ফরিদপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার জন্য দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকা- হিসেবে শামা ওবায়েদ ও শহিদুল ইসলাম বাবুলের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, শহীদুল ইসলাম বাবুলের নিজ এলাকায় আগমনকে কেন্দ্র করে বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে নগরকান্দা উপজেলা সদরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এদের মধ্যে একজন বিএনপি সমর্থক কবির ভূঁইয়াকে (৫৫) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত কবির ভূঁইয়া উপজেলার ছাগলদি গ্রামের আবুল বসার ভূঁইয়ার ছেলে। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) আসাদুজ্জামান শাকিল হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়। উভয়পক্ষকেই ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে।’

বিএনপির একটি সূত্র বলেছে, ‘আন্দোলনে আহত অনেকে এখনও হাসপাতালে মারা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে তোড়ন বানিয়ে উৎসব করার সময় নেই। বিষয়টি এলাকার মানুষ ভালো মনে নেয়নি, যার কারণে সংঘর্ষ হয়েছে।’

শহীদুল ইসলাম বাবুলের সমর্থকদের অভিযোগ, উপজেলা সদরে বাবুলের পথসভার আয়োজন করা হয়। এতে বাধা সৃষ্টি করার জন্য শামা ওবায়েদ সমর্থকেরা অস্ত্র নিয়ে সকাল থেকে সেখানে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে বাবুলের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়ও।

এছাড়া ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভবুকদিয়া থেকে তালমা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বাবুলের সমর্থকদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কবির ভূঁইয়া গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত হয় আরও অন্তত ২০ জন।

পরে বাবলু নগরকান্দায় নির্ধারিত পথসভাটি করতে না পেরে তালমা মোড়ে পথসভা করেন। এতে নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সভাপতি লিয়াকত আলী বুলুর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। পরে বিকেল ৫টায় ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাণহানির নির্দেশদাতা হিসেবে শামা ওবায়েদকে বাবুল বলেন, ‘আমার আগমন উপলক্ষে শামা ওবায়েদ বাড়িতে বসে পরিকল্পনা করেন, আমাকে এলাকায় ঢুকতে দেয়া হবে না। যার প্রমাণ আজকের ঘটনা। এলাকায় ঢোকার পরেই পথে পথে বাধা সৃষ্টি করা হয়, অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া নেতাকর্মীদের মারধর করা হয় এবং নগরকান্দায় একজন মারা যায়।’

শামা ওবায়েদ অভিযোগ অসত্য দাবি করে বলেন, ‘নব্য বিএনপি এ হামলা করেছে, তবে এটা খুবই দুঃখজনক। নগরকান্দায় আমার দল বলতে কিছুই নেই, সকলেই বিএনপি। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পতন আন্দোলনে আহত অনেকে এখনও হাসপাতালে মারা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে তোরণ বানিয়ে উৎসব করার সময় নেই। বিষয়টি এলাকার মানুষ ভালো মনে নেয়নি, যার কারণে সংঘর্ষ হয়েছে। তবে এ ঘটনায় একজনের প্রাণহানিতে আমি মর্মাহত। এজন্য যা করার দরকার তাই করা হবে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরকান্দা ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসনের অন্তর্গত। এই উপজেলাতেই শহিদুল ইসলাম বাবুল ও শামা ওবায়েদের বাড়ি। দুজনই ওই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঢাকা থেকে বাবুল এলাকায় আসা নিয়ে শোডাউন ও পথসভাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাত থেকেই দুই পক্ষের মহড়া ও উত্তেজনা চলছিল।

এরই জেরে সকালে উপজেলা সদর এলাকার ছাগলদির মোড়ে অবস্থান নেন বাবুল গ্রুপের সমর্থকেরা, অন্যদিকে শামা ওবায়েদের গ্রুপের সমর্থকেরাও অবস্থান নেন বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।