জুনায়েত শেখ
আজ বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস। পশুদের সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত ভেটেরিনারি ডাক্তারদের গুরুত্ব চিহ্নিত করার জন্য দিবসটি পালন করা হয়। এই ডাক্তাররা প্রাণীদের এবং মানুষের জীবন উন্নত করার জন্য কাজ করে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার ভেটেরিনারিয়ানদের অবদান স্মরণ করে এ দিবস পালন করা হয়।
বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস-২০২৪ থিম :
২০২৪ সালে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস পালন করা হবে এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল। এর থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পশুচিকিৎসকরা অপরিহার্য স্বাস্থ্যকর্মী। পশুচিকিৎসকদের দক্ষতা অবশ্যই প্রয়োজন। বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবসে একটি নির্দিষ্ট দিককে গুরুত্বারোপ করে ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন থিম নির্বাচিত করে থাকে।
বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবসের ইতিহাস :
ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউভিএ) ২০০০ সালে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে পশু, প্রাণি ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং পরিবেশ রক্ষায় ভেটেরিনারিয়ানদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেয় এবং প্রচার করে। এছাড়া এ সংগঠনটি এমন ব্যক্তি বা সংস্থাকে পুরস্কৃত করে যারা সারা বিশ্বে ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং প্রাণীদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের মানুষের পুষ্টি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ভেটেরিনারিয়ানরা। এছাড়া সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন অনেকে। অন্যদিকে করোনা মহামারীর সময়ে করোনা টেস্ট ল্যাবের তদারকি, আরটিপিসিআর এ টেকনিক্যাল সাপোর্ট, রিপোর্ট তৈরিতে সহযোগিতা করেছিল দেশের ভেটেরিনারিয়ানরা। এই কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা টেস্ট ল্যাব স্থাপন এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন অনেকে।
অসুস্থ পশুদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে নফাবঃং.পড়স ঠিকানার একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিঠুন সরকার এটি আবিষ্কার করেন। তিনি ২০১৮ সালে ওয়েবসাইটটি তৈরি করেন।
ওয়েবসাইট থেকে পরিষেবা নিতে হলে সেখানে নিজেদের সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য প্রদান করতে হবে। পরে তারা প্রশ্নের মাধ্যমে যেকোন সেবা নিতে পারেন। ওয়েবসাইটটিতে বর্তমানে ১০৬০ জনের বেশি পশুচিকিৎসক নিবন্ধিত রয়েছেন, যারা সাধারণ রোগের চিকিৎসার পরামর্শ প্রদান করে। ভিডিও চ্যাট বক্সের মাধ্যমে সেখানে অসুস্থ প্রাণীকে দেখানো যায়। ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯ হাজারেরও বেশি পশুকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
কিন্তু বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে ভেটেরিনারি চিকিৎসা, ওষুধ ও গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউভার্সিটির অনকোলজির অধ্যাপক ডগলাস থ্যাম ক্যান্সারে আক্রান্ত কুকুরদের রোগ নিরাময় থেরাপিগুলোকে আরও অগ্রসর করার জন্য অসংখ্য ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ওপর কাজ করতেন। পরবর্তীতে তিনি ২০২৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্যানাইন হেলথ অ্যাওয়ার্ডের অ্যালান কেলি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড বিভাগে পুরস্কার পান।’
পরিতাপের বিষয় হলো বাংলাদেশে ডগলাস থ্যামের মতো গবেষক নেই। এক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষসহ পশুদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ল্যাব, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গ্রাম-শহরের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প শিক্ষিত, স্ব শিক্ষিত ও নিরক্ষর মানুষের প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
[লেখক: শিক্ষার্থী]
জুনায়েত শেখ
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
আজ বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস। পশুদের সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত ভেটেরিনারি ডাক্তারদের গুরুত্ব চিহ্নিত করার জন্য দিবসটি পালন করা হয়। এই ডাক্তাররা প্রাণীদের এবং মানুষের জীবন উন্নত করার জন্য কাজ করে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার ভেটেরিনারিয়ানদের অবদান স্মরণ করে এ দিবস পালন করা হয়।
বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস-২০২৪ থিম :
২০২৪ সালে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস পালন করা হবে এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল। এর থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পশুচিকিৎসকরা অপরিহার্য স্বাস্থ্যকর্মী। পশুচিকিৎসকদের দক্ষতা অবশ্যই প্রয়োজন। বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবসে একটি নির্দিষ্ট দিককে গুরুত্বারোপ করে ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন থিম নির্বাচিত করে থাকে।
বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবসের ইতিহাস :
ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউভিএ) ২০০০ সালে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে পশু, প্রাণি ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং পরিবেশ রক্ষায় ভেটেরিনারিয়ানদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেয় এবং প্রচার করে। এছাড়া এ সংগঠনটি এমন ব্যক্তি বা সংস্থাকে পুরস্কৃত করে যারা সারা বিশ্বে ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং প্রাণীদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের মানুষের পুষ্টি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ভেটেরিনারিয়ানরা। এছাড়া সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন অনেকে। অন্যদিকে করোনা মহামারীর সময়ে করোনা টেস্ট ল্যাবের তদারকি, আরটিপিসিআর এ টেকনিক্যাল সাপোর্ট, রিপোর্ট তৈরিতে সহযোগিতা করেছিল দেশের ভেটেরিনারিয়ানরা। এই কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা টেস্ট ল্যাব স্থাপন এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন অনেকে।
অসুস্থ পশুদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে নফাবঃং.পড়স ঠিকানার একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিঠুন সরকার এটি আবিষ্কার করেন। তিনি ২০১৮ সালে ওয়েবসাইটটি তৈরি করেন।
ওয়েবসাইট থেকে পরিষেবা নিতে হলে সেখানে নিজেদের সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য প্রদান করতে হবে। পরে তারা প্রশ্নের মাধ্যমে যেকোন সেবা নিতে পারেন। ওয়েবসাইটটিতে বর্তমানে ১০৬০ জনের বেশি পশুচিকিৎসক নিবন্ধিত রয়েছেন, যারা সাধারণ রোগের চিকিৎসার পরামর্শ প্রদান করে। ভিডিও চ্যাট বক্সের মাধ্যমে সেখানে অসুস্থ প্রাণীকে দেখানো যায়। ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯ হাজারেরও বেশি পশুকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
কিন্তু বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে ভেটেরিনারি চিকিৎসা, ওষুধ ও গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউভার্সিটির অনকোলজির অধ্যাপক ডগলাস থ্যাম ক্যান্সারে আক্রান্ত কুকুরদের রোগ নিরাময় থেরাপিগুলোকে আরও অগ্রসর করার জন্য অসংখ্য ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ওপর কাজ করতেন। পরবর্তীতে তিনি ২০২৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্যানাইন হেলথ অ্যাওয়ার্ডের অ্যালান কেলি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড বিভাগে পুরস্কার পান।’
পরিতাপের বিষয় হলো বাংলাদেশে ডগলাস থ্যামের মতো গবেষক নেই। এক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষসহ পশুদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ল্যাব, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গ্রাম-শহরের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প শিক্ষিত, স্ব শিক্ষিত ও নিরক্ষর মানুষের প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
[লেখক: শিক্ষার্থী]