভর্তি করা হবে। বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সেবা প্রত্যাশীরা জানান, অনেক বছর ধরেই এই হাসপাতাল কার্যক্রমের নতুন নতুন দিন ধার্য হয় কিন্তু এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে সেবা প্রদান করা হচ্ছে না।

জানা গেছে, ২০১১ সালে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে (কুষ্টিয়া শহরে ম্যাটস ক্যাম্পাস) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, চারতলা করে দুটি হোস্টেল ভবন, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিন ও দোতলাবিশিষ্ট ডরমিটরি, মসজিদ এরইমধ্যে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানান্তর করা হয়। তবে মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু না হওয়ায় ক্যাম্পাস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল ক্লাস করেন। শিক্ষার্থীরা দুটি ভাড়া বাসে যাতায়াত করেন। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে বর্তমানে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী আছেন। গতবছরের ১০ জুলাই ও চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু না হওয়ায় সেখানকার শিক্ষার্থী এবং রোগীসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ ৬৮ জন চিকিৎসক রয়েছেন। নার্স রয়েছেন ৩৯ জন। এরমধ্যে হাসপাতালের নিয়োগকৃত ১৯ জন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ২০ জনকে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩৬ জন আনসার সদস্য রাখা হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও রাখা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত রোববার দুপুরে কুমারখালী উপজেলার বাখৈই গ্রামের বাসিন্দা রওশন আরা নামে এক নারীকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। এছাড়া শিশু ওয়ার্ডেও রোগী ভর্তি করা হয়। সব মিলিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ১৯ জন এবং শিশু ওয়ার্ডে ২২ জন রোগী ভর্তি করা হয়েছে। আপাতত হাসপাতালের এই ২টি ওয়ার্ডেই রোগী ভর্তি করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মেডিসিন বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ জন ও শিশু বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ জন রোগী ভর্তি করা হবে। হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, আপাতত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু হচ্ছে না। রোগী ভর্তি হতে হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে রেফার্ড বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে জরুরিভাবে অনুমতি বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকদের পরামর্শে আসা রোগীদের ভর্তি করানো হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট, কিছু ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে যদি কোনো মেডিসিন ও শিশু বিভাগের রোগীদের রেফার্ড করতে হয়, তাহলে তাদেরকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হবে।

গণপূর্ত কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর মৌজায় ২০ একর জমিতে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে ৫৩টি প্যাকেজে ৫২ জন ঠিকাদার কাজটি করতে থাকেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শেষ হয়নি। তখন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ থাকে। ২০১৮ সালে প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্মাণের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬১১ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়েও কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদারেরা।

দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮২ কোটি টাকা, যা প্রথমে ধরা ব্যয় থেকে ৪০৭ কোটি টাকা বেশি। ওই মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয়বারের মতো ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষ হয়। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সাততলা ভবনে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি ৮৮টি কেবিন, ২৩ শয্যার সিসিইউ, ২০ শয্যার আইসিইউ সেবা আছে। এ ছাড়া জরুরি সেবা দিতে আলাদা আরও ১৩০ শয্যার ব্যবস্থা আছে।

এদিকে হাসপাতালের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুনে অন্তত ৯০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও আসবাব কেনা হয়, যা বর্তমানে হাসপাতালের ভবনের ভেতরে পড়ে আছে। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে অত্যাধুনিক এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান, এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এবং অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি। অভিযোগ আছে, এই যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। বর্তমানে দুদক কেনা-কাটার কাগজপত্র নিয়ে তদন্ত করছে।

ছবি

ইলিয়াস আলীর সন্ধান কামনায় সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের দোয়া মাহফিল

ছবি

বিলাসপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের মুক্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

ছবি

মধুপুরে জৌলুস হারাচ্ছে মৃৎশিল্প

ছবি

কটিয়াদীর মাঠে মাঠে সবুজ ধানের শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

আশুলিয়ায় রাস্তার গর্তে লেগুনা, নিহত ২

কসবায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

ছবি

তিতাসে লতিকচু চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন কৃষক পলাশের

বিয়ানীবাজারে নিজস্ব ঠিকানায় বসতে অনীহা মুক্তিযোদ্ধাদের

ছবি

মুজিবনগর দিবস পালিত

১৬ বছর পর ফের চালু হচ্ছে রাজশাহীর দামকুড়া পশুহাট

সৌদিতে গ্যাস বিস্ফোরণে রামুর দুই যুবকের মৃত্যু স্বজনদের আহাজারি

মানিকগঞ্জে চিত্রশিল্পীর বাড়িতে আগুনের ঘটনায় আটক ৬

ছবি

নাজিরের ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল, সাময়িক বরখাস্ত

পবিপ্রবি শিক্ষার্থীর হাসপাতালে মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক ওএসডি, প্রত্যাহার দাবি

কাপাসিয়ায় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ

ছবি

গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ী পশুর হাটের ইজারা জটিলতা

ধানমন্ডিতে চাঁদাবাজির ভিডিওর ভাইরাল যুবক তিন দিনের রিমান্ডে

সাবেক এমপি ওমর ফারুক ও স্ত্রীর জমি জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

সালিশে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে তালাক, ভুক্তভোগী পেলেন মাত্র ৮০ হাজার

