alt

মতামত » চিঠিপত্র

চিঠি : বাড়ছে বাল্যবিয়ে

: রোববার, ২৬ নভেম্বর ২০২৩

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও আশাতীত হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রশাসন ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংস্থার কঠোর উদ্যোগে বিগত কয়েক বছর শিথিল ছিল বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়েমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও সামাজিক সংগঠন জনসাধারণ বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে অনেকটা সচেতনতা গড়ে তোলা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা বাল্যবিয়েমুক্ত হলেও মফস্বলে আবারও এর মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর থেকে আবারও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ব্যাধি। প্রত্যন্ত অঞ্চল গ্রাম-গঞ্জে প্রাথমিক থেকে শুরু করে নিম্ন মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই এ তালিকায় বেশি।

নানা অজুহাত দেখিয়ে মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হতে না হতেই বাবা-মা পাত্র দেখা শুরু করেন। বাবা-মারা ধারণা করেন মেয়েদের বয়স বেড়ে গেলে বিয়ের উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যাবে না। এসব কুসংস্কার আর বিভ্রান্তিকর পথ থেকে গ্রামের মানুষগুলো আজও অগ্রসর হতে পারেনি। তবে এর সঙ্গে সায় দিয়ে যাচ্ছেন সদ্য নিয়োজিত কিছু ডিফেন্সের সরকারি চাকরিজীবী। যারা বিয়ের জন্য কিশোরী পাত্রী খোঁজেন। ৭ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীরা এ তালিকায় দেখা যায়।

গ্রামের সমাজপতিরা বাল্যবিয়ের খবর জেনেও চুপ থাকেন। প্রতিবাদ করলে মেয়ের পরিবার থেকে বলা হয়, স্কুলে বা বাড়িতে বখাটে যুবকরা মেয়েদের বিরক্ত করে। যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে মেয়েকে দ্রুত পাত্রস্থ করতে হচ্ছে। কোনো কোনো পরিবার থেকে বলা হয়, গরিবের সংসারে মেয়েরা অনেকটা বোঝা। তাই ভালো বা পয়সাওয়ালা অথবা প্রবাসী পাত্র পেয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। ১১-১৫ বছর বয়সী মেয়েদের অর্থের লোভে বয়স্ক পাত্রদের কাছেও বাবা মা তুলে দিচ্ছেন। আবার সরকারি চাকরিজীবী ছেলের প্রস্তাবের লোভ সামলাতে না পেরে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে হলেও মেয়ের সুুখের জন্য বাল্যবিয়ে দিতে রাজি হচ্ছেন অভিভাবকরা। যেখানে নাবালিকা মেয়ের সম্মতিও নেয়া হচ্ছে না। প্রশাসন ও থানা পুলিশদের আড়ালেই বহু বাল্যবিয়ে এখনো চলমান।

ইউনাইটেড নেশনস পলুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ) তথ্য বলছে, বাল্যবিয়েতে এখনও দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এখানে ১৮ বছর বয়সের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বাল্যবিবাহ বাড়ার ফলে অল্প বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৭৪টি শিশুর জন্ম দিচ্ছেন ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মায়েরা। বাল্যবিবাহের সার্বিক প্রভাব পড়ে মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যে। বাল্যবিবাহের কারণে মা ও নবজাতক মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে। উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিয়ের পর আর স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না।

ইদানীং অল্প বয়সে বিবাহবন্ধনে জড়ানোর ফলে খুব বেশি ডিভোর্সের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। যে বয়সে পড়াশুনা করার সময়, সেই বয়সে মাথায় চেপে দিচ্ছে ভারি সংসার। এর চাপ সহ্য করতে না পেরে অকালে আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে অনেক কিশোরী।

সমাজ থেকে এই ব্যাধি দূর করা না হলে হুমকির মুখে পড়বে সমাজ দেশ। তাই প্রয়োজন প্রশাসন, থানা ও জনপ্রতিনিধিদের জোরালো পদক্ষেপ নেয়া। সমাজের সবাইকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মানুষকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। অন্যথায় সমাজ ও জাতির জন্য এটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।

রুবেল আহম্মেদ

কর্মজীবী নারীর অদৃশ্য মানসিক বোঝা

নগর সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যের বিলুপ্তি

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আগাম সতর্কবার্তাই কি যথেষ্ট?

সুলতানপুরে করতোয়া নদীর তাণ্ডব: নদীভাঙনে মানুষের জীবন বিপন্ন

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সম্ভাবনা বিস্তৃত, অনিয়মের ছায়াও গভীর

গেন্ডারিয়ায় সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে অনিয়ম: জনদূর্ভোগ বৃদ্ধি

প্রবীণদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি

পলিভিনাইলের ব্যবহার প্রতিরোধ জরুরি

বৈধ সনদধারীদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি

টেকসই দুর্যোগ প্রস্তুতিতে জরুরি বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন

জলবায়ু পরিবর্তন ও নারী ও কিশোরীদের ঝুঁকি

মেধা হারাচ্ছে দেশ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : অযৌক্তিক ফি, সেশনজট ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলায় বিপর্যস্ত শিক্ষার্থী

সামাজিক মাধ্যমের ভুবনে জনতুষ্টিবাদের নতুন রূপ

ভেজাল খেজুরগুড় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা

প্লাস্টিক বর্জ্যে মাছের মৃত্যু: সমাধান কোথায়

খোলা ম্যানহোল: ঢাকার রাজপথে এক নীরব মরণফাঁদ

গণপরিবহন: প্রতিদিনের যন্ত্রণার শেষ কবে?

