নভেম্বরে গণভোটের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া আটটি ধর্মভিত্তিক দলের একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নেতা বর্তমান সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই— বিএনপি নেতাদের এমন যুক্তির জবাবে বলেছেন, আইন অনুযায়ী ২০২৬ সালে দেশে সংসদ নির্বাচনেরও সুযোগ নেই।
আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান অনুযায়ী গঠিত হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
সোমবার ঢাকার পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
শনিবার দুপুরে ঢাকায় ‘নির্বাচনি ইশতেহারে প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “বর্তমান সংবিধানে গণভোট নিয়ে কিছু নেই। আগামীতে নির্বাচনে পাস করে সংসদে গিয়ে সংবিধানে গণভোট যুক্ত করার পর গণভোট আসতে পারে।"
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক সাংবাদিক জানতে চাইলে জামায়াত নেতা আযাদ বলেন “এই কথা যদি বলা হয়, গণভোটের বিধান নাই। সেটা সংবিধানে নাই, পঞ্চম সংশোধনীর আগে কিন্তু গণভোট ছিল। তাহলে একটা ‘ফেসিজিমের’ আমলেই যেই সংবিধানটা সংশোধন করা হয়েছে, এটা কিন্তু কোর্টে মামলা চলছে। চূড়ান্ত রায় এলে আমরা বুঝব, সেটা কোথায় গিয়ে শেষ হয়!
“এই প্রশ্ন যদি কোনো রাজনৈতিক দল তোলে, তাহলে তারা ‘ফেসিবাদের’ অবস্থানকে সমর্থন করে, এটা বোঝা যায়। আমিও তাহলে একটা কথা বলতে পারি, পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হওয়ার কথা। ২৬ সালে কি পাঁচ বছর পূর্তি হয়? তাহলে এটা কি সংবিধানে আছে? এ সংবিধানের কথা বলে ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনা বারবার জাতিকে কিন্তু বিপদের মধ্যে ফেলেছে?”
তিনি বলেন, “সংবিধান বড়, নাকি জনগণের অভিপ্রায় বড়? জনগণের জন্য সংবিধান, নাকি সংবিধানের জনগণ?
“আমাদের মাননীয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল সাহেব বহুবার এই বক্তব্য দিয়েছেন। তো তিনি যদি আজ থেকে কয়েক বছর আগে ‘ফেসিবাদের’ আমলে এ বক্তব্য দিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, আজ তो এই কথা আমরাও বলতে পারি যে সংবিধানে পাঁচ বছরের পরপর নির্বাচন ছাড়া আর কোনো বিধানে নির্বাচন হতে পারে না।”
জামায়াতের এই নেতা বলেন, “কোনো কোনো কারণে সংসদ বাদ হইতে পারে, এটা বিষয় আছে। কিন্তু আমার কথা হলো, সংবিধানের কথা যে আপনারা উঠাচ্ছেন, এই সরকার কি সংবিধানের অধীনে গঠিত হয়েছে?
সুতরাং এই জায়গায় হাত দিতে গেলে বহু ধরনের জটিলতা তৈরি হবে। কারো যদি স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন মানসিকতা দেশের জন্য, দেশের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হয়, মৌলিক সংস্কারের দিকে এলে আমাদের সমাধানের দিকে যেতে হবে, জটিলতা তৈরি করা সংবিধানের প্রশ্নে নেই। সমাধানের পথকে রুদ্ধ করে দেওয়া। আল্টিমেটলি তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় কিনা এই প্রশ্ন তৈরি হয়ে যাবে। এজন্য আমরা সেদিকে যেতে চাই না। আমরা একটা সুন্দর সমাধান চাই। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হোক। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসুক।”
সরকারের সমালোচনা করে আযাদ বলেন, “ঐকমত্য কমিশন যেহেতু আদেশ জারির কথা বলেছে। সরকারের ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা যথেষ্ট টাইম ছিল। তো আপনি সেখানে দুই সপ্তাহেরও অধিক সময় জিনিসটা ঝুলেই রেখেছেন। এটা আমরা মনে করি জাতির প্রত্যাশিত বিষয় ছিল না। এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় ছিল। অহেতুক এখানে সময় নষ্ট করা হচ্ছে।
