alt

রাজনীতি

শেখ হাসিনাকে ডুবিয়েছেন চারজন, আমরা ক্ষোভ বুঝতে পারছিলাম, কিন্তু তিনি শোনেননিঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আওয়ামী লীগ নেতারা

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস : বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪

‘আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে পারব না’; ‘আমি ফোনে কথা বলতে পারি কারণ আমি আত্মগোপনে আছি,’; ‘নিরাপদ কোনো স্থানে আমি আপনার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করব’; ‘আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে পারব কি না, জানি না কারণ আপনার গতিবিধি নজরদারি করা হবে’।

এরকম কিছু বার্তা ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পেয়েছে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা–কর্মী ও সাবেক মন্ত্রী ও সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবিদের কাছ থেকে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গত এক সপ্তাহে ওই ব্যক্তিদের কারও কারও সঙ্গে অজ্ঞাত স্থানে দেখা করতে এবং কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছে যারা বিরোধী পক্ষ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ‘প্রতিশোধের শিকার’ হওয়ার শঙ্কায় আত্মগোপনে আছেন।

তাদের অভিন্ন কথা, ‘শেখ হাসিনা দল ও জনগণকে পরিত্যাগ করেছেন।’ আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আপা (হাসিনা) আমাদের পরিত্যাগ করেছেন।’

‘নেতা–কর্মীদের পরিত্যাগের’ এই অনুভূতি অনেকেরই যারা কেউ ৫ আগস্টের ঘটনাবলি আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি। সেদিন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে তার বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ভারতে রয়েছেন।

শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত তার মন্ত্রিসভার সদস্য, এমনকি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও ‘পুরোপুরি বিস্মিত’ করেছে, আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এক নেতা বলেন, ‘আমরা টেলিভিশন থেকে এটা জেনেছি।’

এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা তাদের জীবন নিয়েই বিপদে পড়েন। ‘বিক্ষোভকারী, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী এবং সুযোগসন্ধানীরা’ আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়গুলো নিশানা বানান। চালানো হয় ভাঙচুর; অগ্নিসংযোগ, লুট।

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘(৫ আগস্ট শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর) যখন সেনাপ্রধান বেলা তিনটার দিকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ও মানুষ তা শুনতে টেলিভিশনের পর্দায় মনযোগী ছিলেন, তখনই আমরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাই।’

আরেক নেতা, যিনি মন্ত্রী ছিলেন, বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা ধরা পড়লে লোকজন আমাদের পিটিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারতেন।’

আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৬ বছরের ( আসলে সাড়ে ১৫ বছরের) শাসনামলে শেখ হাসিনার সরকার বিরোধী দলের নেতাদের নিশানা করে কারাগারে পাঠায়, মারধর করে, ভয়ভীতি দেখায় ও হয়রানি করে। হঠাৎই পরিস্থিতি উল্টে যায়।

সাম্প্রতিকতম ঘটনার (শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগ) খানিকটা পেছন ফিরে তাকিয়ে কেউ কেউ অনুশোচনা করছেন, বিশেষ করে গত জুলাইয়ে শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরে ৩–৪ আগস্ট ছাত্র–জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভাঙেন। সেদিনই সরকারের পতন ঘটে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য আত্মগোপনে থাকা ওই নেতাদের একজন দলের অভ্যন্তরীণ একটি স্বার্থগোষ্ঠীকে দায়ী করে বলেছেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের কথা শোনা বন্ধ করে দেন।’ এই গোষ্ঠীকে ‘গ্যাং অব ফোর’ বা ‘চারজনের গ্যাং’ বলে আখ্যায়িত করেন নেতাদের একজন। তিনি বলেন, গোষ্ঠীটি শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা বুঝতে দেয়নি।

তিনি ওই গোষ্ঠীর চারজনের নাম বলেন – শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ‘চারজনের এই দল তার (হাসিনা) পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ব্যক্তিদের ওপর তার ছিল অন্ধবিশ্বাস। তার যে সহজাত রাজনৈতিক প্রবৃত্তি ছিল, তা তিনি তাদের কারণে হারিয়েছেন।’

এ বছরের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপিকে না আনা শেখ হাসিনার একটি ‘বড় ভুল’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। সূত্রগুলো বলেছে, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে লন্ডনে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।

