alt

শিক্ষা

শিক্ষক নিয়োগ না দিয়েই সাধারণ স্কুলে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’ : ৪ বছর পরও ৫৬ শতাংশ আসন ফাঁকা

‘ল্যাবে মূল্যবান যন্ত্রপাতির অপচয়’

রাকিব উদ্দিন : মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

২০২০ শিক্ষাবর্ষে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে দুটি ‘ট্রেডে’ ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’ চালু হয়েছে। ট্রেড দুটি হলো-‘জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস’ (জিইডব্লিউ) ও ‘কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি’ (সিআইটি)। চার শিক্ষাবর্ষ গেলেও ওই বিদ্যালয়ে দুই ‘ট্রেডে’ কোনো শিক্ষক বা ‘ইনস্ট্রাক্টর’ নিয়োগ দিতে পারেনি শিক্ষা প্রশাসন।

প্রতি শিক্ষাবর্ষেই অন্তত ৩৮ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী ওই দুটি ‘ট্রেড’ বেঁচে নিচ্ছেন বলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রাম মোহন জানিয়েছেন।

শিক্ষক ছাড়া কীভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান হচ্ছে-জানতে চাইলে রাম মোহন সংবাদকে বলেন, ‘সরকার যেহেতু ট্রেড চালু করেছে; আমাদের তো পড়াতেই হয়। সাধারণ শিক্ষক ও খ-কালীন শিক্ষক দিয়ে কোনোভাবে চালিয়ে নিচ্ছি।’

সাধারণ শিক্ষকরা কীভাবে এই ‘বিশেষ ট্রেডে’ পড়ান এবং খ-কালীন শিক্ষকদের বেতন কীভাবে যোগান দেয়া হচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষকরা কোনোভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন; আর খণ্ডকালীন শিক্ষকদের নামমাত্র বেতন দেয়া হচ্ছে।’

কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের ৫২টি পদের মধ্যে অন্তত ১৫টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বিদ্যালয়টির স্বাভাবিক শিক্ষাক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও একজন শিক্ষক জানিয়েছেন।

২০২০ শিক্ষাবর্ষে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ সারাদেশের মোট ২০টি সরকারি এবং ৬২০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘দুটি’ করে দশটি ‘ট্রেডে’ (বিষয়) বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু হয়েছে।

কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি বিদ্যালয়ে একজন করে ‘ইনস্ট্রাক্টর’ নিয়োগ পেলেও ২০টি সরকারি বিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ওই দশ ট্রেডে একজন শিক্ষক বা ইনস্ট্রাক্টরের পদও সৃষ্টি হয়নি। কোনো শিক্ষক নিয়োগও পায়নি।

‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’র (সেসিপ) আওতায় সাধারণ বিদ্যালয়ে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’ চালু করা হয়েছে। সরকারি ২০ বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন সেসিপের যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক অধ্যাপক ড. শামছুন নাহার।

তিনি বলেন, বেসরকারি বিদ্যালয়ের জনবল কাঠামোর ভোকেশনাল শিক্ষার জন্য ২ জন ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর ও ২ জন ট্রেড অ্যাসিস্টেন্টের পদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সেসিপের ভোকেশনাল কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ৮৯টি মাদ্রাসায় বর্ণিত ৪টি পদ সৃজন করা হয়েছে। কিন্তু ২০টি সরকারি বিদ্যালয়ে পদ সৃজন না হওয়ায় একাডেমিক কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে।

সেসিপ থেকে জানা গেছে, ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে ভোকেশনাল শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় সৃষ্ট ১০টি ট্রেডের প্রতিটিতে ৪০ জন করে মোট ৫১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থাকলেও ২০২৪ সালে মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এটি মোট আসন সংখ্যার ৪৪ শতাংশ মাত্র। সেই হিসেবে ৫৬ শতাংশ আসনই ফাঁকা।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুটি করে ‘ল্যাব নির্মাণপূর্বক আন্তর্জাতিক মানের মূল্যবান যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আসন অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় সরকারি সম্পদের ‘অপচয়’ হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় ‘দক্ষ নাগরিক তৈরির কার্যক্রম ব্যাহত’ হচ্ছে বলে সেসিপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দুটি ট্রেডে শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত করতে মাউশির আঞ্চলিক পরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে সেসিপ কর্তৃপক্ষ।

ড. শামছুন নাহার এসব ট্রেডে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মাউশি অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভোকেশনাল শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সম্পৃক্ত করে ‘সচেতনতামূলক প্রচারণা’ চালানোর উদ্যোগ নেয়ার জন্য ‘বিশেষভাবে’ অনুরোধ জানান।