আরেকটি দলের পক্ষ থেকে, বিশেষ করে আমরা বিএনপির কথা বলব। আমরা সমাধানে পৌঁছার জন্য ঐকমত্য কমিশনের এই আদেশ জারি এবং সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য আশা করেছিলাম সবাই এগিয়ে আসবে।”
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোট সংসদ নির্বাচনের আগে হবে, নাকি সংসদ নির্বাচনের দিনে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে দলগুলোকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার।
সোমবার সেই সময় শেষ হলেও দলগুলোর মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। জামায়াতের নেতারা বলছেন, তারা আলোচনায় বসতে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সাড়া পাননি।
বিএনপি বলছে, কোনো দলের ডাকে তারা আলোচনায় বসবে না। বসলেও সরকারের আহ্বানে বসবে।
বিএনপির এমন অবস্থানের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত নেতা আযাদ বলেন, “আজ আবার বাস্তবায়ন নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হচ্ছে, সেজন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম বসে আলোচনা করার জন্য। সে আলোচনায় ওনারা সাড়া দেন নাই এবং ওনারা জামাতের ডাকে সাড়া দেবেন না বলেছেন।
“তা আমরা বলেছি, আপনারা জামাতের ডাকে যে সাড়া দিতে চান না কী কারণে আমরা জানি না। কারণ যাই হোক, এটা অতীত রাজনীতি, একটা ‘ব্যাড কালচার’ ছিল।
“এবার ওনারা প্রকাশ্যে বলে দিলেন যে, জামায়াতের সাথে বসবে না। ভালো কথা, আমরাও প্রকাশ্যে বলে দিলাম যে আপনারা ডাকেন আমরা যাব। তো ওনারা সে ডাকটা দিতে পারেন নাই, এতে বোঝা যাচ্ছে যে আমরা যে একটা পজিটিভ মাইন্ডে আলোচনার ভিত্তিতে সলিউশন চেয়েছিলাম, সে পজিটিভ মাইন্ডটাকে ওনারা সম্মান জানাতে পারে নাই।”
দাবি আদায়ে মঙ্গলবার পল্টনের আশপাশের এলাকায় কয়েক লাখ লোক সমাগম করার ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামের এই নেতা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
নভেম্বরে গণভোটের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া আটটি ধর্মভিত্তিক দলের একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নেতা বর্তমান সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই— বিএনপি নেতাদের এমন যুক্তির জবাবে বলেছেন, আইন অনুযায়ী ২০২৬ সালে দেশে সংসদ নির্বাচনেরও সুযোগ নেই।
আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান অনুযায়ী গঠিত হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
সোমবার ঢাকার পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
শনিবার দুপুরে ঢাকায় ‘নির্বাচনি ইশতেহারে প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “বর্তমান সংবিধানে গণভোট নিয়ে কিছু নেই। আগামীতে নির্বাচনে পাস করে সংসদে গিয়ে সংবিধানে গণভোট যুক্ত করার পর গণভোট আসতে পারে।"
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক সাংবাদিক জানতে চাইলে জামায়াত নেতা আযাদ বলেন “এই কথা যদি বলা হয়, গণভোটের বিধান নাই। সেটা সংবিধানে নাই, পঞ্চম সংশোধনীর আগে কিন্তু গণভোট ছিল। তাহলে একটা ‘ফেসিজিমের’ আমলেই যেই সংবিধানটা সংশোধন করা হয়েছে, এটা কিন্তু কোর্টে মামলা চলছে। চূড়ান্ত রায় এলে আমরা বুঝব, সেটা কোথায় গিয়ে শেষ হয়!
“এই প্রশ্ন যদি কোনো রাজনৈতিক দল তোলে, তাহলে তারা ‘ফেসিবাদের’ অবস্থানকে সমর্থন করে, এটা বোঝা যায়। আমিও তাহলে একটা কথা বলতে পারি, পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হওয়ার কথা। ২৬ সালে কি পাঁচ বছর পূর্তি হয়? তাহলে এটা কি সংবিধানে আছে? এ সংবিধানের কথা বলে ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনা বারবার জাতিকে কিন্তু বিপদের মধ্যে ফেলেছে?”
তিনি বলেন, “সংবিধান বড়, নাকি জনগণের অভিপ্রায় বড়? জনগণের জন্য সংবিধান, নাকি সংবিধানের জনগণ?
