সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ শিকার বন্ধ করুন

সুন্দরবনের প্রায় ৭১৫ বর্গকিলোমিটার অভয়ারণ্য এলাকায় অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। সাধারণ জেলেদের কাছে ওই এলাকার খাল ইজারা দিয়ে বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য এ চক্রের মূলহোতা বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ এলাকা অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও মাছ প্রজননের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় ও খালে মাছ ধরা, কাঠ কাটাসহ সব ধরনের বনজ দ্রব্য আহরণ নিষিদ্ধ। কারণ বঙ্গোপসাগর থেকে বয়ে আসা এসব খাল ও নদ-নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মা-মাছ এসে ডিম ছাড়ে। এ কারণে সুন্দরবনের অন্যান্য নদী-খালের তুলনায় এসব খালে বেশি মাছ পাওয়া যায়।

অথচ এসব অভয়ারণ্যেই অবাধে চলছে মাছ শিকার। তাও সাধারণ প্রক্রিয়ায় নয়, ‘অসাধারণ প্রক্রিয়ায়’! গণমাধ্যমের প্রতিবেদন জানাচ্ছে- সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের অভয়ারণ্য এলাকায় জেলেরা ঘন ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরছে। শুধু তাই নয়, এই এলাকায় কীটনাশক দিয়ে মাছ শিকার করছে জেলে নামের একশ্রেণির দুবর্ৃৃত্তরা। এভাবে মাছ শিকার করার কারণে সুন্দরবনের মাছের প্রজননক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ঘন ফাঁসের জালে মাছ শিকার করলে শুধু ছোট মাছই নয়, সব প্রজাতির জলজ প্রাণী উঠে আসে। আর কীটনাশক যেখানে প্রয়োগ করা হয়, সেখানে ছোট-বড় সব প্রজাতির মাছ মারা যায়। দুষ্কৃতকারীরা শুধু বড় মাছগুলো সংগ্রহ করে, ছোট মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী ফেলে দেয়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো বড় মাছের খাবার। ফলে ওই এলাকার খাদ্যচক্রেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। আবার এই কীটনাশক মিশ্রিত পানি ভাটার টানে গভীর সমুদ্রের দিকে যাওয়ায় সেই এলাকার মাছও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, যেসব খালে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়, তার বিষক্রিয়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় চার মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত থাকে।

সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা থাকার কথা। কারণ বনের নির্দিষ্ট এলাকার দায়িত্বে বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও। এরপরও সেখানে নির্বিচারে মাছ শিকার করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ কী? তারা আসলে কী দায়িত্ব পালন করছে।

কীটনাশক প্রয়োগে মাছ শিকার, বনজ সম্পদ পাচার, বন্যপ্রাণী নিধনসহ বন ধ্বংসকারী পদক্ষেপ ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। তাই এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

‘সম্পাদকীয়’ : আরও খবর

» গোবিন্দগঞ্জে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখলের অভিযোগ আমলে নিন

» আত্রাই নদীর বালু লুট বন্ধ করুন

» ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মানুষ হত্যা: কঠোর ব্যবস্থা নিন

» অবৈধ ইটভাটা: প্রশাসনের দুর্বলতা ও পরিবেশের সংকট

» ফসলি জমি রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিন

» শেষ না হওয়া সেতু, শেষ না হওয়া ভোগান্তি

» সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে হামলা: আদি ও অকৃত্রিম ফ্যাসিবাদের জঘন্য রূপ

» পাহাড় কেটে কেন পানের বরজ?

» মতপ্রকাশের জন্য গ্রেপ্তার: গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়

» সাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশনে জনবল সংকট দূর করুন

» চাঁদপুর সেচ প্রকল্প রক্ষায় ব্যবস্থা নিন

সম্প্রতি