‘জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের’ (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে সংস্থাটি শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারছে না। কোথাও কোথাও ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’র ট্রেড পড়াতে সাধারণ বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশও করছে।

২০২০ শিক্ষাবর্ষে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সরাইলের চুন্টা এসি একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন’ এবং ‘রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং’ ট্রেড চালু হয়েছে। এই বিদ্যালয়ে দুটি ট্রেডেই বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলেও কোনো শিক্ষক নেই বলে জানিয়েছেন পরিচালনা পরিষদের সদস্য জিয়াউর রহমান।

তিনি বলেন, দুটি ট্রেডে শিক্ষক দেয়ার জন্য এনটিআরসিএতে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তারা থেকে ‘অন্য বিষয়ের’ (সাধারণ বিষয়) শিক্ষক পাঠায়। এ কারণে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়নি। সম্প্রতি বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তে নিজস্ব উদ্যোগেই দুটি ট্রেডে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে বলে জানান জিয়াউর রহমান।

মাউশির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১০ সালের শিক্ষানীতির আলোকে সাধারণ ধারার মাধ্যমিক স্কুলে কারিগরি শিল্প, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি বিষয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু করা হয়েছে। কিন্তু এসব ট্রেডে প্রয়োজনীয় শিক্ষক হয়নি। এমনকি এ সংক্রান্ত শিক্ষা উপকরণ পরিচালনার জন্য জনবলও নিয়োগ হচ্ছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিন্ধান্ত অনুযায়ী, ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণীতে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’ চালু করার সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিতে দুই শ্রেণীতে (নবম ও দশম) ন্যূনতম দুইজন শিক্ষক ও দুইজন ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট আবশ্যক। চার শিক্ষাবর্ষ অতিবাহিত হলেও সবকটি বিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ট্রেডভিত্তিক শিক্ষকই নিয়োগ হয়নি; ল্যাব অ্যাসিসটেন্টও নিয়োগ দেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে ‘বেসরকারি কারিগরি শিক্ষক সমিতি’র সভাপতি অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু সংবাদকে বলেন, সরকার কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে। সেই আলোকেই ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’ চালু করা হয়েছিল। কিন্তু উদ্যোগটি ‘মুখ থুবরে পরে আছে। কোনো কিছুই এগুচ্ছে না।

এসব প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগে ‘প্রতিবন্ধকতার’ কারণ খুঁজে বের করার দাবি জানিয়ে এই শিক্ষক নিতো বলেন, ‘যাদের কারণে এই সংকট তৈরি হলো, কারা বাধা দিচ্ছেন এবং কী কী কারণে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না তা খোঁজে বের করা উচিত।’

বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের পদ খালি রেখে, অবকাঠামোর ঘাটতি রেখে এবং সাধারণ শিক্ষা ধারার শিক্ষক দিয়ে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন হবে না বলে মনে করেন শাহজাহান আলম সাজু।

শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। এছাড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, লেদার ইনস্টিটিউটসহ এ ধরনের অন্যান্য ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় আসন বেড়েছে ৫০টি, থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক

পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র:ডিবি

ছবি

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

তীব্র গরমেও বাড়ছে না ছুটি, রবিবার খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

৫০ শতাংশ লিখিত ও ৫০ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন

নতুন শিক্ষাক্রমে সপ্তম শ্রেণীতে শরীফার গল্প থাকছে

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও দ্রুত সেবা প্রদানে নির্দেশ

তাপদাহের কারণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস , মিডটার্ম পরীক্ষা স্থগিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ব-শরীরেই চলবে ক্লাস-পরীক্ষা

ছবি

গরমের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সকল কলেজের ক্লাস বন্ধ

ছবি

তৃতীয় দফায় তিনদিন শ্রেণি কার্যক্রম বর্জনে ঘোষণা কুবি শিক্ষক সমিতির

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ১ম বর্ষ ভর্তির আবেদনের ২য় মেধা তালিকা প্রকাশ

ছবি

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে অব্যাহতি

ছবি

এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু মঙ্গলবার, চলবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত

ছবি

স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরন

ছবি

রাবি-চবির অধিভুক্ত হল ৯ সরকারি কলেজ

ছবি

১১ মের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

নতুন শিক্ষাক্রম : আগের ধাচেই শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি এনটিআরসিএ’র

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টেস্ট পরীক্ষার নামে ফি আদায় করলে ব্যবস্থা

