দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ বাধার কারণে তারা শাহবাগে পরিকল্পিত ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালন করতে পারেননি।
শিক্ষকদের অভিযোগ, এ ঘটনায় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন এবং কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। কর্মসূচি পালনে বাধা পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকরা আবার শহীদ মিনারে ফিরে গিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। শনিবার সকাল থেকে তারা সেখানে অবস্থান করছেন।
বিকাল ৪টার দিকে শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হলে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। শিক্ষক নেতাদের দাবি, এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও জলকামান ছুড়ে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আন্দোলনরত সংগঠন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেন, “পুলিশের হামলায় শাহবাগে অনেক শিক্ষক আহত হয়েছেন।” অন্য এক শিক্ষক নেতা মুহিব উল্লাহ জানান, “আমরা ৫০ জন শিক্ষককে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসেছি, তারা সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেলে আহত হয়েছেন।”
অন্যদিকে শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, “শিক্ষকরা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আহত হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য এখনও পাইনি।”
ডিএমপি মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বিবৃতিতে জানান, “আনুমানিক বিকাল ৪টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা তা অমান্য করেছেন। রাষ্ট্রীয় স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে।”
ডিএমপি সবাইকে নিষিদ্ধ এলাকায় সভা-সমাবেশ না করার আহ্বান জানিয়েছে।
শিক্ষকদের তিন দাবি হলো—দশম গ্রেডে বেতন, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন, এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামের চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এসব কর্মসূচি চলছে। এর মধ্যে রয়েছে—‘প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন)’, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি’ ও ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)’।
দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ এসে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানান। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষকরা ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে রওনা দেন।
এর আগে শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেন, “দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবি পূরণ না হওয়ায় বাধ্য হয়েই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কলম সমর্পণ কর্মসূচি পালন করব, এরপর শহীদ মিনারে ফিরে আসব।”
দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত।
গত ২৪ এপ্রিল সরকার প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম থেকে ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে সহকারী শিক্ষকরা এতে সন্তুষ্ট নন এবং দশম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
অন্যদিকে, সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছে। দাবি না মানলে তারা ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।
দাবি আদায়ে অগ্রগতি না হলে ১১ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষা বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ বাধার কারণে তারা শাহবাগে পরিকল্পিত ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালন করতে পারেননি।
শিক্ষকদের অভিযোগ, এ ঘটনায় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন এবং কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। কর্মসূচি পালনে বাধা পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকরা আবার শহীদ মিনারে ফিরে গিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। শনিবার সকাল থেকে তারা সেখানে অবস্থান করছেন।
বিকাল ৪টার দিকে শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হলে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। শিক্ষক নেতাদের দাবি, এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও জলকামান ছুড়ে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আন্দোলনরত সংগঠন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেন, “পুলিশের হামলায় শাহবাগে অনেক শিক্ষক আহত হয়েছেন।” অন্য এক শিক্ষক নেতা মুহিব উল্লাহ জানান, “আমরা ৫০ জন শিক্ষককে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসেছি, তারা সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেলে আহত হয়েছেন।”
অন্যদিকে শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, “শিক্ষকরা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আহত হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য এখনও পাইনি।”
ডিএমপি মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বিবৃতিতে জানান, “আনুমানিক বিকাল ৪টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা তা অমান্য করেছেন। রাষ্ট্রীয় স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে।”
ডিএমপি সবাইকে নিষিদ্ধ এলাকায় সভা-সমাবেশ না করার আহ্বান জানিয়েছে।
শিক্ষকদের তিন দাবি হলো—দশম গ্রেডে বেতন, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন, এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামের চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এসব কর্মসূচি চলছে। এর মধ্যে রয়েছে—‘প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন)’, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি’ ও ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)’।
দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ এসে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানান। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষকরা ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে রওনা দেন।
এর আগে শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেন, “দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবি পূরণ না হওয়ায় বাধ্য হয়েই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কলম সমর্পণ কর্মসূচি পালন করব, এরপর শহীদ মিনারে ফিরে আসব।”
দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত।
গত ২৪ এপ্রিল সরকার প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম থেকে ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে সহকারী শিক্ষকরা এতে সন্তুষ্ট নন এবং দশম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
অন্যদিকে, সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছে। দাবি না মানলে তারা ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।
দাবি আদায়ে অগ্রগতি না হলে ১১ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষা বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।