ছবি

রাজবাড়ীতে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা

শেরপুরে কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

করিমগঞ্জে বিদ্যালয় মাঠের মাটি ভরাট উদ্বোধন

যশোরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

পাঁচগাঁওয়ের ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হারিয়ে যাচ্ছে

নোয়াখালীতে চোলাই মদসহ যুবলীগ নেতাকে পুলিশে সোপর্দ

চীনা হাসপাতাল তিস্তার ব্যারেজ এলাকায় নির্মাণের দাবি

কালিয়াকৈরে প্রবাসীর ১৪ লাখ টাকা ছিনতাই

ছবি

বাংলাদেশি কাঠুরিয়াকে মায়ানমারে ধরে নেয়ার ঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে উত্তেজনা

সাটুরিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ আ’লীগের ৬ নেতা আটক

স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামীসহ দুজনের ফাঁসির আদেশ

মৎস্য ও পোল্ট্রি খামারের মাছ ধরায় বাধা, অভিযোগ চাঁদা দাবির

ছবি

চাঁদপুরের বিষ্ণুপুরে ধনাগোদা নদীর গ্রাসে রাস্তা বিলীন, দাঁড়িয়ে বেইলি ব্রিজ

কুলাউড়ায় ভূমি অফিসের বেদখলকৃত ২ কোটি টাকা মূল্যের জমি উদ্ধার

গাজীপুরে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু

ছবি

নেপালের তুষারপ্রবণ অন্নপূর্ণা-১ জয়ী বাবর আলী নিজভূমে

সিরাজগঞ্জ জেলা যুবদল সভাপতি-সম্পাদককে শোকজ

tab

সারাদেশ

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুষ্টিয়া

বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আন্তবিভাগে রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত সোমবার বেলা ১১টায় মেডিসিন ও শিশু বিভাগে রোগী ভর্তির জন্য ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. রিজওয়ানুর রহমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আনোয়ারুল কবির, হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান এবং মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক আক্রামুজ্জামান মিন্টুসহ বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তাররা। তবে আংশিকভাবে ২টি বিভাগের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও, আপাতত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু হচ্ছে না। অন্যান্য বিভাগগুলো কবে চালু হতে পারে এবং রোগ নির্ণয় যন্ত্রগুলোর কার্যক্রম শুরু হবে কবে থেকে, সে ব্যাপারেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেনি। প্রাথমিকভাবে মেডিসিন বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ জন ও শিশু বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ জন রোগী ভর্তি করা হবে। বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সেবা প্রত্যাশীরা জানান, অনেক বছর ধরেই এই হাসপাতাল কার্যক্রমের নতুন নতুন দিন ধার্য হয় কিন্তু এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে সেবা প্রদান করা হচ্ছে না।

জানা গেছে, ২০১১ সালে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে (কুষ্টিয়া শহরে ম্যাটস ক্যাম্পাস) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, চারতলা করে দুটি হোস্টেল ভবন, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিন ও দোতলাবিশিষ্ট ডরমিটরি, মসজিদ এরইমধ্যে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানান্তর করা হয়। তবে মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু না হওয়ায় ক্যাম্পাস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল ক্লাস করেন। শিক্ষার্থীরা দুটি ভাড়া বাসে যাতায়াত করেন। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে বর্তমানে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী আছেন। গতবছরের ১০ জুলাই ও চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু না হওয়ায় সেখানকার শিক্ষার্থী এবং রোগীসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ ৬৮ জন চিকিৎসক রয়েছেন। নার্স রয়েছেন ৩৯ জন। এরমধ্যে হাসপাতালের নিয়োগকৃত ১৯ জন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ২০ জনকে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩৬ জন আনসার সদস্য রাখা হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও রাখা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত রোববার দুপুরে কুমারখালী উপজেলার বাখৈই গ্রামের বাসিন্দা রওশন আরা নামে এক নারীকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। এছাড়া শিশু ওয়ার্ডেও রোগী ভর্তি করা হয়। সব মিলিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ১৯ জন এবং শিশু ওয়ার্ডে ২২ জন রোগী ভর্তি করা হয়েছে। আপাতত হাসপাতালের এই ২টি ওয়ার্ডেই রোগী ভর্তি করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মেডিসিন বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ জন ও শিশু বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ জন রোগী ভর্তি করা হবে। হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, আপাতত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু হচ্ছে না। রোগী ভর্তি হতে হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে রেফার্ড বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে জরুরিভাবে অনুমতি বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকদের পরামর্শে আসা রোগীদের ভর্তি করানো হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট, কিছু ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে যদি কোনো মেডিসিন ও শিশু বিভাগের রোগীদের রেফার্ড করতে হয়, তাহলে তাদেরকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হবে।

গণপূর্ত কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর মৌজায় ২০ একর জমিতে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে ৫৩টি প্যাকেজে ৫২ জন ঠিকাদার কাজটি করতে থাকেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শেষ হয়নি। তখন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ থাকে। ২০১৮ সালে প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্মাণের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬১১ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়েও কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদারেরা।

দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮২ কোটি টাকা, যা প্রথমে ধরা ব্যয় থেকে ৪০৭ কোটি টাকা বেশি। ওই মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয়বারের মতো ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষ হয়। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সাততলা ভবনে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি ৮৮টি কেবিন, ২৩ শয্যার সিসিইউ, ২০ শয্যার আইসিইউ সেবা আছে। এ ছাড়া জরুরি সেবা দিতে আলাদা আরও ১৩০ শয্যার ব্যবস্থা আছে।

এদিকে হাসপাতালের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুনে অন্তত ৯০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও আসবাব কেনা হয়, যা বর্তমানে হাসপাতালের ভবনের ভেতরে পড়ে আছে। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে অত্যাধুনিক এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান, এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এবং অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি। অভিযোগ আছে, এই যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। বর্তমানে দুদক কেনা-কাটার কাগজপত্র নিয়ে তদন্ত করছে।

back to top