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা শুরু ৩০ জুন, রুটিন প্রকাশ

ছবি

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে : হাইকোর্ট

ছবি

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির দাবিতে দেশব্যাপী মানববন্ধন করবে ছাত্রলীগ

ছবি

তিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিন ক্যাম্পাসে চলছে পাল্টাপাল্টি মহড়া

ছবি

৩০টি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিত:এনবিআর

ছবি

শিক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরে পারিবারিক ব্যয় বেড়েছে

শিক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরে পারিবারিক ব্যয় বেড়েছে

কক্সবাজারে ওয়্যারলেস অডিও ডিভাইসসহ দুইজন আটক

ছবি

মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী কমেছে, বেড়েছে মাদ্রাসায়

ছবি

দুর্নীতির অভিযোগে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বরখাস্ত

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৬ দিনের ছুটি শুরু

ছবি

শনিবার স্কুল খোলা রাখার ইঙ্গিত: শিক্ষামন্ত্রী নওফেল

উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সমাপনী পরীক্ষা পাঁচ ঘণ্টা করার প্রস্তাব এনসিটিবির

ছবি

ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা কার কোন কেন্দ্রে, তালিকা প্রকাশ

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শতাধিক ‘ট্রেড কোর্সের’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই সংস্থার দ্বন্দ্ব

tab

শিক্ষা

শিক্ষক নিয়োগ না দিয়েই সাধারণ স্কুলে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’ : ৪ বছর পরও ৫৬ শতাংশ আসন ফাঁকা

‘ল্যাবে মূল্যবান যন্ত্রপাতির অপচয়’

রাকিব উদ্দিন

মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

২০২০ শিক্ষাবর্ষে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে দুটি ‘ট্রেডে’ ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’ চালু হয়েছে। ট্রেড দুটি হলো-‘জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস’ (জিইডব্লিউ) ও ‘কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি’ (সিআইটি)। চার শিক্ষাবর্ষ গেলেও ওই বিদ্যালয়ে দুই ‘ট্রেডে’ কোনো শিক্ষক বা ‘ইনস্ট্রাক্টর’ নিয়োগ দিতে পারেনি শিক্ষা প্রশাসন।

প্রতি শিক্ষাবর্ষেই অন্তত ৩৮ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী ওই দুটি ‘ট্রেড’ বেঁচে নিচ্ছেন বলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রাম মোহন জানিয়েছেন।

শিক্ষক ছাড়া কীভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান হচ্ছে-জানতে চাইলে রাম মোহন সংবাদকে বলেন, ‘সরকার যেহেতু ট্রেড চালু করেছে; আমাদের তো পড়াতেই হয়। সাধারণ শিক্ষক ও খ-কালীন শিক্ষক দিয়ে কোনোভাবে চালিয়ে নিচ্ছি।’

সাধারণ শিক্ষকরা কীভাবে এই ‘বিশেষ ট্রেডে’ পড়ান এবং খ-কালীন শিক্ষকদের বেতন কীভাবে যোগান দেয়া হচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষকরা কোনোভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন; আর খণ্ডকালীন শিক্ষকদের নামমাত্র বেতন দেয়া হচ্ছে।’

কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের ৫২টি পদের মধ্যে অন্তত ১৫টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বিদ্যালয়টির স্বাভাবিক শিক্ষাক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও একজন শিক্ষক জানিয়েছেন।

২০২০ শিক্ষাবর্ষে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ সারাদেশের মোট ২০টি সরকারি এবং ৬২০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘দুটি’ করে দশটি ‘ট্রেডে’ (বিষয়) বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু হয়েছে।

কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি বিদ্যালয়ে একজন করে ‘ইনস্ট্রাক্টর’ নিয়োগ পেলেও ২০টি সরকারি বিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ওই দশ ট্রেডে একজন শিক্ষক বা ইনস্ট্রাক্টরের পদও সৃষ্টি হয়নি। কোনো শিক্ষক নিয়োগও পায়নি।

‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’র (সেসিপ) আওতায় সাধারণ বিদ্যালয়ে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’ চালু করা হয়েছে। সরকারি ২০ বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন সেসিপের যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক অধ্যাপক ড. শামছুন নাহার।

তিনি বলেন, বেসরকারি বিদ্যালয়ের জনবল কাঠামোর ভোকেশনাল শিক্ষার জন্য ২ জন ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর ও ২ জন ট্রেড অ্যাসিস্টেন্টের পদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সেসিপের ভোকেশনাল কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ৮৯টি মাদ্রাসায় বর্ণিত ৪টি পদ সৃজন করা হয়েছে। কিন্তু ২০টি সরকারি বিদ্যালয়ে পদ সৃজন না হওয়ায় একাডেমিক কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে।

