alt

কূটনীতিকদের কাছে নির্বাচনী পরিস্থিতি তুলে ধরবেন সিইসি

ফয়েজ আহমেদ তুষার : সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি বিদেশিদের কাছে তুলে ধরবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই লক্ষ্যে আগামী ৪ জানুয়ারি ব্রিফিং করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। উপস্থিত থাকবেন অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও। স্থান নির্বাচন করা হয়েছে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের পদ্মা হল রুম। সময় বিকেল ৩টা।

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের আমন্ত্রণ জানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধিকেও দাওয়াত দেয়া হবে। আমন্ত্রণের কাজটি সারতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ইসি। তাতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানোসহ তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। এর দুই দিন আগে কূটনীতিকদের কাছে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরার উদ্যোগ নিলো আউয়াল কমিশন।

দশম ও একাদশ; বিগত দুইটি সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে যেমন প্রশ্ন রয়েছে; বিগত দুই কমিশন নিয়েও আলোচনা সমালোচনা রয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। বাংলাদেশ একটি ‘অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এমনটা প্রত্যাশা করে- বার বার এই কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশগুলোর কূটনীতিকরা। সব দলকে নিয়ে সংলাপ করাসহ নানা পরামর্শও তারা দিয়েছেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব পেয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সব দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা শুরু থেকেই ছিল এই কমিশনের। তবে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার কথা’ বার বার বলেও বড় দল বিএনপির আস্থা অর্জন করতে পারেনি।

বিএনপির ভোট বর্জন করেছে। দলটির অভিযোগ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পূর্বপরিকল্পিতভাবে ‘একতরফা’ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের পর বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমাদের নানামুখী চাপ আসার আশঙ্কাও আলোচনায় আছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ‘বিদেশিদের চাপ’ প্রশ্নে বিভিন্ন সময় নির্বাচন কমিশনারদের বক্তব্যে বিভিন্ন বক্তব্য এসেছে। কেউ একজন চাপের কথা ইঙ্গিতে স্বীকার করলেও অন্য আরেকজন তা এড়িয়ে গেছেন।

গত ২৩ ডিসেম্বর বরিশালে সিইসি বলেন, ‘নানা কারণে এবার ভোট নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। বিভিন্ন দেশ কথা বলেছে আমাদের দেশ নিয়ে। অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোট করার দাবি আছে বিদেশিদের।’

এর আগে ১৮ ডিসেম্বর সিইসি বলেন, ‘সব দেশ আমাদের নির্বাচন সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে। আমাদের ডোনার কান্ট্রিজগুলো দেখতে চাচ্ছে নির্বাচন। সেটাকে চাপ বলেন বা এটা সেন্সেটাইজেশন বলেন, ওরা যে দৌড়ঝাঁপগুলো করছেÑ আমরা দেখেছি এবং যার ফলে সরকারও বারবার বলেছে যে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু হবে। আমাদের তরফ থেকেও আমরা বলেছি যে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু হবে।’

নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান গত ১৯ ডিসেম্বর বলেছেন, তাদের ওপর দেশি-বিদেশি কোনো চাপ নেই। তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, ভোট সুষ্ঠু করতে হবে। তবে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে, এটা কমিশন বললেই হবে না। বহির্বিশ্ব কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভালো ও সুষ্ঠু ভোট না হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না বলেও মন্তব্য করেন এই কমিশনার।

বিদেশি কূটনীতিকদের সামনে সিইসির ব্রিফিংয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক শরিফুল আলম। সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানোসহ তাদের উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে অনুরোধ করেছে ইসি।

ইসি বলছে, এবার নির্বাচনে প্রায় আড়াইশ বিদেশি এবং বিশ হাজারের বেশি স্থানীয় পর্যবেক্ষকের আবেদন জমা পড়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা মেনে অনুমোদিত পর্যবেক্ষকরা ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। বিদেশিদের আবেদনগুলো পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সাপেক্ষে অনুমোদন দেবে নির্বাচন কমিশন।

বর্তমান কমিশন বলছে, গত দুই কমিশনের বদনাম বা দায় তারা নেবে না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তাদের সার্বিক প্রচেষ্টা রয়েছে। সংবিধানে পাওয়া ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ তারা করবে।

নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং ভোটের দিন সন্তোষজনক হারে ভোটার উপস্থিতি করাÑ দুটোর একটিও কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়; সিইসি এবং অন্য চার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) এ কথা অনেকবার বলেছেন।

শেষ পর্যন্ত বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো ভোট বর্জন করায় ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাবে হাল ছাড়েনি কমিশন।

আগামী ৭ জানুয়ারি যে ভোট হতে যাচ্ছে, তাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ নিবন্ধিত ২৭টি দল অংশ নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের মনোনয়ননে দলীয় প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র যেসব প্রার্থী এবার ভোটে এসেছেন তাদের নিয়েই নির্বাচন ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কমিশন।

নির্বাচনে ‘অনিয়ম ও কারচুপি’ ঠেকাতে নানা আশ্বাস দিচ্ছে ইসি। প্রার্থীদের মাঠে থাকার পাশপাশি ভোটকেন্দ্রে নির্ভয়ে যেতে ভোটারদেরও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, একটি ভোটও যদি কারচুপির চেষ্টা করা হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে। নির্বাচনী সহিংসতা প্রতিরোধে প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিল করার হুঁশিয়ারি দেয়া হচ্ছে।

ভোটের বাকী আছে আর ১১ দিন

প্রার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, কখনো নিজ উদ্যোগে মাঠপ্রশাসন ও পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি করছে কমিশন। আচরণবিধি লঙ্ঘণসহ নানা অনিয়মের কারণে প্রার্থীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে।

প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করায় ‘ভোটের খরার আশঙ্কায়’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য দলের অন্য প্রার্থীদের ছাড় দিয়েছে।

ফলে সংসদীয় ৩০০ আসনের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের প্রতিপক্ষ ভিন্ন প্রতীকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আভাস মিলেছে।

প্রতিদিনই কোনো না কোনো আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা, ভাঙচুরের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। আচরণবিধি লঙ্ঘণ এবং প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো, প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগও ওঠছে। নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগই বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

ইসি বলছে, আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রার্থী, সমর্থক ও বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে রোববার দুপুর পর্যন্ত ২০৮টি শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে।

ছবি

ভোটকে এতো ভয় কেন... কারন অস্তিত্বই থাকবে না : মির্জা ফখরুল

ছবি

জামায়াত আমিরের হুঁশিয়ারি: জুলাই সনদ ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না

ছবি

‘সিটের বিনিময়ে স্বপ্ন বিক্রি’: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ফেইসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে আলোচনা

ছবি

এনসিপি কার্যালয়ের   ককটেল হামলার দুই আসামি কারাগারে

নির্বাচন নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে: হাওলাদার

ছবি

একাত্তরের ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চায় একটি চক্র: মির্জা ফখরুল

ছবি

সংবিধানে গণভোট নেই বললে ২০২৬ সালেও নির্বাচন নেই : জামায়াতের নেতা হামিদুর রহমান

ছবি

"পোস্টাল ভোট বিডি" অ্যাপ উদ্বোধন ১৮ নভেম্বর :  নির্বাচন কমিশন

ছবি

বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা, সাবেক দুই এমপিসহ আসামি ৮ শতাধিক

অর্থনীতি ও সংস্কার নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

ছবি

খালেদা জিয়ার আসনে এনসিপির চূড়ান্ত মনোনয়ন চান জোবায়ের

ছবি

বহিষ্কৃত ৪০ নেতার পদ ফিরিয়ে দিলো বিএনপি

নির্বাচনের অপেক্ষায় স্থবির দেশ, বিনিয়োগ ও পারিবারিক সিদ্ধান্তও থমকে গেছে: আমীর খসরু

ছবি

অর্থনীতি ও সংস্কার নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

ছবি

নির্বাচনের অপেক্ষায় স্থবির দেশ: আমীর খসরু

ছবি

ঢাকা থেকে নির্বাচনের ঘোষণা আসিফ মাহমুদের, বললেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তে পদত্যাগ’

‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে থাকবে গণতন্ত্র মানবাধিকার ও ভোটাধিকার’

