মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
মডার্ন কালচার আমাদের বিশ্বাস করায় ভোগবাদই সব। চাকচিক্য ছাড়া জীবন মরীচিকা। তাই আমরা দিনে রাতে ছুটতে থাকি চাকচিক্যের পেছনে। অর্থ উপার্জন, বিলাসিতার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর বাসনায় আমরা পরিণত হচ্ছি রোবটে। যান্ত্রিক জীবন আমাদের করে তুলছে আরও যান্ত্রিক! দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মধ্যবিত্ত সমাজকে দুমড়েমুচড়ে দিয়েছে। চেষ্টা করেও কূল পাচ্ছে না। অকূল দরিয়ায় হাবুডুবু খেতে খেতে রোজ ভাবে, এহেন ত্রাহি দশা থেকে মুক্তির উপায় কী! উপায় আছে, কিন্তু সে উপায়কে আমারা সদর্পে এড়িয়ে চলি।
মিনিমালিজম! এই ধারণাটি গত কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিশ্বব্যাপী। মিনিমালিজম হচ্ছে, যা আমাদের জীবনে অধিক গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোকে ধারণ করা! আর বাকিসব ত্যাগ করা। বাকিসব বলতে যা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্যদিকে নিয়ে যায়, কঠিন করে তোলে জীবন সেসবকে বোঝায়। সহজ, সাধারণ, গোছালো একটি জীবনের আকাঙ্খাই মিনিমালিজম। কোন কোন জিনিস জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান, আর কোনগুলো আপাতদৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় মনে হলেও অপ্রয়োজনীয় সেগুলোকে ছুঁড়ে ফেলা। যিনি মিনিমালিজমকে ধারণ করেন, তিনি মিনিমালিস্ট। একজন মিনিমালিস্ট জীবনকে ভালোবাসতে জানে, নিজেকে ভালোবাসতে জানে! আপনার বেড রুমে কেবল একটি বিছানা, থাকতে পারে একটি সেন্টার টেবিল, এক কোণায় ফুলের টব। শুনতে সাধারণ, অথচ দেখতে চমৎকার!
আধুনিকতার পিছে ছুটতে ছুটতে আমরা ভুলতে বসেছি সম্পর্কের মানে, হয়তো প্রিয়জনের সঙ্গে রোজ কথা হয়, অনুভূতি আসে? দায়সারা আলাপে দায়িত্ব সারা। আজকের বাজারে একজন মানুষ দেখান, যার ঋণ নেই! কমার নামগন্ধ নেই, বরং যত দিন গড়ায় তত বাড়ে। চাহিদারা হন্যে হয়, তাদের মেটাতে আমরা কাজ, কাজ এবং কাজ নিয়ে পড়ে থাকি। কারণ কাজ আমাদের অর্থ এনে দেবে। অর্থ আমাদের ভোগের সামগ্রী এনে দেবে। সো কোল্ড সুখ তখন খানিকটা সময়ের জন্য ধরা দেবে।
আপনার পরিবারের হয়তো চাহিদা বেশি। কিন্তু আপনার স্যালারি পারছে না বাজারের সঙ্গে যুদ্ধে টিকে থাকতে। একটু বিশ্রাম নিন। ভাবুন সত্যিকার অর্থে কী কী হলে বেঁচে থাকতে পারবেন। তালিকায় শুধু সেসব রাখুন। অন্যসব ছুড়ে ফেলে দিন। সুন্দর করে বাঁচাটাই শান্তি, লোক দেখানো বিলাসিতায় সাময়িক সুখ মিললেও তার মূল্য চুকাতে হয় বেশ বাজেভাবেই! আপনার যা আছে তাতে যদি সন্তোষ প্রকাশ করতে পারেন, কৃতজ্ঞ হতে পারেন, দেখবেন অনেক দুঃশ্চিন্তা মাথা থেকে সরে গেছে। মাথায় যদি চিন্তা না থাকে, কাজে মনোযাগী হতে পারবেন, বাড়তি বোঝা থাকবে না। চাপমুক্ত মস্তিষ্কও একপ্রকার মূলধন! যারা ক্রিয়েটিভ পার্সন, লেখালেখি করেন, ছবি আঁকেন, সিনেমা বানান- তাদের মাথায় যদি দুনিয়ার সব চিন্তা ভর করে, দেখবেন ধীরে ধীরে সৃজনশীলতা কমতে কমতে একসময় তিনি হারিয়েই যাবেন। জীবন নিয়ে ভাববেন না-কি শিল্প নিয়ে? আর জীবনের যাবতীয় চিন্তা মানেই সর্বনাশ!