সেসিপ থেকে জানা গেছে, ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে ভোকেশনাল শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় সৃষ্ট ১০টি ট্রেডের প্রতিটিতে ৪০ জন করে মোট ৫১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থাকলেও ২০২৪ সালে মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এটি মোট আসন সংখ্যার ৪৪ শতাংশ মাত্র। সেই হিসেবে ৫৬ শতাংশ আসনই ফাঁকা।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুটি করে ‘ল্যাব নির্মাণপূর্বক আন্তর্জাতিক মানের মূল্যবান যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আসন অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় সরকারি সম্পদের ‘অপচয়’ হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় ‘দক্ষ নাগরিক তৈরির কার্যক্রম ব্যাহত’ হচ্ছে বলে সেসিপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দুটি ট্রেডে শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত করতে মাউশির আঞ্চলিক পরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে সেসিপ কর্তৃপক্ষ।

ড. শামছুন নাহার এসব ট্রেডে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মাউশি অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভোকেশনাল শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সম্পৃক্ত করে ‘সচেতনতামূলক প্রচারণা’ চালানোর উদ্যোগ নেয়ার জন্য ‘বিশেষভাবে’ অনুরোধ জানান।

‘জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের’ (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে সংস্থাটি শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারছে না। কোথাও কোথাও ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’র ট্রেড পড়াতে সাধারণ বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশও করছে।

২০২০ শিক্ষাবর্ষে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সরাইলের চুন্টা এসি একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন’ এবং ‘রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং’ ট্রেড চালু হয়েছে। এই বিদ্যালয়ে দুটি ট্রেডেই বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলেও কোনো শিক্ষক নেই বলে জানিয়েছেন পরিচালনা পরিষদের সদস্য জিয়াউর রহমান।

তিনি বলেন, দুটি ট্রেডে শিক্ষক দেয়ার জন্য এনটিআরসিএতে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তারা থেকে ‘অন্য বিষয়ের’ (সাধারণ বিষয়) শিক্ষক পাঠায়। এ কারণে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়নি। সম্প্রতি বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তে নিজস্ব উদ্যোগেই দুটি ট্রেডে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে বলে জানান জিয়াউর রহমান।

মাউশির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১০ সালের শিক্ষানীতির আলোকে সাধারণ ধারার মাধ্যমিক স্কুলে কারিগরি শিল্প, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি বিষয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু করা হয়েছে। কিন্তু এসব ট্রেডে প্রয়োজনীয় শিক্ষক হয়নি। এমনকি এ সংক্রান্ত শিক্ষা উপকরণ পরিচালনার জন্য জনবলও নিয়োগ হচ্ছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিন্ধান্ত অনুযায়ী, ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণীতে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’ চালু করার সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিতে দুই শ্রেণীতে (নবম ও দশম) ন্যূনতম দুইজন শিক্ষক ও দুইজন ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট আবশ্যক। চার শিক্ষাবর্ষ অতিবাহিত হলেও সবকটি বিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ট্রেডভিত্তিক শিক্ষকই নিয়োগ হয়নি; ল্যাব অ্যাসিসটেন্টও নিয়োগ দেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে ‘বেসরকারি কারিগরি শিক্ষক সমিতি’র সভাপতি অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু সংবাদকে বলেন, সরকার কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে। সেই আলোকেই ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা’ চালু করা হয়েছিল। কিন্তু উদ্যোগটি ‘মুখ থুবরে পরে আছে। কোনো কিছুই এগুচ্ছে না।

এসব প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগে ‘প্রতিবন্ধকতার’ কারণ খুঁজে বের করার দাবি জানিয়ে এই শিক্ষক নিতো বলেন, ‘যাদের কারণে এই সংকট তৈরি হলো, কারা বাধা দিচ্ছেন এবং কী কী কারণে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না তা খোঁজে বের করা উচিত।’

বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের পদ খালি রেখে, অবকাঠামোর ঘাটতি রেখে এবং সাধারণ শিক্ষা ধারার শিক্ষক দিয়ে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন হবে না বলে মনে করেন শাহজাহান আলম সাজু।

শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। এছাড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, লেদার ইনস্টিটিউটসহ এ ধরনের অন্যান্য ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে।

back to top