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ

সাইবার বুলিং ও ভার্চুয়াল অপরাধ: তরুণদের অদৃশ্য বিপদ

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরজীবনের চরম ভোগান্তি

রাবি মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার চাই

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

কক্সবাজার: উন্নয়নের পথে, বিপন্ন প্রকৃতি

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে নতুন সম্ভাবনার ভোর

প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর না হলে মানোন্নয়ন অসম্ভব

রাবির আবাসন সংকট

সব হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সেবা চালু করা হোক

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা

পানি সংকট: জীবন ও সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি

ই-লার্নিং: সীমান্তহীন শিক্ষার নতুন দিগন্ত

আজিমপুর কলোনির অব্যবস্থাপনা

জনস্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক : তামাকজাত পণ্য

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়: অবস্থান, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতি ও বাংলাদেশের সমুদ্রকৌশল

tab

মতামত » চিঠিপত্র

চিঠি : বাড়ছে বাল্যবিয়ে

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

রোববার, ২৬ নভেম্বর ২০২৩

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও আশাতীত হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রশাসন ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংস্থার কঠোর উদ্যোগে বিগত কয়েক বছর শিথিল ছিল বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়েমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও সামাজিক সংগঠন জনসাধারণ বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে অনেকটা সচেতনতা গড়ে তোলা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা বাল্যবিয়েমুক্ত হলেও মফস্বলে আবারও এর মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর থেকে আবারও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ব্যাধি। প্রত্যন্ত অঞ্চল গ্রাম-গঞ্জে প্রাথমিক থেকে শুরু করে নিম্ন মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই এ তালিকায় বেশি।

নানা অজুহাত দেখিয়ে মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হতে না হতেই বাবা-মা পাত্র দেখা শুরু করেন। বাবা-মারা ধারণা করেন মেয়েদের বয়স বেড়ে গেলে বিয়ের উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যাবে না। এসব কুসংস্কার আর বিভ্রান্তিকর পথ থেকে গ্রামের মানুষগুলো আজও অগ্রসর হতে পারেনি। তবে এর সঙ্গে সায় দিয়ে যাচ্ছেন সদ্য নিয়োজিত কিছু ডিফেন্সের সরকারি চাকরিজীবী। যারা বিয়ের জন্য কিশোরী পাত্রী খোঁজেন। ৭ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীরা এ তালিকায় দেখা যায়।

গ্রামের সমাজপতিরা বাল্যবিয়ের খবর জেনেও চুপ থাকেন। প্রতিবাদ করলে মেয়ের পরিবার থেকে বলা হয়, স্কুলে বা বাড়িতে বখাটে যুবকরা মেয়েদের বিরক্ত করে। যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে মেয়েকে দ্রুত পাত্রস্থ করতে হচ্ছে। কোনো কোনো পরিবার থেকে বলা হয়, গরিবের সংসারে মেয়েরা অনেকটা বোঝা। তাই ভালো বা পয়সাওয়ালা অথবা প্রবাসী পাত্র পেয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। ১১-১৫ বছর বয়সী মেয়েদের অর্থের লোভে বয়স্ক পাত্রদের কাছেও বাবা মা তুলে দিচ্ছেন। আবার সরকারি চাকরিজীবী ছেলের প্রস্তাবের লোভ সামলাতে না পেরে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে হলেও মেয়ের সুুখের জন্য বাল্যবিয়ে দিতে রাজি হচ্ছেন অভিভাবকরা। যেখানে নাবালিকা মেয়ের সম্মতিও নেয়া হচ্ছে না। প্রশাসন ও থানা পুলিশদের আড়ালেই বহু বাল্যবিয়ে এখনো চলমান।

ইউনাইটেড নেশনস পলুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ) তথ্য বলছে, বাল্যবিয়েতে এখনও দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এখানে ১৮ বছর বয়সের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বাল্যবিবাহ বাড়ার ফলে অল্প বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৭৪টি শিশুর জন্ম দিচ্ছেন ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মায়েরা। বাল্যবিবাহের সার্বিক প্রভাব পড়ে মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যে। বাল্যবিবাহের কারণে মা ও নবজাতক মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে। উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিয়ের পর আর স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না।

ইদানীং অল্প বয়সে বিবাহবন্ধনে জড়ানোর ফলে খুব বেশি ডিভোর্সের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। যে বয়সে পড়াশুনা করার সময়, সেই বয়সে মাথায় চেপে দিচ্ছে ভারি সংসার। এর চাপ সহ্য করতে না পেরে অকালে আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে অনেক কিশোরী।

সমাজ থেকে এই ব্যাধি দূর করা না হলে হুমকির মুখে পড়বে সমাজ দেশ। তাই প্রয়োজন প্রশাসন, থানা ও জনপ্রতিনিধিদের জোরালো পদক্ষেপ নেয়া। সমাজের সবাইকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মানুষকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। অন্যথায় সমাজ ও জাতির জন্য এটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।

রুবেল আহম্মেদ

back to top