মিনিমালিস্টরা কি তাহলে সন্যাসী ? না! মিনিমালিস্টরা সবাইকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করে। অন্যদের সঙ্গে তাদের তফাৎ এখানে, তারা অদৃশ্য মুখোশ নিয়ে ঘোরে না। ঘরে এক, বাইরে আরেক, অফিসে অন্যরূপ, বন্ধুদের আড্ডায় পুরোপুরি ভিন্ন একজন। মিনিমালিজমকে যারা ধারণ করে তারা সর্বত্র একই রকম। ফেইক পার্সোনালিটি নয়, সম্পূর্ণ শুদ্ধতায়, সতেজতায় মিনিমালিজম আপনাকে ভালোবাসতে শেখাবে! মিনিমালিজমকে ধারণ করা কঠিন কিছু নয়। ইচ্ছাশক্তির বলে একবার ধরতে পারলে জীবনটা কল্পনার চেয়েও চমৎকারভাবে কাটানো যাবে। সুখ দুঃখ মিলিয়েই বেঁচে থাকা। আজকাল ঘাড় ঘোরালেই দুঃখের ঘেরাটোপ। মিনিমালিস্টরা অন্তত সেদিক থেকে এগিয়ে আছে, তাদের সুখের পরিমাণ অসুখী দুনিয়ার তুলনায় অনেক বেশি।
জহিরুল কাইউম ফিরোজ
শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বুধবার, ০৯ নভেম্বর ২০২২
মডার্ন কালচার আমাদের বিশ্বাস করায় ভোগবাদই সব। চাকচিক্য ছাড়া জীবন মরীচিকা। তাই আমরা দিনে রাতে ছুটতে থাকি চাকচিক্যের পেছনে। অর্থ উপার্জন, বিলাসিতার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর বাসনায় আমরা পরিণত হচ্ছি রোবটে। যান্ত্রিক জীবন আমাদের করে তুলছে আরও যান্ত্রিক! দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মধ্যবিত্ত সমাজকে দুমড়েমুচড়ে দিয়েছে। চেষ্টা করেও কূল পাচ্ছে না। অকূল দরিয়ায় হাবুডুবু খেতে খেতে রোজ ভাবে, এহেন ত্রাহি দশা থেকে মুক্তির উপায় কী! উপায় আছে, কিন্তু সে উপায়কে আমারা সদর্পে এড়িয়ে চলি।
মিনিমালিজম! এই ধারণাটি গত কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিশ্বব্যাপী। মিনিমালিজম হচ্ছে, যা আমাদের জীবনে অধিক গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোকে ধারণ করা! আর বাকিসব ত্যাগ করা। বাকিসব বলতে যা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্যদিকে নিয়ে যায়, কঠিন করে তোলে জীবন সেসবকে বোঝায়। সহজ, সাধারণ, গোছালো একটি জীবনের আকাঙ্খাই মিনিমালিজম। কোন কোন জিনিস জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান, আর কোনগুলো আপাতদৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় মনে হলেও অপ্রয়োজনীয় সেগুলোকে ছুঁড়ে ফেলা। যিনি মিনিমালিজমকে ধারণ করেন, তিনি মিনিমালিস্ট। একজন মিনিমালিস্ট জীবনকে ভালোবাসতে জানে, নিজেকে ভালোবাসতে জানে! আপনার বেড রুমে কেবল একটি বিছানা, থাকতে পারে একটি সেন্টার টেবিল, এক কোণায় ফুলের টব। শুনতে সাধারণ, অথচ দেখতে চমৎকার!
