alt

সারাদেশ

ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে কর্মমুখর পাবনার তাঁত পল্লী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা : বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

ঈদ উল ফিতর ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলের তাঁত প্রধান পল্লীগুলো কর্মমুখর হয়ে উঠেছে। তাঁত মালিক ও শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। দু’টি জেলায় তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের উন্নত আধুনিক রুচিশীল শাড়ি ও লুঙ্গি। শাড়ির উপরে বর্ণিল সুতা, বাক ও চুমকির কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া কাপড়ের উপর প্রিন্ট এবং রঙ তুলির আঁচড়ে হাতে করা হচ্ছে নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর নানা নকশা। আর এই নান্দনিক মনোমুগ্ধকর নানা নকশার তৈরি কাপড়ের চাহিদা ও সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশে-বিদেশে।

পাবনার ঈশ্বরদী ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, চৌহালীতে তৈরি তাঁতবস্ত্র ইতোমধ্যে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় তৈরি করছেন তাঁত কারখানার মালিকরা। কাপড়ের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করে চলেছেন তাঁত শ্রমিকরা। কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের কোলাহলে সরব হয়ে উঠেছে শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, চৌহালী, সুজানগর ও ঈশ্বরদী উপজেলার তাঁত পল্লী। কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের মতো বসে নেই নারীরাও। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নলীভরা, সুতাপারি করা, মাড়দেয়া ও রঙ-তুলিতে নকশা আঁকাসহ কাপড় বুননের কাজেও সহযোগিতা করছে ওই এলাকার নারী শ্রমিকরা। বাজারে কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে দাম। এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে রঙ-সুতাসহ তাঁত উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন তাঁত ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

পাবনার সুজানগর উপজেলার দোগাছির তাঁত কারখানা মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক মানের এবং সময় উপযোগী ডিজাইন নিয়ে আসায় দেশীয় তাঁত শিল্প প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তাঁতীরা এ শিল্পকে আর অলাভজনক পেশা হিসেবে দেখছেন না। মানন্ধাত্তার আমলের বুনোন শৈলী ও জ্যাকেট পাইড়ের শাড়ি বাদ দিয়ে ডিজাইনারদের পরামর্শ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ শিল্পকে সমৃদ্ধ করছেন। ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে তাঁতের কাপড় বিক্রিতে এখন আর মন্দাভাব নেই। এ পেশার সঙ্গে জড়িত সবাই এখন লাভের মুখ দেখছেন। সময় উপযোগী করে বুনোন শৈলী নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর নানা নকশা আর রঙের এর মাধুর্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে এ অঞ্চলের তাঁতের কাপড়।

এ অঞ্চলের তাঁত পলীগুলোতে উন্নতমানের সিল্ক জামদানি, সুতি কাতান, চোষা, সুতি জামদানি, বেনারসি, মিষ্টি পরী ও শেড শাড়ির পাশাপাশি মোটা শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস ও থান কাপড় তৈরি হচ্ছে। এসব শাড়ি ও লুঙ্গি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া ঢাকার বুটিক হাউজ কে-ক্রাফট তাদের পরিবেশকের মাধ্যমে কানাডা ও আমেরিকায় এবং নগরদোলা বুটিক হাউজ ইংল্যান্ডে বাজারজাত করছে। এদিকে ঈদের বাজারে সোনার বাংলা টেক্সটাইল, ডিসেন্ট, চাচকিয়া, ওয়েস্ট, রংধনুসহ ১২৫ ব্রান্ডের লুঙ্গি চাহিদা বেড়েছে। মান ভেদে প্রতি পিস লুঙ্গি ৩৮০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

শাহজাদপুর হাটে ভারতীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ভারতের পশ্চিমবাংলার উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর, হুগলি, বর্ধমান, নদীয়, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, জলপাইগুড়ি, পশ্চিম দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, কুচবিহার, হওড়া ও হুগলিসহ বিভিন্ন জেলার ছোট-বড় নামিদামি শপিংমল ও বিপণিবিতানগুলোতে বাংলাদেশে তৈরি বিভিন্ন ব্রান্ডের শাড়ি বিক্রি হয়। রমজানের ঈদ ও বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সেখানে বাংলাদেশি শাড়ির বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার তাঁত কারখানাগুলোতে তৈরি সিল্ক জামদানি, সুতি জামদানি, কাতান, সুতি কাতান, রাজশাহী সিল্ক, বেনারশি, চোষা, শেড, স্বর্ণলতা, কটন শাড়ি ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। আর এই নান্দনিক মনোমুগ্ধকর নানা নকশার তৈরি উন্নতমান, টেকসই, রুচিশীল শাড়ির দাম কম হওযায় পশ্চিমবাংলার মহিলাদের বেশি পছন্দ বাংলাদেশি শাড়ি।