ছবি

‘আমেরিকা থেকে আসা শিক্ষিত লোকজন আমাদের ঘাড়ে গণভোট চাপাচ্ছে’ : মির্জা ফখরুল

ছবি

নিবন্ধন প্রশ্নে আমজনতার দলকে আইনসম্মত পথে আসার আহ্বান ইসি সচিবের

বিএনপির হাত ধরে বারবার গণতন্ত্র এসেছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

বিএনপি থেকে ৫ শতাংশ শিক্ষককে মনোনয়ন দেয়ার দাবি

ছবি

নিবন্ধনের দাবিতে ১০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অনশনে আমজনতার সদস্য সচিব

ছবি

সংবিধানে গণভোটের কিছু নেই: আমীর খসরু

ছবি

আগেই গণভোট, নইলে কঠোর আন্দোলন: জামায়াতসহ ৮ দলের হুঁশিয়ারি

ছবি

কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়: তারেক রহমান

ছবি

বিএনপি বলছে, প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানালে ‘আলোচনায় রাজি’, তবে ‘রাজনৈতিক দল দিয়ে আহ্বান কেন?’

ছবি

জামালপুরে জামায়াত প্রার্থীর গণসংযোগে হামলার অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ যুবদলের বিরুদ্ধে

ছবি

বিএনপির আচরণে আওয়ামী লীগের ছায়া দেখছেন হামিদুর রহমান আযাদ

ছবি

বাংলাদেশে মানুষ সংঘর্ষ নয়, স্থিতিশীলতা চায়: আমীর খসরু

ছবি

৫ আগস্টের আগের স্বপ্ন ১৫ মাসেও পূরণ হয়নি: নুরুল হক

ছবি

যতই চালাকি হোক, আগে গণভোট, তারপর সংসদ নির্বাচন: তাহের

নতুন নামে ‘ফ্যাসিবাদ’ কায়েমের পাঁয়তারা চলছে: মুশতাক

ছবি

বিএনপির মনোনয়ন পেলেন আ’লীগের ‘ডোনার খ্যাত’ আনিসুল হক!

ছবি

রংপুরের দুই আসনে এনসিপি ও জামায়াতের মর্যাদার লড়াই

ছবি

জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্ট বলে কিছু থাকবে না: নাহিদ ইসলাম

ছবি

বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘে মোমেনের চিঠি

tab

কূটনীতিকদের কাছে নির্বাচনী পরিস্থিতি তুলে ধরবেন সিইসি

ফয়েজ আহমেদ তুষার

সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি বিদেশিদের কাছে তুলে ধরবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই লক্ষ্যে আগামী ৪ জানুয়ারি ব্রিফিং করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। উপস্থিত থাকবেন অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও। স্থান নির্বাচন করা হয়েছে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের পদ্মা হল রুম। সময় বিকেল ৩টা।

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের আমন্ত্রণ জানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধিকেও দাওয়াত দেয়া হবে। আমন্ত্রণের কাজটি সারতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ইসি। তাতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানোসহ তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। এর দুই দিন আগে কূটনীতিকদের কাছে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরার উদ্যোগ নিলো আউয়াল কমিশন।

দশম ও একাদশ; বিগত দুইটি সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে যেমন প্রশ্ন রয়েছে; বিগত দুই কমিশন নিয়েও আলোচনা সমালোচনা রয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। বাংলাদেশ একটি ‘অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এমনটা প্রত্যাশা করে- বার বার এই কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশগুলোর কূটনীতিকরা। সব দলকে নিয়ে সংলাপ করাসহ নানা পরামর্শও তারা দিয়েছেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব পেয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সব দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা শুরু থেকেই ছিল এই কমিশনের। তবে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার কথা’ বার বার বলেও বড় দল বিএনপির আস্থা অর্জন করতে পারেনি।

বিএনপির ভোট বর্জন করেছে। দলটির অভিযোগ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পূর্বপরিকল্পিতভাবে ‘একতরফা’ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের পর বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমাদের নানামুখী চাপ আসার আশঙ্কাও আলোচনায় আছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ‘বিদেশিদের চাপ’ প্রশ্নে বিভিন্ন সময় নির্বাচন কমিশনারদের বক্তব্যে বিভিন্ন বক্তব্য এসেছে। কেউ একজন চাপের কথা ইঙ্গিতে স্বীকার করলেও অন্য আরেকজন তা এড়িয়ে গেছেন।