আধুনিকতার পিছে ছুটতে ছুটতে আমরা ভুলতে বসেছি সম্পর্কের মানে, হয়তো প্রিয়জনের সঙ্গে রোজ কথা হয়, অনুভূতি আসে? দায়সারা আলাপে দায়িত্ব সারা। আজকের বাজারে একজন মানুষ দেখান, যার ঋণ নেই! কমার নামগন্ধ নেই, বরং যত দিন গড়ায় তত বাড়ে। চাহিদারা হন্যে হয়, তাদের মেটাতে আমরা কাজ, কাজ এবং কাজ নিয়ে পড়ে থাকি। কারণ কাজ আমাদের অর্থ এনে দেবে। অর্থ আমাদের ভোগের সামগ্রী এনে দেবে। সো কোল্ড সুখ তখন খানিকটা সময়ের জন্য ধরা দেবে।
আপনার পরিবারের হয়তো চাহিদা বেশি। কিন্তু আপনার স্যালারি পারছে না বাজারের সঙ্গে যুদ্ধে টিকে থাকতে। একটু বিশ্রাম নিন। ভাবুন সত্যিকার অর্থে কী কী হলে বেঁচে থাকতে পারবেন। তালিকায় শুধু সেসব রাখুন। অন্যসব ছুড়ে ফেলে দিন। সুন্দর করে বাঁচাটাই শান্তি, লোক দেখানো বিলাসিতায় সাময়িক সুখ মিললেও তার মূল্য চুকাতে হয় বেশ বাজেভাবেই! আপনার যা আছে তাতে যদি সন্তোষ প্রকাশ করতে পারেন, কৃতজ্ঞ হতে পারেন, দেখবেন অনেক দুঃশ্চিন্তা মাথা থেকে সরে গেছে। মাথায় যদি চিন্তা না থাকে, কাজে মনোযাগী হতে পারবেন, বাড়তি বোঝা থাকবে না। চাপমুক্ত মস্তিষ্কও একপ্রকার মূলধন! যারা ক্রিয়েটিভ পার্সন, লেখালেখি করেন, ছবি আঁকেন, সিনেমা বানান- তাদের মাথায় যদি দুনিয়ার সব চিন্তা ভর করে, দেখবেন ধীরে ধীরে সৃজনশীলতা কমতে কমতে একসময় তিনি হারিয়েই যাবেন। জীবন নিয়ে ভাববেন না-কি শিল্প নিয়ে? আর জীবনের যাবতীয় চিন্তা মানেই সর্বনাশ!
মিনিমালিস্টরা কি তাহলে সন্যাসী ? না! মিনিমালিস্টরা সবাইকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করে। অন্যদের সঙ্গে তাদের তফাৎ এখানে, তারা অদৃশ্য মুখোশ নিয়ে ঘোরে না। ঘরে এক, বাইরে আরেক, অফিসে অন্যরূপ, বন্ধুদের আড্ডায় পুরোপুরি ভিন্ন একজন। মিনিমালিজমকে যারা ধারণ করে তারা সর্বত্র একই রকম। ফেইক পার্সোনালিটি নয়, সম্পূর্ণ শুদ্ধতায়, সতেজতায় মিনিমালিজম আপনাকে ভালোবাসতে শেখাবে! মিনিমালিজমকে ধারণ করা কঠিন কিছু নয়। ইচ্ছাশক্তির বলে একবার ধরতে পারলে জীবনটা কল্পনার চেয়েও চমৎকারভাবে কাটানো যাবে। সুখ দুঃখ মিলিয়েই বেঁচে থাকা। আজকাল ঘাড় ঘোরালেই দুঃখের ঘেরাটোপ। মিনিমালিস্টরা অন্তত সেদিক থেকে এগিয়ে আছে, তাদের সুখের পরিমাণ অসুখী দুনিয়ার তুলনায় অনেক বেশি।
জহিরুল কাইউম ফিরোজ
শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়