পশ্চিমবাংলার শিলিগুড়ির আমদানিকারক সেলিম খাঁন জানান, রমজানের ঈদ ও পহেলা বৈশাখের বাজার ধরা জন্য পশ্চিমবাংলার আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে আতাইকুলা, শাহজাদপুর হাট, এনায়েতপুরহাট, করোটিয়া হাট, বাবুর হাট ও ডেমরা হাট থেকে শাড়ি কিনছেন। এছাড়া রাজশাহীর সিল্ক, গরদ, পাবনার ঈশ্বরদীর বেনারশি কাতান, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, শাহাজাদপুর, এনায়েতপুর, বেলকুচি, উল্লাপাড়ার স্বর্ণলতা, চোষা ও শেড শাড়ি, টাঙ্গাইল জেলার পাথরাইল, চন্ডি, নলসুধা, চিনাখোলা, দেওজান, নলুয়া, হিঙ্গানগর, এলাসিন, বাতুলি, বাজিদপুর, বল্লা, রামপুরের সুতি জামদানি, সিল্ক জামদানি ঢাকার মিরপুরের বেনারশি কাতান ও নারায়ণগঞ্জের ডেমরার জামদানি তাঁত কারখানাগুলোতে গিয়ে পছন্দমতো শাড়ি কিনে নিচ্ছেন।

তাঁতীদের নিজস্ব ডিজাইনে রেশম সুতা, খাদি, নয়েল, ডুপিয়ান ও এন্ডি সুতা ব্যবহার করে তাতে প্যালেস ও জরি মিশ্রিত করে শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। তরুণ-তরুণীদের কথা মাথায় রেখে উন্নতমানের জামদানি নকশা, সেড ও থান কাপড় তৈরি করছে। এ দিয়ে পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ তৈরি হচ্ছে। জামদানি থ্রি-পিস দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকা এবং চেক থ্রি-পিচ এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা দামে কিনছেন। পরে সেই কাপড় সড়ক পথে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জেলার শপিং মল, বিপণী বিতানগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

শাহজাদপুরের পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া জানান, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা রমজানের ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে শাহজাদপুর, এনায়েতপুর ও আতাইকুলা হাট থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের তাঁত শিল্প প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। ভারতের কলকাতার কাপড় ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র সেন জানান, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের তৈরি কাপড় ভারতের কলকাতা শুভরাজ, গঙ্গা রামপুর ও পাটনাসহ বড় শহরে বিক্রয় হচ্ছে। সে দেশের চেয়ে এদেশের কাপড়ের দাম তুলনামূলক কম, টেকশই এবং উন্নত মানের হওয়ায় তারা এখান থেকে কাপড় কিনছেন।

বিবিআনা, রঙ, কে-ক্রাফট ও নগরদোলাসহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় বুটিক প্রতিষ্ঠানের কাপড় এখন সিরাজগঞ্জ-পাবনা অঞ্চলে তৈরি হয়। বুটিক হাউজগুলোর নিজস্ব ডিজাইনে রেশম সুতা, খাদি, নয়েল, ডুপিয়ান ও এন্ডি সুতা ব্যবহার করে তাতে প্যালেস ও জরি মিশ্রত করে কাপড় তৈরি করা হচ্ছে। বুটিক হাউজের ওড়না থান কাপড় ও এন্ডি থান কাপড়ের ফ্রেবিক্স তৈরি করা হচ্ছে তাঁত পল্লীগুলোতে। এ দিয়ে নানা ধরনের পোশাক তৈরি করছে বুটিক হাউজগুলো। তরুণ-তরুণীদের কথা মাথায় রেখে তাঁতীরা উন্নতমানের জামদানি নকশা, সেড ও থান কাপড় তৈরি করছে। এ দিয়ে পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ আর ফতুয়া তৈরি হচ্ছে। জামদানি থ্রি-পিস আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা এবং চেক থ্রি-পিস এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শাহজাদপুরের চুনিয়াখালী পাড়ায় অবস্থিত মেসার্স মুকুল উইভিং ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী হাজী আবদুর রউফ (বুলবুল) জানান, মানন্ধাত্তার আমলের বুনন শৈলী বাদ দিয়ে ডিজাইনারদের পরামর্শ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় এ শিল্প সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। এবারের ঈদে বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে শতভাগ কটন শাড়ি। উন্নতমানের কটনে তৈরি এ শাড়ির দুই দিকেই সদর। দাম হাতের নাগালের মধ্যে। এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা। ইতোমধ্যে এই কটন শাড়ির ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। কারখানায় শাড়ি উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে। আর কয়েকদিন পর অর্ডারের শাড়ি তৈরির কাজ শুরু হবে বলে হাজী আবদুর রউফ জানিয়েছেন।

