alt

উপ-সম্পাদকীয়

সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে

রেজাউল করিম খোকন

: শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কিনতে পারেন না, এমন মানুষ যেসব দেশে বেশি, সেসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। বাংলাদেশে এখন ১২ কোটি ১০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে পারেন না। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার সামর্থ্য তাদের নেই।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটি। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বিবেচনায় আনলে বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কিনতে পারেন না। গত কয়েক দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, দারিদ্র্য কমেছে। না খেয়ে থাকার প্রবণতা নেই বললেই চলে। কিন্তু গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পাতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ওঠেনি। স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের উচ্চমূল্যের কারণে তারা তা কিনতে পারছেন না। প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক নীতি কৌশল পরিবর্তনের সময় এসেছে। কারণ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানার আয় ও ব্যয় জরিপ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুষম বণ্টন হওয়া উচিত। উন্নত ধনী দেশেও এ সমস্যা আছে। তবে সেখানে এমন মানুষের সংখ্যা কম। অন্যতম ক্ষমতাধর ও ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও ৪৯ লাখ মানুষ মানসম্পন্ন খাবার কিনতে পারেন না। আর যুক্তরাজ্যে এ সংখ্যা ৩ লাখ। এছাড়া জার্মানির মতো ধনী দেশে এমন মানুষের সংখ্যা দুই লাখ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বিশ্বের অন্যতম দেশ হলো জাপান। জাপানের ৩১ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কিনতে পারেন না। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রায় ৮২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। প্রতি ১০ জনে ১ জন পুষ্টিহীনতায় আছে। এছাড়া সারা বিশ্বের ৩১০ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার সক্ষমতা নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে। এসডিজির দ্বিতীয় লক্ষ্য ‘ক্ষুধামুক্তি’তে বেশ কিছু লক্ষ্য আছে। যেমন, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবী হবে ক্ষুধামুক্ত। প্রত্যেক নাগরিক পুষ্টিসম্পন্ন খাবার খাবে। এ সময়ের মধ্যে সব ধরনের অপুষ্টি দূর হবে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে। আর সব ধরনের কৃষি উৎপাদন টেকসই পদ্ধতিতে হবে।

এসডিজি দ্বিতীয় লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্য পুষ্টিমানসম্পন্ন সুষম খাবার খেতে হবে, যাতে ওই ব্যক্তি পর্যাপ্ত ক্যালরি পায়। কিন্তু বিশ্বের বহু মানুষ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারেন না। কম খাবার গ্রহণ ও সুষম খাবার না পেয়ে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। খর্বকায় হয়ে যাচ্ছে।

করোনার অভিঘাতের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে খাবার ও জ্বালানির দাম বেড়েছে। বাড়তি মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক দেশই হিমশিম খাচ্ছে। চালসহ মৌলিক খাদ্যের বেশির ভাগই দেশীয় জোগাননির্ভর হওয়ায় সরবরাহ নিয়ে আগামী কিছুদিন বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা কিছুটা কম। স্বাভাবিক সময়ে দেশের চাহিদার ৯৫ শতাংশ ধান-চালের জোগান দেশীয় কৃষিক্ষেত্র থেকেই আসে। আর কিছুটা সংকট দেখা দিলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ চাল আমদানি করতে হয়।

একদিকে স্বল্প ও মধ্যআয়ের মানুষের উপার্জন কমে গেছে। পাশাপাশি লাগামহীনভাবে বেড়েছে নিত্যপণ্য ও সেবার মূল্য। ফলে সব শ্রেণীর মানুষের ব্যয় বেড়েছে। আয় কমে যাওয়া ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকছে কম। মূল্যস্ফীতির ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এখন ব্যয় যতটা বেড়েছে, আয় ততটা বাড়েনি। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য মানুষকে আগের তুলনায় বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