একটি সূত্রের ভাষ্যমতে, ‘আড়ালে থাকা একটি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রস্তাবও দেওয়া হয় (বিএনপিকে নির্বাচনে আনার)। আমাদের ধারণা, তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় চ্যানেলটি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের এক বছর আগেই ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়...কিন্তু শেখ হাসিনা ওই প্রস্তাবে সবুজসংকেত দেননি।’

আওয়ামী লীগের একজন নেতার বক্তব্য, বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি শেখ হাসিনার প্রত্যাখ্যান করা ছিল ‘সাংঘাতিক ভুল’। কেননা, একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা গেলে বিরোধীদের রাগ–ক্ষোভ হয়তো মিটে যেত।

ওই নেতা আরও বলেন, ‘দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, পুলিশের নিষ্ঠুরতায় জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা বুঝছিলাম। বিএনপিকে নির্বাচনী তরিতে ওঠানো গেলে সেই ক্ষোভ হয়তো থামানোও যেত। তাতে আমরাই আবার জিততে পারতাম এবং দল ক্ষমতায় থাকত।’

নেতা–কর্মীরা মনে করেন, বিশেষ করে গত জানুয়ারির নির্বাচনে জেতার পর শেখ হাসিনা আরও একগুঁয়ে হয়ে ওঠেন ও কোনো পরামর্শ শুনতেন না। ওই নেতা বলেন, ‘টানা চতুর্থবার জিতে তিনি (হাসিনা) অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন এবং কোটা সংস্কার নিয়ে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে সৃষ্ট ক্ষোভের মাত্রা বুঝতে ব্যর্থ হন।’

সূত্রগুলো বলেছে, কৌশলে কিছু নেতা শেখ হাসিনাকে জুলাইয়ের শুরুতে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। (হাসিনা সরকারের) কফিনে শেষ পেরেকটি তখনই ঠোকা হিয়ে যায়, যখন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা ছাত্রনেতাদের তুলে নিয়ে যান এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ও আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারে জোরপূর্বক প্রতিশ্রুতি আদায় করে ছেড়ে দেন।

এ কৌশল হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়। কর্মসূচি প্রত্যাহারে কীভাবে জোরপূর্বক প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়েছে, ছাত্রনেতারা সেই বিষয় জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেন। এটি পরপর কিছু ঘটনার সূত্রপাত ঘটায় এবং শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

শেখ হাসিনার পতনের পর জীবনাশঙ্কায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা–কর্মী ও বুদ্ধিজীবী দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, আশ্রয় নেওয়া এই ৬২৬ জনের মধ্যে ছিলেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। তাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা, ৫ জন বিচারক, বেসামরিক প্রশাসনের ১৯ কর্মকর্তা, ২৮ পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন পদের ৪৮৭ জন পুলিশ সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ নানা পেশার ১২ জন ও ৫১টি পরিবার।

ঘটনাচক্রে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টাকালে আটক হন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

শেখ হাসিনার দেশত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আত্মগোপন করেছেন, কেউবা গ্রেপ্তার হয়েছেন। নেতারা বলছেন, ৭৫ বছরের পুরোনো যে দল টানা ১৫ বছরের বেশি দেশ শাসন করেছে, তারাই এখন অস্তিত্ব সংকটে।

এদিকে দল গোছানোর ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের প্রথম পদক্ষেপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের একজন বলেন, ‘দলকে পুনর্গঠনে তাকে (হাসিনা) তৃণমূল পর্যায়ের লোকজন বাছাই করতে হবে, তাদের মধ্যে থাকবেন কিছু তরুণ আওয়ামী নেতা; যাদের ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে মানুষের আস্থা আছে, যাদের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং অবশ্যই পরিবারের (হাসিনা) প্রতি অনুগত...এ যাত্রা দীর্ঘ হবে।’

এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের শক্ত ঘাঁটি ও কর্মী বাহিনী রয়েছে। অনেকে বিপথগামী হয়েছেন, যেমনটা ঘটেছে সুবিধাবাদীদের ক্ষেত্রে। সমর্থকদের মধ্যেও এমনটা থাকবে। কিন্তু আমাদের অন্তত এমন কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী থাকা দরকার; যারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে ও নির্বাচন যখনই হোক, তাতে অংশ নেবে। এখন এটাই প্রয়োজন।’

এ পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরার বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রুহুল কবির রিজভীর মতো কয়েকজন নেতার ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করেন তিনি। বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকাকালে ও তারেক রহমান বিদেশে অবস্থানকালে বিএনপির দুর্গ সামলেছেন তারা।