গত ২৩ ডিসেম্বর বরিশালে সিইসি বলেন, ‘নানা কারণে এবার ভোট নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। বিভিন্ন দেশ কথা বলেছে আমাদের দেশ নিয়ে। অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোট করার দাবি আছে বিদেশিদের।’

এর আগে ১৮ ডিসেম্বর সিইসি বলেন, ‘সব দেশ আমাদের নির্বাচন সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে। আমাদের ডোনার কান্ট্রিজগুলো দেখতে চাচ্ছে নির্বাচন। সেটাকে চাপ বলেন বা এটা সেন্সেটাইজেশন বলেন, ওরা যে দৌড়ঝাঁপগুলো করছেÑ আমরা দেখেছি এবং যার ফলে সরকারও বারবার বলেছে যে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু হবে। আমাদের তরফ থেকেও আমরা বলেছি যে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু হবে।’

নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান গত ১৯ ডিসেম্বর বলেছেন, তাদের ওপর দেশি-বিদেশি কোনো চাপ নেই। তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, ভোট সুষ্ঠু করতে হবে। তবে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে, এটা কমিশন বললেই হবে না। বহির্বিশ্ব কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভালো ও সুষ্ঠু ভোট না হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না বলেও মন্তব্য করেন এই কমিশনার।

বিদেশি কূটনীতিকদের সামনে সিইসির ব্রিফিংয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক শরিফুল আলম। সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানোসহ তাদের উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে অনুরোধ করেছে ইসি।

ইসি বলছে, এবার নির্বাচনে প্রায় আড়াইশ বিদেশি এবং বিশ হাজারের বেশি স্থানীয় পর্যবেক্ষকের আবেদন জমা পড়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা মেনে অনুমোদিত পর্যবেক্ষকরা ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। বিদেশিদের আবেদনগুলো পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সাপেক্ষে অনুমোদন দেবে নির্বাচন কমিশন।

বর্তমান কমিশন বলছে, গত দুই কমিশনের বদনাম বা দায় তারা নেবে না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তাদের সার্বিক প্রচেষ্টা রয়েছে। সংবিধানে পাওয়া ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ তারা করবে।

নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং ভোটের দিন সন্তোষজনক হারে ভোটার উপস্থিতি করাÑ দুটোর একটিও কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়; সিইসি এবং অন্য চার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) এ কথা অনেকবার বলেছেন।

শেষ পর্যন্ত বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো ভোট বর্জন করায় ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাবে হাল ছাড়েনি কমিশন।

আগামী ৭ জানুয়ারি যে ভোট হতে যাচ্ছে, তাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ নিবন্ধিত ২৭টি দল অংশ নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের মনোনয়ননে দলীয় প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র যেসব প্রার্থী এবার ভোটে এসেছেন তাদের নিয়েই নির্বাচন ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কমিশন।

নির্বাচনে ‘অনিয়ম ও কারচুপি’ ঠেকাতে নানা আশ্বাস দিচ্ছে ইসি। প্রার্থীদের মাঠে থাকার পাশপাশি ভোটকেন্দ্রে নির্ভয়ে যেতে ভোটারদেরও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, একটি ভোটও যদি কারচুপির চেষ্টা করা হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে। নির্বাচনী সহিংসতা প্রতিরোধে প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিল করার হুঁশিয়ারি দেয়া হচ্ছে।

ভোটের বাকী আছে আর ১১ দিন

প্রার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, কখনো নিজ উদ্যোগে মাঠপ্রশাসন ও পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি করছে কমিশন। আচরণবিধি লঙ্ঘণসহ নানা অনিয়মের কারণে প্রার্থীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে।

প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করায় ‘ভোটের খরার আশঙ্কায়’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য দলের অন্য প্রার্থীদের ছাড় দিয়েছে।

ফলে সংসদীয় ৩০০ আসনের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের প্রতিপক্ষ ভিন্ন প্রতীকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আভাস মিলেছে।

প্রতিদিনই কোনো না কোনো আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা, ভাঙচুরের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। আচরণবিধি লঙ্ঘণ এবং প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো, প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগও ওঠছে। নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগই বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

ইসি বলছে, আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রার্থী, সমর্থক ও বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে রোববার দুপুর পর্যন্ত ২০৮টি শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে।

back to top