ছবি

মুন্সিগঞ্জে বহুতল ভবনে বিস্ফোরণে এক পরিবারের ৪ জন দগ্ধ

ছবি

সাদিক আবদুল্লাহর শেষ কর্মদিবসে নিয়োগ দেওয়া ১৩৪ কর্মচারী চাকরিচ্যুত

ছবি

শেয়ালের কামড়ে আহত ১৪, একজনের অবস্থা গুরুতর

ছবি

গরুর ‘র‌্যাম্প শো’: বগুড়ায় র‌্যাম্পে হাঁটানো হলো গরু

প্রেমের বিয়ে মেনে না নেয়ায় তরুণীর আত্মহত্যা

ছবি

চোরে নিয়ে গেল ইজিবাইক, দিশেহারা প্রতিবন্ধী কাসেম

ছবি

মোরেলগঞ্জে দম ফেলার সুযোগ নেই গাছিদের

নন্দীগ্রামে ৯ কোটির ৭৮ প্রকল্পের কাজ শুরু

যশোরে সোয়া ৪ লাখ শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর টার্গেট

নওগাঁয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মতবিনিময় সভা

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৭ জনের মৃত্যু

ছবি

বৃষ্টিতে পেঁয়াজ জমিতে পানি, দুঃশ্চিন্তায় চাষি

কৃষকদের মাঝে সার-বীজ বিতরণ

সরাইলমুক্ত দিবস পালিত

ছবি

দশমিনায় ২টি নদীতে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে যাত্রী পারাপার

ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীর আত্মহত্যা

আনোয়ারায় মেধাবৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

ছবি

দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটানোর দেশি-বিদেশি পরিকল্পনা রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৫ জন আটক

ছবি

হরতাল-অবরোধে যানবাহন পুড়েছে ২৬৩টি: ফায়ার সার্ভিস

ছবি

নোয়াখালীতে ২৫৭ ভরি সোনা লুট, পাহারাদারকে হত্যা

ছবি

টানা বৃষ্টি, কমবে তাপমাত্রা, বাড়বে শীত

যান্ত্রিক ত্রুটিতে সিইউএফএল, ফের উৎপাদন বন্ধ

দেবীগঞ্জে আমন সংগ্রহ উদ্বোধন

হাজীগঞ্জে বিনামূল্যে সার বীজ পাচ্ছেন সাড়ে ৮ হাজার কৃষক

ছবি

বাহুবলে লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজ করেছে আনোয়ারার চার সেতু 

ছবি

সরকার বঞ্চিত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে, ভোগান্তিতে মালিকরা

ছবি

সারা দেশে র‍্যাবের ৪১৮ টহল দল মোতায়েন

ছবি

বছরের প্রথম দিনে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে আরেকটি ট্রেন

ছবি

ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেল ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র

ছবি

যমুনার চরে বৈচিত্র্যময় সবুজ ফসলের সমারোহ

চান্দিনা আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে আদালতে মানহানি মামলা

গৌরীপুরে ৪র্থ উপজেলা কাব ক্যাম্পুরী

ছবি

সাভারে যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ

মির্জাগঞ্জে ভিটামিন ‘এ’ খাবে ২২৬০১ শিশু

tab

সারাদেশ

ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে কর্মমুখর পাবনার তাঁত পল্লী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

ঈদ উল ফিতর ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলের তাঁত প্রধান পল্লীগুলো কর্মমুখর হয়ে উঠেছে। তাঁত মালিক ও শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। দু’টি জেলায় তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের উন্নত আধুনিক রুচিশীল শাড়ি ও লুঙ্গি। শাড়ির উপরে বর্ণিল সুতা, বাক ও চুমকির কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া কাপড়ের উপর প্রিন্ট এবং রঙ তুলির আঁচড়ে হাতে করা হচ্ছে নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর নানা নকশা। আর এই নান্দনিক মনোমুগ্ধকর নানা নকশার তৈরি কাপড়ের চাহিদা ও সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশে-বিদেশে।