দেশে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগবিরোধী মনোভাব বিরাজ করায় শেখ হাসিনার পরিবার ও এর উত্তরসূরি সজীব ওয়াজেদ জয়ের খুব কম বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন দলটির নেতারা।

‘লোকজন এখনো ক্ষেপে আছেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সময় দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বা বিএনপি কিংবা জামায়াতের নেতৃত্বাধীন সরকার যেই কয়েকটা বছর ক্ষমতায় থাকুক, আমাদের ঘুরে দাড়ানোর সক্ষমতা আছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের আবার সংগঠিত হওয়ার কথা ভাবতে হবে,’ বলেন আওয়ামী লীগের একজন নেতা।

সুপরিকল্পিতভাবে ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা চলছে, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে : মির্জা ফখরুল

সংস্কার শেষে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাবে, আশা ফখরুলের

ছবি

যথাশিগগির সংস্কার শেষে নির্বাচনে যাবে অন্তর্বর্তী সরকার, আশা ফখরুলের

ছবি

হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া

ছবি

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক

দেশে এখনো আওয়ামী লীগের ঘাতকরা রয়ে গেছে - সিলেটে রিজভী

ছবি

নড়াইলে মাশরাফী ও তার বাবাসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

কুষ্টিয়ায় যুবদল নেতার উসকানিমূলক বক্তব্য, ফেসবুকে ভিডিও ভাইরাল

ছবি

বিএনপি নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও ব্যানার-ফেস্টুন প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

ভারতের প্রভুসুলভ আচরণ প্রতিবেশীদের জন্য শুভ নয়: মির্জা ফখরুল

ছবি

নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’র আত্মপ্রকাশ

ছবি

কিশোর হত্যা: সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান কারাগারে

ছবি

কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হবে : ফয়জুল করিম

ছবি

‘যুবলীগ-শ্রমিক লীগই’ পরিবহনে বোমা মেরে বিরোধীদের মামলা দিত

ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ আজ

ছবি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতের শ্রদ্ধা প্রয়োজন: রুহুল কবির রিজভী

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত যথাযথ ও সময়োপযোগী: মির্জা ফখরুল

ছবি

আশুলিয়ায় বিএনপি’র শ্রমিক সমাবেশে হট্টগোল,আহত-৫

ছবি

এক ফ্যাসিবাদ গেলেও আরেক ফ্যাসিবাদ তৈরি করা হচ্ছে - শিবচরে নুরুল হক নূর

নারায়ণগঞ্জে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবকে দলীয় কর্মীদের মারধর

ছবি

সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও স্বামী–সন্তানের ব্যাংকের তথ্য তলব

ছবি

বিএনপির আহমেদ আযম খানের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ

ছবি

নির্বাচন কমিশনের সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ: পদত্যাগের সম্ভাবনা

ছবি

মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় সংগীত ও সংবিধানের ওপর আঘাতকারীদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান সিপিবির

ছবি

বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ফখর উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ

ছবি

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলেন তারেক রহমান

একে একে নিবন্ধন পাচ্ছে আগে বাতিল দলগুলো

ছবি

বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার কাছে ব্যাখ্যা তলব

ছবি

ইসির নিবন্ধন পেল নাগরিক ঐক্য

ছবি

ইসিতে নিবন্ধন পেল গণ অধিকার পরিষদ

ছবি

ফের ৩ দিনের রিমান্ডে গোলাপ

ছবি

এস আলম গ্রুপের গাড়িতে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন, নিলেন সংবর্ধনা

ছবি

বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ

ছবি

নতুন স্বাধীনতা অর্জনে ১৫ বছর সংগ্রাম করেছে বিএনপি : মির্জা ফখরুল

ছবি

নগদ টাকা উত্তোলনের সীমা বাড়ালো বাংলাদেশ ব্যাংক

tab

রাজনীতি

শেখ হাসিনাকে ডুবিয়েছেন চারজন, আমরা ক্ষোভ বুঝতে পারছিলাম, কিন্তু তিনি শোনেননিঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আওয়ামী লীগ নেতারা

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪

‘আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে পারব না’; ‘আমি ফোনে কথা বলতে পারি কারণ আমি আত্মগোপনে আছি,’; ‘নিরাপদ কোনো স্থানে আমি আপনার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করব’; ‘আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে পারব কি না, জানি না কারণ আপনার গতিবিধি নজরদারি করা হবে’।

