এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারও সরকারকে নজর দেয়ার দাবি
নড়াইলে মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তার প্রতিবাদে শাহবাগে সমাবেশ করেছে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ নামে একটি সংগঠন। গতকাল শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সংহতি জানিয়ে সমাবেশে ছিল মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, অধ্যক্ষ স্বপন কুমারকে নয়, গোটা জাতিকে যেন জুতার মালা পরানো হয়েছে। শিক্ষক লাঞ্ছনা এখন শিক্ষক হত্যায় উপনীত হয়েছে। যে ছেলেমেয়েরা এগুলো করছে, তাদের হাতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত। তাই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং এ বিষয়ে সরকারকে নজর দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান ড. কাবেরি গায়েন বলেন, ‘এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা অনেকবার এখানে দাঁড়িয়েছি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হৃদয় ম-লও এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন। কিন্তু স্বপন কুমার বিশ্বাসকে কোন অপরাধে জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে তার সত্যতা এখনও জানা যায়নি। একেকজন শিক্ষক একেকভাবে নির্যাতন ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন কিন্তু শিক্ষক মহলের ন্যূনতম দায়সারাভাব লক্ষ্য করা যায়নি।’
সহকারী অধ্যাপক ড. আবদুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘একাত্তরের মধ্যদিয়ে আমরা যে বাংলাদেশ পেয়েছি, সেটা আর বাংলাদেশ নেই। পাকিস্তানের মতো একটি সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মনে হয়েছে, এ মালা আমাকে পড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন কোন বিবৃতি দেয়নি। এতে বোঝা যায়, তারা বিষয়টি পাশ কাটাতে চায়। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার জানাই। সেই সঙ্গে নড়াইলের ডিসি, এসপি এবং অফিসার ইনচার্জ, থানা এবং যে সব পুলিশ সদস্য সেখানে ছিলেন তাদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের সাপেক্ষে শাস্তি পেতে হবে।’
সমাবেশে নিপীড়নবিরোধী শাহবাগের সংগঠক রবিন আহসান বলেন, ‘কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস পুলিশ ডেকেছেন নিজের নিরাপত্তার জন্য। সেই পুলিশের সামনে তাকে হেনস্তা, অপমানের শিকার হতে হয়েছে। সাভারে শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এই হতভাগ্য বাংলাদেশ আমি ৪৯ বছরে দেখিনি।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র-ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক কাজল কুমার দাস, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব রনজিত দেব, ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফয়জুল্লাহ, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাবিব আদনান। এতে সভাপতিত্ব করেন নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক আকরামুল হক।
তদন্তে দুটি কমিটি
নড়াইল, প্রতিনিধি জানান, এসব ঘটনা তদন্তে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, অধ্যক্ষের গলায় কেউ জুতার মালা পরিয়ে ছিল কি না, তা আমি দেখিনি। বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলামের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, কলেজ ভবন থেকে বের করে আনার সময় উত্তেজিত জনতার হাত থেকে অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীকে বাঁচানোর জন্য পুলিশ হয়ত জুতার মালা পরানোর বিষয়টি লক্ষ্য করেনি। জুতার মালা পরানো দু’একটি ছবি দেখেছি। এসব ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন- জেলা শিক্ষা অফিসার ছায়েদুর রহমান ও সদর থানার ওসি শওকত কবির। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারও সরকারকে নজর দেয়ার দাবি
মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২
নড়াইলে মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তার প্রতিবাদে শাহবাগে সমাবেশ করেছে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ নামে একটি সংগঠন। গতকাল শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সংহতি জানিয়ে সমাবেশে ছিল মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, অধ্যক্ষ স্বপন কুমারকে নয়, গোটা জাতিকে যেন জুতার মালা পরানো হয়েছে। শিক্ষক লাঞ্ছনা এখন শিক্ষক হত্যায় উপনীত হয়েছে। যে ছেলেমেয়েরা এগুলো করছে, তাদের হাতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত। তাই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং এ বিষয়ে সরকারকে নজর দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান ড. কাবেরি গায়েন বলেন, ‘এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা অনেকবার এখানে দাঁড়িয়েছি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হৃদয় ম-লও এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন। কিন্তু স্বপন কুমার বিশ্বাসকে কোন অপরাধে জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে তার সত্যতা এখনও জানা যায়নি। একেকজন শিক্ষক একেকভাবে নির্যাতন ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন কিন্তু শিক্ষক মহলের ন্যূনতম দায়সারাভাব লক্ষ্য করা যায়নি।’
সহকারী অধ্যাপক ড. আবদুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘একাত্তরের মধ্যদিয়ে আমরা যে বাংলাদেশ পেয়েছি, সেটা আর বাংলাদেশ নেই। পাকিস্তানের মতো একটি সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মনে হয়েছে, এ মালা আমাকে পড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন কোন বিবৃতি দেয়নি। এতে বোঝা যায়, তারা বিষয়টি পাশ কাটাতে চায়। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার জানাই। সেই সঙ্গে নড়াইলের ডিসি, এসপি এবং অফিসার ইনচার্জ, থানা এবং যে সব পুলিশ সদস্য সেখানে ছিলেন তাদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের সাপেক্ষে শাস্তি পেতে হবে।’
সমাবেশে নিপীড়নবিরোধী শাহবাগের সংগঠক রবিন আহসান বলেন, ‘কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস পুলিশ ডেকেছেন নিজের নিরাপত্তার জন্য। সেই পুলিশের সামনে তাকে হেনস্তা, অপমানের শিকার হতে হয়েছে। সাভারে শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এই হতভাগ্য বাংলাদেশ আমি ৪৯ বছরে দেখিনি।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র-ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক কাজল কুমার দাস, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব রনজিত দেব, ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফয়জুল্লাহ, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাবিব আদনান। এতে সভাপতিত্ব করেন নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক আকরামুল হক।
তদন্তে দুটি কমিটি
নড়াইল, প্রতিনিধি জানান, এসব ঘটনা তদন্তে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, অধ্যক্ষের গলায় কেউ জুতার মালা পরিয়ে ছিল কি না, তা আমি দেখিনি। বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলামের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, কলেজ ভবন থেকে বের করে আনার সময় উত্তেজিত জনতার হাত থেকে অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীকে বাঁচানোর জন্য পুলিশ হয়ত জুতার মালা পরানোর বিষয়টি লক্ষ্য করেনি। জুতার মালা পরানো দু’একটি ছবি দেখেছি। এসব ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন- জেলা শিক্ষা অফিসার ছায়েদুর রহমান ও সদর থানার ওসি শওকত কবির। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।