পাবনার ঈশ্বরদী ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, চৌহালীতে তৈরি তাঁতবস্ত্র ইতোমধ্যে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় তৈরি করছেন তাঁত কারখানার মালিকরা। কাপড়ের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করে চলেছেন তাঁত শ্রমিকরা। কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের কোলাহলে সরব হয়ে উঠেছে শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, চৌহালী, সুজানগর ও ঈশ্বরদী উপজেলার তাঁত পল্লী। কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের মতো বসে নেই নারীরাও। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নলীভরা, সুতাপারি করা, মাড়দেয়া ও রঙ-তুলিতে নকশা আঁকাসহ কাপড় বুননের কাজেও সহযোগিতা করছে ওই এলাকার নারী শ্রমিকরা। বাজারে কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে দাম। এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে রঙ-সুতাসহ তাঁত উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন তাঁত ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

পাবনার সুজানগর উপজেলার দোগাছির তাঁত কারখানা মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক মানের এবং সময় উপযোগী ডিজাইন নিয়ে আসায় দেশীয় তাঁত শিল্প প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তাঁতীরা এ শিল্পকে আর অলাভজনক পেশা হিসেবে দেখছেন না। মানন্ধাত্তার আমলের বুনোন শৈলী ও জ্যাকেট পাইড়ের শাড়ি বাদ দিয়ে ডিজাইনারদের পরামর্শ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ শিল্পকে সমৃদ্ধ করছেন। ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে তাঁতের কাপড় বিক্রিতে এখন আর মন্দাভাব নেই। এ পেশার সঙ্গে জড়িত সবাই এখন লাভের মুখ দেখছেন। সময় উপযোগী করে বুনোন শৈলী নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর নানা নকশা আর রঙের এর মাধুর্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে এ অঞ্চলের তাঁতের কাপড়।

এ অঞ্চলের তাঁত পলীগুলোতে উন্নতমানের সিল্ক জামদানি, সুতি কাতান, চোষা, সুতি জামদানি, বেনারসি, মিষ্টি পরী ও শেড শাড়ির পাশাপাশি মোটা শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস ও থান কাপড় তৈরি হচ্ছে। এসব শাড়ি ও লুঙ্গি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া ঢাকার বুটিক হাউজ কে-ক্রাফট তাদের পরিবেশকের মাধ্যমে কানাডা ও আমেরিকায় এবং নগরদোলা বুটিক হাউজ ইংল্যান্ডে বাজারজাত করছে। এদিকে ঈদের বাজারে সোনার বাংলা টেক্সটাইল, ডিসেন্ট, চাচকিয়া, ওয়েস্ট, রংধনুসহ ১২৫ ব্রান্ডের লুঙ্গি চাহিদা বেড়েছে। মান ভেদে প্রতি পিস লুঙ্গি ৩৮০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

শাহজাদপুর হাটে ভারতীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ভারতের পশ্চিমবাংলার উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর, হুগলি, বর্ধমান, নদীয়, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, জলপাইগুড়ি, পশ্চিম দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, কুচবিহার, হওড়া ও হুগলিসহ বিভিন্ন জেলার ছোট-বড় নামিদামি শপিংমল ও বিপণিবিতানগুলোতে বাংলাদেশে তৈরি বিভিন্ন ব্রান্ডের শাড়ি বিক্রি হয়। রমজানের ঈদ ও বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সেখানে বাংলাদেশি শাড়ির বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার তাঁত কারখানাগুলোতে তৈরি সিল্ক জামদানি, সুতি জামদানি, কাতান, সুতি কাতান, রাজশাহী সিল্ক, বেনারশি, চোষা, শেড, স্বর্ণলতা, কটন শাড়ি ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। আর এই নান্দনিক মনোমুগ্ধকর নানা নকশার তৈরি উন্নতমান, টেকসই, রুচিশীল শাড়ির দাম কম হওযায় পশ্চিমবাংলার মহিলাদের বেশি পছন্দ বাংলাদেশি শাড়ি।