দেশে নানা কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা লোকসংখ্যা বেড়েছে। ফলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ত্বরান্বিত করে মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে। এখন থেকেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা লোকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যে বরাদ্দ তা যেন সুষ্ঠুভাবে বিতরণ হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার চেষ্টা করছে। প্রায় এক কোটি লোককে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। সেটা যেন সুষ্ঠুভাবে বিতরণ হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এক কোটি পরিবারের খাবারের যে কথা বলা হচ্ছে, এটা আরও বাড়ানো উচিত।

বাংলাদেশের কৃষির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গেছে। খাদ্যনিরাপত্তার পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আমাদের রয়েছে। তবে টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে যে খাবার দেয়া হচ্ছে, তার ওপর মনিটরিং বাড়াতে হবে এবং এ সংখ্যাটাও বাড়াতে হবে।

খাদ্যনিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য দরকার মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজির পর্যাপ্ততা। আর পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য উল্লিখিত পণ্যগুলো সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ ও সরবরাহের ব্যবস্থা করা বড় প্রয়োজন। বাংলাদেশে সবজি, মাছ ও ধান উৎপাদন যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, তা ঠিকমতো এগিয়ে গেলে সঠিক সংরক্ষণব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ হতে পারে বাংলাদেশ।

পুষ্টি নিরাপত্তায় চালের বাইরে অন্যান্য খাবার গ্রহণ বাড়াতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের খাদ্যগ্রহণের চিত্রে একমাত্র চালের পর্যাপ্ততা আছে। দিনে জনপ্রতি সাড়ে ৩০০ গ্রাম ভাত দরকার। সেই জায়গায় বাংলাদেশের মানুষ গড়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ গ্রাম ভাত খায়। বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে বিশ্বের তৃতীয় দেশ। চীন ও ভারতের পর গত অর্থবছরে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।

প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশে প্রতিদিনই কৃষিজমি কমছে। সেখানে আমাদের প্রধান পণ্য চাল উৎপাদনের ধারাবাহিক যে সফলতা আসছে, তার বড় অবদান আমাদের কৃষকদের। সেই সঙ্গে কৃষিবিজ্ঞানীদের সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া নীতি সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে খাদ্যশস্যসহ মাছ, পল্ট্রি, তরিতরকারি, শাকসবজি ও ফলফলারীর উৎপাদন বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, খাদ্যপণ্য বলতে শুধু চাল ও গমই বুঝায় না, আরো অনেক কিছুই খাদ্যপণ্যের অন্তর্গত। কাজেই, কৃষিতে উৎপাদনের একটা জোয়ার তৈরি করতে হবে। কৃষি, খাদ্য, বাণিজ্য ইত্যাদি মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে বসে একটা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও উপায় নির্ধারণ করতে হবে এবং কাজে নেমে পড়তে হবে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে জনগণ উদ্বুদ্ধ হয়ে উৎপাদন বিপ্লবে শরিক হতে পারে। একইসঙ্গে গণমুখী কর্মসূচি, উৎপাদনমুখী প্রকল্প, বিনিময়মূলক কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিম্নআয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়াতে হবে। দেশের সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

জেগে উঠুক সুকুমার বৃত্তি

প্রসঙ্গ : লোকসভা নির্বাচন

ছবি

বারবার পুড়ছে বাংলাদেশের ফুসফুস

শিশুমৃত্যু রোধে দক্ষ মিডওয়াইফদের ভূমিকা

বিসিএস জ্বরে পুড়ছে তারুণ্য

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া পৃথিবী

নমিনির অনুপস্থিতিতে মৃত ব্যক্তির গচ্ছিত টাকা পাবে কে

হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজন সচেতনতা

হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজন সচেতনতা

যদি শুধু বিনোদন সংস্কৃতি হয় তাহলে বাকি সব কী?