এরকম কিছু বার্তা ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পেয়েছে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা–কর্মী ও সাবেক মন্ত্রী ও সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবিদের কাছ থেকে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গত এক সপ্তাহে ওই ব্যক্তিদের কারও কারও সঙ্গে অজ্ঞাত স্থানে দেখা করতে এবং কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছে যারা বিরোধী পক্ষ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ‘প্রতিশোধের শিকার’ হওয়ার শঙ্কায় আত্মগোপনে আছেন।

তাদের অভিন্ন কথা, ‘শেখ হাসিনা দল ও জনগণকে পরিত্যাগ করেছেন।’ আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আপা (হাসিনা) আমাদের পরিত্যাগ করেছেন।’

‘নেতা–কর্মীদের পরিত্যাগের’ এই অনুভূতি অনেকেরই যারা কেউ ৫ আগস্টের ঘটনাবলি আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি। সেদিন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে তার বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ভারতে রয়েছেন।

শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত তার মন্ত্রিসভার সদস্য, এমনকি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও ‘পুরোপুরি বিস্মিত’ করেছে, আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এক নেতা বলেন, ‘আমরা টেলিভিশন থেকে এটা জেনেছি।’

এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা তাদের জীবন নিয়েই বিপদে পড়েন। ‘বিক্ষোভকারী, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী এবং সুযোগসন্ধানীরা’ আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়গুলো নিশানা বানান। চালানো হয় ভাঙচুর; অগ্নিসংযোগ, লুট।

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘(৫ আগস্ট শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর) যখন সেনাপ্রধান বেলা তিনটার দিকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ও মানুষ তা শুনতে টেলিভিশনের পর্দায় মনযোগী ছিলেন, তখনই আমরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাই।’

আরেক নেতা, যিনি মন্ত্রী ছিলেন, বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা ধরা পড়লে লোকজন আমাদের পিটিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারতেন।’

আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৬ বছরের ( আসলে সাড়ে ১৫ বছরের) শাসনামলে শেখ হাসিনার সরকার বিরোধী দলের নেতাদের নিশানা করে কারাগারে পাঠায়, মারধর করে, ভয়ভীতি দেখায় ও হয়রানি করে। হঠাৎই পরিস্থিতি উল্টে যায়।

সাম্প্রতিকতম ঘটনার (শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগ) খানিকটা পেছন ফিরে তাকিয়ে কেউ কেউ অনুশোচনা করছেন, বিশেষ করে গত জুলাইয়ে শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরে ৩–৪ আগস্ট ছাত্র–জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভাঙেন। সেদিনই সরকারের পতন ঘটে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য আত্মগোপনে থাকা ওই নেতাদের একজন দলের অভ্যন্তরীণ একটি স্বার্থগোষ্ঠীকে দায়ী করে বলেছেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের কথা শোনা বন্ধ করে দেন।’ এই গোষ্ঠীকে ‘গ্যাং অব ফোর’ বা ‘চারজনের গ্যাং’ বলে আখ্যায়িত করেন নেতাদের একজন। তিনি বলেন, গোষ্ঠীটি শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা বুঝতে দেয়নি।

তিনি ওই গোষ্ঠীর চারজনের নাম বলেন – শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ‘চারজনের এই দল তার (হাসিনা) পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ব্যক্তিদের ওপর তার ছিল অন্ধবিশ্বাস। তার যে সহজাত রাজনৈতিক প্রবৃত্তি ছিল, তা তিনি তাদের কারণে হারিয়েছেন।’

এ বছরের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপিকে না আনা শেখ হাসিনার একটি ‘বড় ভুল’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। সূত্রগুলো বলেছে, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে লন্ডনে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।

একটি সূত্রের ভাষ্যমতে, ‘আড়ালে থাকা একটি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রস্তাবও দেওয়া হয় (বিএনপিকে নির্বাচনে আনার)। আমাদের ধারণা, তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় চ্যানেলটি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের এক বছর আগেই ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়...কিন্তু শেখ হাসিনা ওই প্রস্তাবে সবুজসংকেত দেননি।’

আওয়ামী লীগের একজন নেতার বক্তব্য, বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি শেখ হাসিনার প্রত্যাখ্যান করা ছিল ‘সাংঘাতিক ভুল’। কেননা, একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা গেলে বিরোধীদের রাগ–ক্ষোভ হয়তো মিটে যেত।