পশ্চিমবাংলার শিলিগুড়ির আমদানিকারক সেলিম খাঁন জানান, রমজানের ঈদ ও পহেলা বৈশাখের বাজার ধরা জন্য পশ্চিমবাংলার আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে আতাইকুলা, শাহজাদপুর হাট, এনায়েতপুরহাট, করোটিয়া হাট, বাবুর হাট ও ডেমরা হাট থেকে শাড়ি কিনছেন। এছাড়া রাজশাহীর সিল্ক, গরদ, পাবনার ঈশ্বরদীর বেনারশি কাতান, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, শাহাজাদপুর, এনায়েতপুর, বেলকুচি, উল্লাপাড়ার স্বর্ণলতা, চোষা ও শেড শাড়ি, টাঙ্গাইল জেলার পাথরাইল, চন্ডি, নলসুধা, চিনাখোলা, দেওজান, নলুয়া, হিঙ্গানগর, এলাসিন, বাতুলি, বাজিদপুর, বল্লা, রামপুরের সুতি জামদানি, সিল্ক জামদানি ঢাকার মিরপুরের বেনারশি কাতান ও নারায়ণগঞ্জের ডেমরার জামদানি তাঁত কারখানাগুলোতে গিয়ে পছন্দমতো শাড়ি কিনে নিচ্ছেন।

তাঁতীদের নিজস্ব ডিজাইনে রেশম সুতা, খাদি, নয়েল, ডুপিয়ান ও এন্ডি সুতা ব্যবহার করে তাতে প্যালেস ও জরি মিশ্রিত করে শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। তরুণ-তরুণীদের কথা মাথায় রেখে উন্নতমানের জামদানি নকশা, সেড ও থান কাপড় তৈরি করছে। এ দিয়ে পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ তৈরি হচ্ছে। জামদানি থ্রি-পিস দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকা এবং চেক থ্রি-পিচ এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা দামে কিনছেন। পরে সেই কাপড় সড়ক পথে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জেলার শপিং মল, বিপণী বিতানগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

শাহজাদপুরের পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া জানান, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা রমজানের ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে শাহজাদপুর, এনায়েতপুর ও আতাইকুলা হাট থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের তাঁত শিল্প প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। ভারতের কলকাতার কাপড় ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র সেন জানান, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের তৈরি কাপড় ভারতের কলকাতা শুভরাজ, গঙ্গা রামপুর ও পাটনাসহ বড় শহরে বিক্রয় হচ্ছে। সে দেশের চেয়ে এদেশের কাপড়ের দাম তুলনামূলক কম, টেকশই এবং উন্নত মানের হওয়ায় তারা এখান থেকে কাপড় কিনছেন।

বিবিআনা, রঙ, কে-ক্রাফট ও নগরদোলাসহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় বুটিক প্রতিষ্ঠানের কাপড় এখন সিরাজগঞ্জ-পাবনা অঞ্চলে তৈরি হয়। বুটিক হাউজগুলোর নিজস্ব ডিজাইনে রেশম সুতা, খাদি, নয়েল, ডুপিয়ান ও এন্ডি সুতা ব্যবহার করে তাতে প্যালেস ও জরি মিশ্রত করে কাপড় তৈরি করা হচ্ছে। বুটিক হাউজের ওড়না থান কাপড় ও এন্ডি থান কাপড়ের ফ্রেবিক্স তৈরি করা হচ্ছে তাঁত পল্লীগুলোতে। এ দিয়ে নানা ধরনের পোশাক তৈরি করছে বুটিক হাউজগুলো। তরুণ-তরুণীদের কথা মাথায় রেখে তাঁতীরা উন্নতমানের জামদানি নকশা, সেড ও থান কাপড় তৈরি করছে। এ দিয়ে পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ আর ফতুয়া তৈরি হচ্ছে। জামদানি থ্রি-পিস আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা এবং চেক থ্রি-পিস এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শাহজাদপুরের চুনিয়াখালী পাড়ায় অবস্থিত মেসার্স মুকুল উইভিং ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী হাজী আবদুর রউফ (বুলবুল) জানান, মানন্ধাত্তার আমলের বুনন শৈলী বাদ দিয়ে ডিজাইনারদের পরামর্শ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় এ শিল্প সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। এবারের ঈদে বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে শতভাগ কটন শাড়ি। উন্নতমানের কটনে তৈরি এ শাড়ির দুই দিকেই সদর। দাম হাতের নাগালের মধ্যে। এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা। ইতোমধ্যে এই কটন শাড়ির ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। কারখানায় শাড়ি উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে। আর কয়েকদিন পর অর্ডারের শাড়ি তৈরির কাজ শুরু হবে বলে হাজী আবদুর রউফ জানিয়েছেন।

back to top