নতুন কারিকুলামে ইংরেজি শিক্ষা

বন্ধ হোক প্রশ্ন ফাঁস

ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা

লোকসান কমাতে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো কতটা যৌক্তিক?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও আগামী বাজেট

স্মার্ট দেশ গড়তে চাই স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসন ও সন্ত্রাস সৃষ্টির দায় কার

ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কাছে দোষ স্বীকারে সাক্ষ্যগত মূল্য ও বাস্তবতা

সমস্যায় জর্জরিত সড়ক, প্রতিকার কী

বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস

শিক্ষক নিয়োগ : পর্বতসম দুর্নীতির সামান্য প্রকাশ

ছবি

চৌবাচ্চার ফুটো এবং আমাদের উন্নয়ন

কিশোর গ্যাং : নষ্ট রাজনীতির বিনষ্ট সংস্কৃতি

মন্ত্রণালয় ভাগ করে লাভবান হলো কারা?

রম্যগদ্য : মর্জিনার কলঙ্কিত দাগ

সোমালিয়ার গরিব জেলেরা কীভাবে জলদস্যু হলো

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে

রেজাউল করিম খোকন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কিনতে পারেন না, এমন মানুষ যেসব দেশে বেশি, সেসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। বাংলাদেশে এখন ১২ কোটি ১০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে পারেন না। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার সামর্থ্য তাদের নেই।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটি। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বিবেচনায় আনলে বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কিনতে পারেন না। গত কয়েক দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, দারিদ্র্য কমেছে। না খেয়ে থাকার প্রবণতা নেই বললেই চলে। কিন্তু গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পাতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ওঠেনি। স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের উচ্চমূল্যের কারণে তারা তা কিনতে পারছেন না। প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক নীতি কৌশল পরিবর্তনের সময় এসেছে। কারণ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানার আয় ও ব্যয় জরিপ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুষম বণ্টন হওয়া উচিত। উন্নত ধনী দেশেও এ সমস্যা আছে। তবে সেখানে এমন মানুষের সংখ্যা কম। অন্যতম ক্ষমতাধর ও ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও ৪৯ লাখ মানুষ মানসম্পন্ন খাবার কিনতে পারেন না। আর যুক্তরাজ্যে এ সংখ্যা ৩ লাখ। এছাড়া জার্মানির মতো ধনী দেশে এমন মানুষের সংখ্যা দুই লাখ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বিশ্বের অন্যতম দেশ হলো জাপান। জাপানের ৩১ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কিনতে পারেন না। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রায় ৮২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। প্রতি ১০ জনে ১ জন পুষ্টিহীনতায় আছে। এছাড়া সারা বিশ্বের ৩১০ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার সক্ষমতা নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে। এসডিজির দ্বিতীয় লক্ষ্য ‘ক্ষুধামুক্তি’তে বেশ কিছু লক্ষ্য আছে। যেমন, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবী হবে ক্ষুধামুক্ত। প্রত্যেক নাগরিক পুষ্টিসম্পন্ন খাবার খাবে। এ সময়ের মধ্যে সব ধরনের অপুষ্টি দূর হবে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে। আর সব ধরনের কৃষি উৎপাদন টেকসই পদ্ধতিতে হবে।

এসডিজি দ্বিতীয় লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্য পুষ্টিমানসম্পন্ন সুষম খাবার খেতে হবে, যাতে ওই ব্যক্তি পর্যাপ্ত ক্যালরি পায়। কিন্তু বিশ্বের বহু মানুষ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারেন না। কম খাবার গ্রহণ ও সুষম খাবার না পেয়ে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। খর্বকায় হয়ে যাচ্ছে।

করোনার অভিঘাতের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে খাবার ও জ্বালানির দাম বেড়েছে। বাড়তি মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক দেশই হিমশিম খাচ্ছে। চালসহ মৌলিক খাদ্যের বেশির ভাগই দেশীয় জোগাননির্ভর হওয়ায় সরবরাহ নিয়ে আগামী কিছুদিন বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা কিছুটা কম। স্বাভাবিক সময়ে দেশের চাহিদার ৯৫ শতাংশ ধান-চালের জোগান দেশীয় কৃষিক্ষেত্র থেকেই আসে। আর কিছুটা সংকট দেখা দিলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ চাল আমদানি করতে হয়।