ওই নেতা আরও বলেন, ‘দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, পুলিশের নিষ্ঠুরতায় জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা বুঝছিলাম। বিএনপিকে নির্বাচনী তরিতে ওঠানো গেলে সেই ক্ষোভ হয়তো থামানোও যেত। তাতে আমরাই আবার জিততে পারতাম এবং দল ক্ষমতায় থাকত।’

নেতা–কর্মীরা মনে করেন, বিশেষ করে গত জানুয়ারির নির্বাচনে জেতার পর শেখ হাসিনা আরও একগুঁয়ে হয়ে ওঠেন ও কোনো পরামর্শ শুনতেন না। ওই নেতা বলেন, ‘টানা চতুর্থবার জিতে তিনি (হাসিনা) অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন এবং কোটা সংস্কার নিয়ে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে সৃষ্ট ক্ষোভের মাত্রা বুঝতে ব্যর্থ হন।’

সূত্রগুলো বলেছে, কৌশলে কিছু নেতা শেখ হাসিনাকে জুলাইয়ের শুরুতে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। (হাসিনা সরকারের) কফিনে শেষ পেরেকটি তখনই ঠোকা হিয়ে যায়, যখন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা ছাত্রনেতাদের তুলে নিয়ে যান এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ও আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারে জোরপূর্বক প্রতিশ্রুতি আদায় করে ছেড়ে দেন।

এ কৌশল হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়। কর্মসূচি প্রত্যাহারে কীভাবে জোরপূর্বক প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়েছে, ছাত্রনেতারা সেই বিষয় জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেন। এটি পরপর কিছু ঘটনার সূত্রপাত ঘটায় এবং শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

শেখ হাসিনার পতনের পর জীবনাশঙ্কায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা–কর্মী ও বুদ্ধিজীবী দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, আশ্রয় নেওয়া এই ৬২৬ জনের মধ্যে ছিলেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। তাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা, ৫ জন বিচারক, বেসামরিক প্রশাসনের ১৯ কর্মকর্তা, ২৮ পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন পদের ৪৮৭ জন পুলিশ সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ নানা পেশার ১২ জন ও ৫১টি পরিবার।

ঘটনাচক্রে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টাকালে আটক হন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

শেখ হাসিনার দেশত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আত্মগোপন করেছেন, কেউবা গ্রেপ্তার হয়েছেন। নেতারা বলছেন, ৭৫ বছরের পুরোনো যে দল টানা ১৫ বছরের বেশি দেশ শাসন করেছে, তারাই এখন অস্তিত্ব সংকটে।

এদিকে দল গোছানোর ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের প্রথম পদক্ষেপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের একজন বলেন, ‘দলকে পুনর্গঠনে তাকে (হাসিনা) তৃণমূল পর্যায়ের লোকজন বাছাই করতে হবে, তাদের মধ্যে থাকবেন কিছু তরুণ আওয়ামী নেতা; যাদের ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে মানুষের আস্থা আছে, যাদের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং অবশ্যই পরিবারের (হাসিনা) প্রতি অনুগত...এ যাত্রা দীর্ঘ হবে।’

এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের শক্ত ঘাঁটি ও কর্মী বাহিনী রয়েছে। অনেকে বিপথগামী হয়েছেন, যেমনটা ঘটেছে সুবিধাবাদীদের ক্ষেত্রে। সমর্থকদের মধ্যেও এমনটা থাকবে। কিন্তু আমাদের অন্তত এমন কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী থাকা দরকার; যারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে ও নির্বাচন যখনই হোক, তাতে অংশ নেবে। এখন এটাই প্রয়োজন।’

এ পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরার বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রুহুল কবির রিজভীর মতো কয়েকজন নেতার ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করেন তিনি। বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকাকালে ও তারেক রহমান বিদেশে অবস্থানকালে বিএনপির দুর্গ সামলেছেন তারা।

দেশে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগবিরোধী মনোভাব বিরাজ করায় শেখ হাসিনার পরিবার ও এর উত্তরসূরি সজীব ওয়াজেদ জয়ের খুব কম বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন দলটির নেতারা।

‘লোকজন এখনো ক্ষেপে আছেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সময় দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বা বিএনপি কিংবা জামায়াতের নেতৃত্বাধীন সরকার যেই কয়েকটা বছর ক্ষমতায় থাকুক, আমাদের ঘুরে দাড়ানোর সক্ষমতা আছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের আবার সংগঠিত হওয়ার কথা ভাবতে হবে,’ বলেন আওয়ামী লীগের একজন নেতা।

back to top