“আমাদের মাননীয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল সাহেব বহুবার এই বক্তব্য দিয়েছেন। তো তিনি যদি আজ থেকে কয়েক বছর আগে ‘ফেসিবাদের’ আমলে এ বক্তব্য দিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, আজ তो এই কথা আমরাও বলতে পারি যে সংবিধানে পাঁচ বছরের পরপর নির্বাচন ছাড়া আর কোনো বিধানে নির্বাচন হতে পারে না।”
জামায়াতের এই নেতা বলেন, “কোনো কোনো কারণে সংসদ বাদ হইতে পারে, এটা বিষয় আছে। কিন্তু আমার কথা হলো, সংবিধানের কথা যে আপনারা উঠাচ্ছেন, এই সরকার কি সংবিধানের অধীনে গঠিত হয়েছে?
সুতরাং এই জায়গায় হাত দিতে গেলে বহু ধরনের জটিলতা তৈরি হবে। কারো যদি স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন মানসিকতা দেশের জন্য, দেশের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হয়, মৌলিক সংস্কারের দিকে এলে আমাদের সমাধানের দিকে যেতে হবে, জটিলতা তৈরি করা সংবিধানের প্রশ্নে নেই। সমাধানের পথকে রুদ্ধ করে দেওয়া। আল্টিমেটলি তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় কিনা এই প্রশ্ন তৈরি হয়ে যাবে। এজন্য আমরা সেদিকে যেতে চাই না। আমরা একটা সুন্দর সমাধান চাই। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হোক। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসুক।”
সরকারের সমালোচনা করে আযাদ বলেন, “ঐকমত্য কমিশন যেহেতু আদেশ জারির কথা বলেছে। সরকারের ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা যথেষ্ট টাইম ছিল। তো আপনি সেখানে দুই সপ্তাহেরও অধিক সময় জিনিসটা ঝুলেই রেখেছেন। এটা আমরা মনে করি জাতির প্রত্যাশিত বিষয় ছিল না। এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় ছিল। অহেতুক এখানে সময় নষ্ট করা হচ্ছে।
আরেকটি দলের পক্ষ থেকে, বিশেষ করে আমরা বিএনপির কথা বলব। আমরা সমাধানে পৌঁছার জন্য ঐকমত্য কমিশনের এই আদেশ জারি এবং সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য আশা করেছিলাম সবাই এগিয়ে আসবে।”
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোট সংসদ নির্বাচনের আগে হবে, নাকি সংসদ নির্বাচনের দিনে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে দলগুলোকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার।
সোমবার সেই সময় শেষ হলেও দলগুলোর মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। জামায়াতের নেতারা বলছেন, তারা আলোচনায় বসতে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সাড়া পাননি।
বিএনপি বলছে, কোনো দলের ডাকে তারা আলোচনায় বসবে না। বসলেও সরকারের আহ্বানে বসবে।
বিএনপির এমন অবস্থানের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত নেতা আযাদ বলেন, “আজ আবার বাস্তবায়ন নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হচ্ছে, সেজন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম বসে আলোচনা করার জন্য। সে আলোচনায় ওনারা সাড়া দেন নাই এবং ওনারা জামাতের ডাকে সাড়া দেবেন না বলেছেন।
“তা আমরা বলেছি, আপনারা জামাতের ডাকে যে সাড়া দিতে চান না কী কারণে আমরা জানি না। কারণ যাই হোক, এটা অতীত রাজনীতি, একটা ‘ব্যাড কালচার’ ছিল।
“এবার ওনারা প্রকাশ্যে বলে দিলেন যে, জামায়াতের সাথে বসবে না। ভালো কথা, আমরাও প্রকাশ্যে বলে দিলাম যে আপনারা ডাকেন আমরা যাব। তো ওনারা সে ডাকটা দিতে পারেন নাই, এতে বোঝা যাচ্ছে যে আমরা যে একটা পজিটিভ মাইন্ডে আলোচনার ভিত্তিতে সলিউশন চেয়েছিলাম, সে পজিটিভ মাইন্ডটাকে ওনারা সম্মান জানাতে পারে নাই।”
দাবি আদায়ে মঙ্গলবার পল্টনের আশপাশের এলাকায় কয়েক লাখ লোক সমাগম করার ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামের এই নেতা।