একদিকে স্বল্প ও মধ্যআয়ের মানুষের উপার্জন কমে গেছে। পাশাপাশি লাগামহীনভাবে বেড়েছে নিত্যপণ্য ও সেবার মূল্য। ফলে সব শ্রেণীর মানুষের ব্যয় বেড়েছে। আয় কমে যাওয়া ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকছে কম। মূল্যস্ফীতির ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এখন ব্যয় যতটা বেড়েছে, আয় ততটা বাড়েনি। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য মানুষকে আগের তুলনায় বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

দেশে নানা কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা লোকসংখ্যা বেড়েছে। ফলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ত্বরান্বিত করে মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে। এখন থেকেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা লোকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যে বরাদ্দ তা যেন সুষ্ঠুভাবে বিতরণ হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার চেষ্টা করছে। প্রায় এক কোটি লোককে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। সেটা যেন সুষ্ঠুভাবে বিতরণ হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এক কোটি পরিবারের খাবারের যে কথা বলা হচ্ছে, এটা আরও বাড়ানো উচিত।

বাংলাদেশের কৃষির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গেছে। খাদ্যনিরাপত্তার পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আমাদের রয়েছে। তবে টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে যে খাবার দেয়া হচ্ছে, তার ওপর মনিটরিং বাড়াতে হবে এবং এ সংখ্যাটাও বাড়াতে হবে।

খাদ্যনিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য দরকার মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজির পর্যাপ্ততা। আর পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য উল্লিখিত পণ্যগুলো সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ ও সরবরাহের ব্যবস্থা করা বড় প্রয়োজন। বাংলাদেশে সবজি, মাছ ও ধান উৎপাদন যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, তা ঠিকমতো এগিয়ে গেলে সঠিক সংরক্ষণব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ হতে পারে বাংলাদেশ।

পুষ্টি নিরাপত্তায় চালের বাইরে অন্যান্য খাবার গ্রহণ বাড়াতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের খাদ্যগ্রহণের চিত্রে একমাত্র চালের পর্যাপ্ততা আছে। দিনে জনপ্রতি সাড়ে ৩০০ গ্রাম ভাত দরকার। সেই জায়গায় বাংলাদেশের মানুষ গড়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ গ্রাম ভাত খায়। বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে বিশ্বের তৃতীয় দেশ। চীন ও ভারতের পর গত অর্থবছরে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।

প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশে প্রতিদিনই কৃষিজমি কমছে। সেখানে আমাদের প্রধান পণ্য চাল উৎপাদনের ধারাবাহিক যে সফলতা আসছে, তার বড় অবদান আমাদের কৃষকদের। সেই সঙ্গে কৃষিবিজ্ঞানীদের সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া নীতি সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে খাদ্যশস্যসহ মাছ, পল্ট্রি, তরিতরকারি, শাকসবজি ও ফলফলারীর উৎপাদন বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, খাদ্যপণ্য বলতে শুধু চাল ও গমই বুঝায় না, আরো অনেক কিছুই খাদ্যপণ্যের অন্তর্গত। কাজেই, কৃষিতে উৎপাদনের একটা জোয়ার তৈরি করতে হবে। কৃষি, খাদ্য, বাণিজ্য ইত্যাদি মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে বসে একটা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও উপায় নির্ধারণ করতে হবে এবং কাজে নেমে পড়তে হবে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে জনগণ উদ্বুদ্ধ হয়ে উৎপাদন বিপ্লবে শরিক হতে পারে। একইসঙ্গে গণমুখী কর্মসূচি, উৎপাদনমুখী প্রকল্প, বিনিময়মূলক কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিম্নআয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়াতে হবে। দেশের সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

back to top