অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হলো, নির্বাচন করে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তবে জঞ্জাল দূর করতে কিছুটা সময় দেয়া দরকার বলে আবারও মন্তব্য করলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই সরকার সব সংস্কার করে নির্বাচনের আয়োজন করবে।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিএনপির স্থায়ী কমিটির নতুন দুই সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও জাহিদ হোসেনকে নিয়ে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি। সরকার পতনের পর সারাদেশে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোর বিচার কার্যক্রম নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের মেয়াদ হয়েছে মাত্র ১১ দিন। এই কয়েক দিনে তারা যে কাজ করেছে তা প্রশংসনীয়। তারা অবশ্যই স্থির হয়ে আরও কাজ করবেন।’

নির্বাচন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের একটি সরকার। তাদের প্রধান কাজ হচ্ছেÑ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। বিগত আওয়ামী সরকার যে জঞ্জাল সৃষ্টি করে গেছে, সেটাকে পরিষ্কার করতে একটু সময় লাগবে। সেই জন্য যে সময় প্রয়োজন, সেই সময় এ দেশের জনগণ দেবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত ১৫ বছরে গণতন্ত্র ধ্বংস ও মানবাধিকার এবং আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। দেশের মানুষের ওপর ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। পাচার করা হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ডলার।’

দেশের মানুষ শেখ হাসিনার অপরাধ খাটো করে দেখে না মন্তব্য করে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্ভাগ্য আমাদের, পার্শ্ববর্তী দেশও তাকে আশ্রয় দিয়েছে। এখন সেখানে বসে শেখ হাসিনা এই বিপ্লবকে নস্যাৎ করার চক্রান্ত করছে।’

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ভারতের কাছে অনুরোধ করব, আপনারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে অপরাধীকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে দিন। প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার (শেখ হাসিনা) বিচার হবে।’

এ সময় দলটির স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্য হাফিজ উদ্দিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আগামী দিনে বিএনপি দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। ড. ইউনূস ও সরকারকে সর্বতোভাবে সহায়তা করবে বিএনপি। ১৬ বছর আগে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিল, ছাত্ররা সেটি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বিএনপিসহ ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে দেশকে এগিয়ে নেবে।’

ছাত্র-জনতার বিপ্লবে বিএনপির দুইশ’ নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে দাবি করে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগস্টের বিপ্লবের শেষ সময়ে এসে সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্রবাহিনী জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি মনে করি, আগামী দিনেও সশস্ত্রবাহিনী জনগণের সঙ্গে থাকবে ও কোনো ধরনের স্বৈরাচারীকে কোনো আশ্রয় দিবে না।’

দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক নতুন সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অর্পিত দায়িত্ব আগামী দিনগুলোতে সঠিকভাবে পালন করা হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করতে গিয়ে যারা গুম হয়েছে তাদের খুঁজে বের করা হবে। অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। নতুনভাবে মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সব দল একমত। যতো দ্রুত সম্ভব সংস্কার করে জনগণের সরকার গঠন করার ব্যবস্থা করতে হবে। এবারের স্বৈরাচারের পতন থেকে শিক্ষা নিয়ে সজাগ থাকতে হবে, ভবিষ্যতে যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।’

এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি অসুস্থ, ফ্লাই করার মতো পরিস্থিতি হলে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর বিদেশে নেয়ার ব্যাপারে জানানো হবে।’

গত শুক্রবার হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১৯ সদস্যের কমিটিতে এনিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ জনে।

স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (পদাধিকার বলে), ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (পদাধিকার বলে), মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ, জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।